‘ক্যাপসিকাম চাষে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে’

খুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৫২

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ গবেষণায় সাফল্য পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রো টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নানের তত্ত্বাবধানে ওই ডিসিপ্লিনের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সোহেল রানা এ গবেষণা করছেন। বর্তমানে খুবির এগ্রো টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধীনস্থ জার্মপ্লাজম সেন্টারে এ ক্যাপসিকাম গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

জানা যায়, গবেষণায় লাল, হলুদ, সবুজ, কমলা ও বেগুনি ক্যাপসিকাম নিয়ে কাজ করছেন গবেষকেরা। স্বল্প রোদের আলোতে মালচিং শিট ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়েছে। 

গবেষকদের কাছ থেকে জানা যায়, ছায়াযুক্ত স্থানে ক্যাপসিকাম চাষ করা হলেও এক একটি গাছে ১০-১৫টি এবং সর্বোচ্চ ২০টি ক্যাপসিকাম ধরেছে। প্রত্যেকটি ক্যাপসিকামের ওজন ৭০-২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়েছে। প্রত্যেক গাছ থেকে গড়ে ৭০০-৯০০ গ্রাম পরিমাণ ক্যাপসিকাম পাওয়া গেছে। 

গবেষকদের মতে, ক্যাপসিকাম চাষের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে। 

গবেষণার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে গবেষক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ক্যাপসিকাম বিদেশি সবজি হওয়ায় বড় বড় হোটেল ও রেস্টুরেন্টে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর দাম অন্যান্য সবজির তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি কেজি ২০০-৩০০ টাকা করে বিক্রি হয়। এ ছাড়া ক্যাপসিকাম চাষে প্রতিটি গাছে ৩০-৪০ টাকা খরচ করে ১৫০-২০০ টাকা আয় করা সম্ভব। ক্যাপসিকাম চাষ করলে কৃষকেরা স্বাবলম্বী হবে এবং দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে। 

আমাদের এখানে পাঁচটি জাতের ক্যাপসিকাম নিয়ে কাজ করা হয়েছে এবং সব সময় সূর্যালোক না পেলেও ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। ক্যাপসিকাম ডে নিউট্রাল হলেও সূর্যালোকের ওপর এক ধরনের প্রভাব রয়েছে। তাই যেখানে সব সময় সূর্যালোক থাকে সেখানে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। 

তবে ক্যাপসিকাম চাষের সবচেয়ে বড় বাধা হলো বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ। বিশেষ করে এফিড, থ্রিপস ও সাদা মাছি। এ জন্য চারা লাগানোর পরদিনই ইমিডাক্লোরোফিড বা এসিটামপিড গ্রুপের কীটনাশক যেমন বিল্ডার বা তুন্দ্রা ব্যবহার করতে হয়। 

অধ্যাপক আরও বলেন, ক্যাপসিকামের প্রথম ফুল অবশ্যই ঝরে পড়ে এবং ফুল ঝরে পড়া থেকে রক্ষা পেতে ‘প্ল্যান্ট গ্রোথ রেগুলেটর’ ব্যবহার করা হয়। ‘চিলি লিফ কার্ল ভাইরাস’ ক্যাপসিকামের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই গাছ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তা তুলে জমি থেকে দুরে মাটি চাপা বা আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হয়। এ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এর ভেক্টর দমন করতে হয়। সাধারণত সাদা মাছি, এফিড বা জাব পোকা, থ্রিপস এ ভাইরাসের ভেক্টর হিসেবে কাজ করে। এফিড ও থ্রিপস দমনে নিম ওয়েল ও কেওলিন (অরগানিক) ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া গেছে। 

ক্যাপসিকাম চাষে ভালো ফলনের পূর্বশর্ত হল জাত নির্বাচন। মানসম্মত ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা হল ১৬-২১° সেলসিয়াস। সাধারণত নভেম্বর মাসে চারা রোপণ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সবুজ ক্যাপসিকাম ৯০-১০০ দিনের মধ্যে তোলার উপযোগী হয়। যেখানে লাল, হলুদ, বেগুনি ও কমলা ১২৫-১৩৫ দিন সময় লাগে। সাধারণত সারি থেকে সারি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪৫ সে.মি. রাখা হয়। ক্যাপসিকাম বৃষ্টি বা উত্তাপ কোনোটাই পছন্দ করে না। সবকিছু ঠিক থাকলে হেক্টর প্রতি ২০-২৫ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত