স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান: ডায়াসের সামনে জনশূন্য মাঠ, একের পর এক বক্তব্য দিচ্ছেন অতিথিরা

এম. কে. দোলন বিশ্বাস, ইসলামপুর (জামালপুর)
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৪, ২৩: ২৮
Thumbnail image

সারা দেশের ন্যায় জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় যথাযথ মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত হয়েছে। তবে জাতীয় এই বিশেষ দিবসটি মূল অনুষ্ঠানের মাঠে লোকজন ছিল না। এতে ফাঁকা মাঠেই বক্তারা তাঁদের বক্তব্য সারেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তবে অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দাবি, রমজান মাস হওয়ায় লোকজন তুলনামূলক ভালোই উপস্থিত হয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ইসলামপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রত্যুষে ৩১ তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটি শুভ সূচনা হয়। এতে অংশ নেন উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, সকল সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

সকাল ৮টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন অতিথিরা। 

প্রধান অতিথি ধর্মমন্ত্রী ও জামালপুর-২ ইসলামপুর আসনের সংসদ সদস্য মো. ফরিদুল হক খান দুলাল অনুপস্থিত ছিলেন। প্রথমেই বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এসএম জামাল আব্দুন নাছের বাবুল এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিকুল ইসলাম মানিক। 

এ সময় অনুষ্ঠানের মঞ্চে কিছু অতিথিকে দেখা গেলেও মঞ্চের সামনে কোনো লোকজন ছিল না। এ ছাড়া অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতার কথা উল্লেখ থাকলেও তা করা হয়নি। 

উপজেলার পলবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহদাৎ হোসেন স্বাধীন বলেন, ‘অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে সাধারণ লোকজনদের সেভাবে উপলব্ধি করাতে পারেনি। ফলে সাধারণ লোকজন অনুষ্ঠানে আসেনি। লোকজনকে স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য বোঝাতে হবে। তবেই এই সব অনুষ্ঠানে লোকজন আসবে।’ 

গাইবান্ধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে এই দেশকে স্বাধীন করেছি। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যে কারণেই হোক না কেন, যদি লোকজন না আসে, সেটা দুঃখের বিষয়। ঠিকমতো দাওয়াত দেওয়া হলে অবশ্যই লোকজন হতো।’ 

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে লোকজন কেন আসেনি—এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন লুটপাট করায় তাদের দাওয়াতে লোকজন আসেনি। আগামীতে এসব অনুষ্ঠানে আরও লোকজন কম হবে। কারণ অতিমাত্রায় দুর্নীতি করায় সাধারণ লোকজন প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীনদের দলের লোকের কথা শুনতে চাইবে না।’ 

উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মঞ্চে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, ‘লোকজন না আসায় স্বাধীনতা দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাঠ ফাঁকা থাকায় আমরা অবাক হয়েছি। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ 

ইসলামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসন থেকে দাওয়াতপত্র দেওয়া হয়েছিল। তবে রোজা রাখায় শিশু শিক্ষার্থীদের কষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে বাতিল করা হয়েছে।’ 

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মঞ্চের সামনে লোকজন না থাকার কারণ জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এসএম জামাল আব্দুন নাছের বাবুল বলেন, ‘মঞ্চে লোকজন ছিল। তবে রমজানের কারণে অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করায় মঞ্চের সামনে অংশে লোকজন হয়নি। তা ছাড়া ওই অনুষ্ঠানে সাধারণ লোকজনের উপস্থিত হওয়ার কথা নয়। মূলত উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, আনসার এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ও সদস্যগণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।’ 

ইউএনও মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যথাযথভাবে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। রমজান মাসেও তুলনামূলক লোকজন ভালোই হয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত