Ajker Patrika

শরিয়াহ নীতি ভেঙে সুদে ঋণ সোনালী ব্যাংকের

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৮: ০০
শরিয়াহ নীতি ভেঙে সুদে ঋণ সোনালী ব্যাংকের

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা দেখে অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকও প্রায় দেড় দশক আগে ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো চালু করে। কিন্তু শরিয়াহ উইন্ডোর মাধ্যমে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শরিয়াহ নীতিমালা মানছে না ব্যাংকটি। শরিয়াহ ব্যাংকিংয়ের নামে মূলত নির্ধারিত হারে সুদের ব্যবসা করছে ব্যাংকটি। এ নিয়ে সতর্ক করে ব্যাংকটিকে একাধিকবার চিঠিও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সোনালী ব্যাংক এসবের তোয়াক্কা করছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক সম্প্রতি ৯০ দিনের জন্য ৩৭ কোটি টাকা ঋণ দেয় বেসরকারি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে। সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে পরিচালনা পরিষদের ৮৬০ তম সভায় এ ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। শরিয়াহ উইন্ডো থেকে দেওয়া এই ঋণের সুদ ধরা হয়েছে ১২ শতাংশ। যদিও শরিয়াহ্ ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগে সুদের হার বেঁধে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটি ব্যাংকের শরিয়াহ উইন্ডো থেকে নির্দিষ্ট সুদহারে অপর একটি 
ব্যাংকে বিনিয়োগ শরিয়াহসম্মত নয় বলে আপত্তি তোলে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সেই সঙ্গে কোনো ব্যাংক যেন ইসলামিক ব্যাংকিং নীতিমালা লঙ্ঘন করে ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগকে লিখিত নির্দেশনাও দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা। এরপর অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগ সোনালী ব্যাংককে বারবার সতর্ক করে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সময় শুধু সোনালী ব্যাংক কেন, অনেক ব্যাংকই বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানত না। এ নিয়ে অনেক চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু জবাব মিলত না। সেই ধারাবাহিকতায় সোনালী ব্যাংকও চিঠির জবাব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে না। এ নিয়ে কথা বললে গভর্নর রউফ তালুকদার কখনো কখনো কর্মকর্তাদের শাসিয়ে বলতেন যে ‘দেশের কোথাও শরিয়াহ নেই। রাখেন এসব নীতিমালা। সরকারের ওপর থেকে যা চায়, তাই করেন।’

সোনালী ব্যাংকের এই বিনিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে শরিয়াহ বিশেষজ্ঞ হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ আল হুসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোরআনে সুদ নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে কোনো গোঁজামিল দেওয়া চলবে না। আর সোনালী ব্যাংক যেটা করেছে তা শতভাগ সুদ। ইসলামিক শরিয়াহর পুরোপুরি লঙ্ঘন।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ঋণের সর্বোচ্চ সুদসীমা ছিল ৯ শতাংশ। তখন সোনালী ব্যাংক শরিয়াহভিত্তিক ইসলামিক শাখা থেকে বিনিয়োগের কথা বলে ১২ শতাংশ হারে এস আলমের মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংককে ধার দিয়েছিল তখন। ইসলামী ব্যাংকের অনুকূলে ফান্ড প্লেসমেন্ট খাতে ২০০ কোটি টাকা এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের অনুকূলে ৭৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের এই অনুমোদন দেয় জিয়াউল হাসান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। এই ঋণের মেয়াদ ছিল ৯০ দিন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নিয়ে আপত্তি তুললেও কোনো জবাব দেয়নি সোনালী ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আফজাল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগ তো ইসলামিক ব্যাংকে করা হয়েছে। তা আবার শরিয়াহ উইন্ডো থেকে করা। এখানে ১২ শতাংশ হারে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ঝামেলা থাকতে পারে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপত্তি থাকার কথা নয়।’

এভাবে কত টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের ইসলামিক শাখা এবং উইন্ডোতে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা ভালো জানাতে পারবেন।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী সব ব্যাংক পরিচালিত হয়। সোনালী ব্যাংকের জন্য পৃথক কোনো নিয়ম নেই। অনিয়ম দেখার জন্য নিয়মিত পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংক ২০১০ সালের ২৯ জুন ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর মাধ্যমে শরিয়াহ্ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। সোনালী ব্যাংক বর্তমানে মুদারাবা এবং আল ওয়াদিয়াহসহ ৮ ধরনের ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। ব্যাংকটির ইসলামিক উইন্ডোতে চলতি বছরের জন্য জুন পর্যন্ত গ্রাহক ছিলেন ৬ হাজার ৪২৫ জন। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৯১ কোটি টাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত