Ajker Patrika

ওঝার ভরসায় সময় পার, সাপের কামড়ে প্রাণ গেল দুজনের 

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
ওঝার ভরসায় সময় পার, সাপের কামড়ে প্রাণ গেল দুজনের 

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে পৃথক স্থানে সাপের কামড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন গৃহবধূ আরেকজন তৃতীয় শ্রেণির স্কুলছাত্রী। গতকাল শনিবার মাঝরাতে সাপে কামড় দেয় দুজনকে। আজ রোববার ভোর ৫টার দিকে দুজন মারা যায়। তবে কোন সাপের কামড়ে মারা গেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

দুই পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাপের কামড় দেওয়ার পর দুটি পরিবার হাসপাতালে না নিয়ে ওঝা ডেকেছিলেন বিষ নামাতে। সেই ওঝা ৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চেষ্টা করেছেন বিষ নামানোর। 

সাপের কামড়ে নিহতরা হলেন— উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের চৌটাকী গ্রামের আকালু চন্দ্রের মেয়ে সুভাত্রা জুঁই (৯) ও পাড়িয়া ইউনিয়নের বামুনিয়া নিটালডোবা গ্রামের জয়নাল আবেদিনের শাহের বানু (৩৮)। 

স্কুলছাত্রীর বাবা আকালু চন্দ্র বলেন, ‘দুই মেয়ে একসঙ্গে ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ জুঁই চিৎকার দিলে দৌড়ে ঘরে গিয়ে কাপড় সরাতেই সাপ দেখতে পাই। পরে পল্লি চিকিৎসক এবং ওঝা এসে বিষ নামানোর চেষ্টা করে। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল, তাই হাসপাতালে নিতে পারিনি। ভোর ৫টার দিকে মারা যায়। রোববার বেলা ৩টায় সৎকার করেছি।’ 

হাসপাতালে সাপের চিকিৎসা হয় এটা জানেন কিনা জবাবে তিনি বলেন, প্রতিবেশীরা হাসপাতালে নিতে বলেছিল, ওঝা চেষ্টা করছিল, আর বৃষ্টির কারণে হাসপাতালে নিতে পারিনি। 

সাপের কামড়ে মারা যাওয়া গৃহবধূর বড় মেয়ে দেলোয়ার আক্তার বলেন, ‘রাতে ইঁদুর শিকার করতে ঘরে সাপ ঢুকেছিল। মারতে গেলে মাকে কামড় দেয়। সাপটিকে পিটিয়ে মারা পর ওঝাকে মোবাইলে খবর দেন বাবা। ওঝা চেষ্টা করার পর বলে বিষ সারা শরীরে উঠে গেছে। তখন মাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় বাবা।’

সাপের দংশনে মৃতের বাড়িতে প্রতিবেশীদের ভিড়গৃহবধূর স্বামী জয়নাল আবেদিন জানান, হাসপাতালে ইনজেকশন দেয় চিকিৎসক। এরপরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার কারণে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার্ড করে দিলে দিনাজপুরে পৌঁছানোর আগেই মারা যায় স্ত্রী। পরে লাশ বাড়িতে এনে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। 

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) আহাদুজ্জামান সজিব বলেন, ‘সাপে কামড়ানোর ৭ ঘণ্টা পর গৃহবধূকে হাসপাতালে এনেছে স্বজনেরা। এন্টিভেনম দেওয়ার পর আমরা দিনাজপুরে রেফার্ড করেছি। স্কুলছাত্রীকে হাসপাতালে পর্যন্ত নিয়ে আসেনি স্বজনরা। পরিবার দুটো সচেতন হলেই এদের বাঁচানো সম্ভব ছিল।’

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফছানা কাওছার বলেন, ‘বর্ষায় সাপের উপদ্রব বাড়লেও হাসপাতালে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম রয়েছে। সাপে দংশন করলে হাসপাতালে আসছে না স্বজনেরা। আমরা ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য এবং গ্রাম পুলিশকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত