সর্বস্ব খুইয়ে বিদেশে গিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুট্টু ও মাইদুল, ফিরতে পারছেন না দেশে

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৫: ৪৪
Thumbnail image

‘বাক্‌প্রতিবন্ধী মেয়ে মোছা. পারভীন বেগমকে (২৫) একটু সুখে দেখব, সে আশায় তার জামাই মো. ভুট্টু মিয়াকে (৩০) সৌদি আরব পাঠাই আট মাস আগে। কিন্তু বিদেশে পাঠানো যে সর্বনাশ ডেকে আনবে বুঝতে পারিনি। জামাই বিদেশে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখন জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এখন আমরা আর মেয়ের সুখের স্বপ্ন দেখছি না। জামাই সুস্থ শরীরে বাড়ি ফিরলেই শান্তি।’

ক্ষোভ আর দুঃখ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন মো. দুলু মিয়া (৫৫)। তিনি উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের পূর্ব বাছহাটী গ্রামের মৃত আমজাদ আলীর ছেলে। 

দুলু মিয়া আরও বলেন, ‘জামাইকে বিদেশে পাঠাতে চাইনি। প্রতিবেশী কামরুল হাসান লিটন (৪০) আমার জামাইকে বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখায়। পরে তাকে সৌদি পাঠাতে বাধ্য হই। টাকা ছিল না। একটা গরু বিক্রি করি ৫০ হাজার আর সুদে নেই ১ লাখ মোট দেড় লাখ। বিধবা বিয়ানি জমি বন্ধক এবং সুদে দেয় বাকি টাকা। লিটনের কথামতো ৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা দেই গত ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখে। তিন দিন পর ৭ তারিখে ফ্লাইট হয়। ভাবছিলাম বিদেশে গেলেই উপার্জন করবে। টাকা পাঠালেই আগে সুদের টাকা পরিশোধ করব। কিন্তু আট মাস হচ্ছে, টাকা পাঠানো দূরের কথা, জীবন বাঁচাতে জামাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’

দুলু মিয়া বলেন, ‘এদিকে সুদের টাকা এখন কয়েক গুণ বেড়েছে। পরিশোধ করতে চাপও দিচ্ছে তারা। অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে মেয়ের সংসারেও। এখন কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। এ বিষয়ে কামরুল হাসান লিটনের সঙ্গে একাধিক মিটিং হয়েছে। তিনি আমাদের পাত্তাই দিচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন একই গ্রামের মো. মাইদুল ইসলাম। তাঁর স্ত্রী মোছা. কাকলী বেগম (২৫) বলেন, “মাঝেমধ্যে অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে আমার স্বামী মোবাইল করে বলেন, ‘আমরা খুবই বিপদে আছি। আকামা দেওয়া হয়নি। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তোমরা আমাদের উদ্ধার করো।” এই বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন মোছা. কাকলী বেগম।
 
কাকলী আরও বলেন, ‘স্বামীকে বিদেশে পাঠাতে চাইনি। কামরুল হাসান লিটন দিন-রাত ফুসলিয়ে ফুসলিয়ে রাজি করান। নিজের জমানো কোনো টাকা ছিল না। বিদেশে পাঠাতে ৪ লাখ ৫২ হাজার টাকার পুরোটাই সুদের ওপর নিয়ে দিয়েছি। আট মাস হচ্ছে স্বামী নেই। পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিদেশের মাটিতে। মেয়ে আছে দুটি। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে আমাদের। তার ওপর সুদের টাকা পরিশোধ করতে বাড়তি চাপ। সব মিলিয়ে ভীষণ কষ্টে আছি। এ নিয়ে কামরুল হাসান লিটনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন আমরা নাকি মিথ্যা বলছি। বাধ্য হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’ 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মো. কামরুল হাসান লিটন। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁদের বিদেশে পাঠাইনি। আমি বিদেশ করেছি। সে কারণে ওরা আমার কাছে এসেছিল সেই অফিসের তথ্য নিতে, যে অফিসের মাধ্যমে আমি বিদেশ গিয়েছিলাম। এখানে আমি মিডিয়া হিসেবে কাজ করেছি।’ তারা সৌদিতে ভালো আছে বলেও দাবি করেন কামরুল হাসান লিটন। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা একজন মেম্বার। আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে তারা এসব অপবাদ দিচ্ছে।’ 

এ বিষয়ে স্থানীয় সর্বানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘সালিস বৈঠকের নির্ধারিত তারিখে কামরুল হাসান লিটন ও তাঁর বাবা ফরমান আলী আসেননি। বাবা-ছেলে দুজনই প্রতারক। ভুট্টু ও মাইদুল বিদেশে কাজ পায়নি বরং জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুব আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত