Ajker Patrika

ব্যাংকের মতো মন্ত্রীদেরও কোনো জবাবদিহি নেই: সংসদে ফিরোজ রশীদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১৫: ৪৫
ব্যাংকের মতো মন্ত্রীদেরও কোনো জবাবদিহি নেই: সংসদে ফিরোজ রশীদ

সংসদে অর্থমন্ত্রীর না থাকার সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘মন্ত্রী এখানে (সংসদ) থাকেন না। কোন মন্ত্রীর কী দায়িত্ব সেটাও জানি না। কে কী কাজ করে, জবাবদিহিতাও নাই কোনো। ব্যাংকের যেমন জবাবদিহিতা নেই, মন্ত্রীদেরও জবাবদিহিতা নেই।’

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। 

জবাবদিহি না থাকলে দেশ কীভাবে চলবে প্রশ্ন রেখে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকের লাইসেন্স দেন। সেটা কীভাবে চলবে তা ঠিক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক, মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ। তাদের জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে। কেন জনগণের টাকা লুটপাট হচ্ছে, কে দায়ী—এসবের জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি।

একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখিয়ে সাউথ বাংলা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছেন অভিযোগ করে জাতীয় পার্টির এমপি বলেন, তিনি পাচার করা অর্থে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও একাধিক বাড়ি কিনে বসবাস করছেন। তিনি একা এই কাজ করেননি। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত প্রত্যেক ব্যাংকে অডিট করে। ১ হাজার কোটি টাকা তো এক দিনেই নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় কী করল?

অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এটা নিয়ে আমরা কথা বলতে পারব না। এখানে অর্থমন্ত্রী কখনো থাকেন না। উনি কোনো কথাই শুনতে চান না।’

ওই প্রতিবেদন দেখিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয় কোনো প্রতিবাদ করেনি। তাঁরা জানেন এক হাজার কোটি টাকা কোন টাকাই না। এখানে পাঁচ হাজার কোটি টাকা হলে তারা নড়েচড়ে বসেন। ১০ হাজার কোটি টাকা হলে আরেকটু নড়েচড়ে বসেন।’

ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘জনগণের টাকা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। ব্যাংকগুলো পারিবারিক হয়ে গেছে। এগুলো জনগণের ব্যাংক নাই। আমরা টাকা রাখি ঠিকই। ব্যাংকের মালিকদের চাকর-বাকরদেরও কোনো অসুখ হলে সিঙ্গাপুর-ব্যাংককে চলে যাবে চিকিৎসার জন্য।’

মন্ত্রীদের সমালোচনা করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘মন্ত্রীরা একেক সময় একেক কথা বলেন। আমরা একটা সংবাদ পেলাম খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় নির্বাচন করতে পারবেন না। তবে তিনি রাজনৈতিক চর্চা করতে পারবেন। আরেক মন্ত্রী বললেন, উনি (খালেদা জিয়া) শর্ত দিয়েছেন রাজনীতি করবেন না। আপনারা একেক সময় একেক আইনের ব্যাখ্যা দেন। আইনের ব্যাখ্যা দিবেন আইনমন্ত্রী। সেটাই সঠিক মনে করব। অর্থের ব্যাখ্যা দিবেন অর্থমন্ত্রী। আমরা সেটাই মনে করব। কিন্তু আমরা তো কারও কাছে ব্যাখ্যা পাই না।’

এর আগে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দেন ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। মন্ত্রীর বিবৃতির সমালোচনা করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বিরাট, লম্বা-চওড়া বিবৃতি শোনালেন, কত ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, উনি নিজে দিনরাত পরিশ্রম করে আগুন নিভেয়েছেন। আসলে আগুন নিভান নাই, আগুন আইজও জ্বলছে।’

কাজী ফিরোজ বলেন, ‘বিমানবাহিনী হেলিকপ্টারে পানি ছিটিয়েছে, পানি পড়তে পড়তে কিছু আর থাকে না। ওইটা অক্সিজেন হয়ে যায়। কোনো রকম তারা গিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার রক্ষা করতে পারছে।’ 

বঙ্গবাজারে কোনো দোকানদারও রক্ষা পায় নাই উল্লেখ করে কাজী ফিরোজ বলেন, আপনাদের শত চেষ্টার পরেও কোনো দোকান রক্ষা পায় নাই। আর যত বেশি লোকজন গেছে, তত বেশি লুটপাট হয়েছে। এটা স্বীকার করেন না কেন? আগে ব্যবস্থা নিলে লুটপাট হতো না। আপনি বিরাট এক ফিরিস্তি দিয়েছেন, কিন্তু মানুষ রক্ষা পায়নি। চিকিৎসা ভালো হয়েছে কিন্তু রোগী মারা গেছে।’

অনির্ধারিত আলোচনায় জাতীয় পাটির আরেক সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘দেশে প্রতিনিয়ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। মোকাবিলায় প্রস্তুতির অবস্থা খারাপ। বঙ্গবাজারে হাজার হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঢাকার ভেতরে স্থাপনা অপরিকল্পিত, এখানে আগুন নেভানোর সুযোগ নেই। চুরিপট্টি সরানোর কথা, সেটা এখনো হয়নি। যারা এসব দেখার কথা, তারা কী করছে?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত