হাবিবুল্লাহ রাসেল
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার অংশবিশেষ জুড়ে এর অবস্থান। এ বিল বিভিন্ন জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত ছোট-বড় অনেকগুলো বিলের সমষ্টি। বর্ষাকালে তা প্রায় ৩৬৮বর্গ কিমি বিস্তৃত একটি জলরাশিতে পরিণত হয়।
‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’ উপন্যাসজুড়ে ঔপন্যাসিক জাকির তালুকদার চলনবিলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আখ্যান তুলে ধরেছেন। দিনের পর দিন এই মানুষগুলো শোষণ-বঞ্চনার শিকার হতে হতে জর্জর। ভূমিদস্যুরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চারপাশে থেকে তাদের ভূমি দখল করে নেয়; আছে সরকারি দলের ক্যাডার বাহিনী আর বিপ্লবী দলের নাম ভাঙিয়ে চরমপন্থীদের উৎপাত—খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি-চাঁদাবাজি; আবার ইসলামের নাম করে বঙ্গ ভাইয়ের নিষ্ঠুর নির্যাতন-হত্যা; আছে পুলিশের উৎপীড়ন। বিলবাসী মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না—কিছুই করার থাকে না। বছরের অধিকাংশ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে এসব অঞ্চল। তাই দুর্ভোগের সীমা থাকে না। বছরের একবার ধান ফলে। বছরে এই একবারই তাদের উপার্জন। সেই ধানই তাদের বছরজুড়ে ভাত দেয়, ধানের টাকায় পরিবারের সব জিনিস কেনা হয়, যাবতীয় খরচ চলে এই ধানের টাকায়।
পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ স্বাধীনতার পরে নাম পাল্টে হয় অর্পিত সম্পত্তি আইন। ‘পাকিস্তান প্রতিরক্ষা অধ্যাদেশ ১৯৬৫-এর ১৮২ বিধি মোতাবেক তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান এলাকার যেসব নাগরিক ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ তারিখে ভারতে অবস্থানরত ছিলেন বা ওই তারিখ হতে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ পর্যন্ত ভারতে গমন করেছিলেন, তাঁদের যাবতীয় সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি বলে গণ্য হয় এবং উহার ব্যবস্থাপনা উপ-তত্ত্বাবধায়কের ওপর ন্যস্ত করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আইনের কিছুটা সংশোধনী আনা হয়।’
এই কালো আইনে সরকার বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলে নিয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ভূমিদস্যুরা জাল দলিল তৈরি করে আদালতের মামলা-মোকদ্দমা রুজু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ছত্রচ্ছায়ায় এ সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে, যাদের সম্পত্তি এই কালো আইনের আওতায়ও আসে না। লেখক উপন্যাসে গৌরাঙ্গ চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে বিষয়টিকে গভীরভাবে তুলে ধরেছেন। গৌরাঙ্গ সৎ কৃষক। হিন্দু-মুসলিম সবার কাছেই তিনি প্রিয়। যদিও গৌরাঙ্গর জমি ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ নামক কালো আইনের আওতায় আসে না, তবুও এই আইনের আওতায় ফেলে ক্ষমতা ও কৌশলে সোলেমান আলি আর আবদুল জব্বার তার পৈতৃক জমি দখল করে নেয়। এই জমিই গৌরাঙ্গের পরিবারের অন্ন জোগায়, এই জমিই তার সব। সম্পত্তি হারিয়ে গৌরাঙ্গ একদম নিঃস্ব হয়ে যায়। অফিসে অফিসে ধরনা দিয়েও যখন কোনো অগ্রগতি হয় না, একদম ভেঙে পড়েন তিনি। খাবার জোটে না পরিবারের। মস্তিস্ক বিকৃত হয়ে পাগলাগারদে কাটায় কিছুদিন। কিছুটা উন্নতি হলে তাকে বাড়ি আনা হয়। কিন্তু গৌরাঙ্গকে আর চেনা যায় না। শুকিয়ে হাড্ডিসার হয়ে যায়। উঠে দাঁড়ানোর আর শক্তি থাকে না তার। বারুহাসের মেলা থেকে গৌরাঙ্গের অসহায় মেয়েদের খাবার, চুড়ি-ফিতা আর খেলনা কিনে দেয় কদম আর আবদুর রহিম। মেয়েরা বাবাকে দেখায় খেলনাগুলো। গৌরাঙ্গের কেবল চোখ পড়ে খেলনার লাঙলটির ওপর। লেখকের ভাষায়, ‘হাতে নেয় ছোট্ট লাঙলটা। হাতে তুলে নিয়ে একেবারে চোখের কাছে ধরে। তার চোখ জ্বলজ্বল করছে। হাত দুটো তার এখন আরও বেশি বেশি কাঁপছে অজানা উত্তেজনায়। হঠাৎ সে বারান্দা ছেড়ে উঠোনের মাটিতে নেমে আসে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে। হাতের খেলনা লাঙলটা মাটিতে ছোঁয়ায় তারপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে মাটির ওপর দিয়ে খেলনা লাঙলটি ঠেলতে থাকে অবিকল জমিচষার ভঙ্গিতে। ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে ঘুরতে থাকে লাঙলের সঙ্গে। মুখে শব্দ—হেট্! হেট্!’
এই ‘হেট্! হেট!’ শব্দ আমাদের মস্তিস্কজুড়ে ঘুরপাক খায়, আর লাঙলের ফলার মতো জ্বলজ্বল করে দেখিয়ে দেয়—দেখো বাংলার কৃষক দেখো, যে তোমার খাদ্য জোগায়, আমৃত্যু যে লাঙল-জোয়াল, মাঠ আর ফসলের স্বপ্ন দেখে। দেখো প্রকৃত স্বদেশ দেখো।
গাঁয়ের ভালো-মন্দ সবকিছুর সাথেই জড়িয়ে থাকে কদম আর আবদুর রহিম। আবদুর রহিম দেখে দেখে পড়তে পারলেও কদম একদমই লেখাপড়া জানে না। তবু গাঁয়ের এই নিম্নস্তরের মানুষের অন্তরে রয়েছে মানবিকতা বোধ। যেমনটি রয়েছে তিসিখালি মাজারের খাদেম ও তার পরিবারের। অপরিচিত, অসহায় বোবা মেয়েটিকে আশ্রয় দিতে গিয়ে হাজতবাস করেও খাদেম যখন কদম আর আবদুর রহিমের উদ্দেশে বলেন, ‘মিয়্যাডারে তোরা সামলায়া রাখিস। বেচারি অনেক কষ্ট পাইছে। আর য্যান সর্বহারা কিংবা পুলিশের হাতে না পড়ে। তাহলে যে কী ঘটাব মিয়্যাডার কপালে তা অল্লামালিকই জানে।’ তখন মানবতার এক উজ্জ্বল মূর্ত প্রতীক দেখতে পাই। পুলিশ খাদেম সাহেবকে মারধর করেছে কি না, কদম জানতে চাইলে খাদেম যখন বলেন, ‘নমরুদের জেলখানায় মুছা নবীর ওপর যত অত্যাচার হইছিল, আমার ওপর তত অত্যাচার হয়নি। মুছা নবীর যত কষ্ট হইছিল, ততটা কষ্ট আমার হয়নি।’ কদম-রহিমের সাথে তখন পাঠকের চোখও ভিজে ওঠে।
কদম আর খাদেম সাহেবের পানিতে কুড়িয়ে পাওয়া বোবা কিশোরীকে ঘিরে যে রহস্যের সৃষ্টি হয়, কমরেড বিজয় ও কমরেড তপন কর্তৃক এন্তাজ ও তার চার প্রধান সহযোগীর হত্যার মাধ্যমে সে রহস্যের জট খুলে।
লেখক এ উপন্যাসে একটি শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখেন। যেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, ধনী, গরিবের বৈষম্য থাকবে না; যেখানে কৃষকের এক ইঞ্চি জমিও অন্যের দখলে থাকবে না। উপন্যাসে বিপ্লবী দলের চোখে সেই স্বপ্ন ফুটে ওঠে— ‘আমাদের পার্টির চূড়ান্ত লক্ষ্য মার্ক্সবাদ, লেলিনবাদ ও মাও জে দংয়ের চিন্তাধারার ভিত্তিতে সর্বহারা শ্রমিক কৃষকের নের্তৃত্বে বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা। আমরা চাই বা না চাই, ইতিহাসের দ্বান্দ্বিক পথে সমাজতন্ত্র এ দেশে আসবেই।... মিশে যেতে হবে কৃষকদের সঙ্গে, খেতমজুরদের সঙ্গে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তাদের নিয়েই গড়ে তুলতে হবে কৃষক ও খেতমজুরদের খণ্ড খণ্ড বিপ্লবী গেরিলা বাহিনী। এই বাহিনী শ্রেণিশত্রু খতমের পাশাপাশি খাসজমি দখল, ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বণ্টনসহ সামাজিক সুশাসনের মডেল স্থাপন করবে একেকটি মুক্তাঞ্চলে।’
এই বিপ্লবী দলের নের্তৃত্বেই গৌরাঙ্গ তার হারানো জমি ফিরে পায়। হারানো জমি পেয়ে গৌরাঙ্গ যেন সুস্থ হয়ে যায়। সে আবার লাঙল ধরে, চারা লাগায়, যত্নে যত্নে সেই চারা বড় হয়, ধানে শিষ আসে, তারপর পাকাধানে মাঠ সোনালি হয়ে যায় একদিন। মনে হয় সত্যিকারের বিপ্লব এসেছে, অসহায় মানুষের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু না! একটা বল্লম পেছন থেকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। উবু হয়ে বসে ছিল গৌরাঙ্গ। এবার প্রণামের ভঙ্গিতে কপালটা ঠেকে যায় ধানের গোড়ার মাটিতে। কদমের মাথাটাও দু-ফাঁক হয়ে যায় ভূমিদস্যু সোলেমান আলি আর আবদুল জব্বারের ভাড়াটে লাঠিয়ালের নিখুঁত লাঠির ঘায়ে।
তখন বিপ্লবের মশালটা নিবু নিবু হয়ে আসে। আর যখন আবদুর রহিম দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে পুলিশের কাছে বললেও এক পা-ও নড়ে না পুলিশ, তখন বোঝা যায় সাধারণ মানুষের কোনো অধিকার থাকতে নেই। তখন বাতাসে বাতাসে যেন ভেসে বেড়ায় গৌরাঙ্গের পাগলকালীন প্রলাপ, ‘ঠাকুরেরে দীক্ষা দিয়্যা কিছু হয় না। কাম হয় ডিসিরি দিয়্যা, এমপিরে দিয়্যা। ঠাকুর শালার কোনো ক্ষমতাই নাই।’
কিংবা ধর্মপ্রাণ আবদুর রহিমের চিন্তাটাই তখন জ্বলে ওঠে, ‘আল্লা নাকি বিপদে ফেলে পরীক্ষা নেয় বান্দার।...আচ্ছা সব পরীক্ষা কি খালি গরিব মানুষদেরই দিতে হয়!’
উপন্যাসজুড়ে আব্দুর রহিম একটি ব্যতিক্রম চরিত্র। সে চলনবিলের কাউয়াটিকরি গ্রামের ধর্মপ্রাণ একজন নবীন যুবক। চার শ বছর ধরে জনশ্রুত লোককাহিনিকে ভিত্তি ধরে একটি কুদরতি তাবিজ খুঁজে বেড়ায় সে। তার ধারনা, এই চলনবিলের কোথাও না কোথাও লুকানো আছে সেই তাবিজটি। মোটা কাঁথায় আপাদমস্তক ঢেকে চোখ মেললে যেমন অন্ধকার, সে রকম অন্ধকারে, দু-একটা হারিকেনের আলো ছাড়া কোথাও যখন অস্তিত্ব থাকে না কোনো আলোর, তখন কলবে জিকির নিয়ে অন্ধকারের সঙ্গে আরেক অন্ধকারের ছায়া হয়ে তিসিখালি মাজারের এমাথা থেকে ওমাথা হেঁটে বেড়ায় আবদুর রহিম। তার দৃঢ় বিশ্বাস আমল করে গেলে একদিন তাবিজের সন্ধান পাবেই। সেই তাবিজের গুণেই চলনবিলবাসী মানুষ রোগ-শোক, বালা-মুসিবত থেকে আরোগ্য পাবে। তাবিজের সন্ধ্যান না পেলেও যেখানে মানুষ বিপদে পড়ে, সেখানেই ছুটে যায় আব্দুর রহিম। কাসাসোল আম্বিয়া পড়তে পড়তে প্রায় মুখস্ত হয়ে গেছে, নেয়ামুল কোরআন ঘেঁটে সে বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য নিদান বের করে। সম্পূর্ণ ধর্মপ্রাণ হয়েও একটি অসাম্প্রদায়িক চরিত্র আব্দুর রহিম। কদম অসাম্প্রদায়িক হলেও ধর্মপ্রাণ নয়। সে ক্ষেত্রে আব্দুর রহিম চরিত্রটি পাঠককে অবাক করবে। অচেনা বোবা মেয়ের বিপদে যেমন, তেমনি গৌরাঙ্গের বিপদেও সে কদমের সাথে ছুটে যায়, গৌরাঙ্গ ও তার পরিবারের জন্য তার প্রাণ কাঁদে, রাত জেগে নেয়ামুল কোরআন ঘেঁটে আরোগ্যের দোয়া খুঁজে। ধর্ম নয় তার কাছে মানুষই বড় হয়ে ওঠে।
আব্দুর রহিম শুধু ধর্মপ্রাণ নয়, বিপ্লবীও। ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে গৌরাঙ্গের জমি দখল নেয়ার জন্য যখন একসময়ের বিপ্লবী আলাউদ্দিন মাস্টার ভীতি নিয়ে রাজি হন না, ঠিক তখনই সকলকে বিস্মিত করে কদমের সাথে আব্দুর রহিমও বিপ্লবীদের সাথে মত দেয় এবং জমি দখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আব্দুর রহিম অসীম সাহসিকতার মূর্ত প্রতীক। চলনবিলে বঙ্গভাইর আগমন ঘটে। তাকে প্রত্যক্ষ সহায়তা দেয় মন্ত্রী, থানা-পুলিশ। তার বাহিনী এলাকাজুড়ে চালায় তাণ্ডবলীলা—একের পর এক হত্যা। কথা বলার সাহস তো দূরের কথা, দারুণ ভয়ে মানুষ নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে দিনযাপন করে। তবু একদিন যাবতীয় ভয় দূরে ঠেলে অসীম সাহসিকতা নিয়ে বঙ্গভাইয়ের সামনে দাঁড়ায় আব্দুর রহিম, জীবনে প্রথম কারও প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে বলে, ‘এই মসজিদ আমার। দিনরাত খাটাখাটনি করি আমি এই মসজিদের জন্যে টাকা তুলি। মানুষের কাছে হাত পাতি। এই মসজিদ আমার। তুমি একটা শয়তান, নমরুদ-ফেরাউন। জোর কইর্যা দখল নিছো এই মসজিদের। তুমি চইল্যা যাও এক্ষুনি।’ আবদুর রহিম নির্যাতিত হয়। আর বাস্তবে বঙ্গভাইয়ের পরিণতি কী হয়েছে তা আমাদের জানা হলেও উপন্যাসের বঙ্গ ভাইয়ের পরিণতি কী হয় তা আমাদের জানা হয় না।
উপন্যাসটি পাঠ করলে আবদুর রহিম চরিত্রটি পাঠককে ভাবাবে বারবার। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ, যে মসজিদের আজান দেয়, ঘুরে ঘুরে চাঁদা তোলে, একটি তাবিজই যার ধ্যান-জ্ঞান, যে কলবে জিকির তোলে আর নেয়ামুল কোরআন থেকে আরোগ্য খোঁজে, সে মানুষের মধ্যে এত মানবতাবোধ, এত অসাম্প্রদায়িক ও বিপ্লবী চেতনা কোথা থেকে আসে!
সোলেমান-জব্বারের লাঠিয়াল কর্তৃক গৌরাঙ্গের খুন আর কদম আহত হওয়ার পর আব্দুর রহিম তিন দিন লুকিয়ে থাকে। তারপর বাড়ি থেকে বিদায় নেয়, মনে মনে বলে, আমি পালাচ্ছি না কদম! আমি পালাচ্ছি না গোরাদা! আমি তাবিজের খোঁজে বের হচ্ছি। তাবিজ না নিয়ে আমি আর ঘরে ফিরব না।’ তখন মনে হয়, দরিদ্র মানুষের মুক্তি আরও বহু দূর, হাঁটতে হবে এখনো দীর্ঘ দীর্ঘ পথ। ‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’-এ একটি তাবিজ যেন হয়ে ওঠে মুক্তির প্রতীক।
হাঁটতে থাকা মানুষের গান। জাকির তালুকদার। প্রচ্ছদ: রেহনুমা প্রসূন। প্রকাশক: আদর্শ। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২০। মূল্য: ৩৪০ টাকা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার অংশবিশেষ জুড়ে এর অবস্থান। এ বিল বিভিন্ন জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত ছোট-বড় অনেকগুলো বিলের সমষ্টি। বর্ষাকালে তা প্রায় ৩৬৮বর্গ কিমি বিস্তৃত একটি জলরাশিতে পরিণত হয়।
‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’ উপন্যাসজুড়ে ঔপন্যাসিক জাকির তালুকদার চলনবিলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আখ্যান তুলে ধরেছেন। দিনের পর দিন এই মানুষগুলো শোষণ-বঞ্চনার শিকার হতে হতে জর্জর। ভূমিদস্যুরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চারপাশে থেকে তাদের ভূমি দখল করে নেয়; আছে সরকারি দলের ক্যাডার বাহিনী আর বিপ্লবী দলের নাম ভাঙিয়ে চরমপন্থীদের উৎপাত—খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি-চাঁদাবাজি; আবার ইসলামের নাম করে বঙ্গ ভাইয়ের নিষ্ঠুর নির্যাতন-হত্যা; আছে পুলিশের উৎপীড়ন। বিলবাসী মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না—কিছুই করার থাকে না। বছরের অধিকাংশ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে এসব অঞ্চল। তাই দুর্ভোগের সীমা থাকে না। বছরের একবার ধান ফলে। বছরে এই একবারই তাদের উপার্জন। সেই ধানই তাদের বছরজুড়ে ভাত দেয়, ধানের টাকায় পরিবারের সব জিনিস কেনা হয়, যাবতীয় খরচ চলে এই ধানের টাকায়।
পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ স্বাধীনতার পরে নাম পাল্টে হয় অর্পিত সম্পত্তি আইন। ‘পাকিস্তান প্রতিরক্ষা অধ্যাদেশ ১৯৬৫-এর ১৮২ বিধি মোতাবেক তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান এলাকার যেসব নাগরিক ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ তারিখে ভারতে অবস্থানরত ছিলেন বা ওই তারিখ হতে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ পর্যন্ত ভারতে গমন করেছিলেন, তাঁদের যাবতীয় সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি বলে গণ্য হয় এবং উহার ব্যবস্থাপনা উপ-তত্ত্বাবধায়কের ওপর ন্যস্ত করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আইনের কিছুটা সংশোধনী আনা হয়।’
এই কালো আইনে সরকার বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলে নিয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ভূমিদস্যুরা জাল দলিল তৈরি করে আদালতের মামলা-মোকদ্দমা রুজু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ছত্রচ্ছায়ায় এ সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে, যাদের সম্পত্তি এই কালো আইনের আওতায়ও আসে না। লেখক উপন্যাসে গৌরাঙ্গ চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে বিষয়টিকে গভীরভাবে তুলে ধরেছেন। গৌরাঙ্গ সৎ কৃষক। হিন্দু-মুসলিম সবার কাছেই তিনি প্রিয়। যদিও গৌরাঙ্গর জমি ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ নামক কালো আইনের আওতায় আসে না, তবুও এই আইনের আওতায় ফেলে ক্ষমতা ও কৌশলে সোলেমান আলি আর আবদুল জব্বার তার পৈতৃক জমি দখল করে নেয়। এই জমিই গৌরাঙ্গের পরিবারের অন্ন জোগায়, এই জমিই তার সব। সম্পত্তি হারিয়ে গৌরাঙ্গ একদম নিঃস্ব হয়ে যায়। অফিসে অফিসে ধরনা দিয়েও যখন কোনো অগ্রগতি হয় না, একদম ভেঙে পড়েন তিনি। খাবার জোটে না পরিবারের। মস্তিস্ক বিকৃত হয়ে পাগলাগারদে কাটায় কিছুদিন। কিছুটা উন্নতি হলে তাকে বাড়ি আনা হয়। কিন্তু গৌরাঙ্গকে আর চেনা যায় না। শুকিয়ে হাড্ডিসার হয়ে যায়। উঠে দাঁড়ানোর আর শক্তি থাকে না তার। বারুহাসের মেলা থেকে গৌরাঙ্গের অসহায় মেয়েদের খাবার, চুড়ি-ফিতা আর খেলনা কিনে দেয় কদম আর আবদুর রহিম। মেয়েরা বাবাকে দেখায় খেলনাগুলো। গৌরাঙ্গের কেবল চোখ পড়ে খেলনার লাঙলটির ওপর। লেখকের ভাষায়, ‘হাতে নেয় ছোট্ট লাঙলটা। হাতে তুলে নিয়ে একেবারে চোখের কাছে ধরে। তার চোখ জ্বলজ্বল করছে। হাত দুটো তার এখন আরও বেশি বেশি কাঁপছে অজানা উত্তেজনায়। হঠাৎ সে বারান্দা ছেড়ে উঠোনের মাটিতে নেমে আসে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে। হাতের খেলনা লাঙলটা মাটিতে ছোঁয়ায় তারপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে মাটির ওপর দিয়ে খেলনা লাঙলটি ঠেলতে থাকে অবিকল জমিচষার ভঙ্গিতে। ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে ঘুরতে থাকে লাঙলের সঙ্গে। মুখে শব্দ—হেট্! হেট্!’
এই ‘হেট্! হেট!’ শব্দ আমাদের মস্তিস্কজুড়ে ঘুরপাক খায়, আর লাঙলের ফলার মতো জ্বলজ্বল করে দেখিয়ে দেয়—দেখো বাংলার কৃষক দেখো, যে তোমার খাদ্য জোগায়, আমৃত্যু যে লাঙল-জোয়াল, মাঠ আর ফসলের স্বপ্ন দেখে। দেখো প্রকৃত স্বদেশ দেখো।
গাঁয়ের ভালো-মন্দ সবকিছুর সাথেই জড়িয়ে থাকে কদম আর আবদুর রহিম। আবদুর রহিম দেখে দেখে পড়তে পারলেও কদম একদমই লেখাপড়া জানে না। তবু গাঁয়ের এই নিম্নস্তরের মানুষের অন্তরে রয়েছে মানবিকতা বোধ। যেমনটি রয়েছে তিসিখালি মাজারের খাদেম ও তার পরিবারের। অপরিচিত, অসহায় বোবা মেয়েটিকে আশ্রয় দিতে গিয়ে হাজতবাস করেও খাদেম যখন কদম আর আবদুর রহিমের উদ্দেশে বলেন, ‘মিয়্যাডারে তোরা সামলায়া রাখিস। বেচারি অনেক কষ্ট পাইছে। আর য্যান সর্বহারা কিংবা পুলিশের হাতে না পড়ে। তাহলে যে কী ঘটাব মিয়্যাডার কপালে তা অল্লামালিকই জানে।’ তখন মানবতার এক উজ্জ্বল মূর্ত প্রতীক দেখতে পাই। পুলিশ খাদেম সাহেবকে মারধর করেছে কি না, কদম জানতে চাইলে খাদেম যখন বলেন, ‘নমরুদের জেলখানায় মুছা নবীর ওপর যত অত্যাচার হইছিল, আমার ওপর তত অত্যাচার হয়নি। মুছা নবীর যত কষ্ট হইছিল, ততটা কষ্ট আমার হয়নি।’ কদম-রহিমের সাথে তখন পাঠকের চোখও ভিজে ওঠে।
কদম আর খাদেম সাহেবের পানিতে কুড়িয়ে পাওয়া বোবা কিশোরীকে ঘিরে যে রহস্যের সৃষ্টি হয়, কমরেড বিজয় ও কমরেড তপন কর্তৃক এন্তাজ ও তার চার প্রধান সহযোগীর হত্যার মাধ্যমে সে রহস্যের জট খুলে।
লেখক এ উপন্যাসে একটি শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখেন। যেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, ধনী, গরিবের বৈষম্য থাকবে না; যেখানে কৃষকের এক ইঞ্চি জমিও অন্যের দখলে থাকবে না। উপন্যাসে বিপ্লবী দলের চোখে সেই স্বপ্ন ফুটে ওঠে— ‘আমাদের পার্টির চূড়ান্ত লক্ষ্য মার্ক্সবাদ, লেলিনবাদ ও মাও জে দংয়ের চিন্তাধারার ভিত্তিতে সর্বহারা শ্রমিক কৃষকের নের্তৃত্বে বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা। আমরা চাই বা না চাই, ইতিহাসের দ্বান্দ্বিক পথে সমাজতন্ত্র এ দেশে আসবেই।... মিশে যেতে হবে কৃষকদের সঙ্গে, খেতমজুরদের সঙ্গে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তাদের নিয়েই গড়ে তুলতে হবে কৃষক ও খেতমজুরদের খণ্ড খণ্ড বিপ্লবী গেরিলা বাহিনী। এই বাহিনী শ্রেণিশত্রু খতমের পাশাপাশি খাসজমি দখল, ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বণ্টনসহ সামাজিক সুশাসনের মডেল স্থাপন করবে একেকটি মুক্তাঞ্চলে।’
এই বিপ্লবী দলের নের্তৃত্বেই গৌরাঙ্গ তার হারানো জমি ফিরে পায়। হারানো জমি পেয়ে গৌরাঙ্গ যেন সুস্থ হয়ে যায়। সে আবার লাঙল ধরে, চারা লাগায়, যত্নে যত্নে সেই চারা বড় হয়, ধানে শিষ আসে, তারপর পাকাধানে মাঠ সোনালি হয়ে যায় একদিন। মনে হয় সত্যিকারের বিপ্লব এসেছে, অসহায় মানুষের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু না! একটা বল্লম পেছন থেকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। উবু হয়ে বসে ছিল গৌরাঙ্গ। এবার প্রণামের ভঙ্গিতে কপালটা ঠেকে যায় ধানের গোড়ার মাটিতে। কদমের মাথাটাও দু-ফাঁক হয়ে যায় ভূমিদস্যু সোলেমান আলি আর আবদুল জব্বারের ভাড়াটে লাঠিয়ালের নিখুঁত লাঠির ঘায়ে।
তখন বিপ্লবের মশালটা নিবু নিবু হয়ে আসে। আর যখন আবদুর রহিম দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে পুলিশের কাছে বললেও এক পা-ও নড়ে না পুলিশ, তখন বোঝা যায় সাধারণ মানুষের কোনো অধিকার থাকতে নেই। তখন বাতাসে বাতাসে যেন ভেসে বেড়ায় গৌরাঙ্গের পাগলকালীন প্রলাপ, ‘ঠাকুরেরে দীক্ষা দিয়্যা কিছু হয় না। কাম হয় ডিসিরি দিয়্যা, এমপিরে দিয়্যা। ঠাকুর শালার কোনো ক্ষমতাই নাই।’
কিংবা ধর্মপ্রাণ আবদুর রহিমের চিন্তাটাই তখন জ্বলে ওঠে, ‘আল্লা নাকি বিপদে ফেলে পরীক্ষা নেয় বান্দার।...আচ্ছা সব পরীক্ষা কি খালি গরিব মানুষদেরই দিতে হয়!’
উপন্যাসজুড়ে আব্দুর রহিম একটি ব্যতিক্রম চরিত্র। সে চলনবিলের কাউয়াটিকরি গ্রামের ধর্মপ্রাণ একজন নবীন যুবক। চার শ বছর ধরে জনশ্রুত লোককাহিনিকে ভিত্তি ধরে একটি কুদরতি তাবিজ খুঁজে বেড়ায় সে। তার ধারনা, এই চলনবিলের কোথাও না কোথাও লুকানো আছে সেই তাবিজটি। মোটা কাঁথায় আপাদমস্তক ঢেকে চোখ মেললে যেমন অন্ধকার, সে রকম অন্ধকারে, দু-একটা হারিকেনের আলো ছাড়া কোথাও যখন অস্তিত্ব থাকে না কোনো আলোর, তখন কলবে জিকির নিয়ে অন্ধকারের সঙ্গে আরেক অন্ধকারের ছায়া হয়ে তিসিখালি মাজারের এমাথা থেকে ওমাথা হেঁটে বেড়ায় আবদুর রহিম। তার দৃঢ় বিশ্বাস আমল করে গেলে একদিন তাবিজের সন্ধান পাবেই। সেই তাবিজের গুণেই চলনবিলবাসী মানুষ রোগ-শোক, বালা-মুসিবত থেকে আরোগ্য পাবে। তাবিজের সন্ধ্যান না পেলেও যেখানে মানুষ বিপদে পড়ে, সেখানেই ছুটে যায় আব্দুর রহিম। কাসাসোল আম্বিয়া পড়তে পড়তে প্রায় মুখস্ত হয়ে গেছে, নেয়ামুল কোরআন ঘেঁটে সে বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য নিদান বের করে। সম্পূর্ণ ধর্মপ্রাণ হয়েও একটি অসাম্প্রদায়িক চরিত্র আব্দুর রহিম। কদম অসাম্প্রদায়িক হলেও ধর্মপ্রাণ নয়। সে ক্ষেত্রে আব্দুর রহিম চরিত্রটি পাঠককে অবাক করবে। অচেনা বোবা মেয়ের বিপদে যেমন, তেমনি গৌরাঙ্গের বিপদেও সে কদমের সাথে ছুটে যায়, গৌরাঙ্গ ও তার পরিবারের জন্য তার প্রাণ কাঁদে, রাত জেগে নেয়ামুল কোরআন ঘেঁটে আরোগ্যের দোয়া খুঁজে। ধর্ম নয় তার কাছে মানুষই বড় হয়ে ওঠে।
আব্দুর রহিম শুধু ধর্মপ্রাণ নয়, বিপ্লবীও। ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে গৌরাঙ্গের জমি দখল নেয়ার জন্য যখন একসময়ের বিপ্লবী আলাউদ্দিন মাস্টার ভীতি নিয়ে রাজি হন না, ঠিক তখনই সকলকে বিস্মিত করে কদমের সাথে আব্দুর রহিমও বিপ্লবীদের সাথে মত দেয় এবং জমি দখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আব্দুর রহিম অসীম সাহসিকতার মূর্ত প্রতীক। চলনবিলে বঙ্গভাইর আগমন ঘটে। তাকে প্রত্যক্ষ সহায়তা দেয় মন্ত্রী, থানা-পুলিশ। তার বাহিনী এলাকাজুড়ে চালায় তাণ্ডবলীলা—একের পর এক হত্যা। কথা বলার সাহস তো দূরের কথা, দারুণ ভয়ে মানুষ নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে দিনযাপন করে। তবু একদিন যাবতীয় ভয় দূরে ঠেলে অসীম সাহসিকতা নিয়ে বঙ্গভাইয়ের সামনে দাঁড়ায় আব্দুর রহিম, জীবনে প্রথম কারও প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে বলে, ‘এই মসজিদ আমার। দিনরাত খাটাখাটনি করি আমি এই মসজিদের জন্যে টাকা তুলি। মানুষের কাছে হাত পাতি। এই মসজিদ আমার। তুমি একটা শয়তান, নমরুদ-ফেরাউন। জোর কইর্যা দখল নিছো এই মসজিদের। তুমি চইল্যা যাও এক্ষুনি।’ আবদুর রহিম নির্যাতিত হয়। আর বাস্তবে বঙ্গভাইয়ের পরিণতি কী হয়েছে তা আমাদের জানা হলেও উপন্যাসের বঙ্গ ভাইয়ের পরিণতি কী হয় তা আমাদের জানা হয় না।
উপন্যাসটি পাঠ করলে আবদুর রহিম চরিত্রটি পাঠককে ভাবাবে বারবার। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ, যে মসজিদের আজান দেয়, ঘুরে ঘুরে চাঁদা তোলে, একটি তাবিজই যার ধ্যান-জ্ঞান, যে কলবে জিকির তোলে আর নেয়ামুল কোরআন থেকে আরোগ্য খোঁজে, সে মানুষের মধ্যে এত মানবতাবোধ, এত অসাম্প্রদায়িক ও বিপ্লবী চেতনা কোথা থেকে আসে!
সোলেমান-জব্বারের লাঠিয়াল কর্তৃক গৌরাঙ্গের খুন আর কদম আহত হওয়ার পর আব্দুর রহিম তিন দিন লুকিয়ে থাকে। তারপর বাড়ি থেকে বিদায় নেয়, মনে মনে বলে, আমি পালাচ্ছি না কদম! আমি পালাচ্ছি না গোরাদা! আমি তাবিজের খোঁজে বের হচ্ছি। তাবিজ না নিয়ে আমি আর ঘরে ফিরব না।’ তখন মনে হয়, দরিদ্র মানুষের মুক্তি আরও বহু দূর, হাঁটতে হবে এখনো দীর্ঘ দীর্ঘ পথ। ‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’-এ একটি তাবিজ যেন হয়ে ওঠে মুক্তির প্রতীক।
হাঁটতে থাকা মানুষের গান। জাকির তালুকদার। প্রচ্ছদ: রেহনুমা প্রসূন। প্রকাশক: আদর্শ। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২০। মূল্য: ৩৪০ টাকা।
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
২ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৩ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২০ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২০ দিন আগে