সাদিয়া সুলতানা
জাপানি বংশোদ্ভূত নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ব্রিটিশ কথাসাহিত্যিক কাজুও ইশিগুরোর কাছে স্মৃতি সব সময়ই মূল্যবান। তাঁর ভাষ্যে, ‘স্মৃতি হচ্ছে এমন এক ছাঁকনি, যার মাধ্যমে আমরা জীবনটাকে একেবারে নিংড়ে গভীরে গিয়ে দেখতে পারি।’ উপলব্ধি করি, এই অনুভব থেকেই গল্পকারেরা স্মৃতির দিকে ধাবিত হন। একজন গল্পকার একটা আখ্যানকে স্মৃতি, কল্পনা আর বাস্তবতার ছাঁচে ফেলে নতুনভাবে নির্মাণ করেন, যা পাঠকের কাছে হয়ে ওঠে গল্প। তাই একটা গল্প লেখকের নিজ হাতে তৈরি বা বানানো হলেও গল্পকে কিন্তু পাঠক সরাসরি বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করতে পারেন না।
এ প্রসঙ্গে কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমেদের গল্প সংকলন ‘শিশিযাপন’-এর মুখবন্ধে উল্লিখিত কিছু কথা উদ্ধৃত করছি; ‘গল্প যেহেতু একটা শিল্প এবং অন্য সব শিল্পের মতোই বানানো, একজন পাঠক জেনে-বুঝেই সেই বানানো চালচিত্রে ঢুকে পড়েন। ফলে কাছের বা দূরের ঘটমান অথবা ঘটে যাওয়া নানা বিষয়-আশয় নিয়ে গল্পকারের বয়ান তার কাছে আর বানোয়াট ঠেকে না।’ এভাবে স্বকীয় কৌশলে নিজের মতোই গল্প বলেন গল্পকার ওয়াসি আহমেদ। তাঁর ‘শিশিযাপন’ বইয়ের গল্পগুলো পড়তে পড়তে মনে হয় তিনি আসলে গল্প লেখেন না, বলেন। তাই পাঠক খুব সহজেই তাঁর গল্পে একাত্ম হয়ে পড়েন।
‘শিশিযাপন’ গল্প সংকলনে মোট তেরোটি গল্প সংকলিত হয়েছে। গল্পগুলোর মধ্যে নামগল্পটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অভিনব কৌশলে গল্পকার গল্প শুরু করে প্রথমেই পাঠককে বিচলিত করে তোলেন—‘চকমধুরার ধু-ধু প্রান্তর চিরে রাস্তা হবে বলে সেদিন ইটবোঝাই প্রথম ট্রাকটা এলো, দুর্গম এ গ্রামের লোকজন চৈত্র মাসের গা-পোড়ানো গরমেও একটা হিম শিউরানি টের পেয়েছিল।’ এই শিউরানি বাড়তে থাকে যখন পাঠক আবিষ্কার করে, ওই গ্রামের লোকেরা কেন শিশি খায়। এরপর কী হয় কে মরে, বাঁচে, কে বেহুঁশ হয় তা খুঁজে পেতে হন্যে হয়ে পাঠক গল্পের সমাপ্তিতে পৌঁছে বিমূঢ় হতে বাধ্য হন।
‘মিহি-মসৃণ প্রহেলিকা’ গল্পটি উন্নয়নের জোয়ারের রেশ লাগা এক গাঁয়ের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে। এই গল্পের মিহি-মসৃণ প্রহেলিকা পাঠককে নিবিড় মনোযোগী আর কৌতূহলী করে তুললেও ‘মেহেরজানের পদ্মসুনা’ পাঠককে করে তোলে ধীরস্থির। গল্পের বর্ণনারীতি অপেক্ষাকৃত সরল, সোজাসাপটা। ‘মানুষের বাচ্চা’ গল্পটি পাঠ করতে গিয়ে উপলব্ধি করি, একজন গল্পকার গতানুগতিক প্লটকেও ভাষাশৈলীর গুণে অনন্য করে তুলতে পারেন।
ওয়াসি আহমেদের গল্প বলার ভঙ্গিটা নিজস্ব। ‘কার্নিভাল’ গল্পটিতে ভঙ্গিটা আরও স্বকীয়, আরও অসামান্য হয়ে ওঠে। পুলিশের কাছে ধৃত হয়ে ‘কেইস খায়’ সালাম মিরধা; এ এক আশ্চর্য কার্নিভাল। ‘নতুন খেলা’ গল্পে বাচ্চাদের সঙ্গে ভিন্নধর্মী এক খেলায় অংশ নিতে গিয়ে মোর্শেদ অদ্ভুত এক বিভ্রমের ভেতরে পড়ে যায়। এই খেলার খেলোয়াড়েরা লুকোচুরিতে অংশ নিলেও খেলার নিয়মকানুন বুঝে উঠতে মোর্শেদকে বেগ পেতে হয়। শেষ পর্যন্ত কী হয়, কীভাবে পরিত্রাণ পায় সে তা পড়তে গিয়ে শিউরে উঠতে হয়।
‘সহচর’ গল্পে পথ চলতে চলতে জামিলের মনে হয় কেউ তার পিছু নিয়েছে, আবার এক ব্রিফকেসওয়ালাও তাকে দেখে ছুটতে থাকে। কে কাকে কেন তাড়া করছে তা খুঁজতে গিয়ে জামিলের মতো ধাঁধায় পড়তে হয়। ‘হত্যাকাণ্ড যেভাবে ঘটার কথা সেভাবেই’ গল্পে হত্যাকাণ্ডটি আদৌ কীভাবে ঘটে, স্বপ্নে নাকি বাস্তবে তা নিয়ে পাঠককে ধন্দে পড়তে হয়।
নির্লিপ্ত আর কিছুটা একরোখাভাবে মানুষের জটিল মনস্তত্ত্ব, সামাজিক অসংগতি আর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে কটাক্ষ করে গল্প বলে গেলেও ওয়াসি আহমেদ গল্পের ভেতরে পাঠককে ঢোকাতে থাকেন সুকৌশলে, এমনকি তিনি পাঠককে দম নেওয়ার জন্য গল্পের ফাঁকে অনেকটা ‘স্পেস’ দেন, তাই গল্পে অনায়াসেই তিনি লিখে ফেলেন এমন বাক্য—‘কাঁচির কিচকিচের সাথে তারা নিজেদের সঙ্গে বেদম বাতচিত চালায়।’ এই যে সরল, সরস বাক্য নির্মাণ করছেন গল্পকার, এর মাধ্যমে তিনি কিন্তু পাঠককে তাঁর লেখার সঙ্গে একাত্ম করে তুলছেন আর পাঠক নিজের অজান্তেই গল্পের জটিল সব মোড়ে ঢুকে পড়ে ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছেন আখ্যানের সঙ্গে তার সকল ‘অন্তরঙ্গ দূরত্ব’।
‘শিশিযাপন’-এর গল্পগুলো পড়তে পড়তে আবিষ্কার করি, গল্প বলার কায়দা অনেক। শ্লেষাত্মক ঢঙেও খুব জটিল কোনো বিষয়কে গল্পের ছকে বেঁধে ফেলা যায়। আর এসব গল্প আদতে পাঠককে স্বস্তি দেওয়ার জন্য লেখা নয়, পাঠকের বরফজমাট ভাবনায় চির ধরাতেই যেন গল্পকার একেকটি গল্প ফেঁদেছেন।
জাপানি বংশোদ্ভূত নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ব্রিটিশ কথাসাহিত্যিক কাজুও ইশিগুরোর কাছে স্মৃতি সব সময়ই মূল্যবান। তাঁর ভাষ্যে, ‘স্মৃতি হচ্ছে এমন এক ছাঁকনি, যার মাধ্যমে আমরা জীবনটাকে একেবারে নিংড়ে গভীরে গিয়ে দেখতে পারি।’ উপলব্ধি করি, এই অনুভব থেকেই গল্পকারেরা স্মৃতির দিকে ধাবিত হন। একজন গল্পকার একটা আখ্যানকে স্মৃতি, কল্পনা আর বাস্তবতার ছাঁচে ফেলে নতুনভাবে নির্মাণ করেন, যা পাঠকের কাছে হয়ে ওঠে গল্প। তাই একটা গল্প লেখকের নিজ হাতে তৈরি বা বানানো হলেও গল্পকে কিন্তু পাঠক সরাসরি বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করতে পারেন না।
এ প্রসঙ্গে কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমেদের গল্প সংকলন ‘শিশিযাপন’-এর মুখবন্ধে উল্লিখিত কিছু কথা উদ্ধৃত করছি; ‘গল্প যেহেতু একটা শিল্প এবং অন্য সব শিল্পের মতোই বানানো, একজন পাঠক জেনে-বুঝেই সেই বানানো চালচিত্রে ঢুকে পড়েন। ফলে কাছের বা দূরের ঘটমান অথবা ঘটে যাওয়া নানা বিষয়-আশয় নিয়ে গল্পকারের বয়ান তার কাছে আর বানোয়াট ঠেকে না।’ এভাবে স্বকীয় কৌশলে নিজের মতোই গল্প বলেন গল্পকার ওয়াসি আহমেদ। তাঁর ‘শিশিযাপন’ বইয়ের গল্পগুলো পড়তে পড়তে মনে হয় তিনি আসলে গল্প লেখেন না, বলেন। তাই পাঠক খুব সহজেই তাঁর গল্পে একাত্ম হয়ে পড়েন।
‘শিশিযাপন’ গল্প সংকলনে মোট তেরোটি গল্প সংকলিত হয়েছে। গল্পগুলোর মধ্যে নামগল্পটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অভিনব কৌশলে গল্পকার গল্প শুরু করে প্রথমেই পাঠককে বিচলিত করে তোলেন—‘চকমধুরার ধু-ধু প্রান্তর চিরে রাস্তা হবে বলে সেদিন ইটবোঝাই প্রথম ট্রাকটা এলো, দুর্গম এ গ্রামের লোকজন চৈত্র মাসের গা-পোড়ানো গরমেও একটা হিম শিউরানি টের পেয়েছিল।’ এই শিউরানি বাড়তে থাকে যখন পাঠক আবিষ্কার করে, ওই গ্রামের লোকেরা কেন শিশি খায়। এরপর কী হয় কে মরে, বাঁচে, কে বেহুঁশ হয় তা খুঁজে পেতে হন্যে হয়ে পাঠক গল্পের সমাপ্তিতে পৌঁছে বিমূঢ় হতে বাধ্য হন।
‘মিহি-মসৃণ প্রহেলিকা’ গল্পটি উন্নয়নের জোয়ারের রেশ লাগা এক গাঁয়ের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে। এই গল্পের মিহি-মসৃণ প্রহেলিকা পাঠককে নিবিড় মনোযোগী আর কৌতূহলী করে তুললেও ‘মেহেরজানের পদ্মসুনা’ পাঠককে করে তোলে ধীরস্থির। গল্পের বর্ণনারীতি অপেক্ষাকৃত সরল, সোজাসাপটা। ‘মানুষের বাচ্চা’ গল্পটি পাঠ করতে গিয়ে উপলব্ধি করি, একজন গল্পকার গতানুগতিক প্লটকেও ভাষাশৈলীর গুণে অনন্য করে তুলতে পারেন।
ওয়াসি আহমেদের গল্প বলার ভঙ্গিটা নিজস্ব। ‘কার্নিভাল’ গল্পটিতে ভঙ্গিটা আরও স্বকীয়, আরও অসামান্য হয়ে ওঠে। পুলিশের কাছে ধৃত হয়ে ‘কেইস খায়’ সালাম মিরধা; এ এক আশ্চর্য কার্নিভাল। ‘নতুন খেলা’ গল্পে বাচ্চাদের সঙ্গে ভিন্নধর্মী এক খেলায় অংশ নিতে গিয়ে মোর্শেদ অদ্ভুত এক বিভ্রমের ভেতরে পড়ে যায়। এই খেলার খেলোয়াড়েরা লুকোচুরিতে অংশ নিলেও খেলার নিয়মকানুন বুঝে উঠতে মোর্শেদকে বেগ পেতে হয়। শেষ পর্যন্ত কী হয়, কীভাবে পরিত্রাণ পায় সে তা পড়তে গিয়ে শিউরে উঠতে হয়।
‘সহচর’ গল্পে পথ চলতে চলতে জামিলের মনে হয় কেউ তার পিছু নিয়েছে, আবার এক ব্রিফকেসওয়ালাও তাকে দেখে ছুটতে থাকে। কে কাকে কেন তাড়া করছে তা খুঁজতে গিয়ে জামিলের মতো ধাঁধায় পড়তে হয়। ‘হত্যাকাণ্ড যেভাবে ঘটার কথা সেভাবেই’ গল্পে হত্যাকাণ্ডটি আদৌ কীভাবে ঘটে, স্বপ্নে নাকি বাস্তবে তা নিয়ে পাঠককে ধন্দে পড়তে হয়।
নির্লিপ্ত আর কিছুটা একরোখাভাবে মানুষের জটিল মনস্তত্ত্ব, সামাজিক অসংগতি আর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে কটাক্ষ করে গল্প বলে গেলেও ওয়াসি আহমেদ গল্পের ভেতরে পাঠককে ঢোকাতে থাকেন সুকৌশলে, এমনকি তিনি পাঠককে দম নেওয়ার জন্য গল্পের ফাঁকে অনেকটা ‘স্পেস’ দেন, তাই গল্পে অনায়াসেই তিনি লিখে ফেলেন এমন বাক্য—‘কাঁচির কিচকিচের সাথে তারা নিজেদের সঙ্গে বেদম বাতচিত চালায়।’ এই যে সরল, সরস বাক্য নির্মাণ করছেন গল্পকার, এর মাধ্যমে তিনি কিন্তু পাঠককে তাঁর লেখার সঙ্গে একাত্ম করে তুলছেন আর পাঠক নিজের অজান্তেই গল্পের জটিল সব মোড়ে ঢুকে পড়ে ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছেন আখ্যানের সঙ্গে তার সকল ‘অন্তরঙ্গ দূরত্ব’।
‘শিশিযাপন’-এর গল্পগুলো পড়তে পড়তে আবিষ্কার করি, গল্প বলার কায়দা অনেক। শ্লেষাত্মক ঢঙেও খুব জটিল কোনো বিষয়কে গল্পের ছকে বেঁধে ফেলা যায়। আর এসব গল্প আদতে পাঠককে স্বস্তি দেওয়ার জন্য লেখা নয়, পাঠকের বরফজমাট ভাবনায় চির ধরাতেই যেন গল্পকার একেকটি গল্প ফেঁদেছেন।
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
২ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৩ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২০ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২০ দিন আগে