Ajker Patrika

ছুটে আসে আতঙ্ক

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০: ৫৩
ছুটে আসে আতঙ্ক

সাড়ে ছয় বছর ধরে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ট্রেন চালান সহকারী লোকোমাস্টার মো. কাওছার আহমেদ। ৩ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন চালিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার পথে ভৈরব স্টেশনে ঢোকার আগে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রেনের জানালার কাচ ভেঙে ঢুকে পড়ে কাওছারের চোখে। দ্রুত ট্রেন থামিয়ে তাঁকে নেওয়া হয় ঢাকার একটি হাসপাতালে। এ ঘটনায় তাঁর চোখ নষ্ট না হলেও এখনো আতঙ্কে তিনি।

কাওছার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা আমি দেখেছি। তবে নিজে কখনো আহত হইনি। এবার নিজেই সেটার ভুক্তভোগী হলাম। চোখ থেকে কাচের টুকরা বের করে ফেলা হলেও ডান চোখে কিছুটা সমস্যা রয়েছে।’

চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনায় চালকেরা যেমন আহত হচ্ছেন, যাত্রীরাও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। গত ১৫ আগস্ট নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় চলন্ত ট্রেনে ছোড়া পাথরের আঘাতে আজমির ইসলাম নামে এক শিশুর চোখে লাগে এবং জানালার কাচ ভেঙে তার চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে শিশুটি এক চোখে দূরের কিছু দেখতে পারছে না। চিকিৎসকেরা আশঙ্কা করছেন, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে শিশুটির এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যেতে পারে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত আট মাসে মোট ৮৬টি ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৭৯টি গ্লাস ভেঙেছে ট্রেনের। মোট ২১ জন আহত হয়েছেন।

সারা দেশে বিভিন্ন এলাকায় যেসব পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে, তার বেশি হয়ে থাকে টঙ্গী, গাজীপুর, নরসিংদী, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া, গফরগাঁও, সরিষাবাড়ী, দেওয়ানগঞ্জ, সিলেট, জাফলং, পার্বতীপুর, পঞ্চগড়, সৈয়দপুর, ডোমার, পাকশী, ভেড়ামারা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, খুলনার দৌলতপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, আলমডাঙ্গা, লালমনিরহাট, নোয়াপাড়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পাঁচবিবি ও চাটমোহর।

রেলের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কিছু ঘটনা আছে যেগুলো উঠতি বয়সীরা খেলার ছলে ট্রেনে পাথর ছোড়ে। আবার রেললাইনের আশপাশে গড়ে ওঠা বস্তির লোকজন এই ধরনের কার্যকলাপ করে থাকে। তা ছাড়া রেললাইনের পাশে মাদক সেবনকারীরাও অসতর্কতার বশবর্তী হয়ে ট্রেনে পাথর ছুড়ে থাকে।

পাথর ছোড়ারোধে করণীয় বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, কোন এলাকায় এ ধরনের ঘটনা বেশি হচ্ছে, সেটি চিহ্নিত করে মসজিদের ইমাম, চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ অভিভাবকদের দিয়ে এলাকায় সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। তা ছাড়া রেললাইনের পাশে বস্তি না থাকলে এ ঘটনা কমতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন ‘অনেকেই পাথর ছোড়ার মতো কাজ করে একধরনের মজা পায়। নানাভাবে অন্যের ক্ষতি করে মজা পায়। যারা এই ধরনের কাজ করে তাদের আচরণগত কিছু ত্রুটি থাকতে পারে এবং তাদের মধ্যে নৈতিক বোধটাও কম থাকে। ফলে এমন ঘটনা ঘটায়।’
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার মো. হাসান চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক সময় অসচেতনতা এবং মজার ছলে অনেকে ট্রেনে পাথর ছুড়ে থাকে। তবে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, তার জন্য রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা করে আসছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত