কৃষিজমিতে খননযন্ত্রের থাবা, কমছে চাষাবাদ

  • জেলার ৯৮ হাজার ২৬৩ হেক্টরে ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদিত হয়।
  • উর্বর মাটি কেটে নিলে জমির আগের অবস্থায় যেতে ১৫-২০ বছর লাগে।
মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর
Thumbnail image
চাঁদপুর সদরে খননযন্ত্র বা এক্সকাভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে জমির মাটি। সম্প্রতি মনিহার গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নদীবেষ্টিত উর্বর জেলা চাঁদপুরে দিন দিন কমে আসছে কৃষিজমির পরিমাণ। সেখানে থাবা পড়েছে খননযন্ত্র বা এক্সকাভেটরের। কেউ কেউ কৃষিকাজ বাদ দিয়ে মাছ চাষের জন্য জমিতে পুকুর খনন করছেন। অনেকে আবার সাময়িক লাভের আশায় জমির ওপরের অংশের মাটি কেটে ইটভাটায় দিচ্ছেন। এতে করে জমি উর্বরতা শক্তি হারিয়ে খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯৮ হাজার ২৬৩ হেক্টরে ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদিত হয়। তবে এসব ফসলি জমিতেই গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাটা। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত ভাটা অবৈধ। আর সব কটিতেই ইট তৈরির জন্য কেটে আনা হচ্ছে কৃষিজমির মাটির ওপরের স্তর।

সরেজমিনে ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলায় দেখা গেছে, আগে অনুর্বর ও অনাবাদি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার করা হলেও এখন ফসলি জমি খনন করা হচ্ছে। এসব উপজেলায় মাটি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা কৃষকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে খেতের মাটি উজাড় করছে।

শাহরাস্তির চিকুটিয়া সেতুসংলগ্ন ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কথা হলে জমির সেচ ম্যানেজার মো. আকবর জানান, তাঁদের এখানে কিছু জমি উঁচু-নিচু আছে। যে কারণে দুই বছর ধরে মাটি কাটা হচ্ছে। এভাবে মাটি কাটা অবৈধ জেনেও কেন কাটা হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী বছর থেকে আর কাটা হবে না।

এ নিয়ে কথা হলে ফরিদগঞ্জ উপজেলার মানিকরাজ এলাকার মেসার্স মানিকরাজ ব্রিকসের পরিচালক মিরন খান বলেন, ‘ফসলি জমির মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে লাগানোর বৈধতা নেই, তা জানি। কিন্তু ইট তৈরির জন্য মাটি পাব কোথায়? যে কারণে বাধ্য হয়ে মাটি কাটা হচ্ছে।’

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে জমির উর্বর মাটি কেটে নেওয়ার ফলে এটি আগের অবস্থায় যেতে এবং উৎপাদনযোগ্য হতে সময় লাগে প্রায় ১৫-২০ বছর। জমির ওপরের ৬ ইঞ্চির মধ্যেই থাকে বেশি উর্বরতা শক্তি। কাটা হচ্ছে আরও অনেক বেশি।’

এদিকে সদর উপজেলার মনিহার গ্রামে হাবিবুর রহমান ও তাঁর ছোট ভাই মিলন প্রায় ১০ একর জমির মাটি কেটে তৈরি করছেন দিঘি। এতে পাশের জমির ক্ষতি হচ্ছে দাবি করে মালিকেরা ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে হাবিবুর বলেন, ‘এখানে মাদ্রাসা এবং মসজিদ পরিচালনার জন্য এই দিঘি কাটা হচ্ছে। আমরা মনে করি, কারও ফসলের ক্ষতি হবে না। তবে আমাদের জমির শ্রেণি যেহেতু নাল, এটি দিঘি করার আগে প্রশাসনের অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন ছিল।’

এ বিষয়ে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল-ইমরান খান বলেন, জমি ভরাট বা প্রয়োজনে পুকুর কিংবা দিঘি করা যাবে। তবে এ জন্য জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করতে হবে। বিষয়টি জনহিতকর হলে আবেদন মঞ্জুর হবে। এ জন্য কয়েকবার তদন্ত করারও প্রয়োজন হয়।

কৃষিজমির ওপরের অংশের মাটি কাটা রোধের বিষয়ে শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘এমন তথ্য এলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রশাসনিক নানা কাজের মধ্যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসনাত আবদুল্লাহকে দেখে তেড়ে এলেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন: চিকিৎসক নিবন্ধনে পরীক্ষা

দিল্লিকে বাংলাদেশি-রোহিঙ্গা মুক্ত করবে বিজেপি: অমিত শাহ

কঙ্গনার ‘ইমার্জেন্সি’তে শেখ মুজিবুর রহমানের সংলাপ নিয়ে বিতর্ক

নীলক্ষেতে ৭ কলেজ ও ঢাবি শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি, পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত