Ajker Patrika

জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে তালাবদ্ধ বাড়িতে ২৯ ঘণ্টার অভিযান, যা উদ্ধার হলো

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪, ২৩: ৪৫
জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে তালাবদ্ধ বাড়িতে ২৯ ঘণ্টার অভিযান, যা উদ্ধার হলো

নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ভাসাপাড়া এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িটিতে ২৯ ঘণ্টার অভিযান শেষ হয়েছে। 

নেত্রকোনা জেলা পুলিশ, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, বিশেষ অস্ত্র ও কৌশল (সোয়াত), সাইবার টিমসহ বেশ কয়েকটি বিশেষ টিমের দেড় শতাধিক সদস্যের সমন্বয়ে পরিচালিত এ অভিযান আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শেষ হয়েছে। এর আগে গতকাল শনিবার দুপুর ১টা থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে পুলিশ। 

এ বাড়ি থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১৭ রাউন্ড গুলি, দুটি ম্যাগাজিন, দেশি রামদা, ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ, খেলনা একে-৪৭, ইলেকট্রিক করাত, মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম, ছয়টি সিসিটিভি ক্যামেরা, দুটি ফ্লাশ লাইট, একটি মার্শাল আর্ট ড্রেস, পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, সাতটি বাটন ফোন, একটি ল্যাপটপ, দুটি দূরবীণ, অত্যাধুনিক কম্পাস, সিলিকনের তৈরি মানবাকৃতির পাঞ্চিং বক্সসহ ৮০টি আলামত জব্দ করা হয়েছে। 

অভিযান শেষে ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপ–মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শাহ আবিদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, শনিবার দুপুরে সুনির্দিষ্ট একটি তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোনা জেলা পুলিশের একটি টিম, সদর থানার ওসি, সার্কেল এসপিসহ এখানে আসেন। তাঁদের কাছে সংবাদ ছিল যে এখানে যারা বসবাস করতেন তাঁদের একজন নরসিংদীতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশ জানতে পারে, এখানকার যে বাড়িটি এই বাড়িতে তিনি ভাড়া থাকতেন।

বাড়িটির মালিক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান। এটি তাঁর ফিশারি প্রজেক্ট ছিল। নরসিংদীতে গ্রেপ্তার হওয়া হামিম হোসেন ফাহিম ওরফে আরিফ যে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে তিনি এই বাড়িতে বসবাস করতেন পরিবার নিয়ে। অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পারে, তাঁরা দু–তিন বছর যাবৎ এখানে বসবাস করছেন।

ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন বলেন, ‘নরসিংদীর পুলিশ আমাদেরকে জানায়, এখানে এ রকম একটা ফিশারি প্রজেক্ট আছে কিনা। আমরা খোঁজ নিয়ে তাদের নিশ্চিত করি যে নেত্রকোনাতে এ রকম একটি প্রজেক্ট আছে। এ বাড়ির মালিক আব্দুল মান্নান পুলিশকে জানিয়েছেন, এ বাড়িতে যারা ভাড়া থাকতেন তাঁদের একজন অস্ত্র মামলায় আটক হয়েছেন। তিনি ধারণা করছিলেন যে এখানে হয়তো আরও কিছু থাকতে পারে এবং বাড়ি তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে।’

এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ এখানে শনিবার এসে এলাকার লোকদের নিয়ে তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং প্রাথমিক তল্লাশিতে একটি অস্ত্র ও গুলি পায় বলে জানান ডিআইজি শাহ আবিদ।

তিনি বলেন, পুলিশ আরও তদন্ত করার পর বুঝতে পারে ভেতরে বিস্ফোরক দ্রব্য আছে, এখান থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হতে পারে। তারপর অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা প্রতিনিধি পাঠায়।

সকালে ময়মনসিংহ অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান আব্দুল্লাহ চৌধুরী সকালে টিম নিয়ে আসেন। এর পরপরই অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রতিনিধি হিসেবে পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন টিম নিয়ে আসেন।

সকাল থেকে অভিযানের পর দুটি শক্তিশালী আইইডি (দূরনিয়ন্ত্রিত) বোমা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। ভেতর থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য ও আরও কিছু সরঞ্জাম জব্দ করেছে পুলিশ। 

জব্দ সরঞ্জামাদির মধ্যে রয়েছে: একটি বিদেশি পিস্তল, ১৭ রাউন্ড গুলি, দুটি ম্যাগাজিন, দেশি রামদা, ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ, খেলনা একে-৪৭, ইলেকট্রিক করাত, মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম, ছয়টি সিসিটিভি ক্যামেরা, দুটি ফ্লাশ লাইট, একটি মার্শাল আর্ট ড্রেস, পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, সাতটি বাটন ফোন, একটি ল্যাপটপ, দুটি দুরবিন, অত্যাধুনিক কম্পাস, সিলিকনের তৈরি মানবাকৃতির পাঞ্চিং বক্সসহ ৮০টি আলামত।

ভেতরে যে দুটি বোমা পাওয়া গেছে, সেই দুটি বোমা যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলে বলে জানান ডিআইজি।  তিনি বলেন,  ‘আমরা যেসব জিনিসপত্র এখান থেকে উদ্ধার করেছি তা দেখে আমাদের মনে হয়েছে এটা একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।’

শনিবার রাত থেকে নেত্রকোনা শহরের বনুয়াপাড়া এলাকায় আরেকটি বাড়ি পুলিশ ঘিরে রাখে। সেখানে অভিযান চালানো হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন বলেন, ‘এই বাড়ির ঘটনার সঙ্গে ওই বাড়ির কিছু লিংক আছে। কিন্তু তদন্তের গোপনীয়তার কারণে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলছি না। সময় হলে আপনাদের এ বিষয়ে তথ্য জানানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত