স্বপ্ন দেখাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের সুপ্রিয় রেশম কারখানা

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯: ০৬

২১ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। প্রায় পাঁচ দশক আগে প্রতিষ্ঠিত কারখানাটি সম্প্রতি বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হয়। সুপ্রিয় রেশম কারখানা নামে প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে রেশমের কাপড় উৎপাদন শুরু করে।

আজ রোববার শহরের গোবিন্দনগর এলাকায় কারখানাটিতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো এলাকা তাঁতের খটাখট শব্দে সরব হয়ে উঠেছে। সেখানে কাজ করছিলেন নজরুল ইসলাম, নাসিমা বেগম, ফয়সাল রহমানসহ অনেকে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা প্রত্যেকে এই কারখানায় তিন-চার মাস ধরে কাজ করছেন।

তাঁতের কাজ করা নাসিমা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তাঁত বোনার কাজ করি। উৎপাদনের ওপর আমার বেতন নির্ধারণ করা হয়। যত বেশি তাঁত বুনতে পারব, তত বেশি টাকা পাব।’

ফয়সাল রহমান নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘প্রতিগজ তাঁত বুনলে ৫০ টাকা করে পাই। সারা দিনে ১০ থেকে ১১ গজ পর্যন্ত তাঁত বুনতে পারি।’

কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মারুফ হাসান বলেন, কারখানায় দৈনিক মজুরিভিত্তিক ৩০ জন কর্মচারী কাজ করছেন। তাঁরা প্রতি মাসে গড়ে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ গজ কাপড় উৎপাদন করছেন। তাঁদের উৎপাদিত কাপড় কারখানার বিক্রি কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০টি রেশমের শাড়ি ও পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে।

কারখানার ফোরম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ২০টি লুম থাকলেও আপাতত ১০টিতে রেশম কাপড় উৎপাদন হচ্ছে। কারখানায় ২০টি লুম চালু করা গেলে প্রতিদিন ২০০ গজের মতো কাপড় উৎপাদন সম্ভব হবে।

রেশম কারখানা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫-৭৬ সালে শহরের গোবিন্দনগর এলাকায় তৎকালীন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রুরাল সার্ভিস (আরডিআরএস) প্রায় ৩ একর জায়গায় কারখানাটি স্থাপন করে। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের কাছে এটি হস্তান্তর করা হয়। এরপর ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর লোকসানের কারণ দেখিয়ে কারখানাটি বন্ধ করে দেয় সরকার।

সুপ্রিয় রেশম কারখানায় তাঁতের কাজে ব্যস্ত এক শ্রমিকগত আগস্ট মাসে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কারখানাটি আবার চালু হয়। রেশম বোর্ডের সঙ্গে অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে কারখানা পরিচালনার দায়িত্ব নেয় ঠাকুরগাঁওয়ের সুপ্রিয় গ্রুপ। চুক্তির পর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সুপ্রিয় রেশম কারখানা।

সুপ্রিয় গ্রুপের চেয়ারম্যান বাবলুর রহমান বলেন, রেশমের কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে, বিশেষ করে রেশমের শাড়ির। জেলার বাইরে অনেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বসবাসরত আত্মীয়স্বজনের জন্য রেশমের পাঞ্জাবি ও শাড়ি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, শিগগিরই কারখানার আরও কয়েকটি লুম চালু করা হবে। ফলে রেশমকে কেন্দ্র করে সমৃদ্ধ হবে এ জেলা।

ঠাকুরগাঁওয়ের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে বলেন, রেশম শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাতে রেশম শিল্পের আভিজাত্য ও ঐতিহ্য দুটিই ফিরে আসবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত