Ajker Patrika

প্রবাসী বাবা থেকে জুয়ার টাকা নিতে কারমাইকেল ছাত্রের অপহরণ নাটক

নীলফামারী প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০: ৫৭
প্রবাসী বাবা থেকে জুয়ার টাকা নিতে কারমাইকেল ছাত্রের অপহরণ নাটক

অনলাইন জুয়ায় (থাই জুয়া) আসক্ত কলেজ পড়ুয়া এক ছেলে নিজে অপহরণের নাটক সাজিয়ে প্রবাসী বাবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সাজানো অপহরণের ৮ দিন পর মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) পুলিশ ওই শিক্ষার্থীকে নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। আর চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হুগলীপাড়ায়। 

অভিযুক্তের নাম হুমায়ুন কবির ওরফে বাবু (২২)। তিনি রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। 

আজ বৃহস্পতিবার সৈয়দপুর থানায় এক ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) কল্লোল কুমার দত্ত এ তথ্য জানান। এ সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহা আলম ও তদন্ত কর্মকর্তা এস এম রাসেল পারভেজ উপস্থিত ছিলেন। 

ব্রিফিংয়ে পুলিশ জানায়, সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হুগলীপাড়ার তহিদুল ইসলাম ও হামিদা বেগম দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। এদের মধ্যে হুমায়ুর কবির বাবু সবার ছোট। চার বছর আগে হুমায়ুর কবির বাবুর বাবার সঙ্গে তাঁর মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তাঁর মা হামিদা বেগম প্রায় দুই বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে স্বামীর সঙ্গে ঢাকার আশুলিয়ায় থাকেন। আর বাবুর বাবা তহিদুল ইসলাম কাতার প্রবাসী। তিনি দীর্ঘ প্রায় ১৫ / ১৬ বছর ধরে কাতারে থাকেন। বাবুর বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। 

অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির ওরফে বাবু সৎ মায়ের সঙ্গে বাড়িতে থাকেন। বর্তমানে তিনি রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার পাশাপাশি বেশ কিছু দিন ধরে অনলাইন জুয়া আসক্ত হয়ে পড়েন বাবু। এতে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে সে। ঋণ থেকে মুক্তি পেতে সে নিজেকে নিয়ে একটি অপহরণের নাটক সাজানোর ফন্দি আঁটেন। ঘটনার দিন গত ২৩ জানুয়ারি সে তাঁর সৎ মা স্বপ্না বেগম এবং চাচি মালেকা বেগমকে নিয়ে কেনাকাটার করার উদ্দেশ্যে সৈয়দপুর প্লাজায় আসেন। এরপর সে সেখানে তাদের বসিয়ে রেখে গা ঢাকা দেয়। 

বাবু স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানান, হুমায়ুন কবির বাবু সৎ মা ও চাচিকে সৈয়দপুর প্লাজায় বসিয়ে রেখে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা করে নীলফামারীতে চলে যান। সেখানে রেলওয়ে স্টেশনে হাবিবুর রহমান (৩০) নামে একজনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এরপর তাকে সে তাঁর অপহরণ পরিকল্পনার কথা খুলে বলে। 

সেখানে তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয় অপহরণ নাটক সাজিয়ে যে টাকা পয়সা আসবে তারা দু’জনে সমান ভাগে ভাগ করে নেবে। যেই কথা সেই কাজ। এরপর হাবিবুব শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির বাবুকে তার নীলফামারী সদরের চাঁদের হাট এলাকার বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে তাকে বন্ধু হিসেবে পরিচয় নিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেন। 

পরবর্তীতে হুমায়ুন কবির বাবু তাঁর কাতার প্রবাসী বাবাকে মোবাইল ফোনের ইমোতে কল করে জানান, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে তাকে ছেড়ে দেবে অপহরণকারীরা। এতে বাবার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে জন্য স্থানীয় একটি স্কুল ঘরের মধ্যে বাবু নিজের হাত–পা বেঁধে বাবাকে ইমোতে দেখান। এতে বাবুর বাবা ঘটনার বিষয়ে বিশ্বাস আসে। 

অন্যদিকে, বাবু মা হামিদা বেগম ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে থানায় একটি জিডি করেন। পরবর্তীতে বাবু বাবার কাছ থেকে তাকে অপহরণের বিষয়ে জানতে পেরে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। কিন্তু বাবুর বাবা তাঁর আদরের ছেলেকে পেতে অপহরণকারীদের জন্য ৫০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেন। 

থানায় মামলা দায়ের পর থেকে সৈয়দপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা এস এম রাসেল পারভেজ ঘটনাটি নিয়ে তদন্তে নামেন। পরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হন, বাবু বাবার পাঠানো টাকা নীলফামারীতে ক্যাশ আউট করা হয়েছে। এরপর পুলিশ তাকে উদ্ধারের তদন্তে নামে। আর পুলিশি তৎপরতা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে অপহরণ নাটকের হোতা হুমায়ুন কবির বাবু গত মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) অসুস্থতার ভান করে অটোরিকশা করে নিজ বাড়িতে পৌঁছান। 

বাড়িতে ফিরে আসার খবর পেয়ে বুধবার সৈয়দপুর থানা–পুলিশ হুমায়ুর কবির বাবুকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের সে নিজে অপহরণ নাটক সাজানোর ঘটনাটি স্বীকার করেন। 

সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার ঘটনার বিষয়ে হুমায়ুন কবির বাবুর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত