এই বইটি যেসব কারণে কিনবেন না

অর্ণব সান্যাল
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬: ৫৫

মোজাহিদুল ইসলাম একটি বই লিখেছেন। এই বই লিখেছেন বা বের করেছেন– বিষয়টি এখন বেশ ক্লিশে। একুশের বইমেলার সময় এলে অনেকেই এখন বই বের করছেন। তা তিনি লেখক হোন, বা না–ই হোন। সেদিক থেকে মোজাহিদুলের নামে বই বের হওয়া নতুন কোনো বিষয় নয়। কথা হলো, পাঠক হিসেবে কেউ এই বই কিনতে আগ্রহী হবেন কিনা। এ বিষয়টি নিয়েই এবার আলোচনা করা যাক।

শিরোনাম দেখেই বুঝতে পারছেন যে, এই লেখায় বইটি না কেনার বিষয়টিকেই কিঞ্চিৎ উৎসাহিত করা হবে। এর কিছু কারণও আছে। লেখক মোজাহিদুল ইসলাম নিজের প্রথম গল্পের বইয়ে নির্বাকের পাশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কথা হারিয়ে ফেলা মানুষের পাশ দাঁড়িয়ে থাকাটা বেশ যন্ত্রণার। যিনি কথা হারান, তিনি যেমন যন্ত্রণা ভোগ করেন, একটি বোবা পৃথিবীতে প্রবেশ করা আপাত সরব ব্যক্তিটিও তার থেকে ব্যতিক্রম হতে পারেন না। তাই ‘নির্বাকের পাশে’ শেষ করতে করতে পাঠকদেরও ঘুরে আসা হবে একটি বোবা পৃথিবীর পথঘাটে, যেখানে কথারা আসলে পুরোপুরি খেই হারিয়ে ফেলেছে। নৈঃশব্দ্যের সেখানে অবাধ রাজত্ব, মৌনতাই তাই পরম আকাঙ্ক্ষিত।

এই মৌনতার আপনি কোনো তল খুঁজে পাবেন না। যাদের ঘিরে আপনার নিজস্ব দুনিয়া গড়ে ওঠে, তারা যদি হুট করে একদিন নাই হয়ে যায়–তখন কেমন হবে? কী ভাবছেন, মৃত্যুর কথা তো? নাহ্, মৃত্যু নয়। প্রাণ পরিত্যাগের চেয়েও কঠিন আসলে যাপিত জীবনকে ছেড়ে যাওয়া। এর অর্থ হচ্ছে, ওই জীবনকাঠামোর সকল উপাদানকেই আপনি ত্যাজ্য করলেন। যিনি ত্যাজ্য করেন, তার তুলনায় যারা ত্যাজ্য হয়– তাদের মনোযন্ত্রণা সত্যিই ভিন্ন। সেখানে শুধুই শূন্যতা ভর করে। যদিও বিজ্ঞান বলে, দুনিয়ায় শূন্যস্থান বলতে কিছু নেই। কিন্তু মানুষের মন কি আর সব সময় বৈজ্ঞানিক সূত্র মেনে চলে!

মোজাহিদুলের গল্পগুলোতে এমন শূন্যতা আপনি হরেদরে পাবেন। সেই শূন্যতাকে যদি অস্বীকার করতে যান, তবে অবশ্যই আপনাকে অতিসত্বর নাসা’য় যেতে হবে! কারণ আপনি যে তখন এই গ্রহের প্রাণীই নন। নইলে আর মানবজীবনের এ অমোঘ সত্যকে উপেক্ষা করলেন কীভাবে? সে ক্ষেত্রে এমন নতুন প্রকরণের মানুষ নিয়ে গবেষণা হওয়াই উচিত। বিবর্তনের ধারা অনুযায়ী তা সম্ভবও বটে।

তবে আমরা অনেকেই ভেতরে-ভেতরে পলায়নপর। পালিয়ে বেড়ানো আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি। এটি দোষেরও কিছু নয়। পালিয়ে যদি ভালো থাকা যায়, আয়নায় নিজের চেহারার বদলে অন্য আদল দেখে খুশি থাকা যায়– তবে তা একেবারে বাতিলযোগ্য কোনো কাজ নয়। এভাবেই তো দুনিয়াটা চলছে এখন। যদি তেমনটাই থাকতে চান, নিজেকে না চিনেই পুরো জীবনটা কাটিয়ে ফেলতে চান– তবে ‘নির্বাকের পাশে’ কিনে সময় ও অর্থ নষ্ট করার কোনো মানেই নেই। সে ক্ষেত্রে আপনাদের প্রতি আমার একমাত্র পরামর্শ, এই বইটি কিনবেন না মোটেই। ধারেকাছেও যাবেন না একেবারে।

কারণ, মোজাহিদুলের ‘নির্বাকের পাশে’ পড়ার অর্থই হলো, এক বিষণ্ন বিকেলে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা আনমনে। সেই নিশ্চুপ দাঁড়ানোর কোনো উদ্দেশ্য নেই, বিধেয়ও নেই। কে আর জ্ঞাতসারে মন খারাপের কালো মেঘের সাগরে খাবি খেতে চায়, বলুন! তা যতই আপনি তাকে আয়নার লোভ দেখান না কেন!

সুতরাং, বইমেলার ১৯০ নম্বর স্টলে ‘নির্বাকের পাশে’ পাওয়া গেলেও ওপরের বিষয়গুলোতে অ্যালার্জি থাকলে এই বই না কেনাই ভালো হবে। ভালোবেসে পরামর্শ দিলাম, বাকিটা আপনাদের মর্জি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

বিমানবন্দরে সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হয়রানির তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৩৫ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত