Ajker Patrika

বিবিসির প্রতিবেদন /ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া কি সম্ভব, বিজ্ঞান কী বলে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৫, ২২: ৪৫
২০২৪ সালের ৩ এপ্রিল ৭.৪ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে বড় বড় ভবন হেলে যায়। ছবি: এএফপি
২০২৪ সালের ৩ এপ্রিল ৭.৪ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে বড় বড় ভবন হেলে যায়। ছবি: এএফপি

ব্রেন্ট দিমিত্রুক নিজেকে একজন ভূমিকম্প পূর্বাভাসদাতা দাবি করেন। গত অক্টোবরে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর হাজার হাজার অনুসারীকে জানান, ক্যালিফোর্নিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে ইউরেকা শহরের দক্ষিণে শিগগির একটি ভূমিকম্প আঘাত হানবে। এর ঠিক দুই মাস পর সেখানে ৭ দশমিক ৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে লক্ষাধিক মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর দিমিত্রুকের অনলাইন অনুসারী সংখ্যাও বেড়ে যায়।

তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। এই অনিশ্চয়তাই ভূমিকম্পকে এতটা ভয়ংকর করে তোলে। উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে বসবাসকারী লক্ষাধিক মানুষ ভয়ে থাকে, ‘দ্য বিগ ওয়ান’ যেকোনো মুহূর্তে আঘাত হানতে পারে, যা ভূদৃশ্য ও অসংখ্য মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে।

লুসি জোন্স, একজন ভূকম্পনবিদ। তিনি মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থায় (ইউএসজিএস) তিন দশকের বেশি সময় কাজ করেছেন। লুসি বলেন, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁর মতে, ‘বিপদের মুখে মানুষের মধ্যে একটি প্যাটার্ন তৈরি করার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু এটি ভয়ের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এর মধ্যে ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো কোনো শক্তি নেই।’

ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ইউরেকা অঞ্চল, যেখানে গত ডিসেম্বরে ব্রেন্ট দিমিত্রুকের ভবিষ্যদ্বাণীর পর একটি ভূমিকম্প হয়। ইউএসজিএসের তথ্য থেকে জানা গেছে, এই অঞ্চলে গত এক বছরে ৭০০টির বেশি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। অঞ্চলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশি ‘ভূমিকম্পপ্রবণ’ এলাকাগুলোর মধ্যে একটি। যেখানে তিনটি টেকটোনিক প্লেট মিলিত হয়েছে।

ভূমিকম্পের কারণ

সাধারণত টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়ার ফলে ভূমিকম্প হয়। প্লেটের নড়াচড়ার ফলে এর সীমানা বরাবর বা তার কাছাকাছি অঞ্চলে চাপ সৃষ্টি হয় এবং এর থেকে ভূমিকম্প হয়। লুসি জোন্স বলেছেন, যেহেতু এসব অঞ্চল বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ, তাই ইউরেকা অঞ্চলে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সহজ। তবে এসব অঞ্চলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প বেশ বিরল।

ভূমিকম্প পূর্বাভাসের সীমাবদ্ধতা

ইউএসজিএস বলেছে, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয় এবং ‘আগামী দিনগুলোতেও আমরা এটি জানতে পারব বলে আশা করি না’। সংস্থাটি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভূমিকম্পের আশঙ্কা গণনা করতে পারে এবং এখন পর্যন্ত সেটিই তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা।

তবে ব্রেন্ট দিমিত্রুকের দাবি, দক্ষিণ-পশ্চিম আলাস্কা বা নিউজিল্যান্ডের উপকূলবর্তী দ্বীপগুলোতে একটি বড় ভূমিকম্প আঘাত হানবে। এতে বিশ্ববাণিজ্য ব্যাহত করতে পারে। কিন্তু ইউএসজিএস বলেছে, একটি ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের জন্য তিনটি নির্দিষ্ট উপাদান থাকা আবশ্যক—তারিখ ও সময়, ভূমিকম্পের অবস্থান এবং মাত্রা। দিমিত্রুকের পূর্বাভাসে এই উপাদানগুলোর অভাব রয়েছে এবং তার সময়সীমা ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে।

ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুতি

ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়, তবে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। ভূমিকম্পের সময় কীভাবে প্রস্তুত থাকা যায়, তা নিয়ে প্রতিবছর অক্টোবরের তৃতীয় বৃহস্পতিবার লক্ষাধিক আমেরিকান ‘দ্য গ্রেট শেক আউট’ নামক বৃহত্তম ভূমিকম্প ড্রিলে অংশ নেয়। এই ড্রিলে মানুষ ড্রপ, কভার এবং হোল্ড অন পদ্ধতি অনুশীলন করে। যেমন তারা হাঁটু গেড়ে বসে একটি মজবুত বস্তুর নিচে আশ্রয় নেয় এবং এক মিনিট ধরে বসে থাকে। এ ছাড়া পশ্চিম উপকূলের বাসিন্দারা ইউএসজিএসের শেকঅ্যালার্ট নামের একটি অ্যালার্ট সিস্টেম ব্যবহার করে, যা ভূমিকম্পের চাপ তরঙ্গ শনাক্ত করে কয়েক সেকেন্ডের সতর্কতা দিতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত