অনলাইন ডেস্ক
অবশেষে মহাকাশে ভাসল জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। গতকাল শনিবার সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় এই মহাকাশ টেলিস্কোপটি। ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ডলারের এই টেলিস্কোপ মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্রের জন্মবৃত্তান্ত জানতে সহায়তা করবে।
মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসার তত্ত্বাবধানে নির্মিত বিশালাকৃতির এই মহাকাশ মানমন্দিরটিকে সবচেয়ে জটিল মিশনে পাঠানো হলো। এটি মহাকাশের গভীরতম দূরত্বেও প্রবেশ করবে।
ফ্রেঞ্চ গায়ানার কৌরু মহাকাশ কেন্দ্র আরিয়ান থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। উৎক্ষেপণের মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে এটিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে। কেনিয়ার মালিন্দিতে স্থাপিত অ্যান্টেনায় সংকেত পাঠিয়ে সেটি নিশ্চিত করেছে জেমস ওয়েব।
জেমস ওয়েব ছিলেন নাসার চাঁদে অবতরণের ‘অ্যাপোলো মুন ল্যান্ডিং’ প্রকল্পের অন্যতম কারিগর। তাঁর নামেই এই টেলিস্কোপের নাম। নাসার বিখ্যাত হাবল টেলিস্কোপের পরই মহাকাশ পর্যবেক্ষণের দ্বিতীয় বৃহত্তম মানমন্দির এটি।
এই টেলিস্কোপটি বানাতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় এবং কানাডীয় মহাকাশ সংস্থা যৌথভাবে কাজ করেছে। নতুন মানমন্দির আগের যে কোনোটির চাইতে ১০০ গুণ শক্তিশালী।
এই টেলিস্কোপ নিয়ে ছিল দীর্ঘ প্রত্যাশা। ফলে সঙ্গে ছিল চরম উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনাও। বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার মানুষ এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলেন। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এই প্রকল্পটি নিয়ে কাজ চলেছে। এটি উৎক্ষেপণের সময় নাসার টিভি ধারাভাষ্যকার রব নাভিয়াস যেমনটি বলছিলেন, এক উষ্ণমণ্ডলীয় রেইন ফরেস্ট থেকে কালের সীমায় উৎক্ষেপণ, জেমস ওয়েব মহাবিশ্বের জন্ম ইতিহাস উদ্ঘাটনের এক মহাযাত্রার সূচনা করল।
জেমস ওয়েবের কাজের তালিকাটা বেশ দীর্ঘ ও জটিল। তবে আপাতত প্রাথমিক কিছু কাজ সারতেই তার ছয় মাস কেটে যাবে। মূল পর্যবেক্ষণ স্টেশনে থিতু হতে তাকে পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে। এই পথ ভ্রমণের সময় জেমস ওয়েব প্রজাপতির কোকুনের মতো তার খোলস ছেড়ে পাখা মেলবে। কারণ বিশাল ও ভঙ্গুর কাঠামোটিকে অক্ষত রেখে রকেটে করে উৎক্ষেপণের সময় টেলিস্কোপটিকে বিশেষভাবে ভাঁজ করে নেওয়া হয়েছে। এই ভাঁজ খুলে আসল অবয়ব পেতে তার বেশ সময় লাগবে।
নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেন, উৎক্ষেপণ সফলভাবে করা গেছে মানেই আমাদের কাজ শেষ নয়। আরও বহু ও জটিল কাজ বাকি আছে। আর সেসব কাজ হতে হবে একেবারে নিখুঁত। একচুল ভুল হলেই পুরো প্রকল্প মাঠে মারা যাবে!
নতুন এই মহাকাশ টেলিস্কোপের মূল কাঠামোতে রয়েছে ৬ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত স্বর্ণের আয়না (দর্পণ)। হাবলের মূল প্রতিফলকের চেয়ে এটি তিনগুণ প্রশস্ত।
বিশাল দর্পণ এবং চারটি অতি-সংবেদনশীল যন্ত্রের কারণে এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশবিজ্ঞানীরা মহাশূন্যের অনেক গভীর পর্যন্ত দেখতে পাবেন। ফলে মহাবিশ্বের জন্মতত্ত্ব অনুযায়ী, প্রথম যে নক্ষত্রগুলোর আলোয় সাড়ে ১৩শ কোটি বছর আগে ঘটা বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের পর নেমে আসা অন্ধকার কেটে গিয়েছিল-সেসবের বৃত্তান্ত জানা যাবে।
মহাকাশ সৃষ্টি তত্ত্ব অনুযায়ী, সেই সময় ঘটা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রথমবারের মতো কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস এবং সালফারের মতো ভারী পরমাণুগুলো গঠিত হয়। প্রাণ সৃষ্টির জন্য এই প্রক্রিয়াটি অত্যাবশ্যক ছিল।
মহাবিশ্বের সৃষ্টি ইতিহাস সন্ধানের পাশাপাশি জেমস ওয়েব বহু দূরের গ্রহগুলোর পরিবেশও পর্যবেক্ষণ করবে। দূরবর্তী কোনো গ্রহে প্রাণীর বসবাসের মতো পরিবেশ আছে কি-না যাচাই করে দেখবে।
নাসার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উৎক্ষেপণের পরে ওয়েব প্রায় ৩০ দিনের যাত্রা সম্পন্ন করে পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে (চাঁদের চেয়েও দূরে) দ্বিতীয় লাগ্রঁজীয় বিন্দুতে পৌঁছাবে। সেখানে অবস্থান করে সব সময় পৃথিবীর অন্ধকার পাশে থেকে পৃথিবীর পাশাপাশিই বছরে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে।
উল্লেখ্য, লাগ্রঁজীয় বিন্দু হলো সেই স্থান যেখানে পৃথিবী ও সূর্যের মহাকর্ষীয় লব্ধি বল এবং মহাকাশযানের কেন্দ্রাতিগ বল একে অপরকে নাকচ করে দেয়।
ওয়েবের মূল দর্পণটির নাম আলোকীয় দূরবীক্ষণ যন্ত্র। এটি ১৮টি ষড়ভূজাকৃতি দর্পণের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি দর্পণ অত্যন্ত পাতলা (মাত্র ১০০ ন্যানোমিটার পুরু) স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া বেরিলিয়াম ধাতু দিয়ে তৈরি। স্বর্ণ অবলোহিত বিকিরণের জন্য একটি অতি-উৎকৃষ্ট প্রতিফলক এবং রাসায়নিকভাবে তুলনামূলকভাবে নিষ্ক্রিয়। অন্যদিকে বেরিলিয়াম হালকা কিন্তু শক্ত ও অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রাতেও সংকুচিত না হয়ে মূল আকৃতি ধরে রাখতে পারে। দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির ভর প্রায় ৬ টন। যেখানে হাবলের ভর প্রায় ১২ টন।
দর্পণগুলো একত্রে মিলে একটি বৃহৎ, ৬ দশমিক ৫ মিটার ব্যাসবিশিষ্ট প্রায় ষড়ভূজাকৃতি একটি দর্পণ গঠন করবে। যেখানে হাবল দূরবীক্ষণ যন্ত্রের দর্পণটির ব্যাস ২ দশমিক ৪ মিটার। হাবলকে নিকট-অতিবেগুনি, দৃশ্যমান আলো ও নিকট-অবলোহিত বিকিরণ বর্ণালি পর্যবেক্ষণ করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। বিপরীতে ওয়েব অপেক্ষাকৃত নিম্নতর কম্পাঙ্কের পরিসীমার বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করবে। ফলে এটি একই সঙ্গে হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র ও স্পিৎজার মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নততর ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি।
বহু প্রাচীন ও অনেক দূরে অবস্থিত আদীনক্ষত্র ও আদি ছায়াপথগুলো থেকে আগত রশ্মিগুলো দৃশ্যমান আলো নয়, এগুলো অদৃশ্য অবলোহিত রশ্মির আকারে আমাদের কাছে পৌঁছায়। অবলোহিত তরঙ্গগুলো গ্যাস ও ধূলিমেঘের ভেতর দিয়ে সহজেই অতিক্রম করে, কিন্তু সেগুলো ভূপৃষ্ঠস্থিত দূরবীক্ষণ যন্ত্র কিংবা হাবল দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এ পর্যন্ত স্পষ্ট করে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।
অবলোহিত দূরবীক্ষণ যন্ত্র হওয়ায় জেমস ওয়েব এসব এসব পর্যবেক্ষণ করতে পারবে, যা আগে কখনো সম্ভব হয়নি। পুরো প্রক্রিয়াটি সঙ্গে এক্স-রে-এর মাধ্যমে মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ছবি তোলার মিল আছে। প্রাথমিকভাবে বৃহত্তর দর্পণটি আলোকরশ্মিগুলো প্রতিফলিত করে দ্বিতীয় ও অপেক্ষাকৃত ছোট একটি দর্পণে ফেলবে, যেটি আবার সেগুলোকে প্রতিফলিত করে আলোক-সংবেদী অংশের ওপর ফেলবে।
এখানে চ্যালেঞ্জ হলো, সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ওয়েবের দুটি দর্পণ ও অন্যান্য তাপ-সংবেদী অংশগুলোকে অত্যন্ত শীতল অবস্থায় রাখতে হবে। এই অংশগুলোই অতি সূক্ষ্ম, দুর্বল সংকেতগুলো গ্রহণের জন্য তৈরি করা। সেই সংকেতগুলোকে নষ্ট করে দিতে পারে সৌরজগতের অন্যান্য বস্তু যেমন-সূর্য, পৃথিবী, চাঁদ এমনকি দূরবীক্ষণ যন্ত্রের নিজস্ব উত্তাপ। ফলে আলোকীয় ও তাপীয় বিকিরণের কারণে সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যতিচার থেকে এটিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এ কারণে প্রথমত এটিকে পৃথিবী থেকে বহু দূরে, প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে দ্বিতীয় লাগ্রঁজীয় বিন্দুতে মোতায়েন করা হবে। যেখানে হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবী থেকে মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
বেশি দূরে হওয়ার কারণে একবার মোতায়েন করার পরে জেমস ওয়েবের কোনো মেরামতি বা পুরোনো হয়ে যাওয়া যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করা প্রায় অসম্ভব হবে। দ্বিতীয়ত, যন্ত্রটিকে সূর্যের তাপ থেকে সুরক্ষা দিতে ১৫০ বর্গমিটার ক্ষেত্রফলের একটি সৌর ঢাল সংযুক্ত করা হয়েছে। সৌর ঢালটি সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়ামে আবৃত পাঁচটি তাপ-অন্তরক ক্যাপটন পাত (বিশেষ ধরনের পলিথিনের মতো পাতলা পলিইমাইড ঝিল্লি) দিয়ে নির্মিত। সৌর ঢালের উত্তপ্ত পার্শ্বটির তাপমাত্রা ক্ষেত্রবিশেষে ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। কিন্তু এটির শীতল পার্শ্বে দর্পণ ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের তাপমাত্রা ৫০ কেলভিনের (মাইনাস ২২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) নিচে থাকবে।
পর্যবেক্ষণ স্টেশনে স্থাপন ও ভাঁজ খোলার প্রক্রিয়াটি শেষ করতে উৎক্ষেপণ মুহূর্ত থেকে প্রায় ছয় মাস লাগবে। ২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে টেলিস্কোপটি পৃথিবীতে বৈজ্ঞানিক উপাত্ত পাঠানো শুরু করবে। বয়ে নিয়ে যাওয়া জ্বালানিতে কমপক্ষে ১০ বছর কর্মক্ষম থাকবে এটি। যেখানে হাবল ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মক্ষম আছে।
পৃথিবীতে বৈজ্ঞানিক তথ্যউপাত্ত পাঠানো ও পৃথিবীতে স্থাপিত স্টেশন থেকে নির্দেশ গ্রহণের জন্য পৃথিবীর দিকে মুখ করে একটি অ্যানটেনা আছে এতে। আর সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের জন্য সূর্যের দিকে মুখ করে রাখা আছে এক সারি সৌরবিদ্যুৎকোষ। নির্দিষ্ট নক্ষত্র অঞ্চলের দিকে তাক করার জন্য কিছু ক্ষুদ্রাকায় দূরবীক্ষণ যন্ত্রও আছে।
১৯৯৬ সাল থেকে এ প্রকল্পের কাজ চলছে। নাসা নেতৃত্বে ১৪টি দেশ ও ২৯টি মার্কিন অঙ্গরাজ্যের তিন শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়, সংস্থা ও কোম্পানির পাশাপাশি শত শত বিজ্ঞানী ও হাজার হাজার প্রকৌশলী এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পটি শেষ করতে ১০০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে নাসা দিয়েছে ৯৭০ কোটি ডলার। পুরো কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে প্রায় ৩০ বছর। এ তুলনায় হাবলের পেছনে এ যাবৎ খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
অবশেষে মহাকাশে ভাসল জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। গতকাল শনিবার সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় এই মহাকাশ টেলিস্কোপটি। ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ডলারের এই টেলিস্কোপ মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্রের জন্মবৃত্তান্ত জানতে সহায়তা করবে।
মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসার তত্ত্বাবধানে নির্মিত বিশালাকৃতির এই মহাকাশ মানমন্দিরটিকে সবচেয়ে জটিল মিশনে পাঠানো হলো। এটি মহাকাশের গভীরতম দূরত্বেও প্রবেশ করবে।
ফ্রেঞ্চ গায়ানার কৌরু মহাকাশ কেন্দ্র আরিয়ান থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। উৎক্ষেপণের মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে এটিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে। কেনিয়ার মালিন্দিতে স্থাপিত অ্যান্টেনায় সংকেত পাঠিয়ে সেটি নিশ্চিত করেছে জেমস ওয়েব।
জেমস ওয়েব ছিলেন নাসার চাঁদে অবতরণের ‘অ্যাপোলো মুন ল্যান্ডিং’ প্রকল্পের অন্যতম কারিগর। তাঁর নামেই এই টেলিস্কোপের নাম। নাসার বিখ্যাত হাবল টেলিস্কোপের পরই মহাকাশ পর্যবেক্ষণের দ্বিতীয় বৃহত্তম মানমন্দির এটি।
এই টেলিস্কোপটি বানাতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় এবং কানাডীয় মহাকাশ সংস্থা যৌথভাবে কাজ করেছে। নতুন মানমন্দির আগের যে কোনোটির চাইতে ১০০ গুণ শক্তিশালী।
এই টেলিস্কোপ নিয়ে ছিল দীর্ঘ প্রত্যাশা। ফলে সঙ্গে ছিল চরম উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনাও। বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার মানুষ এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলেন। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এই প্রকল্পটি নিয়ে কাজ চলেছে। এটি উৎক্ষেপণের সময় নাসার টিভি ধারাভাষ্যকার রব নাভিয়াস যেমনটি বলছিলেন, এক উষ্ণমণ্ডলীয় রেইন ফরেস্ট থেকে কালের সীমায় উৎক্ষেপণ, জেমস ওয়েব মহাবিশ্বের জন্ম ইতিহাস উদ্ঘাটনের এক মহাযাত্রার সূচনা করল।
জেমস ওয়েবের কাজের তালিকাটা বেশ দীর্ঘ ও জটিল। তবে আপাতত প্রাথমিক কিছু কাজ সারতেই তার ছয় মাস কেটে যাবে। মূল পর্যবেক্ষণ স্টেশনে থিতু হতে তাকে পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে। এই পথ ভ্রমণের সময় জেমস ওয়েব প্রজাপতির কোকুনের মতো তার খোলস ছেড়ে পাখা মেলবে। কারণ বিশাল ও ভঙ্গুর কাঠামোটিকে অক্ষত রেখে রকেটে করে উৎক্ষেপণের সময় টেলিস্কোপটিকে বিশেষভাবে ভাঁজ করে নেওয়া হয়েছে। এই ভাঁজ খুলে আসল অবয়ব পেতে তার বেশ সময় লাগবে।
নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেন, উৎক্ষেপণ সফলভাবে করা গেছে মানেই আমাদের কাজ শেষ নয়। আরও বহু ও জটিল কাজ বাকি আছে। আর সেসব কাজ হতে হবে একেবারে নিখুঁত। একচুল ভুল হলেই পুরো প্রকল্প মাঠে মারা যাবে!
নতুন এই মহাকাশ টেলিস্কোপের মূল কাঠামোতে রয়েছে ৬ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত স্বর্ণের আয়না (দর্পণ)। হাবলের মূল প্রতিফলকের চেয়ে এটি তিনগুণ প্রশস্ত।
বিশাল দর্পণ এবং চারটি অতি-সংবেদনশীল যন্ত্রের কারণে এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশবিজ্ঞানীরা মহাশূন্যের অনেক গভীর পর্যন্ত দেখতে পাবেন। ফলে মহাবিশ্বের জন্মতত্ত্ব অনুযায়ী, প্রথম যে নক্ষত্রগুলোর আলোয় সাড়ে ১৩শ কোটি বছর আগে ঘটা বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের পর নেমে আসা অন্ধকার কেটে গিয়েছিল-সেসবের বৃত্তান্ত জানা যাবে।
মহাকাশ সৃষ্টি তত্ত্ব অনুযায়ী, সেই সময় ঘটা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রথমবারের মতো কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস এবং সালফারের মতো ভারী পরমাণুগুলো গঠিত হয়। প্রাণ সৃষ্টির জন্য এই প্রক্রিয়াটি অত্যাবশ্যক ছিল।
মহাবিশ্বের সৃষ্টি ইতিহাস সন্ধানের পাশাপাশি জেমস ওয়েব বহু দূরের গ্রহগুলোর পরিবেশও পর্যবেক্ষণ করবে। দূরবর্তী কোনো গ্রহে প্রাণীর বসবাসের মতো পরিবেশ আছে কি-না যাচাই করে দেখবে।
নাসার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উৎক্ষেপণের পরে ওয়েব প্রায় ৩০ দিনের যাত্রা সম্পন্ন করে পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে (চাঁদের চেয়েও দূরে) দ্বিতীয় লাগ্রঁজীয় বিন্দুতে পৌঁছাবে। সেখানে অবস্থান করে সব সময় পৃথিবীর অন্ধকার পাশে থেকে পৃথিবীর পাশাপাশিই বছরে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে।
উল্লেখ্য, লাগ্রঁজীয় বিন্দু হলো সেই স্থান যেখানে পৃথিবী ও সূর্যের মহাকর্ষীয় লব্ধি বল এবং মহাকাশযানের কেন্দ্রাতিগ বল একে অপরকে নাকচ করে দেয়।
ওয়েবের মূল দর্পণটির নাম আলোকীয় দূরবীক্ষণ যন্ত্র। এটি ১৮টি ষড়ভূজাকৃতি দর্পণের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি দর্পণ অত্যন্ত পাতলা (মাত্র ১০০ ন্যানোমিটার পুরু) স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া বেরিলিয়াম ধাতু দিয়ে তৈরি। স্বর্ণ অবলোহিত বিকিরণের জন্য একটি অতি-উৎকৃষ্ট প্রতিফলক এবং রাসায়নিকভাবে তুলনামূলকভাবে নিষ্ক্রিয়। অন্যদিকে বেরিলিয়াম হালকা কিন্তু শক্ত ও অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রাতেও সংকুচিত না হয়ে মূল আকৃতি ধরে রাখতে পারে। দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির ভর প্রায় ৬ টন। যেখানে হাবলের ভর প্রায় ১২ টন।
দর্পণগুলো একত্রে মিলে একটি বৃহৎ, ৬ দশমিক ৫ মিটার ব্যাসবিশিষ্ট প্রায় ষড়ভূজাকৃতি একটি দর্পণ গঠন করবে। যেখানে হাবল দূরবীক্ষণ যন্ত্রের দর্পণটির ব্যাস ২ দশমিক ৪ মিটার। হাবলকে নিকট-অতিবেগুনি, দৃশ্যমান আলো ও নিকট-অবলোহিত বিকিরণ বর্ণালি পর্যবেক্ষণ করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। বিপরীতে ওয়েব অপেক্ষাকৃত নিম্নতর কম্পাঙ্কের পরিসীমার বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করবে। ফলে এটি একই সঙ্গে হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র ও স্পিৎজার মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নততর ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি।
বহু প্রাচীন ও অনেক দূরে অবস্থিত আদীনক্ষত্র ও আদি ছায়াপথগুলো থেকে আগত রশ্মিগুলো দৃশ্যমান আলো নয়, এগুলো অদৃশ্য অবলোহিত রশ্মির আকারে আমাদের কাছে পৌঁছায়। অবলোহিত তরঙ্গগুলো গ্যাস ও ধূলিমেঘের ভেতর দিয়ে সহজেই অতিক্রম করে, কিন্তু সেগুলো ভূপৃষ্ঠস্থিত দূরবীক্ষণ যন্ত্র কিংবা হাবল দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এ পর্যন্ত স্পষ্ট করে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।
অবলোহিত দূরবীক্ষণ যন্ত্র হওয়ায় জেমস ওয়েব এসব এসব পর্যবেক্ষণ করতে পারবে, যা আগে কখনো সম্ভব হয়নি। পুরো প্রক্রিয়াটি সঙ্গে এক্স-রে-এর মাধ্যমে মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ছবি তোলার মিল আছে। প্রাথমিকভাবে বৃহত্তর দর্পণটি আলোকরশ্মিগুলো প্রতিফলিত করে দ্বিতীয় ও অপেক্ষাকৃত ছোট একটি দর্পণে ফেলবে, যেটি আবার সেগুলোকে প্রতিফলিত করে আলোক-সংবেদী অংশের ওপর ফেলবে।
এখানে চ্যালেঞ্জ হলো, সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ওয়েবের দুটি দর্পণ ও অন্যান্য তাপ-সংবেদী অংশগুলোকে অত্যন্ত শীতল অবস্থায় রাখতে হবে। এই অংশগুলোই অতি সূক্ষ্ম, দুর্বল সংকেতগুলো গ্রহণের জন্য তৈরি করা। সেই সংকেতগুলোকে নষ্ট করে দিতে পারে সৌরজগতের অন্যান্য বস্তু যেমন-সূর্য, পৃথিবী, চাঁদ এমনকি দূরবীক্ষণ যন্ত্রের নিজস্ব উত্তাপ। ফলে আলোকীয় ও তাপীয় বিকিরণের কারণে সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যতিচার থেকে এটিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এ কারণে প্রথমত এটিকে পৃথিবী থেকে বহু দূরে, প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে দ্বিতীয় লাগ্রঁজীয় বিন্দুতে মোতায়েন করা হবে। যেখানে হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবী থেকে মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
বেশি দূরে হওয়ার কারণে একবার মোতায়েন করার পরে জেমস ওয়েবের কোনো মেরামতি বা পুরোনো হয়ে যাওয়া যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করা প্রায় অসম্ভব হবে। দ্বিতীয়ত, যন্ত্রটিকে সূর্যের তাপ থেকে সুরক্ষা দিতে ১৫০ বর্গমিটার ক্ষেত্রফলের একটি সৌর ঢাল সংযুক্ত করা হয়েছে। সৌর ঢালটি সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়ামে আবৃত পাঁচটি তাপ-অন্তরক ক্যাপটন পাত (বিশেষ ধরনের পলিথিনের মতো পাতলা পলিইমাইড ঝিল্লি) দিয়ে নির্মিত। সৌর ঢালের উত্তপ্ত পার্শ্বটির তাপমাত্রা ক্ষেত্রবিশেষে ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। কিন্তু এটির শীতল পার্শ্বে দর্পণ ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের তাপমাত্রা ৫০ কেলভিনের (মাইনাস ২২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) নিচে থাকবে।
পর্যবেক্ষণ স্টেশনে স্থাপন ও ভাঁজ খোলার প্রক্রিয়াটি শেষ করতে উৎক্ষেপণ মুহূর্ত থেকে প্রায় ছয় মাস লাগবে। ২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে টেলিস্কোপটি পৃথিবীতে বৈজ্ঞানিক উপাত্ত পাঠানো শুরু করবে। বয়ে নিয়ে যাওয়া জ্বালানিতে কমপক্ষে ১০ বছর কর্মক্ষম থাকবে এটি। যেখানে হাবল ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মক্ষম আছে।
পৃথিবীতে বৈজ্ঞানিক তথ্যউপাত্ত পাঠানো ও পৃথিবীতে স্থাপিত স্টেশন থেকে নির্দেশ গ্রহণের জন্য পৃথিবীর দিকে মুখ করে একটি অ্যানটেনা আছে এতে। আর সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের জন্য সূর্যের দিকে মুখ করে রাখা আছে এক সারি সৌরবিদ্যুৎকোষ। নির্দিষ্ট নক্ষত্র অঞ্চলের দিকে তাক করার জন্য কিছু ক্ষুদ্রাকায় দূরবীক্ষণ যন্ত্রও আছে।
১৯৯৬ সাল থেকে এ প্রকল্পের কাজ চলছে। নাসা নেতৃত্বে ১৪টি দেশ ও ২৯টি মার্কিন অঙ্গরাজ্যের তিন শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়, সংস্থা ও কোম্পানির পাশাপাশি শত শত বিজ্ঞানী ও হাজার হাজার প্রকৌশলী এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পটি শেষ করতে ১০০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে নাসা দিয়েছে ৯৭০ কোটি ডলার। পুরো কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে প্রায় ৩০ বছর। এ তুলনায় হাবলের পেছনে এ যাবৎ খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
সেলিব্রিটি শেফ বা ইতালি নানিরা যা কখনোই কল্পনা করতে পারেননি তাই তৈরি করে দেখালেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা। বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা স্প্যাগেটি তৈরি করলেন তাঁরা। গবেষকেরা এমন এক স্টার্চ ন্যানোফাইবারের তৈরি স্প্যাগেটি তৈরি করেছে, যা মাত্র ৩৭২ ন্যানোমিটার চওড়া। চুলের চেয়ে ২০০ গুণ পাত
৮ ঘণ্টা আগেপ্রথমবারের মতো মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথের বাইরে একটি নক্ষত্রের মৃত্যুর মুহূর্তের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ছবিতে সুপারনোভা বিস্ফোরণের আগের পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। ছবিতে নক্ষত্রটিকে অদ্ভুত ডিম আকারের কোকুনের (রেশমগুটি) মতো দেখা যায়।
১০ ঘণ্টা আগেআমাদের অনেকেরই অফিসে কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘসময় বসে থাকতে হয়। আর দিনের একটা বড় সময় বসে থাকাটা বাড়ায় হৃৎপিণ্ডের রোগের ঝুঁকি। এমনকি অবসর সময়ে শরীরচর্চা করেও এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রেহাই মিলবে না। এসব তথ্য উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়।
৩ দিন আগেবিজ্ঞানীরা বলছেন, জিপিএসের সাহায্য ছাড়াই এআই ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া থেকে কোনো ব্যক্তির সাম্প্রতিক অবস্থান চিহ্নিত করা যাবে।
৯ দিন আগে