গাংনীতে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ, মারা গেছে বেশ কিছু গরু

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১৪: ৪২

মেহেরপুরের গাংনীতে গরুর ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু গরু মারা গেছে। এ ঘটনায় খামারিরা চিন্তিত হয়ে পড়লেও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, সময়মতো চিকিৎসা পেলে এই রোগে আক্রান্ত গরু ভালো হয়ে যায়।

গরুর খামারিরা বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হলে গরুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এরপর শরীরে টিউমারের মতো ফুলে উঠছে এবং চামড়া উঠে ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে। এ রোগে আক্রান্ত গরু খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিচ্ছে। একপর্যায়ে অনেক গরু মারা যাচ্ছে।

পশু চিকিৎসকদের মতে, গরুর শরীরের বিভিন্ন অংশে টিউমারের মতো ফুলে যাওয়ার লক্ষণ অনুযায়ী বোঝা যাচ্ছে এটি ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’। এটি মূলত ভাইরাসজনিত রোগ। আর এটি মশা-মাছি থেকে ছড়াচ্ছে।

দেবীপুর গ্রামের লিটন মাহমুদ বলেন, ‘গরুর জ্বর হলে খাওয়া কমিয়ে দেয়। এরপর দেখি গরুর শরীরে ফোসকার মতো ফুলে উঠছে। ধীরে ধীরে এগুলো ফুলে টিউমারের মতো হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তাররা বলছেন, চিকিৎসা দিলে এ রোগ সেরে যাবে।’

লিটন মাহমুদ আরও বলেন, ‘গত বছর আমার গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে মারা গেছে। এ বছর আবার একই রোগ হয়েছে। গরুর এই রোগ নিয়ে আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি। গরু মারা গেলে চাষির অনেক লোকসান হয়ে যায়। কারণ বছর শেষে সব খরচ বাদ দিয়ে একজন চাষির গরুটাই লাভ থাকে। রোগটা প্রায় প্রতিটি গরুতেই ছড়িয়ে পড়েছে।’

দেবীপুর গ্রামের খায়জ আলী বলেন, ‘প্রথমে গরুর জ্বর জ্বর ভাব হলো। দুদিন পরই শরীরে গুটি গুটি হয়ে ওঠে। গুটিগুলো ফেটে শরীরে ঘা হয়ে গেল। আমার দুটি বাছুরের হয়েছিল। অনেক চিকিৎসা দিয়েও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত দুটি বাছুরই মারা যায়।’

খায়জ আলী আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী গরু দুটিকে সন্তানের মতো লালন-পালন করে বড় করে তুলছিল। গরু দুটি মারা যাওয়ায় এত কষ্ট পেয়েছে যা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। সে কান্না থামাতে পারে না। আমার গরু দুটি মরার ১০-১২ দিন হয়ে গেল। আমার বাড়ির পাশেও আরেকজনের গরু মারা গেছে।’

গরু খামারি মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমার একটি ছোট গরুর এই রোগ হয়েছিল। দীর্ঘদিন চিকিৎসা দিয়েছি। তবু সুস্থ করতে পারিনি। অবশেষে মারা যায়। তাতে আমার প্রায় ৮০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। বর্তমানে অনেকে খামারি গরুর এই রোগ নিয়ে ভুগছে। অনেকের গরু মারাও গেছে।’

পশু চিকিৎসক হুরমত আলী বলেন, ‘এই রোগ গাংনীতে অনেক গরুর হয়েছে। তবে ভালো চিকিৎসা পেলে অতি দ্রুত সেরে যাচ্ছে। আশা করছি, ১৫-২০ দিনের মধ্যে গরু ভালোভাবে সেরে উঠবে। তবে ছোট গরুর বেশি ক্ষতি হচ্ছে। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।’

গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, অফিশিয়াল হিসাব অনুযায়ী গাংনী উপজেলায় মোট গরুর সংখ্যা ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯২৫। গরু আক্রান্তের সংখ্যা ১৪১টি। জানুয়ারি থেকে টিকা দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার গরুকে। হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা চারটি। অনেক খামারি নানাভাবে তাদের অসুস্থ গরুর চিকিৎসা দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আরিফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গরু মারা যাওয়ার সংখ্যা খুবই কম। তবে এই রোগে বাছুর আক্রান্ত হলে সমস্যা হয়। কারণ বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। গরু ভালো চিকিৎসা পেলে দ্রুত সেরে ওঠে। রোগটা ছড়াচ্ছে মশা-মাছি থেকে। কারও গরুর এই রোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, বর্ষা মৌসুমে সাধারণত রোগটি বেশি ছড়ায়। কারণ বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির পানি জমা হয়ে মশা বৃদ্ধি পায়। তাই বর্ষা মৌসুমে গরু খামারিদের সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত