মঙ্গলে বিপুল পরিমাণ তরল পানির সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১২: ০৯

মঙ্গলগ্রহের আগ্নেয় শিলার নিচে তরল পানির আধার থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। এই বিপুল পরিমাণ পানি একটি মহাসাগর পূর্ণ করার জন্য যথেষ্ট, যা পুরো মঙ্গলের পৃষ্ঠকে ঢেকে ফেলতে পারবে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়। 

মঙ্গলের বিভিন্ন ডেটা সংগ্রহের জন্য ২০১৮ সালে ‘ইনসাইট’ ল্যান্ডার পাঠায় মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এই ল্যান্ডারের সিসমোমিটারের সাহায্যে মঙ্গলগ্রহের ভূকম্পন রেকর্ড করা হয়। এ কম্পনের মধ্য দিয়ে গত চার বছরে মঙ্গল গ্রহের গতি এবং পৃষ্ঠের অভ্যন্তরে তরল পানির অস্তিত্ব সম্পর্কে তথ্য জানা যায়। 

মঙ্গল পৃষ্ঠের প্রায় ৭ দশমিক ২ থেকে ১২ দশমিক ৪ মাইল (১১ দশমিক ৫–২০ কিলোমিটার) গভীরে এই পানির আধার রয়েছে। অতীত বা বর্তমানে অণুজীব টিকিয়ে রাখার জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে এই পানি সাহায্য করে। 

বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার (১২ আগস্ট) এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স (পিএনএএস)। গবেষণাপত্রের প্রধান লেখকও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহ বিজ্ঞানী ভাসান রাইট বলেন, এই গভীরতায় ভূত্বকটি যথেষ্ট উষ্ণ। তাই এই স্তরে পানি তরল হিসেবে থাকবে এবং আরও একটু কম গভীরে এই পানি বরফ হিসেবে থাকবে। 

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহ বিজ্ঞানী ও গবেষণাপত্রের সহ–লেখক মাইকেল মাঙ্গা বার্কলে বলেন, ‘পৃথিবীতে ভূগর্ভস্থে যেসব অংশে শিলা পানিতে পরিপূর্ণ থাকে ও শক্তির উৎস রয়েছে, সেখানে অণুজীব খুঁজে পাওয়া যায়।’ 

এই ল্যান্ডারের মিশন হয় ২০২২ সালে। এই সময়ের মধ্যে মঙ্গল পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্তরের ডেটা সংগ্রহ করেছে ল্যান্ডারটি। 

গবেষক রাইট বলেন, ইনসাইট ল্যান্ডারটি মঙ্গলের সিসমিক ওয়েভের (ভূকম্পন তরঙ্গ) গতি এবং গভীরতার সঙ্গে এগুলো কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছিল। কোনো পাথর কী দিয়ে তৈরি, কোথায় ফাটল রয়েছে ও ফাটল কী দিয়ে পূর্ণ—এসব বিষয়ের ওপর সিসমিক ওয়েভের গতি নির্ভর করে। 

তিনি আরও বলেন, এই গবেষণায় সিসমিক ওয়েভের গতি, মাধ্যাকর্ষণ পরিমাপক ও শিলা পদার্থবিজ্ঞানের মডেলগুলোকে একত্রিত করা হয়েছে। পৃথিবীতে জলাধারের বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করতে বা ভূগর্ভস্থ তেল ও গ্যাসের মানচিত্র তৈরিতে শিলা পদার্থবিজ্ঞানের মডেলগুলো ব্যবহার করা হয়। 

গবেষকদের মতে, আর্জেন্টিনায় পাওয়া জীবাশ্মের হাড়গুলোর কাটা দাগ ইঙ্গিত দেয় যে, দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশে প্রায় ২১ হাজার বছর আগে মানুষের বিচরণ ছিল। 

 ডেটা থেকে জানা যায় যে, মঙ্গল ভূত্বকের সবচেয়ে বাইরের স্তরে ম্যাগমা বা লাভার শীতলকরণ ও ঘনীভূতকরণের মাধ্যমে আগ্নেয় শিলাগুলোর নিচে এই জলাধার তৈরি হয়েছে। 

মঙ্গলের মধ্য–ভূত্বক শিলাতে ফাটল রয়েছে এবং এগুলো তরল পানিতে পূর্ণ তা সিসমিক ও মাধ্যাকর্ষণের উভয় ডেটা থেকে জানা যায়। 

বর্তমানে মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠ ঠান্ডা ও জনশূন্য। এটি ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি বছরেরও বেশি আগে উষ্ণ ও ভেজা ছিল। গবেষণায় দেখ যায়, মঙ্গলগ্রহের উপরিভাগে যে পানি ছিল তার বেশির ভাগই মহাকাশে বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যায়নি, বরং ভূত্বকের মধ্যে ফিল্টার হয়ে গভীরে প্রবেশ করেছে। 

মাঙ্গা বলেন, ‘একসময় মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগে নদী, হ্রদ ও সম্ভবত মহাসাগরে তরল পানি ছিল। মঙ্গল গ্রহের ইতিহাসের খুব প্রথম থেকেই ভূত্বকে পানি ছিল বলে মনে হয়। পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ পানি পৃষ্ঠ থেকে প্রবেশ করেছে ও মঙ্গল গ্রহের পানির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। এটি অবশ্যই এমন একটি সময়ে ঘটেছে, যখন ওপরের ভূত্বকটি এখনকার সময়ের চেয়ে বেশি উষ্ণ ছিল।’ 

মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠে মহাকাশচারীদের স্থাপন করতে বা দীর্ঘমেয়াদি বসতি স্থাপন করার জন্য এই পানি একটি অত্যাবশ্যক সম্পদ। এই গ্রহের মেরু অঞ্চলে ও তার পৃষ্ঠে বরফ আকারে পানি রয়েছে। আর ভূগর্ভস্থের গভীরতা জন্য তরল পানি সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। 

গবেষক মাঙ্গা বলেন, ‘এই গভীরতায় খনন বা ড্রিলিং করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। তাই ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়াকলাপ এই পানিকে বের করে দেয় এমন জায়গাগুলোর সন্ধান করতে হবে। সম্ভবত এর একটি বিকল্প হতে পারে টেকটোনিকভাবে সক্রিয় (যেখানে গ্রহের টেটোনিক প্লেটগুলো নড়াচড়া করে) সারবেরাস ফোসে (মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধের একটি অঞ্চল)। তবে মঙ্গলগ্রহের পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত