Ajker Patrika

রাণীশংকৈলে সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনে অনিয়মের অভিযোগ

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২২: ৫২
রাণীশংকৈলে সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনে অনিয়মের অভিযোগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাণীশংকৈলে সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনে অনিয়মের অভিযোগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল পৌরসভার সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান বাজারে একটি সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও এর ব্যয় ধরা হয়েছে কয়েক গুন বেশি। পৌর বাসিন্দারা বলছেন, এতে সরকারের লাখ লাখ টাকা গচ্চা যাচ্ছে।

জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের আওতায় রাণীশংকৈল পৌর এলাকায় সৌর বিদ্যুতায়িত সড়কবাতি স্থাপন প্রকল্পে ১৫০টি লাইটের দরপত্র আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। এতে চুক্তিবদ্ধ হয় এনার্জিয়ন বাংলাদেশ লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠান। ১৫০টি স্ট্রিট সোলার লাইট স্থাপনে মোট ১ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৪৯৯ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয় ওই কোম্পানিটি।

বাজারে ৩০ হাজার টাকার একটি স্ট্রিট লাইট পৌরসভার বরাদ্দে ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৯ টাকা। বাজার থেকে প্রায় এক লাখ টাকা বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। এতে ১৫০টি লাইটে প্রায় দেড় কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে সরকারের।

বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হলে এই প্রতিবেদক অনুসন্ধানে নামেন। এই সময় পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী জাবেদ আলী লাইট স্থাপনের এস্টিমেট বা কাজের ধরন সম্পর্কে তথ্য দিতে সময় ক্ষেপণ করেন। একপর্যায়ে অপারগতা জানান।

পরে বর্তমান পৌর প্রশাসক ইউএনও রকিবুল হাসানের সঙ্গে কথা বললে তিনি প্রথমে তথ্য দিতে অপারগতা জানালেও দুদিন পরে লাইট স্থাপনের ডিজাইনসহ এস্টিমেটের দুটি ছবি প্রতিবেদকে দেন। তবে এলএডি লাইট, সোলার প্যানেলসহ অন্য মালামাল কোনোটার কেমন দাম ধরা হয়েছে সেটির কোন তথ্য প্রকৌশলী বা ইউএনও কেউই দেননি।

এস্টিমেট অনুযায়ী সোলার স্থাপনে ৩ ফিট মাটি খনন করে ৫ ইঞ্চি সিসি ঢালায় দিয়ে ২ ফিট বাই ২ ফিট আরসিসি ব্যাস ঢালায় দেওয়ার বিধান থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন করছে না ঠিকাদার কিংবা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। তারা সিসি ঢালায় বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ ১৬ ইঞ্চির একটি স্ল্যাব দিয়ে সোলারের গোড়া বসিয়ে মাটি চাপা দিয়ে ওপরে আবারও ১৪ থেকে ১৫ ইঞ্চির খোয়া ঢালায় দিচ্ছে।

পৌরসভার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘ভালো লাইট যেখানে ৩০ হাজার টাকায় স্থাপন সম্ভব। সেখানে পৌরসভা এত অতিরিক্ত টাকায় কেন বর্তমানে লাইট স্থাপন করছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’ তারা বলেন, ‘সরকার বা রাষ্ট্র অযথায় প্রায় কোটি টাকা গচ্চা দিচ্ছে।’ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানান তারা।

পৌরসভার ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ বলেন, ‘স্ট্রিট লাইট অনিয়ম হচ্ছে। যেসব মালামাল স্থাপন হচ্ছে এগুলো নিম্নমানের। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’ তা ছাড়া বিভিন্ন সময় লাইটের দাম নিয়েও অনেকে তার কাছে অভিযোগ করছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জানতে চাইলে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী জাবেদ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে শতাধিক লাইট স্থাপন হয়েছে। স্ট্রিট লাইটের বিষয়ে মন্ত্রণালয় যা অনুমোদন দিয়েছে, তা আমরা বাস্তবায়ন করছি। কাজে কোন অনিয়ম হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক রকিবুল হাসান বলেন, ‘সিসি ঢালায় বা অনিয়মের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।’

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক (রংপুর) মোস্তফা রায়হান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘সোলার লাইট স্থাপনের ব্যয় যাচাই বাছাই করে ধরা হয়েছে। সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত