চাঁদা না দেওয়ায় কৃষকের ফসল নিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা

আব্বাছ হোসেন, লক্ষ্মীপুর
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৪, ১১: ৩০

লক্ষ্মীপুরে মেঘনার চরে নিজেদের ঘাম ও শ্রমে উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না চাষিরা। নিজেদের ফসল ঘরে তোলার জন্য দস্যুদেরকে চাঁদা দিতে হয় তাঁদের। অন্যথায় ফসল লুট করে নিয়ে যায় দস্যুরা।

ইতিমধ্যে গত কয়েক দিনে কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চরমেঘা থেকে কয়েক কোটি টাকার সয়াবিন নিয়ে গেছে দস্যুরা। এ ঘটনায় মামলা করার পরও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় পরিবার নিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেক কৃষক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার দ্বীপ চরমেঘায় ২০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে দীর্ঘদিন চাষাবাদ করে আসছেন দুই শতাধিক কৃষক। এবারও প্রায় ৫০০ একর জমিতে আবাদ হয়েছে সয়াবিন, বাদাম, ডাল, ধানসহ বিভিন্ন ফসলের। এসব ফসল ঘরে তুলতে প্রত্যেক চাষিকে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা বেঁধে দেয় দস্যুরা। 
চাঁদা না দেওয়ায় গত দুই বছরে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটেছে। অনেক সময় টাকার জন্য কৃষকের গোয়ালে থাকা গরু-মহিষ, ছাগলও নিয়ে যায় দস্যুরা।

সর্বশেষ ৮ মে খেতের সয়াবিন তুলতে গিয়ে বিপাকে পড়েন চাষিরা। তাঁদের অভিযোগ, ভোলার রাসেল খাঁ, হালিম খাঁ, মিন্টু খাঁ এবং লক্ষ্মীপুরের শাহজালাল রাহুল ও রশিদ মোল্লার নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক দস্যু ফসল লুট করে নিয়ে গেছে।

পুলিশ, স্থানীয় ও ভুক্তভোগী চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৮ মে সকালে চাষ করা ফসল তুলতে যান চাষিরা। এ সময় ৫০ থেকে ৬০ জনের একদল সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চাষিদের ওপর হামলা করে। এ সময় লুট করে নিয়ে যায় কয়েক কোটি টাকার সয়াবিন। অভিযুক্ত রাসেল খাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

ভুক্তভোগী চাষিরা জানান, জমির ফসল তুলতে গেলেই চাঁদা দাবি করা হয় তাঁদের কাছে। না দিলে হামলার শিকার হতে হয়। চাঁদার টাকার দাবিতে গত দুই বছরে এক শিশুসহ তিনজন খুন হয়েছে। এসব ঘটনায় বিভিন্ন সময় মামলা করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে জড়িত ব্যক্তিরা। বর্তমানে খেতে থাকা সয়াবিন ও ধান সংগ্রহ করতে পারছেন না চাষিরা। দস্যুদের দৌরাত্ম্যে আতঙ্কে রয়েছেন চরমেঘার সাধারণ মানুষও।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করেও অভিযুক্ত রাসেল খাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কথা হলে রাসেলের চাচা শাহ আলী খাঁ বলেন, ‘অন্যায়ভাবে তাদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। এই লুটপাটের সঙ্গে তারা জড়িত নয়।’

চর রমণীমোহন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু ছৈয়াল ইউছুফ বলেন, সন্ত্রাসীরা এর আগেও তিনজনকে হত্যা করেছে। অনেকের হাত-পা কেটে দিয়েছে। এখন সয়াবিন তোলার সময়; কিন্তু রাসেল খাঁ, হালিম খাঁ, মিন্টু খাঁর নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের বাহিনী আছে, তারা ফসল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।’

লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, সন্ত্রাসীদের ধরতে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে। কৃষকেরা যেন নিরাপদে ফসল ঘরে তুলে নিতে পারেন, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় সন্ত্রাসীরা সহজে অপরাধ করে যাচ্ছে।

সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভি দাস বলেন, চরের এসব সম্পত্তি খাসজমি। অবৈধভাবে দখল করে রাখা। এসব জমি উদ্ধারে কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া যারা অন্যায়ভাবে চাঁদাবাজি ও ফসল লুটে নেয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান মোস্তফা স্বপন বলেন, ‘চাঁদাবাজি, কৃষকদের মারধর, ফসল লুটে নেওয়ার বিষয়টি আমলে নিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে থানা ও নৌ পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত