Ajker Patrika

মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তাপারে ছুটছেন ৫ জেলার মানুষ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৪৮
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন জেলার মানুষ। আজ সোমবার সকালে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন জেলার মানুষ। আজ সোমবার সকালে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে দলে দলে যোগ দিতে আসছেন পাঁচ জেলার মানুষ। আজ সোমবার বেলা ২টায় লালমনিরহাটের তিস্তা সড়ক সেতু মঞ্চে উপস্থিত থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই কর্মসূচির উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

জানা গেছে, তিস্তা নদীর দুই পারে আশপাশের পাঁচটি জেলার মানুষ এ অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। এ জন্য নীলফামারী থেকে গাইবান্ধা পর্যন্ত ১১টি স্থানে মঞ্চ ও তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি স্থানে সরাসরি উপস্থিত থাকবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। তাঁরা সেখানে অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেবেন। কাল মঙ্গলবার সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। সেখানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

কর্মসূচির আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঞ্চে টানা ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান করতে মানুষের অতিপ্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থায় রাখা হয়েছে। খাবার, অজু ও নামাজের ব্যবস্থা, গোসল, শৌচাগারসহ অতিপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। দিনে থাকবে ঘুড়ি উৎসবসহ গ্রামীণ সব খেলাধুলা আর রাতে তিস্তাপারের মানুষের সুখ-দুঃখের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও ভাওয়াইয়া গানের আসর, তিস্তার দুই পারে জ্বলবে মশাল। সব মিলে তিস্তাপাড় সেজে এক বর্ণিল সাজে।

তিস্তাপারের কৃষক আব্বাস আলী বলেন, ‘তিস্তা হামার সব শেষ করছে বাহে। গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু ছিল। একে একে আটবার তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়েছে সব। এখন মানুষের (অন্যের) জমিতে থাকি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে হাজার হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদ করতে পারব বাহে।’

আঞ্চলিক ভাষায় সবাইকে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে আব্বাস আলী বলেন, ‘আইসো বাহে, তিস্তা বাঁচাই। তিস্তার পানির হিস্যা চাই, মহাপরিকল্পনা দ্রুতই চাই।’

দুই কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে যাচ্ছিলেন জলিল মিয়া। তিনি বলেন, ‘তিস্তা বাঁচলে রংপুর অঞ্চল বাঁচবে বাহে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা হলে হামাক আর বেকার থাকা লাগবি না। কাজ কাম পাব, জমি চাষাবাদ করমো। ভালোই চলবে দিন। তাই হাটি রহনা দিয়েছি তিস্তাপারের মঞ্চে যাব। দুই দিন থাকব।’

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন জেলার মানুষ। আজ সোমবার সকালে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন জেলার মানুষ। আজ সোমবার সকালে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিস্তাপারের বাসিন্দারা বলছেন, তিস্তার তলদেশ ভরাট হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি আর উজানের ঢলে দুই কূল উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যা আর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমিসহ স্থাপনা। একই সঙ্গে বর্ষা মৌসুম শেষে মাইলের পর মাইল মরুভূমিতে পরিণত হয় তিস্তার বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে অনাবাদি পড়ে রয়েছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। অন্য দিকে তিস্তার উজানে ভারত সরকার গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে একতরফা ব্যবহার করছে। তারা বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিলে বাংলাদেশ অংশের রংপুর অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। আবার বর্ষা মৌসুম শেষে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়।

এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করে আসছে বাংলাদেশ। যে দাবি আদায়ে বিভিন্ন সময় নানান আন্দোলন-সংগ্রাহ করেছে বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তাপারের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। নতুন করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের লক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত