Ajker Patrika

মঙ্গোলিয়ার ফুটবল ইতিহাসে জড়িয়ে আছে ‘বাংলাদেশ’ নামটাও

নাজিম আল শমষের, সিলেট থেকে
মঙ্গোলিয়ার ফুটবল ইতিহাসে জড়িয়ে আছে ‘বাংলাদেশ’ নামটাও

মঙ্গোলিয়ার ফুটবলে ১৯ ফেব্রুয়ারি এক বিশেষ দিন। প্রতি বছর এই দিনটাকে ‘জাতীয় ফুটবল দিবস’ হিসেবে পালন করে মঙ্গোলিয়ান ফুটবল ফেডারেশন। দিবসটার জন্মের ইতিহাসে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নামও। বলা ভালো চেঙ্গিস খানের দেশে ফুটবলকে জনপ্রিয় করতে বাংলাদেশের একটা প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে।

১৯৯৮ সালে ফিফার স্বীকৃতি পাওয়া মঙ্গোলিয়া তাদের প্রথম বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলেছিল ২০০১ সালে। স্বাগতিক সৌদি আরব, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশের সঙ্গে একই গ্রুপে ছিল মঙ্গোলিয়া। দুই লেগের বাছাইপর্বে দাম্মামে ১২ ফেব্রুয়ারির প্রথম লেগে বাংলাদেশের কাছে ৩-০ গোলে হেরেছিল মঙ্গোলিয়া। অনিন্দ্য সুন্দর দুই গোল করেছিলেন আলফাজ আহমেদ, আরেক গোল রোকোনুজ্জামান কাঞ্চনের। ১৯ ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় লেগে তাই এগিয়ে ছিলেন আলফাজরা। টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে কোণঠাসা মঙ্গোলিয়া।

খুব একটা আহামরি না খেলেও ডিফেন্ডার সুজন মিয়ার জোড়া গোলে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। দেখছিল জয়ও। কিন্তু ৯৪ মিনিটে বক্সের ভেতর এক ভলিতে আলফাজদের ম্যাচ জেতার স্বপ্নটা ভেঙে দেন মঙ্গোলিয়ান প্লে-মেকার বুমান-উচারাল বোল্ড। ইতিহাস গড়ে মঙ্গোলিয়া। দেশটির ৬০ বছরের ফুটবল ইতিহাসে সেটাই ছিল প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পয়েন্ট। সেই এক ড্রয়ে পাল্টে যায় ফুটবল নিয়ে মঙ্গোলিয়ানদের চিন্তা-ভাবনাও।

২১ বছর আগে সেই ঐতিহাসিক ড্রয়ের নায়ক বুমান-উচারাল এখন মঙ্গোলিয়া ফুটবল ফেডারেশনের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। মঙ্গোলিয়া দলের টিম লিডার হয়ে এসেছেন সিলেটে খেলতে। খানিকটা লাজুক আর স্বল্পবাক বুমানকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সেই ম্যাচটার কথা মনে করিয়ে দিতেই ছোটালেন কথার ফুলঝুরি। হৃদয় থেকে বের করে আনলেন অসংখ্য সব স্মৃতি।

‘আমাদের জন্য মহামূল্যবান একটা পয়েন্ট ছিল সেটা। মঙ্গোলিয়ার ফুটবল ইতিহাসে সেটাই ছিল প্রথম পয়েন্ট। নিজেদের মনে হচ্ছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তখন থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় ফুটবল দিবস হিসেবে পালন করি’, মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে বলছিলেন বুমান।

কুস্তি-বক্সিংয়ের দেশ মঙ্গোলিয়ায় একটা সময় ফুটবলকে দেখা হতো শখের খেলা হিসেবে। বছর জুড়ে হিমাঙ্কের নিচে থাকা তাপমাত্রায় ফুটবলটা হয় মাত্র কয়েক মাসে। কিন্তু এই খেলাতেও যে ভবিষ্যৎ আছে বাংলাদেশ ম্যাচটার পরই প্রথম উপলব্ধি করতে শেখে মঙ্গোলিয়ান শিশুরা। দলটির বর্তমান অধিনায়ক টিসেন্ড-আয়ুসের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নের জন্মও তখন থেকে। এখন অনেক কিশোর পেশাদার ফুটবলার হতে আগ্রহী বলেও জানালেন বুমান, ‘আমাদের দেশে কুস্তি-বক্সিং অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু বাংলাদেশের সেই ম্যাচটার পর থেকে অনেক কিশোর ফুটবলার হয়েছে। অনেকে এখন হতে চায়। সবকিছু বাংলাদেশ ম্যাচটার কারণেই। ওই একটা পয়েন্ট ছিল আমাদের জন্য অনেক কিছু।’

সেই ম্যাচের পর ২১ বছরে অনেক কিছু পাল্টে গেছে। ধারাবাহিক অবনতিতে বাংলাদেশের র‍্যাঙ্কিং এখন মঙ্গোলিয়ারও নিচে। বাংলাদেশের ফুটবলের এমন বেহাল দশায় নিজেও অবাক বুমান, ‘এখানে আসার আগে বাংলাদেশের অবস্থা সম্পর্কে খুব বেশি জানতাম না। যখন দেখলাম বাংলাদেশ আর লাওসের র‍্যাঙ্কিং আমাদের চেয়েও নিচে তখন বেশ অবাক হয়েছি! কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না।’

পয়েন্ট পাওয়া বাংলাদেশ দলটার স্মৃতি এখনো টনটনে বুমানের মনে। সেই দলের তিনজন বর্তমান বাংলাদেশ দলটার সঙ্গে জড়িয়ে। ইকবাল হোসেন সিলেটে এসেছেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার হয়ে। বিপ্লব ভট্টাচার্য ও হাসান আল মামুন জাতীয় দলের সহকারী কোচ। তবে বুমান সবচেয়ে বেশি মনে রেখেছেন আলফাজ আহমেদের নাম। বললেন, ‘আলফাজ তখন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিল। সে এক ম্যাচেই দুই গোল করেছিল। পরের ম্যাচে এক ডিফেন্ডার (সুজন মিয়া) জোড়া গোল করেছিল। তখন দলে একজন অস্ট্রিয়ান কোচও (জর্জ কোটান) ছিল। বাংলাদেশ দলটা তখন বেশ ভালো ছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত