নব্বইয়ে ‘নার্ভাস’ মুশফিক

ইকবাল আজাদ
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৮: ৫৭
Thumbnail image

২০০৯ সালের আগস্ট, জিম্বাবুয়ে সিরিজ। তামিমের ১৫৪ রানের সুবাদে আগের ম্যাচেই সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ২১০ রান। কী বুঝে সেদিন হুট করে মুশফিক রহিমকে ওপেনিংয়ে পাঠায় টিম ম্যানেজমেন্ট। 

মুশফিকও ব্যাট হাতে শুরু থেকেই আস্থার প্রতিদান দিচ্ছিলেন। ৪৭ রানে প্রথম উইকেট পড়া তামিম করেছিলেন মাত্র ৪ রান। বাকি ৪৩ রান আসে মুশি ও ‘মিস্টার এক্সট্রা’র কল্যাণে। সবাই যখন সেট হয়েও আউট হয়ে যাচ্ছিলেন, মুশফিক এক প্রান্ত আগলে রেখে সিঙ্গেল, ডাবলস নিয়ে এগোচ্ছিলেন নিজের স্বপ্নের পথে। নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছেও গেলেন মুশফিক। প্রথমবারের মতো নব্বই টপকানো তাঁর। 

মুশিকে একেবারে নার্ভাস লাগেনি, তা নয়। তখন আরও সাবধানী ব্যাটিং শুরু করলেন। জিততে ৩৩ বলে করতে হবে মাত্র ১১ রান। তেমন চাপও ছিল না। সদা হাস্যোজ্জ্বল মুশফিক একটু পরেই প্রাণ খুলে হাসবেন। ভুবন মাতানো হাসি। রচিত হবে স্বপ্ন জয়ের গল্প। শতক ছুঁতে তখন মুশফিকের আর ২ রান বাকি। বোলিংয়ে অভিজ্ঞ রেমন্ড প্রাইস। আগের দুটি বল শর্ট ফাইন লেগ এবং কাভারে ঠেলে দিয়ে কোনো রান পাননি মুশি। ডট দেওয়া দুটো বলে স্বাভাবিক মনে হয়েছে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারকে। 

প্রাইসের ওভারের চতুর্থ বল, অফ স্টাম্পের বাইরে অনেকটা ঝুলিয়ে ছেড়েছেন। মুশফিক সুযোগ নিতে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। ডাউন দ্য উইকেটে এসে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে মারার চেষ্টা। বাঁহাতি প্রাইসের টার্নে ‘বিট’ হলেন মুশফিক। বল সরাসরি উইকেটরক্ষকের হাতে। বদলি কিপার চার্লস কভেন্ট্রি মুহূর্তের মধ্যেই উইকেট ভেঙে দিলেন। ভেঙে দিলেন স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলা মুশফিকের শৈল্পিক যাত্রা। ৯৮ রানে সেদিন আউট হয়ে মুশফিক যেন মাঠই ছাড়তে চাচ্ছিলেন না! মুশিকে সান্ত্বনা দিতে সেদিন বাউন্ডারি লাইনে এসেছিলেন তামিম। ছলছল চোখে তীব্র অপরাধবোধে মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়েছিলেন মুশফিক।  

মুশফিকের নার্ভাস নাইন্টিন বা নড়বড়ে নব্বইয়ে আউট হওয়া নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের ব্যাট্যারদের মধ্যে নব্বইয়ের ঘরে সবচেয়ে বেশি থেমে যাওয়া ব্যাটারই হচ্ছেন মুশফিকুর রহিম। ইনিংস সংখ্যা নেহাতই কম নয়—গুণে গুণে আটটি। সাদা বলে ৪টি, লাল বলেও ৪টি। লাল বলের শেষ ইনিংসটা পাকিস্তানের বিপক্ষে, এই সিরিজে। সাদা বলেও পাকিস্তানের সঙ্গে নার্ভাস নাইন্টিনে আউট হওয়ার ঘটনা রয়েছে। সেটা আরও বেশি আক্ষেপের। ১ রানের আক্ষেপ। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে ৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন মুশফিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের ৯৯ রানে আউট হওয়ার ঘটনা ওটাই প্রথম ছিল।

বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে মুশফিক ছাড়াও সবচেয়ে বেশি নার্ভাস নাইন্টিনে ফেরার রেকর্ড আছে সাকিব-তামিমের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭ ইনিংসে নব্বইয়ের ঘরে থেমেছেন সাকিব। তামিম থেমেছেন ৬ ইনিংসে। লাল বলে চারবার করে থেমেছেন সাকিব-মুশফিক। 

একই দলের বিপক্ষে সাদা এবং লাল বলের সংস্করণে নড়বড়ে নব্বইয়ের থামার রেকর্ডও আছে মুশফিকের। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৯৮ রানে আউট হয়ে যাওয়া মুশফিক ২০১৩ সালে একই দলের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে ৯৩ রানে আউট হন। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার টেস্টে ৯২ রানে উইকেট হারানো মুশি ২০১৯ সালে লঙ্কানদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৯৮ রানে (অপরাজিত) ইনিংস শেষ করেন। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯৯ রানে কাটা পড়া মিস্টার ডিপেন্ডেবল ২০২১ সালের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাবরদের বিপক্ষে ৯১ রানে সাজঘরে ফেরেন। টেস্টে একবার ইংল্যান্ড (৯৫) ও ওয়ানডেতে একবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (৯০) শতক ছুঁতে না পারার আক্ষেপে পুড়েছেন। মুশফিকের নব্বইয়ের ঘরে আউট হওয়া ৮ ইনিংসের ৪ ইনিংসই ঘরের মাঠে। চার ইনিংসের তিন ইনিংস আবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। রঙিন পোশাকে নড়বড়ে নব্বইয়ে আউট হওয়া মুশফিকের ৪ ম্যাচের ৩টিতে জিতেছে বাংলাদেশ দল। তবে টেস্টে আছে জয়, ড্র এবং হারের মিশ্র স্বাদ। 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নব্বইয়ের ঘরে সবচেয়ে বেশি আউট হওয়ার যন্ত্রণা পেতে হয়েছে শচীন টেন্ডুলকারকে। কাছাকাছি গিয়েও ২৮বার টেন্ডুলকার সেঞ্চুরি ছুঁতে ব্যর্থ হয়েছেন, পুনরায় ঘুরেও দাঁড়িয়েছেন। রোদের আগুনে পুড়ে খাঁটি সোনা হয়েছেন। দিনান্তে ভারতীয় ক্রিকেট কিংবদন্তির পাশে জ্বলজ্বল করছে ‘শতকের শতক।’ 

শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে মুশফিকের তুলনা করা যায় না। তবু দেশসেরা ব্যাটার দিন শেষে নিশ্চয়ই ভুল শুধরানোর ছক আঁকবেন। নড়বড়ে নব্বইকে শতকে রূপ দিতে আরও সতর্ক থাকবেন। বারবার মুশফিক কি আর চাইবেন একই যন্ত্রণা পোহাতে? 

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত