জাহীদ রেজা নূর
আজ পয়লা বৈশাখ। বাংলা সনের প্রথম তারিখ। বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখ সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব। প্রতি বছর এই উৎসব পালিত হয় জাতিগত আনন্দ–উচ্ছ্বাস আর কল্যাণ কামনায়। এই উৎসবে এখন বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করে। করোনাকাল স্বাস্থ্যবিধির কারণে উৎসবকেও সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে, কিন্তু হৃদয়–তন্ত্রিতে যে বীণা বাজিয়ে দেয় পয়লা বৈশাখ, তাকে নিস্তেজ করতে পারেনি। বাংলার মানুষ তার হৃদয় আবেগকে ধারণ করেই পালন করবে পয়লা বৈশাখ।
‘বাধা পেলেই শক্তি নিজেকে নিজে চিনতে পারে। তখন তাকে আর ঠেকানো যায় না।’—রথের রশি কাব্যনাটকে রবীন্দ্রনাথের এই সংলাপ দুটি পয়লা বৈশাখের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পাকিস্তান আমলে পয়লা বৈশাখ উৎসবকে সরকারিভাবেই বাধা দেওয়া হতো। বলা হতো এই উৎসব পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থি। অর্থাৎ, বাঙালি সংস্কৃতিকে দাবিয়ে রাখার হীন উদ্দেশ্যেই চলত এসব প্রচারণা। বাঙালি তা মেনে নেয়নি। ধর্ম–গোত্র, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তানি চক্রান্তের বিরুদ্ধে। বাঙালি দাবি জানিয়েছে, এই দিনটিকে জাতীয় ছুটির দিনে পরিণত করার। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
ইতিহাসের পথটির দিকে তাকালে আমরা দেখব, ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি হলো, ক্ষমতায় এল হক–ভাসানী–সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হয় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হককে মুখ্যমন্ত্রী করে। তিনিই বাংলা নববর্ষের দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। দেশবাসীকে জানান নববর্ষের শুভেচ্ছা। কিন্তু নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্টকে ভেঙে দেওয়া হলে পাকিস্তান আমলে সরকারিভাবে আর কখনো নববর্ষ পালিত হয়নি। কিন্তু বাঙালি ততদিনে চিনে নিয়েছে নিজেকে, ততদিনে বাঙালির ‘খুলিয়া গিয়াছে সব বাধ।’ বেসরকারিভাবে প্রবল উৎসাহ–উদ্দীপনা নিয়ে পালন করা হয়েছে পয়লা বৈশাখ।
পয়লা বৈশাখের সঙ্গে ছায়ানট যেন মিলে–মিশে গেছে। ১৯৬৭ সালে রমনা বটমূলে (মূলত অশ্বত্থ বা পাকুর গাছ, কিন্তু পঞ্চবটির একটি বলে একে বট বললে তা নীপাতনে সিদ্ধ হয়) ছায়ানট সৃষ্টি করল নববর্ষের এক নব ঐতিহ্য। বাঙালি সংস্কৃতির উন্মিলন হলো সেই অনুষ্ঠানে। নাগরিক জীবনে নববর্ষ এল নতুন রূপে। এরই ধারাবাহিকতায় নগরী সাজতে লাগল বিচিত্রভাবে। অনেক পরে যুক্ত হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রতি বছরই কিছু না কিছু নতুন আবহের দেখা পেতে লাগল নগরবাসী। তাহলে গ্রাম থাকল কোথায়? সে কথাটি তো বলতে হবে তাৎপর্যের সঙ্গে।
নববর্ষের কথা বলতে গেলে বাংলা সন প্রচলনের কথাও তো আসতে হবে। স্বীকার করে নেওয়া ভালো এখনো সুষ্পষ্টভাবে জানা যায়নি বাংলা সনের ইতিহাস। কিন্তু যে কথাগুলোর কথা আমরা শুনতে পাই, সেগুলোকেই সামনে এনে কথা বলি। বেশির ভাগ ইতিহাসবিদ মনে করেন, বাংলা সন প্রবর্তন করেন মোঘল সম্রাট আকবর। হিজরি সন—চান্দ্র সন। আবার ভারতীয় প্রচলিত সনগুলো ছিল সৌর সন। এই দুটোর মধ্যে সমন্বয় করে ১৫৫৬ সাল বা ৯৯২ হিজরিতে সম্রাট আকবর বাংলা সন চালু করেন।
অনেক পণ্ডিত এ কথা মানতে নারাজ। তাঁরা মনে করেন, সম্রাট আকবর মূলত ইলাহী সন বা সাল প্রবর্তন করেছিলেন। সে সময় বাংলায় যিনি সম্রাট আকবরের প্রতিনিধি ছিলেন, তিনি কিংবা বাংলার কোনো সুলতান এই বাংলা সন প্রবর্তন করেন। সন, সাল বা বঙ্গাব্দ নামেই তা পরিচিত।
এই সন প্রবর্তনের পর থেকেই তা নানা ধরনের আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে। বাংলার কৃষকদের জন্য দিনটি ছিল নতুনভাবে উজ্জীবিত হওয়ার। শুরুতে বল নিই, নববর্ষে নবাব বা জমিদার অর্থাৎ ধনাঢ্য ব্যক্তিরা ‘পূণ্যাহ’ নামে একটি অনুষ্ঠানের প্রচলন করেছিলেন। পয়লা বৈশাখে প্রজারা আসত নবাব বা জমিদারের বাড়িতে। নবাব বা জমিদার প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন সেদিন। থাকত পান–সুপারির আয়োজন। মূলত খাজনা আদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অনুষ্ঠানটির। নবাব বা জমিদার না থাকায় ইদানীং তা লুপ্ত হয়ে গেছে।
হালখাতা অনুষ্ঠানটি করতেন ব্যবসায়ীরা। সারা বছর বাকিতে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনত কৃষকেরা। গ্রামে কৃষক ছাড়াও আর যারা বসবাস করত, তারাও কেনাকাটা করত বাকিতে। ব্যবসায়ীরা বাকিতে কেনাকাটা করতে দিতেন। আর নববর্ষের দিন সেই টাকা ফেরত নিতেন। ফসলের মৌসুম এলে ফসল বিক্রি করে কৃষকসহ অন্যরা হাতে পেত টাকা, আর সেই টাকায় ঋণ শোধ করত। হালখাতা অনুষ্ঠানটি ছিল বিশাল অনুষ্ঠান। এখানেও আগতদের মিষ্টিমুখ করানো হতো। গ্রামের এই ঐতিহ্যও এখন লুপ্তপ্রায়। গ্রামের ধরনই পাল্টে গেছে। টাকা–পয়সার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কগুলোও পাল্টে গেছে। অনেকের হাতেই এখন নগদ টাকা থাকে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে জিনিসপত্র নিয়ে ফসল উঠলে টাকা শোধ করার প্রয়োজন পড়ে কম। তাই এই অনুষ্ঠানও তার ব্যপকতা হারিয়েছে।
তবে এখনো টিকে আছে বৈশাখী মেলা। বৈশাখের প্রথম দিনেই বসে এই মেলা। গ্রামবাংলায় এই মেলার ছিল বড় আকর্ষণ। মেলার জৌলুস আগের মতো নেই। নানাভাবে আমাদের সংস্কৃতির ওপর হামলা আসায় মেলা সংস্কৃতিই হুমকির মুখে পড়েছে। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সবকিছুই এখন সহজলভ্য হয়ে গেছে। মেলায় বহু দূর থেকে আনা তৈজসপত্র কেনার আকর্ষণ এ অবস্থায় আর নেই। তারপরও মানুষের অবাধ মিলনমেলা হিসেবে বৈশাখী মেলার তাৎপর্য এখনো রয়েছে। কবিগান, কীর্তন, যাত্রা, গম্ভীরা গান, পুতুল নাচ, নাগর দোলাসহ যে আয়োজনগুলো হতো মেলায়, তা এখন নেই বললেই চলে। যে সুফি ইসলামের প্রভাবে আমাদের এই অঞ্চলে উদারপন্থার উদ্ভব হয়েছিল, তা রক্ষণশীলদের হাতে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই লোকজ মেলার জায়গায় ধর্মীয় অনুশাসনগুলো পোক্ত হয়ে বসতে চাইছে। এর অনেক কিছুই বাইরে থেকে আসা, যার সঙ্গে দেশের নাড়ির যোগাযোগ নেই। ধর্মকে ব্যবহার করে কেউ কেউ সংস্কৃতিকে কটাক্ষ করার সাহস দেখাচ্ছে। সেটা রুখে দেওয়ার শক্তি বা অনুপ্রেরণাও থাকে পয়লা বৈশাখে, নববর্ষে।
নববর্ষ শুধু বাঙালির উৎসব বললে মহা ভুল হয়ে যাবে। আমাদের দেশে যে ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীদের বসবাস, তাদেরও সেরা উৎসব নববর্ষ। এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে বৈসুব, সাংগ্রাই ও বিজু তিনটিকে একত্র করে ‘বৈসাবী’ নামে উৎসব হয়। মানিকগঞ্জ–মুন্সীগঞ্জে হতো গরুর দৌড়, হাডুডু খেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোরগের লড়াই, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা ও নড়াইলে ষাঁড়ের লড়াই এখনো কোনো রকমে টিকে আছে।
আগেই বলেছি, নববর্ষ এখন সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি সচল হয়ে ওঠে। নতুন জামাকাপড়ই শুধু নয়, নানা ধরনের উপহার সামগ্রীর বেচাকেনার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতেও এই উৎসব রাখে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।
এ বছর নববর্ষ এসেছে আতঙ্কের মধ্যে। করোনা অতিমারী প্রতিদিনই কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ। সারা পৃথিবীই এই মহা বিপদের মধ্যে কাল অতিক্রম করছে। কিন্তু তারপরও নতুন বছর আসে নতুন প্রেরণা নিয়ে। গত হয়ে যাওয়া বছরের ক্লেদ, হিংসা, দ্বেষ থেকে বের হয়ে একটি সজীব সূচনার প্রতি নিজেকে সঁপে দেয় মানুষ। রবীন্দ্রনাথের ভাষাতেই বলি—মুছে যায় গ্লানি, মুছে যায় জ্বরা, অগ্নিস্নানে ধরা সূচি হয়ে ওঠে।
নতুন বছরে প্রতিটি মানুষ নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলুক। নতুন করে অনুপ্রেরণা খুঁজে পাক। সত্য ও সুন্দরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকুক। এবং মানবিক হোক।
আজ পয়লা বৈশাখ। বাংলা সনের প্রথম তারিখ। বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখ সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব। প্রতি বছর এই উৎসব পালিত হয় জাতিগত আনন্দ–উচ্ছ্বাস আর কল্যাণ কামনায়। এই উৎসবে এখন বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করে। করোনাকাল স্বাস্থ্যবিধির কারণে উৎসবকেও সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে, কিন্তু হৃদয়–তন্ত্রিতে যে বীণা বাজিয়ে দেয় পয়লা বৈশাখ, তাকে নিস্তেজ করতে পারেনি। বাংলার মানুষ তার হৃদয় আবেগকে ধারণ করেই পালন করবে পয়লা বৈশাখ।
‘বাধা পেলেই শক্তি নিজেকে নিজে চিনতে পারে। তখন তাকে আর ঠেকানো যায় না।’—রথের রশি কাব্যনাটকে রবীন্দ্রনাথের এই সংলাপ দুটি পয়লা বৈশাখের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পাকিস্তান আমলে পয়লা বৈশাখ উৎসবকে সরকারিভাবেই বাধা দেওয়া হতো। বলা হতো এই উৎসব পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থি। অর্থাৎ, বাঙালি সংস্কৃতিকে দাবিয়ে রাখার হীন উদ্দেশ্যেই চলত এসব প্রচারণা। বাঙালি তা মেনে নেয়নি। ধর্ম–গোত্র, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তানি চক্রান্তের বিরুদ্ধে। বাঙালি দাবি জানিয়েছে, এই দিনটিকে জাতীয় ছুটির দিনে পরিণত করার। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
ইতিহাসের পথটির দিকে তাকালে আমরা দেখব, ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি হলো, ক্ষমতায় এল হক–ভাসানী–সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হয় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হককে মুখ্যমন্ত্রী করে। তিনিই বাংলা নববর্ষের দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। দেশবাসীকে জানান নববর্ষের শুভেচ্ছা। কিন্তু নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্টকে ভেঙে দেওয়া হলে পাকিস্তান আমলে সরকারিভাবে আর কখনো নববর্ষ পালিত হয়নি। কিন্তু বাঙালি ততদিনে চিনে নিয়েছে নিজেকে, ততদিনে বাঙালির ‘খুলিয়া গিয়াছে সব বাধ।’ বেসরকারিভাবে প্রবল উৎসাহ–উদ্দীপনা নিয়ে পালন করা হয়েছে পয়লা বৈশাখ।
পয়লা বৈশাখের সঙ্গে ছায়ানট যেন মিলে–মিশে গেছে। ১৯৬৭ সালে রমনা বটমূলে (মূলত অশ্বত্থ বা পাকুর গাছ, কিন্তু পঞ্চবটির একটি বলে একে বট বললে তা নীপাতনে সিদ্ধ হয়) ছায়ানট সৃষ্টি করল নববর্ষের এক নব ঐতিহ্য। বাঙালি সংস্কৃতির উন্মিলন হলো সেই অনুষ্ঠানে। নাগরিক জীবনে নববর্ষ এল নতুন রূপে। এরই ধারাবাহিকতায় নগরী সাজতে লাগল বিচিত্রভাবে। অনেক পরে যুক্ত হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রতি বছরই কিছু না কিছু নতুন আবহের দেখা পেতে লাগল নগরবাসী। তাহলে গ্রাম থাকল কোথায়? সে কথাটি তো বলতে হবে তাৎপর্যের সঙ্গে।
নববর্ষের কথা বলতে গেলে বাংলা সন প্রচলনের কথাও তো আসতে হবে। স্বীকার করে নেওয়া ভালো এখনো সুষ্পষ্টভাবে জানা যায়নি বাংলা সনের ইতিহাস। কিন্তু যে কথাগুলোর কথা আমরা শুনতে পাই, সেগুলোকেই সামনে এনে কথা বলি। বেশির ভাগ ইতিহাসবিদ মনে করেন, বাংলা সন প্রবর্তন করেন মোঘল সম্রাট আকবর। হিজরি সন—চান্দ্র সন। আবার ভারতীয় প্রচলিত সনগুলো ছিল সৌর সন। এই দুটোর মধ্যে সমন্বয় করে ১৫৫৬ সাল বা ৯৯২ হিজরিতে সম্রাট আকবর বাংলা সন চালু করেন।
অনেক পণ্ডিত এ কথা মানতে নারাজ। তাঁরা মনে করেন, সম্রাট আকবর মূলত ইলাহী সন বা সাল প্রবর্তন করেছিলেন। সে সময় বাংলায় যিনি সম্রাট আকবরের প্রতিনিধি ছিলেন, তিনি কিংবা বাংলার কোনো সুলতান এই বাংলা সন প্রবর্তন করেন। সন, সাল বা বঙ্গাব্দ নামেই তা পরিচিত।
এই সন প্রবর্তনের পর থেকেই তা নানা ধরনের আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে। বাংলার কৃষকদের জন্য দিনটি ছিল নতুনভাবে উজ্জীবিত হওয়ার। শুরুতে বল নিই, নববর্ষে নবাব বা জমিদার অর্থাৎ ধনাঢ্য ব্যক্তিরা ‘পূণ্যাহ’ নামে একটি অনুষ্ঠানের প্রচলন করেছিলেন। পয়লা বৈশাখে প্রজারা আসত নবাব বা জমিদারের বাড়িতে। নবাব বা জমিদার প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন সেদিন। থাকত পান–সুপারির আয়োজন। মূলত খাজনা আদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অনুষ্ঠানটির। নবাব বা জমিদার না থাকায় ইদানীং তা লুপ্ত হয়ে গেছে।
হালখাতা অনুষ্ঠানটি করতেন ব্যবসায়ীরা। সারা বছর বাকিতে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনত কৃষকেরা। গ্রামে কৃষক ছাড়াও আর যারা বসবাস করত, তারাও কেনাকাটা করত বাকিতে। ব্যবসায়ীরা বাকিতে কেনাকাটা করতে দিতেন। আর নববর্ষের দিন সেই টাকা ফেরত নিতেন। ফসলের মৌসুম এলে ফসল বিক্রি করে কৃষকসহ অন্যরা হাতে পেত টাকা, আর সেই টাকায় ঋণ শোধ করত। হালখাতা অনুষ্ঠানটি ছিল বিশাল অনুষ্ঠান। এখানেও আগতদের মিষ্টিমুখ করানো হতো। গ্রামের এই ঐতিহ্যও এখন লুপ্তপ্রায়। গ্রামের ধরনই পাল্টে গেছে। টাকা–পয়সার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কগুলোও পাল্টে গেছে। অনেকের হাতেই এখন নগদ টাকা থাকে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে জিনিসপত্র নিয়ে ফসল উঠলে টাকা শোধ করার প্রয়োজন পড়ে কম। তাই এই অনুষ্ঠানও তার ব্যপকতা হারিয়েছে।
তবে এখনো টিকে আছে বৈশাখী মেলা। বৈশাখের প্রথম দিনেই বসে এই মেলা। গ্রামবাংলায় এই মেলার ছিল বড় আকর্ষণ। মেলার জৌলুস আগের মতো নেই। নানাভাবে আমাদের সংস্কৃতির ওপর হামলা আসায় মেলা সংস্কৃতিই হুমকির মুখে পড়েছে। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সবকিছুই এখন সহজলভ্য হয়ে গেছে। মেলায় বহু দূর থেকে আনা তৈজসপত্র কেনার আকর্ষণ এ অবস্থায় আর নেই। তারপরও মানুষের অবাধ মিলনমেলা হিসেবে বৈশাখী মেলার তাৎপর্য এখনো রয়েছে। কবিগান, কীর্তন, যাত্রা, গম্ভীরা গান, পুতুল নাচ, নাগর দোলাসহ যে আয়োজনগুলো হতো মেলায়, তা এখন নেই বললেই চলে। যে সুফি ইসলামের প্রভাবে আমাদের এই অঞ্চলে উদারপন্থার উদ্ভব হয়েছিল, তা রক্ষণশীলদের হাতে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই লোকজ মেলার জায়গায় ধর্মীয় অনুশাসনগুলো পোক্ত হয়ে বসতে চাইছে। এর অনেক কিছুই বাইরে থেকে আসা, যার সঙ্গে দেশের নাড়ির যোগাযোগ নেই। ধর্মকে ব্যবহার করে কেউ কেউ সংস্কৃতিকে কটাক্ষ করার সাহস দেখাচ্ছে। সেটা রুখে দেওয়ার শক্তি বা অনুপ্রেরণাও থাকে পয়লা বৈশাখে, নববর্ষে।
নববর্ষ শুধু বাঙালির উৎসব বললে মহা ভুল হয়ে যাবে। আমাদের দেশে যে ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীদের বসবাস, তাদেরও সেরা উৎসব নববর্ষ। এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে বৈসুব, সাংগ্রাই ও বিজু তিনটিকে একত্র করে ‘বৈসাবী’ নামে উৎসব হয়। মানিকগঞ্জ–মুন্সীগঞ্জে হতো গরুর দৌড়, হাডুডু খেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোরগের লড়াই, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা ও নড়াইলে ষাঁড়ের লড়াই এখনো কোনো রকমে টিকে আছে।
আগেই বলেছি, নববর্ষ এখন সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি সচল হয়ে ওঠে। নতুন জামাকাপড়ই শুধু নয়, নানা ধরনের উপহার সামগ্রীর বেচাকেনার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতেও এই উৎসব রাখে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।
এ বছর নববর্ষ এসেছে আতঙ্কের মধ্যে। করোনা অতিমারী প্রতিদিনই কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ। সারা পৃথিবীই এই মহা বিপদের মধ্যে কাল অতিক্রম করছে। কিন্তু তারপরও নতুন বছর আসে নতুন প্রেরণা নিয়ে। গত হয়ে যাওয়া বছরের ক্লেদ, হিংসা, দ্বেষ থেকে বের হয়ে একটি সজীব সূচনার প্রতি নিজেকে সঁপে দেয় মানুষ। রবীন্দ্রনাথের ভাষাতেই বলি—মুছে যায় গ্লানি, মুছে যায় জ্বরা, অগ্নিস্নানে ধরা সূচি হয়ে ওঠে।
নতুন বছরে প্রতিটি মানুষ নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলুক। নতুন করে অনুপ্রেরণা খুঁজে পাক। সত্য ও সুন্দরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকুক। এবং মানবিক হোক।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সাজেদুল লস্কর (৩২) নামের এক ব্যক্তির লাঠির আঘাতে তার চাচাতো ভাই আপেল লস্করের (৫০) মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার ভোরে উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সোনাইকুন্ডি লস্কর পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। সাজেদুল লস্করকে আটক করেছে পুলিশ। দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আউয়াল কবির বিষয়টি নিশ
১৫ মিনিট আগেময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার রাজগাতি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুখাইজুড়ি নদী একসময় প্রবহমান ছিল। এতে এলাকার মানুষ গোসল দিত, মাছ ধরত ও হাঁস পালন করত। সেই নদী দখল করে বাঁশ ও জালের বেড়া দিয়ে ছোট ছোট ঘের তৈরি করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
২০ মিনিট আগেকুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ এলাকার একটি রেস্তোরাঁর কর্মী তোফাজ্জল হোসেন। অর্থের অভাবে লেখাপড়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি তাঁর। ১৩ বছর বয়সে কাজ শুরু করেন রেস্তোরাঁয়।
২৩ মিনিট আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ এম হাসান আরিফ বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ভিসার ব্যাপারে কিছুটা কড়াকড়ি করেছে। তারা আমাদের ভিসা দেবে কি না, এটা তাদের বিষয়।’
৯ ঘণ্টা আগে