রাশেদ নিজাম, ঢাকা
সব অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বিজয় কি-বোর্ড প্রি–ইনস্টলড থাকা বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বিজয় কি-বোর্ডের প্যাকেজ কিট (এপিকে) ইনস্টল করা ছাড়া কোনো স্মার্টফোন বাজারজাত করার ছাড়পত্র দেবে না সংস্থাটি। গত ১৩ জানুয়ারি বিভিন্ন দপ্তরে এ নির্দেশনা গেলেও গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে আসার পর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
বিজয় কি–বোর্ডের পেটেন্ট কপিরাইট ও ট্রেডমার্ক মোস্তাফা জব্বারের নামে। তিনি সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।
অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বিজয় কি–বোর্ড প্রি–ইনস্টলড থাকা বাধ্যতামূলক করার ব্যাপারে মন্ত্রী বলেছেন, মোবাইলে বাংলা ব্যবহারে সরকারের পক্ষ থেকে এটি জনগণের প্রতি উপহার।
যদিও নির্বাচনের আগে সবার মোবাইলে ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া একজন মন্ত্রীর মালিকানাধীন অ্যাপ ইনস্টল করে দেওয়াকে ভিন্ন চোখে দেখছেন অনেকেই।
অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, মন্ত্রী কি এটা সরকারের কাছে বিক্রি করেছেন, তাহলে কত টাকায়? গতকাল সোমবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব এই বিজয় কি–বোর্ড ইস্যুতে। প্রযুক্তিবিদেরা বলছেন, ফোনে কেনার আগেই বিজয় ইনস্টল করা থাকলে ওই অ্যাপে কোন কোন বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হয়েছে তা তো ব্যবহারকারী জানতে পারবেন না। এর মাধ্যমে চাইলে ফোনের সব তথ্যই হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব।
গত শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের বিটিআরসির পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব স্মার্ট মোবাইল ফোনে বিজয় কি-বোর্ড ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বাজারজাতের আগে আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সব স্মার্ট হ্যান্ডসেটে বিটিআরসির সরবরাহ করা বিজয় অ্যান্ড্রয়েড এপিকে ফাইল ইনস্টল করে তা কমিশনে প্রদর্শন করতে হবে। অন্যথায় কোনো স্মার্টফোন বাজারজাতকরণের অনাপত্তি দেওয়া হবে না। পত্র জারির তারিখ থেকে বর্ণিত নির্দেশনাটি কার্যকর করা হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বিজয় অ্যান্ড্রয়েড এপিকে ফাইল স্পেকট্রাম বিভাগ থেকে বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হবে। এ চিঠি জারি করার তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের স্পেকট্রাম বিভাগ থেকে এপিকে ফাইলটি সরবরাহ করা হবে।
তবে তিন দিন পেরিয়ে গেলেও কেউ বিজয় এপিকে ফাইল বিটিআরসি থেকে নিতে যায়নি কিংবা স্পেকট্রাম বিভাগ থেকেও তা সরবরাহ করা হয়নি বলে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে আজকের পত্রিকা।
মন্ত্রী ও বিটিআরসি সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন
বিজয় কিবোর্ড ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা বিষয়ে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর বক্তব্যের জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনো মাধ্যমেই তিনি সাড়া দেননি। যদিও একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সেই সাক্ষাৎকারের অডিও ফাইলটি সংগ্রহ করে সেটিতে শোনা গেছে মন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে মোবাইল কেনার পর সবাই যেন বাংলা লেখার একটি উপায় সেখানে পায় এবং সেটি যেন বিনা মূল্যে হয়, সেটিই সরকার চায়। আর বিএসটিআই যেহেতু বিজয় কি–বোর্ডকে “স্ট্যান্ডার্ড” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সে কারণে বিজয়ের কথাই বলা হয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নির্দেশনায়।’
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর ভাষ্য, ‘মোবাইল কোম্পানিগুলোও এগুলো (সফটওয়্যার) ফ্রি পাবে। স্পষ্ট, শতভাগ ফ্রি পাবে, বিজ্ঞাপন বা কিছুই থাকবে না। ব্যবহারকারী পুরো বিনা মূল্যে এটি ব্যবহার করতে পারবে। এই ঘোষণায়, মোস্তাফা জব্বার কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবে এমনটি ভাবার কিছু নেই।’
ওই নির্দেশনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বিজয় নামটা ব্যবহার হয়েছে কী কারণে আমি জানি না। এখানে প্রমিত কোড বা কি-বোর্ড ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলা লেখার পেটেন্ট কী হবে তা সেট করা আছে, সরকার ২০১৭ সালে সেটি করেছে। এটি মনে করবেন না যে, মোস্তাফা জব্বার মন্ত্রী এটা করেছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ২০১৭ সালে এটিকে স্ট্যান্ডার্ড করেছে, যা বিএসটিআইয়ের অনুমোদন পেয়েছে ২০১৮ সালে।’
স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিজয়কে বেছে নেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার বহু বছর আগে একটি নির্দেশনা দিয়েছে যে, মোবাইল ফোনে বাংলার ব্যবহার করতে হবে। আমাদের যেগুলো ফিচার ফোন আছে সেগুলোতে অনেক আগেই বাংলার ব্যবহার বাস্তবায়ন হয়েছে, কিন্তু স্মার্টফোনের জন্য কোনো সলিউশন (সমাধান) আগে ছিল না। এখন ২০১৭ সালে সরকার একটি প্রমিত কোড বা কি–বোর্ড করেছে। এর প্রেক্ষিতে সফটওয়্যারও করা হয়েছে। বিজয়ের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন আছে, যে ভার্সনটি গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনা মূল্যে ডাউনলোড করা যায়। এখানে কোনো ব্যবসার বিষয় নেই।’
সবাইকে বিজয়েই বাংলা লিখতে হবে—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা কোথাও দেওয়া হয়নি দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘যদি কোনো ব্যবহারকারী ভিন্ন কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, তাতে তো কোনো বাধা নেই। সে ফোন হাতে নিয়ে (বিজয়) ডিলিট করে অন্য কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করলেও আমাদের কিছু বলার নেই, সেটা তার খুশি। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে তার কাছে বাংলা লেখার সফটওয়্যার বিনা মূল্যে দেওয়া, সরকার সেটাই করছে। কেউ যেন না বলতে পারে যে—আমি বাংলা লেখার কিছু পাইনি।’
১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর মোস্তাফা জব্বার প্রতিষ্ঠিত আনন্দ কম্পিউটারস থেকেই প্রকাশ করা হয় বিজয় বাংলা কি-বোর্ড ও সফটওয়্যার, যা পরে বাংলা লেখার ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত সফটওয়্যারে পরিণত হয়। বিজয় কি-বোর্ডের জন্য বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছেন বর্তমান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। তাঁর মন্ত্রণালয়ের অধীনেই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন।
এ বিষয়ে আরও কথা বলার জন্য বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে জানা যায়, তিনি চিকিৎসার কাজে সিঙ্গাপুর আছেন। আগামীকাল বুধবার রাতে দেশে ফিরতে পারেন।
বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদকে তাঁর ব্যবহৃত সরকারি ও ব্যক্তিগত ফোন নম্বরে পাওয়া যায়নি।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদের সঙ্গে। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘মাস দেড়েক আগে সবাইকে নিয়ে বৈঠক করেছি আমরা। বিষয়টা আলোচনার ভিত্তিতেই করা হয়েছে।’
মন্ত্রীর নিজস্ব সফটওয়্যার বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে শেখ রিয়াজ বলেন, ‘এ দেশে কোনো কাজ করতে গেলে গন্ধ আর স্বার্থ খোঁজে। প্রমিত বাংলা ব্যবহারের বিভিন্ন নির্দেশনা আছে। এটা কাকতালীয়ভাবে এটা মন্ত্রীর সফটওয়্যারের সঙ্গে হয়তো মিলে গেছে। আগের নির্দেশনা থেকেই মন্ত্রণালয় থেকে বিটিআরসিকে বলেছে, তারপর যারা মোবাইল আমদানি ও তৈরি করেন তাদের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা ছাড়া মোবাইল ব্যান্ড (নিষিদ্ধ) করে দেবে এমন কিছু তো বলা হয়নি। শুধু বাংলা টাইপ করতে অ্যাপস দেওয়া হবে তাই বলা হয়েছে। একেপেশে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।’
মোবাইল ফোন নিয়ন্ত্রণের ভয়
এভাবে স্মার্টফোনে কোনো অ্যাপ প্রি–ইনস্টল থাকার মধ্যে কোনো নিরাপত্তা হুমকির বিষয়ে থাকে কি না জানতে চাইলে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষক জাহেদ উর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর নিজের মালিকানার বিজয় কি-বোর্ড তাঁর অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়া অনৈতিক তো বটেই, বেআইনিও। তিনি সরকারের কাছে কত টাকায় এটা বিক্রি করেছেন, নাকি ফ্রি দিয়েছেন তাও তো প্রকাশ করা হয়নি।’
শঙ্কা প্রকাশ করে এই শিক্ষক বলেন, ‘বিজয়ের সঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড কোনো ম্যালওয়্যার থাকতে পারে না? আপনার ওখানে আসলে ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। আপনার সবকিছু জেনে যাবে। ব্যবহার করুন আর না করুন। ইনস্টল করলেই ম্যালওয়্যার ঢুকে গেল। সরকার ইসরায়েলের কাছ থেকে নানা কিছু কিনছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এক বছর আগে আপনাকে চাপ দিচ্ছে বিজয় ইনস্টল করতে হবে। এর মধ্যে সিরিয়াস কোনো মতলববাজি আছে। একদম সোজাসাপ্টা কথা।’
অ্যাপ দিয়ে ফোনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব কি না এ বিষয়ে আজকের পত্রিকার কথা হয় প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যে কোনো প্রকার অ্যাপ্লিকেশন যদি আমরা ইনস্টল করতে চাই, সে অ্যাপের পেছনে কোনো দরজা আছে কি না, একাডেমিকভাবে বলে ব্যাকডোর, সেটা নির্ণয় করতে হবে। সেটা বিজয়ের জন্য না, সব অ্যাপসের ক্ষেত্রেই। বিজয় নামে যে সফটওয়্যারটি জনগণ ডাউনলোড করবে, সেখান থেকে তারা কী কী টাইপ করছে। সে তথ্যগুলো যাতে নিরাপদ থাকে এবং সফটওয়্যারে কোনো বাগ না থাকে, সে বিষয় যাচাই বাছাই করে কারিগরি কমিটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত দিলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংশয় দূর হবে। মনের অজান্তে বা ডেপ্লয়েড (স্থাপিত) কোনো সার্ভারে তথ্য চুরির ঘটনা বা ম্যালওয়্যার যদি থেকে থাকে তাহলে এ জাতীয় সফটওয়্যার বা ডিজিটালাইজেশনের পদ্ধতি অনেক সময় আমাদের নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।’
মোবাইল উৎপাদকেরা যা বলছেন
দেশে যারা মোবাইল আমদানি ও উৎপাদন করেন তাদের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার সময়ের নাম ছিল মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। এখন সেটি মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন নামে পরিচিত। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহীদ বলেন, ‘সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন পুরোটাই টেকনিক্যাল বিষয়। আমরা সবকিছু চেক করে নিচ্ছি। এগুলো অনেক বিষয়ের সঙ্গে লিংক থাকে, গুগল সার্টিফিকেশন লাগবে। যেহেতু সরকারি নির্দেশনা আসছে, আমরা পালন করব। তবে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না তা খতিয়ে দেখছি। আমাদের কিছু সময় লাগবে। সব বিষয় নিয়ে আমরা ফিডব্যাক দেব, প্রয়োজনে বিটিআরসির সঙ্গে আবার বসব। অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করলে গুগলের সঙ্গে সমন্বয় করার বড় ইস্যু থাকে। আজকের মধ্যেই একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে বলে মনে করছি।’
সব অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বিজয় কি-বোর্ড প্রি–ইনস্টলড থাকা বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বিজয় কি-বোর্ডের প্যাকেজ কিট (এপিকে) ইনস্টল করা ছাড়া কোনো স্মার্টফোন বাজারজাত করার ছাড়পত্র দেবে না সংস্থাটি। গত ১৩ জানুয়ারি বিভিন্ন দপ্তরে এ নির্দেশনা গেলেও গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে আসার পর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
বিজয় কি–বোর্ডের পেটেন্ট কপিরাইট ও ট্রেডমার্ক মোস্তাফা জব্বারের নামে। তিনি সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।
অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বিজয় কি–বোর্ড প্রি–ইনস্টলড থাকা বাধ্যতামূলক করার ব্যাপারে মন্ত্রী বলেছেন, মোবাইলে বাংলা ব্যবহারে সরকারের পক্ষ থেকে এটি জনগণের প্রতি উপহার।
যদিও নির্বাচনের আগে সবার মোবাইলে ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া একজন মন্ত্রীর মালিকানাধীন অ্যাপ ইনস্টল করে দেওয়াকে ভিন্ন চোখে দেখছেন অনেকেই।
অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, মন্ত্রী কি এটা সরকারের কাছে বিক্রি করেছেন, তাহলে কত টাকায়? গতকাল সোমবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব এই বিজয় কি–বোর্ড ইস্যুতে। প্রযুক্তিবিদেরা বলছেন, ফোনে কেনার আগেই বিজয় ইনস্টল করা থাকলে ওই অ্যাপে কোন কোন বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হয়েছে তা তো ব্যবহারকারী জানতে পারবেন না। এর মাধ্যমে চাইলে ফোনের সব তথ্যই হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব।
গত শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের বিটিআরসির পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব স্মার্ট মোবাইল ফোনে বিজয় কি-বোর্ড ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বাজারজাতের আগে আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সব স্মার্ট হ্যান্ডসেটে বিটিআরসির সরবরাহ করা বিজয় অ্যান্ড্রয়েড এপিকে ফাইল ইনস্টল করে তা কমিশনে প্রদর্শন করতে হবে। অন্যথায় কোনো স্মার্টফোন বাজারজাতকরণের অনাপত্তি দেওয়া হবে না। পত্র জারির তারিখ থেকে বর্ণিত নির্দেশনাটি কার্যকর করা হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বিজয় অ্যান্ড্রয়েড এপিকে ফাইল স্পেকট্রাম বিভাগ থেকে বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হবে। এ চিঠি জারি করার তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের স্পেকট্রাম বিভাগ থেকে এপিকে ফাইলটি সরবরাহ করা হবে।
তবে তিন দিন পেরিয়ে গেলেও কেউ বিজয় এপিকে ফাইল বিটিআরসি থেকে নিতে যায়নি কিংবা স্পেকট্রাম বিভাগ থেকেও তা সরবরাহ করা হয়নি বলে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে আজকের পত্রিকা।
মন্ত্রী ও বিটিআরসি সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন
বিজয় কিবোর্ড ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা বিষয়ে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর বক্তব্যের জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনো মাধ্যমেই তিনি সাড়া দেননি। যদিও একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সেই সাক্ষাৎকারের অডিও ফাইলটি সংগ্রহ করে সেটিতে শোনা গেছে মন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে মোবাইল কেনার পর সবাই যেন বাংলা লেখার একটি উপায় সেখানে পায় এবং সেটি যেন বিনা মূল্যে হয়, সেটিই সরকার চায়। আর বিএসটিআই যেহেতু বিজয় কি–বোর্ডকে “স্ট্যান্ডার্ড” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সে কারণে বিজয়ের কথাই বলা হয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নির্দেশনায়।’
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর ভাষ্য, ‘মোবাইল কোম্পানিগুলোও এগুলো (সফটওয়্যার) ফ্রি পাবে। স্পষ্ট, শতভাগ ফ্রি পাবে, বিজ্ঞাপন বা কিছুই থাকবে না। ব্যবহারকারী পুরো বিনা মূল্যে এটি ব্যবহার করতে পারবে। এই ঘোষণায়, মোস্তাফা জব্বার কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবে এমনটি ভাবার কিছু নেই।’
ওই নির্দেশনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বিজয় নামটা ব্যবহার হয়েছে কী কারণে আমি জানি না। এখানে প্রমিত কোড বা কি-বোর্ড ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলা লেখার পেটেন্ট কী হবে তা সেট করা আছে, সরকার ২০১৭ সালে সেটি করেছে। এটি মনে করবেন না যে, মোস্তাফা জব্বার মন্ত্রী এটা করেছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ২০১৭ সালে এটিকে স্ট্যান্ডার্ড করেছে, যা বিএসটিআইয়ের অনুমোদন পেয়েছে ২০১৮ সালে।’
স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিজয়কে বেছে নেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার বহু বছর আগে একটি নির্দেশনা দিয়েছে যে, মোবাইল ফোনে বাংলার ব্যবহার করতে হবে। আমাদের যেগুলো ফিচার ফোন আছে সেগুলোতে অনেক আগেই বাংলার ব্যবহার বাস্তবায়ন হয়েছে, কিন্তু স্মার্টফোনের জন্য কোনো সলিউশন (সমাধান) আগে ছিল না। এখন ২০১৭ সালে সরকার একটি প্রমিত কোড বা কি–বোর্ড করেছে। এর প্রেক্ষিতে সফটওয়্যারও করা হয়েছে। বিজয়ের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন আছে, যে ভার্সনটি গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনা মূল্যে ডাউনলোড করা যায়। এখানে কোনো ব্যবসার বিষয় নেই।’
সবাইকে বিজয়েই বাংলা লিখতে হবে—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা কোথাও দেওয়া হয়নি দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘যদি কোনো ব্যবহারকারী ভিন্ন কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, তাতে তো কোনো বাধা নেই। সে ফোন হাতে নিয়ে (বিজয়) ডিলিট করে অন্য কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করলেও আমাদের কিছু বলার নেই, সেটা তার খুশি। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে তার কাছে বাংলা লেখার সফটওয়্যার বিনা মূল্যে দেওয়া, সরকার সেটাই করছে। কেউ যেন না বলতে পারে যে—আমি বাংলা লেখার কিছু পাইনি।’
১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর মোস্তাফা জব্বার প্রতিষ্ঠিত আনন্দ কম্পিউটারস থেকেই প্রকাশ করা হয় বিজয় বাংলা কি-বোর্ড ও সফটওয়্যার, যা পরে বাংলা লেখার ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত সফটওয়্যারে পরিণত হয়। বিজয় কি-বোর্ডের জন্য বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছেন বর্তমান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। তাঁর মন্ত্রণালয়ের অধীনেই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন।
এ বিষয়ে আরও কথা বলার জন্য বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে জানা যায়, তিনি চিকিৎসার কাজে সিঙ্গাপুর আছেন। আগামীকাল বুধবার রাতে দেশে ফিরতে পারেন।
বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদকে তাঁর ব্যবহৃত সরকারি ও ব্যক্তিগত ফোন নম্বরে পাওয়া যায়নি।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদের সঙ্গে। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘মাস দেড়েক আগে সবাইকে নিয়ে বৈঠক করেছি আমরা। বিষয়টা আলোচনার ভিত্তিতেই করা হয়েছে।’
মন্ত্রীর নিজস্ব সফটওয়্যার বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে শেখ রিয়াজ বলেন, ‘এ দেশে কোনো কাজ করতে গেলে গন্ধ আর স্বার্থ খোঁজে। প্রমিত বাংলা ব্যবহারের বিভিন্ন নির্দেশনা আছে। এটা কাকতালীয়ভাবে এটা মন্ত্রীর সফটওয়্যারের সঙ্গে হয়তো মিলে গেছে। আগের নির্দেশনা থেকেই মন্ত্রণালয় থেকে বিটিআরসিকে বলেছে, তারপর যারা মোবাইল আমদানি ও তৈরি করেন তাদের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা ছাড়া মোবাইল ব্যান্ড (নিষিদ্ধ) করে দেবে এমন কিছু তো বলা হয়নি। শুধু বাংলা টাইপ করতে অ্যাপস দেওয়া হবে তাই বলা হয়েছে। একেপেশে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।’
মোবাইল ফোন নিয়ন্ত্রণের ভয়
এভাবে স্মার্টফোনে কোনো অ্যাপ প্রি–ইনস্টল থাকার মধ্যে কোনো নিরাপত্তা হুমকির বিষয়ে থাকে কি না জানতে চাইলে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষক জাহেদ উর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর নিজের মালিকানার বিজয় কি-বোর্ড তাঁর অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়া অনৈতিক তো বটেই, বেআইনিও। তিনি সরকারের কাছে কত টাকায় এটা বিক্রি করেছেন, নাকি ফ্রি দিয়েছেন তাও তো প্রকাশ করা হয়নি।’
শঙ্কা প্রকাশ করে এই শিক্ষক বলেন, ‘বিজয়ের সঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড কোনো ম্যালওয়্যার থাকতে পারে না? আপনার ওখানে আসলে ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। আপনার সবকিছু জেনে যাবে। ব্যবহার করুন আর না করুন। ইনস্টল করলেই ম্যালওয়্যার ঢুকে গেল। সরকার ইসরায়েলের কাছ থেকে নানা কিছু কিনছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এক বছর আগে আপনাকে চাপ দিচ্ছে বিজয় ইনস্টল করতে হবে। এর মধ্যে সিরিয়াস কোনো মতলববাজি আছে। একদম সোজাসাপ্টা কথা।’
অ্যাপ দিয়ে ফোনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব কি না এ বিষয়ে আজকের পত্রিকার কথা হয় প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যে কোনো প্রকার অ্যাপ্লিকেশন যদি আমরা ইনস্টল করতে চাই, সে অ্যাপের পেছনে কোনো দরজা আছে কি না, একাডেমিকভাবে বলে ব্যাকডোর, সেটা নির্ণয় করতে হবে। সেটা বিজয়ের জন্য না, সব অ্যাপসের ক্ষেত্রেই। বিজয় নামে যে সফটওয়্যারটি জনগণ ডাউনলোড করবে, সেখান থেকে তারা কী কী টাইপ করছে। সে তথ্যগুলো যাতে নিরাপদ থাকে এবং সফটওয়্যারে কোনো বাগ না থাকে, সে বিষয় যাচাই বাছাই করে কারিগরি কমিটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত দিলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংশয় দূর হবে। মনের অজান্তে বা ডেপ্লয়েড (স্থাপিত) কোনো সার্ভারে তথ্য চুরির ঘটনা বা ম্যালওয়্যার যদি থেকে থাকে তাহলে এ জাতীয় সফটওয়্যার বা ডিজিটালাইজেশনের পদ্ধতি অনেক সময় আমাদের নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।’
মোবাইল উৎপাদকেরা যা বলছেন
দেশে যারা মোবাইল আমদানি ও উৎপাদন করেন তাদের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার সময়ের নাম ছিল মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। এখন সেটি মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন নামে পরিচিত। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহীদ বলেন, ‘সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন পুরোটাই টেকনিক্যাল বিষয়। আমরা সবকিছু চেক করে নিচ্ছি। এগুলো অনেক বিষয়ের সঙ্গে লিংক থাকে, গুগল সার্টিফিকেশন লাগবে। যেহেতু সরকারি নির্দেশনা আসছে, আমরা পালন করব। তবে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না তা খতিয়ে দেখছি। আমাদের কিছু সময় লাগবে। সব বিষয় নিয়ে আমরা ফিডব্যাক দেব, প্রয়োজনে বিটিআরসির সঙ্গে আবার বসব। অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করলে গুগলের সঙ্গে সমন্বয় করার বড় ইস্যু থাকে। আজকের মধ্যেই একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে বলে মনে করছি।’
এক্সের (সাবেক টুইটার) প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম থ্রেডসের অ্যালগরিদম পরিবর্তন করল মেটা। এর ফলে যেসব অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীরা ফলো করেন সেগুলোর কনটেন্টই বেশি দেখানো হবে। গত বৃহস্পতিবার থেকে ফিচারটি চালু হয়।
১০ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা টাইম ম্যাগাজিন–এর কভারে ধনকুবের ইলন মাস্কের ‘টু ডু লিস্ট’ বা দিনের কাজের তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে এটি মাস্কের ব্যক্তিগত চেকলিস্ট নয় বলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন মাস্ক।
১০ ঘণ্টা আগেটাইপ করার চেয়ে ভয়েস মেসেজ পাঠানো বেশ সহজ। তবে অনেক সময় ভয়েস মেসেজ সবার সামনে শোনা যায় না। সে ক্ষেত্রে মেসেজ না শুনে রিপ্লাই–ও দেওয়া যায়না। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য মেসেজ ট্রান্সক্রাইব ফিচার যুক্ত করল হোয়াটসঅ্যাপ। এই ফিচারের মাধ্যমে ভয়েস মেসেজগুলো সহজে টেক্সটে রূপান্তর করা যাবে।
১২ ঘণ্টা আগেনিয়মিত নতুন উদ্ভাবনী ধারণা ও প্রযুক্তি দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার জন্য পরিচিত জাপান। এবার ‘মানুষ ধোয়ার মেশিন’ তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিল দেশটি। এটি মানুষ গোসলের জন্য ব্যবহার করতে পারবে। যন্ত্রটির কার্যকারিতা ও ডিজাইন দেখে একে ‘মানুষ ধোয়ার ওয়াশিং মেশিন’ বলে আখ্যা দিয়েছে অনেকই।
১৩ ঘণ্টা আগে