অনলাইন ডেস্ক
মিয়ানমারে জান্তা–বিরোধী যোদ্ধারা এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তারা চীন সীমান্তের নিকটবর্তী সামরিক চৌকি এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। অভিযান এখনো অব্যাহত। জান্তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের এই সাফল্য মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বেইজিংকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করেছে। কিন্তু কতটা প্রভাব রাখতে পারছে চীন সেটিই এখন গুরুতর প্রশ্ন।
গত বছরের ২৭ অক্টোবর আরাকান আর্মি (এএ), মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) মিলে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স গঠন করে। এই জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে শুরু হয় অপারেশন ১০২৭। মিয়ানমারের শাসক জান্তাকে রীতিমতো কোণঠাসা করে ফেলেছে তারা। জোটের প্রায় ১০ হাজার যোদ্ধা উত্তর শান রাজ্যজুড়ে সামরিক, পুলিশ এবং সরকারি স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করে, এরই মধ্যে প্রায় ১০০টি সামরিক চৌকি গুঁড়িয়ে দিয়ে পরিত্যক্ত অস্ত্রশস্ত্র দখল করেছে।
চীন প্রায় দুই দশক ধরে মিয়ানমারের শান্তি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। গত ১৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরুর পর একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করার আগে পর্যন্ত, চীন সংঘর্ষে জড়িত উভয় পক্ষের খেলা এক মাস পর্যবেক্ষণ করেছে। জান্তা এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধবিরতি শেষ পর্যন্ত জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দ্রুতই স্পষ্ট হয়ে গেছে, বেইজিংয়ের সমাধানগুলো মিয়ানমারের জটিল বাস্তবতার জন্য উপযোগী নয়।
প্রকৃতপক্ষে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার মাত্র একদিন পরে, জান্তা চারটি শহরে প্রায় ১৬টি আর্টিলারি হামলা চালিয়ে চুক্তি ভঙ্গ করে বলে অভিযোগ করেছে টিএনএলএ। যুদ্ধবিরতি কখনোই থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের বাইরের জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে (ইএও নামেও পরিচিত) লড়াই থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
উদাহরণস্বরূপ, গত ২৬ জানুয়ারির ঘটনা বলা যেতে পারে। পা-ও ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (পিএনএলএ) শান রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত সি হেসেং শহরে জান্তার লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৪২৪ দখল করে। এর মধ্যে, পিএনএলএর রাজনৈতিক শাখা, পা-ও ন্যাশনাল লিবারেশন অর্গানাইজেশন ঘোষণা করে যে, তারা ২০১৫ সালের (চীনের মধ্যস্থতায়) জাতীয় যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে।
গত দুই মাসের নানা নাটকীয়তার মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দল—ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি, যারা ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়—তারাও জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণে যোগ দেয়। প্রবাসে জাতীয় ঐক্য সরকারে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির প্রতিনিধি রয়েছে। যদিও নির্বাসিত সরকারের সামরিক ইউনিট, পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স, ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, এই প্রতিরোধকে আরও শক্তিশালী করেছে অপারেশন ১০২৭। উদাহরণস্বরূপ, ফেব্রুয়ারির শুরুতে পিডিএফ বাহিনী জান্তার একটি সামরিক ঘাঁটিতে অভিযান চালিয়ে মান্দালয় অঞ্চলের গ্রাম সান পায়া দখল করে।
চীনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি শর্তগুলো এরই মধ্যে বাস্তবায়ন থেকে বহু দূর সরে গেছে, যুদ্ধের তীব্রতা যেভাবে বাড়ছে তাতে চুক্তিটি সম্পূর্ণ অচল বলেই ধরে নেওয়া যায়।
সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন
তবে এটিও অনস্বীকার্য যে, চীন মিয়ানমারের জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন বা ইএও–এর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। যদিও সেই প্রভাব সীমিত। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রায়শই তীব্র রাজনৈতিক বিভাজন ঘটনার গতিপ্রকৃতি অনুমান করা কঠিন করে তুলেছে।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের আগে, চীন সরকার শান্তি আলোচনায় অংশ নিয়েছিল। ‘২১ শতকের শান্তি সম্মেলন’ নামে পরিচিত সেই উদ্যোগে ইএনও এবং অং সান সু চির এনএলডির নেতৃত্বাধীন সরকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সময়, চীন মিয়ানমারের সবচেয়ে শক্তিশালী অ–রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মিকে (ইউডব্লিউএসএ) যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিল। যদিও ইউডব্লিউএসএ দীর্ঘদিন ধরে বেইজিংয়ের সমর্থন পেয়ে আসছিল, কিন্তু চীন সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে অস্ত্র সংবরণে রাজি করাতে পারেনি।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে এনএলডি নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর শান্তি আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে, চীন ইএও–এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এমনকি বেইজিং জান্তা শাসনকে সমর্থন করেছে এবং দুই বছর ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হোক বা না হোক, চীন ইএনও–কে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে খুব সামান্যই সাফল্য পেয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, উদাহরণস্বরূপ, সাতটি শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর একটি ব্লক—ফেডারেল পলিটিক্যাল নেগোসিয়েশন অ্যান্ড কনসালটেটিভ কমিটির নেতারা চীনের উষ্ণ সম্পর্ক থাকার পরও যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য বেইজিংয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।
কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি ছাড়াও, এফপিএনসিসি সদস্যদের কেউই জান্তার ক্ষমতা দখলের পর গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করেনি। দ্য ফেডারেল পলিটিক্যাল নেগোসিয়েশন অ্যান্ড কনসালট্যাটিভ কমিটি (এফপিএনসিসি) হলো মিয়ানমারের সাতটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনের (ইএও) একটি জোট।
অপারেশন ১০২৭–এর আগে, চীন থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নেতাদেরসহ এফপিএনসিসি নেতাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছিল। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে এফপিএনসিসি সদস্যরা মিয়ানমার সফরকারী চীনা বিশেষ দূতের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই বৈঠকের পর, তাঁরা একটি বিবৃতি দিয়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের সম্পৃক্ততার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। ইএও গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে প্রকাশ্যে সমর্থন না করার পেছনে চীনের প্রভাবকেই যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা বলা যেতে পারে।
অপারেশন ১০২৭ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীন ইএও–এর ওপর কতটা কর্তৃত্ব খাটাতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নিজের প্রভাবের সীমা উপলব্ধি করেই বেইজিং মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে সমর্থন করতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে বোঝানোর আশায় অনানুষ্ঠানিকভাবে ইএও–ঘনিষ্ঠ জাতিগত সম্পর্কযুক্ত প্রতিনিধিদেরই বারবার দূত হিসেবে পাঠায়।
কিন্তু ইএও এখনো মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দৃশ্যপটে অনেকখানিই স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করে। তারা বেইজিংয়ের ছত্রচ্ছায়ায় একটি স্বাধীন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে।
এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ হলো এফপিএনসিসি ২০২৩ সালের মার্চে দেওয়া বিবৃতিতে একটি ফেডারেল গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার ইচ্ছার ওপর জোর দিয়েছিল। তারা দাবি করেছিল, জাতিগত সংখ্যালঘুদের মিয়ানমারের বাকি অংশের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করা উচিত এবং এই প্রকল্পটিকে সমর্থন করা উচিত।
সীমান্ত স্থিতিশীলতা
জান্তা এবং বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার বিরোধের বিষয় এলে চীন সম্ভবত কার্যকরভাবে তার বর্তমান নীতিকেই এগিয়ে নিতে চাচ্ছে। বেইজিং সম্ভবত শিগগিরই মিয়ানমারের সঙ্গে তার সীমান্তে অশান্ত অঞ্চলগুলোতে স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের দিকে মনোনিবেশ করবে। এসব সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ক্রমবর্ধমান অপরাধ সিন্ডিকেটগুলো দীর্ঘদিন ধরে চীনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২১ সালের নভেম্বরে চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয় বলেছিল, ৩১ হাজারের বেশি চীনা নাগরিক উত্তর মিয়ানমারে সক্রিয় অনলাইন জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত। চীন, লাওস, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে মেকং নদীতে যৌথ টহল অপরাধ দমনে সামান্য সাফল্যের ইঙ্গিত দেয়।
২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে, সাইবার জালিয়াতির বাড়বাড়ন্ত জান্তার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীনের ধৈর্য পরীক্ষা নিয়েছিল। এ কারণেই যখন থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স বেশ কয়েকটি শহর দখল করে এবং সাইবার জালিয়াতি চক্র নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তখন চীন সরকার তাদের পাশে ছিল। প্রকৃতপক্ষে, জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং–এর প্রধান মিত্র বাই সুচেং–সহ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ১০ জন অংশীদার এবং মিত্রদের বিরুদ্ধে বেইজিং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পরেই যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গেছে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের এই জটিল জাল এবং জান্তা ও সশস্ত্র গোষ্ঠী উভয়ের ওপর বেইজিংয়ের প্রভাব—এমন একটি ত্রিশূল পরিস্থিতি চীন মিয়ানমারের আঞ্চলিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য নিশ্চিতভাবে অগ্রসর হবে না।
এর পরিবর্তে বরং, চীন সীমান্তে শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করতে নেইপিদোকে চাপ দেবে। ভবিষ্যতে বেইজিং সম্ভবত ইস্যু কেন্দ্রিক নীতি অনুসরণ করবে। এ ধরনের পদক্ষেপ মিয়ানমারে শান্তি আনতে সহায়ক হোক বা না হোক তা নিয়ে মাথা ঘামাবে না বেইজিং।
ইঙ্কস্টিক মিডিয়াতে প্রকাশিত চীন বিশেষজ্ঞ জয়শ্রী বোরার নিবন্ধ, অনুবাদ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম
মিয়ানমারে জান্তা–বিরোধী যোদ্ধারা এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তারা চীন সীমান্তের নিকটবর্তী সামরিক চৌকি এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। অভিযান এখনো অব্যাহত। জান্তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের এই সাফল্য মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বেইজিংকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করেছে। কিন্তু কতটা প্রভাব রাখতে পারছে চীন সেটিই এখন গুরুতর প্রশ্ন।
গত বছরের ২৭ অক্টোবর আরাকান আর্মি (এএ), মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) মিলে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স গঠন করে। এই জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে শুরু হয় অপারেশন ১০২৭। মিয়ানমারের শাসক জান্তাকে রীতিমতো কোণঠাসা করে ফেলেছে তারা। জোটের প্রায় ১০ হাজার যোদ্ধা উত্তর শান রাজ্যজুড়ে সামরিক, পুলিশ এবং সরকারি স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করে, এরই মধ্যে প্রায় ১০০টি সামরিক চৌকি গুঁড়িয়ে দিয়ে পরিত্যক্ত অস্ত্রশস্ত্র দখল করেছে।
চীন প্রায় দুই দশক ধরে মিয়ানমারের শান্তি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। গত ১৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরুর পর একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করার আগে পর্যন্ত, চীন সংঘর্ষে জড়িত উভয় পক্ষের খেলা এক মাস পর্যবেক্ষণ করেছে। জান্তা এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধবিরতি শেষ পর্যন্ত জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দ্রুতই স্পষ্ট হয়ে গেছে, বেইজিংয়ের সমাধানগুলো মিয়ানমারের জটিল বাস্তবতার জন্য উপযোগী নয়।
প্রকৃতপক্ষে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার মাত্র একদিন পরে, জান্তা চারটি শহরে প্রায় ১৬টি আর্টিলারি হামলা চালিয়ে চুক্তি ভঙ্গ করে বলে অভিযোগ করেছে টিএনএলএ। যুদ্ধবিরতি কখনোই থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের বাইরের জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে (ইএও নামেও পরিচিত) লড়াই থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
উদাহরণস্বরূপ, গত ২৬ জানুয়ারির ঘটনা বলা যেতে পারে। পা-ও ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (পিএনএলএ) শান রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত সি হেসেং শহরে জান্তার লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৪২৪ দখল করে। এর মধ্যে, পিএনএলএর রাজনৈতিক শাখা, পা-ও ন্যাশনাল লিবারেশন অর্গানাইজেশন ঘোষণা করে যে, তারা ২০১৫ সালের (চীনের মধ্যস্থতায়) জাতীয় যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে।
গত দুই মাসের নানা নাটকীয়তার মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দল—ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি, যারা ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়—তারাও জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণে যোগ দেয়। প্রবাসে জাতীয় ঐক্য সরকারে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির প্রতিনিধি রয়েছে। যদিও নির্বাসিত সরকারের সামরিক ইউনিট, পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স, ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, এই প্রতিরোধকে আরও শক্তিশালী করেছে অপারেশন ১০২৭। উদাহরণস্বরূপ, ফেব্রুয়ারির শুরুতে পিডিএফ বাহিনী জান্তার একটি সামরিক ঘাঁটিতে অভিযান চালিয়ে মান্দালয় অঞ্চলের গ্রাম সান পায়া দখল করে।
চীনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি শর্তগুলো এরই মধ্যে বাস্তবায়ন থেকে বহু দূর সরে গেছে, যুদ্ধের তীব্রতা যেভাবে বাড়ছে তাতে চুক্তিটি সম্পূর্ণ অচল বলেই ধরে নেওয়া যায়।
সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন
তবে এটিও অনস্বীকার্য যে, চীন মিয়ানমারের জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন বা ইএও–এর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। যদিও সেই প্রভাব সীমিত। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রায়শই তীব্র রাজনৈতিক বিভাজন ঘটনার গতিপ্রকৃতি অনুমান করা কঠিন করে তুলেছে।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের আগে, চীন সরকার শান্তি আলোচনায় অংশ নিয়েছিল। ‘২১ শতকের শান্তি সম্মেলন’ নামে পরিচিত সেই উদ্যোগে ইএনও এবং অং সান সু চির এনএলডির নেতৃত্বাধীন সরকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সময়, চীন মিয়ানমারের সবচেয়ে শক্তিশালী অ–রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মিকে (ইউডব্লিউএসএ) যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিল। যদিও ইউডব্লিউএসএ দীর্ঘদিন ধরে বেইজিংয়ের সমর্থন পেয়ে আসছিল, কিন্তু চীন সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে অস্ত্র সংবরণে রাজি করাতে পারেনি।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে এনএলডি নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর শান্তি আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে, চীন ইএও–এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এমনকি বেইজিং জান্তা শাসনকে সমর্থন করেছে এবং দুই বছর ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হোক বা না হোক, চীন ইএনও–কে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে খুব সামান্যই সাফল্য পেয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, উদাহরণস্বরূপ, সাতটি শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর একটি ব্লক—ফেডারেল পলিটিক্যাল নেগোসিয়েশন অ্যান্ড কনসালটেটিভ কমিটির নেতারা চীনের উষ্ণ সম্পর্ক থাকার পরও যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য বেইজিংয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।
কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি ছাড়াও, এফপিএনসিসি সদস্যদের কেউই জান্তার ক্ষমতা দখলের পর গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করেনি। দ্য ফেডারেল পলিটিক্যাল নেগোসিয়েশন অ্যান্ড কনসালট্যাটিভ কমিটি (এফপিএনসিসি) হলো মিয়ানমারের সাতটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনের (ইএও) একটি জোট।
অপারেশন ১০২৭–এর আগে, চীন থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নেতাদেরসহ এফপিএনসিসি নেতাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছিল। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে এফপিএনসিসি সদস্যরা মিয়ানমার সফরকারী চীনা বিশেষ দূতের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই বৈঠকের পর, তাঁরা একটি বিবৃতি দিয়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের সম্পৃক্ততার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। ইএও গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে প্রকাশ্যে সমর্থন না করার পেছনে চীনের প্রভাবকেই যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা বলা যেতে পারে।
অপারেশন ১০২৭ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীন ইএও–এর ওপর কতটা কর্তৃত্ব খাটাতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নিজের প্রভাবের সীমা উপলব্ধি করেই বেইজিং মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে সমর্থন করতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে বোঝানোর আশায় অনানুষ্ঠানিকভাবে ইএও–ঘনিষ্ঠ জাতিগত সম্পর্কযুক্ত প্রতিনিধিদেরই বারবার দূত হিসেবে পাঠায়।
কিন্তু ইএও এখনো মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দৃশ্যপটে অনেকখানিই স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করে। তারা বেইজিংয়ের ছত্রচ্ছায়ায় একটি স্বাধীন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে।
এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ হলো এফপিএনসিসি ২০২৩ সালের মার্চে দেওয়া বিবৃতিতে একটি ফেডারেল গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার ইচ্ছার ওপর জোর দিয়েছিল। তারা দাবি করেছিল, জাতিগত সংখ্যালঘুদের মিয়ানমারের বাকি অংশের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করা উচিত এবং এই প্রকল্পটিকে সমর্থন করা উচিত।
সীমান্ত স্থিতিশীলতা
জান্তা এবং বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার বিরোধের বিষয় এলে চীন সম্ভবত কার্যকরভাবে তার বর্তমান নীতিকেই এগিয়ে নিতে চাচ্ছে। বেইজিং সম্ভবত শিগগিরই মিয়ানমারের সঙ্গে তার সীমান্তে অশান্ত অঞ্চলগুলোতে স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের দিকে মনোনিবেশ করবে। এসব সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ক্রমবর্ধমান অপরাধ সিন্ডিকেটগুলো দীর্ঘদিন ধরে চীনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২১ সালের নভেম্বরে চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয় বলেছিল, ৩১ হাজারের বেশি চীনা নাগরিক উত্তর মিয়ানমারে সক্রিয় অনলাইন জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত। চীন, লাওস, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে মেকং নদীতে যৌথ টহল অপরাধ দমনে সামান্য সাফল্যের ইঙ্গিত দেয়।
২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে, সাইবার জালিয়াতির বাড়বাড়ন্ত জান্তার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীনের ধৈর্য পরীক্ষা নিয়েছিল। এ কারণেই যখন থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স বেশ কয়েকটি শহর দখল করে এবং সাইবার জালিয়াতি চক্র নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তখন চীন সরকার তাদের পাশে ছিল। প্রকৃতপক্ষে, জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং–এর প্রধান মিত্র বাই সুচেং–সহ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ১০ জন অংশীদার এবং মিত্রদের বিরুদ্ধে বেইজিং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পরেই যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গেছে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের এই জটিল জাল এবং জান্তা ও সশস্ত্র গোষ্ঠী উভয়ের ওপর বেইজিংয়ের প্রভাব—এমন একটি ত্রিশূল পরিস্থিতি চীন মিয়ানমারের আঞ্চলিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য নিশ্চিতভাবে অগ্রসর হবে না।
এর পরিবর্তে বরং, চীন সীমান্তে শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করতে নেইপিদোকে চাপ দেবে। ভবিষ্যতে বেইজিং সম্ভবত ইস্যু কেন্দ্রিক নীতি অনুসরণ করবে। এ ধরনের পদক্ষেপ মিয়ানমারে শান্তি আনতে সহায়ক হোক বা না হোক তা নিয়ে মাথা ঘামাবে না বেইজিং।
ইঙ্কস্টিক মিডিয়াতে প্রকাশিত চীন বিশেষজ্ঞ জয়শ্রী বোরার নিবন্ধ, অনুবাদ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
১ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৭ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
১২ দিন আগে