আবু তাহের খান
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের সাত ধাপ এগিয়ে যাওয়াই প্রমাণ করে দেশের মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে। মন্ত্রী ঠিকই বলেছেন। আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০১তম। এবার ৯৪তম স্থানে উন্নীত হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থান ১৩৬ এবং পাকিস্তানের ১২১তম।
কিন্তু এর পরও কথা আছে। করোনায় কত মানুষ কাজ হারিয়েছে, কত মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে এবং কত মানুষের আয় কী পরিমাণে কমেছে—এসব বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য ও পরিসংখ্যানের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও সব কটি বিষয়ই যে ব্যাপক পরিসরে ঘটেছে, তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। ফলে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা, কষ্ট ও অসহায়ত্ব কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, তা এখন আর বিতর্কের বিষয় নয়; বরং এই পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে, সেটাই হওয়া উচিত মূল বিবেচনা ও চিন্তাভাবনার মূল ক্ষেত্র। আর সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া উচিত ভৌগোলিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবেচনায় বিরাজমান প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যাগুলোকে বাস্তবতার আলোকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা। এ ক্ষেত্রে নিছক স্ট্যান্টমূলক এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়, যা সাধারণ মানুষের মনকে আঘাত করে। দ্রব্যমূল্য অসহনীয় মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে এমনটি বলা হলো যে মানুষের আয় এখন তিন গুণ বেড়ে গেছে, ফলে তাদের জন্য এটি কোনো সমস্যা নয়। মানুষের সমস্যার প্রতি সংবেদনশীল না হয়ে উল্টো এ ধরনের কথা বললে মানুষ সত্যি কষ্ট পায়। এটি বস্তুত তাদের অসহায়ত্ব নিয়ে উপহাস করারই শামিল। প্রয়াত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সাইফুর রহমান অর্থমন্ত্রী থাকাকালে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে উপহাসের ভঙ্গিতে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘মঙ্গা আবার কী জিনিস?’ এ দেশের সচেতন সাধারণ মানুষ এত বছর পরও তাঁর সেই উপহাসের কথা ভুলতে পারেনি। অতএব মানুষের কষ্ট ও অসহায়ত্ব নিয়ে উপহাস করবেন না। সময় পেরিয়ে গেলেও মানুষ এটি ভোলে না।
করোনাজনিত বর্ধিত বেকারত্ব ও সাধারণ মানুষের আয় হ্রাসজনিত পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধির বিষয়টি এখন সাধারণ মানুষের সামনে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতির যথার্থতা স্বীকার করে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। কিন্তু নীতিনির্ধারকেরা যদি সেদিকে না গিয়ে ক্রমাগত বলতে থাকেন যে মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৫৯১ ডলার ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী, মানুষ তখন স্বভাবতই পাল্টা মন্তব্য করার সুযোগ পায় যে এই করোনার মধ্যে জীবন-জীবিকা নিয়ে মানুষের যখন নাভিশ্বাস অবস্থা, তখনো মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে যাওয়া মানে তো গুটিকতক মানুষের মুনাফা ও লুণ্ঠন একচেটিয়া হয়ে ওঠারই নামান্তর। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর মুনাফা ও লুণ্ঠন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ওঠার কারণেই গড় হিসাবে গিয়ে মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে যা সাধারণ মানুষের কোনো কাজেই আসছে না।
এদিকে ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি প্রলম্বিত হওয়া, ইউক্রেন যুদ্ধ ও এর সূত্র ধরে রাশিয়ার ওপর ন্যাটো জোটভুক্ত কোনো কোনো দেশের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ, চীন-মার্কিন বাণিজ্য সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়া প্রভৃতি কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এমনিতেই ঝুঁকির মুখে, যার নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের নিকট ভবিষ্যতের অর্থনীতির ওপর পড়তে বাধ্য। এ অবস্থায় সরকার যদি তার আর্থিক ও জনসংশ্লিষ্ট নীতিমালা (যা এখন সুবিধাভোগী শ্রেণির নিয়ন্ত্রণে) সাধারণ মানুষের ন্যূনতম স্বার্থের অনুকূল করে ঢেলে না সাজায়, তাহলে সামনের দিনগুলোতে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা আরও অধিক কষ্টের মধ্যে নিপতিত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। ‘চুঁইয়ে পড়া’ নীতি অনুসরণে এভাবে আরও কিছু সময়ের জন্য হয়তো কিছু মানুষকে টিকিয়ে রাখা যাবে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর পড়তে বাধ্য। তখন মধ্যম আয়ের দেশ বনে যাওয়ার পরও দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠীকে মানবেতর জীবনযাপনের মধ্য দিয়েই যেতে হবে বলে উদ্বিগ্ন বোধ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও যদি এরূপ আশঙ্কা ও উদ্বেগকে মোকাবিলা করেই আমাদের চলতে হয়, তাহলে আর ওই মুখরোচক মাথাপিছু আয় ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি কী কাজে লাগল?
সামনেই ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট। যতটুকু জানা যায়, নানা প্রভাবশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠী, কালোটাকার মালিক, নগদ ভর্তুকির মূল ভোক্তা, ঋণখেলাপি, বেসরকারি ব্যাংকের মালিকপক্ষ, খাদ্যশস্যের মজুতদার, ভোজ্যতেল, এলএনজিসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানিকারক, বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী, ই-ক্যাবের মতো চতুর সংগঠন প্রভৃতি পক্ষের বোঝাপড়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সামনে নির্বাচন। ফলে এ ধারণা নিয়েই তাঁরা এগোচ্ছেন যে তাঁদের দাবিদাওয়ার পরিপূরণ অব্যর্থ হতে বাধ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে উৎপাদক-কৃষক, খুদে উদ্যোক্তা, সাধারণ ভোক্তা, গরিব রেমিট্যান্স প্রেরণকারী তাঁদের পক্ষে দেনদরবার দূরে থাক, তাঁদের পক্ষে নীতিগত বক্তব্য দেওয়ারও তেমন কেউ নেই। ফলে এ আশঙ্কাই ক্রমান্বয়ে প্রবল হচ্ছে যে সামনের দিনগুলোতে দ্রব্যমূল্যই শুধু নয়, অন্যান্য জনভোগান্তিও হয়তো বহুলাংশে বেড়ে যাবে। কিন্তু হতাশার সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, এ ব্যাপারে দেশের নাগরিক সমাজও অনেকটাই নিশ্চুপ। আর অন্যতম বিরোধী দলকেও দেখা যায় শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি খুঁজতে। সাধারণ জনগণের সমস্যা, প্রয়োজন ও আকাঙ্ক্ষার দিকে তাদের মনোযোগ খুবই সামান্য। মোটকথা, জনগণের দিনকাল এখন আসলেই এক অচ্ছেদ্য অসহায়ত্বের চক্রে বন্দী। সেই দুর্ভোগ ও অসহায়ত্বের হাত থেকে কে তাদের উদ্ধার করবে—সেই প্রশ্নের জবাব পাওয়া সত্যি কঠিন হয়ে পড়েছে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ জনদুর্ভোগের বিষয়গুলো সম্পর্কে যে দেশের নীতিনির্ধারকেরা অবহিত নন, এমনটি বলা যাবে না। বিষয়গুলো তাঁরা অবহিত বলেই টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে পরিস্থিতি মোকাবিলার অতি দুর্বল কিছু চেষ্টা হয়তো চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারছেন না বা বুঝেও স্বার্থের টানাপোড়েনের কারণে ভুলে থাকার চেষ্টা করছেন যে শুধু টিসিবির মাধ্যমে সামান্য পরিমাণে পণ্য সরবরাহ বাড়িয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে আসল প্রয়োজন হচ্ছে রাষ্ট্রের নীতিকাঠামোকে যত দ্রুত সম্ভব সাধারণ জনগণের স্বার্থের অনুকূলে ঢেলে সাজানো। কিন্তু সেটি কি তাঁরা করবেন? বিত্তবান ব্যবসায়ী ও নানা পেশার সুবিধাভোগীরাই ক্ষমতার মূল পাহারাদার—এরূপ ভ্রান্ত ধারণা যত দিন টিকে থাকবে, তত দিন পর্যন্ত নীতিকাঠামোয় উল্লিখিত কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন কখনোই আসবে বলে মনে হয় না। নীতিনির্ধারকেরা কি তাঁদের ধারণা পাল্টাতে সম্মত হবেন? আশা করি হবেন এবং তা হবেন এ কারণে যে সেটি শুধু জনগণের স্বার্থে নয়, তাঁদের নিজেদের স্বার্থেও জরুরি। আর এটাও বোঝা প্রয়োজন যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার জন্য উচ্চতর প্রবৃদ্ধির প্রয়োজন আছে বটে; কিন্তু এ ক্ষেত্রে এর চেয়েও অধিক প্রয়োজনীয় হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ জনগণের স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবনযাপন। তো, সে জীবনই যদি না জোটে, তাহলে প্রবৃদ্ধির বড়াই করা অনেকের কাছেই হাস্যকর বলে মনে হবে।
আবু তাহের খান, সাবেক পরিচালক বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক), শিল্প মন্ত্রণালয়
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের সাত ধাপ এগিয়ে যাওয়াই প্রমাণ করে দেশের মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে। মন্ত্রী ঠিকই বলেছেন। আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০১তম। এবার ৯৪তম স্থানে উন্নীত হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থান ১৩৬ এবং পাকিস্তানের ১২১তম।
কিন্তু এর পরও কথা আছে। করোনায় কত মানুষ কাজ হারিয়েছে, কত মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে এবং কত মানুষের আয় কী পরিমাণে কমেছে—এসব বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য ও পরিসংখ্যানের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও সব কটি বিষয়ই যে ব্যাপক পরিসরে ঘটেছে, তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। ফলে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা, কষ্ট ও অসহায়ত্ব কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, তা এখন আর বিতর্কের বিষয় নয়; বরং এই পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে, সেটাই হওয়া উচিত মূল বিবেচনা ও চিন্তাভাবনার মূল ক্ষেত্র। আর সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া উচিত ভৌগোলিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবেচনায় বিরাজমান প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যাগুলোকে বাস্তবতার আলোকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা। এ ক্ষেত্রে নিছক স্ট্যান্টমূলক এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়, যা সাধারণ মানুষের মনকে আঘাত করে। দ্রব্যমূল্য অসহনীয় মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে এমনটি বলা হলো যে মানুষের আয় এখন তিন গুণ বেড়ে গেছে, ফলে তাদের জন্য এটি কোনো সমস্যা নয়। মানুষের সমস্যার প্রতি সংবেদনশীল না হয়ে উল্টো এ ধরনের কথা বললে মানুষ সত্যি কষ্ট পায়। এটি বস্তুত তাদের অসহায়ত্ব নিয়ে উপহাস করারই শামিল। প্রয়াত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সাইফুর রহমান অর্থমন্ত্রী থাকাকালে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে উপহাসের ভঙ্গিতে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘মঙ্গা আবার কী জিনিস?’ এ দেশের সচেতন সাধারণ মানুষ এত বছর পরও তাঁর সেই উপহাসের কথা ভুলতে পারেনি। অতএব মানুষের কষ্ট ও অসহায়ত্ব নিয়ে উপহাস করবেন না। সময় পেরিয়ে গেলেও মানুষ এটি ভোলে না।
করোনাজনিত বর্ধিত বেকারত্ব ও সাধারণ মানুষের আয় হ্রাসজনিত পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধির বিষয়টি এখন সাধারণ মানুষের সামনে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতির যথার্থতা স্বীকার করে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। কিন্তু নীতিনির্ধারকেরা যদি সেদিকে না গিয়ে ক্রমাগত বলতে থাকেন যে মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৫৯১ ডলার ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী, মানুষ তখন স্বভাবতই পাল্টা মন্তব্য করার সুযোগ পায় যে এই করোনার মধ্যে জীবন-জীবিকা নিয়ে মানুষের যখন নাভিশ্বাস অবস্থা, তখনো মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে যাওয়া মানে তো গুটিকতক মানুষের মুনাফা ও লুণ্ঠন একচেটিয়া হয়ে ওঠারই নামান্তর। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর মুনাফা ও লুণ্ঠন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ওঠার কারণেই গড় হিসাবে গিয়ে মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে যা সাধারণ মানুষের কোনো কাজেই আসছে না।
এদিকে ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি প্রলম্বিত হওয়া, ইউক্রেন যুদ্ধ ও এর সূত্র ধরে রাশিয়ার ওপর ন্যাটো জোটভুক্ত কোনো কোনো দেশের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ, চীন-মার্কিন বাণিজ্য সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়া প্রভৃতি কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এমনিতেই ঝুঁকির মুখে, যার নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের নিকট ভবিষ্যতের অর্থনীতির ওপর পড়তে বাধ্য। এ অবস্থায় সরকার যদি তার আর্থিক ও জনসংশ্লিষ্ট নীতিমালা (যা এখন সুবিধাভোগী শ্রেণির নিয়ন্ত্রণে) সাধারণ মানুষের ন্যূনতম স্বার্থের অনুকূল করে ঢেলে না সাজায়, তাহলে সামনের দিনগুলোতে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা আরও অধিক কষ্টের মধ্যে নিপতিত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। ‘চুঁইয়ে পড়া’ নীতি অনুসরণে এভাবে আরও কিছু সময়ের জন্য হয়তো কিছু মানুষকে টিকিয়ে রাখা যাবে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর পড়তে বাধ্য। তখন মধ্যম আয়ের দেশ বনে যাওয়ার পরও দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠীকে মানবেতর জীবনযাপনের মধ্য দিয়েই যেতে হবে বলে উদ্বিগ্ন বোধ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও যদি এরূপ আশঙ্কা ও উদ্বেগকে মোকাবিলা করেই আমাদের চলতে হয়, তাহলে আর ওই মুখরোচক মাথাপিছু আয় ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি কী কাজে লাগল?
সামনেই ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট। যতটুকু জানা যায়, নানা প্রভাবশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠী, কালোটাকার মালিক, নগদ ভর্তুকির মূল ভোক্তা, ঋণখেলাপি, বেসরকারি ব্যাংকের মালিকপক্ষ, খাদ্যশস্যের মজুতদার, ভোজ্যতেল, এলএনজিসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানিকারক, বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী, ই-ক্যাবের মতো চতুর সংগঠন প্রভৃতি পক্ষের বোঝাপড়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সামনে নির্বাচন। ফলে এ ধারণা নিয়েই তাঁরা এগোচ্ছেন যে তাঁদের দাবিদাওয়ার পরিপূরণ অব্যর্থ হতে বাধ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে উৎপাদক-কৃষক, খুদে উদ্যোক্তা, সাধারণ ভোক্তা, গরিব রেমিট্যান্স প্রেরণকারী তাঁদের পক্ষে দেনদরবার দূরে থাক, তাঁদের পক্ষে নীতিগত বক্তব্য দেওয়ারও তেমন কেউ নেই। ফলে এ আশঙ্কাই ক্রমান্বয়ে প্রবল হচ্ছে যে সামনের দিনগুলোতে দ্রব্যমূল্যই শুধু নয়, অন্যান্য জনভোগান্তিও হয়তো বহুলাংশে বেড়ে যাবে। কিন্তু হতাশার সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, এ ব্যাপারে দেশের নাগরিক সমাজও অনেকটাই নিশ্চুপ। আর অন্যতম বিরোধী দলকেও দেখা যায় শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি খুঁজতে। সাধারণ জনগণের সমস্যা, প্রয়োজন ও আকাঙ্ক্ষার দিকে তাদের মনোযোগ খুবই সামান্য। মোটকথা, জনগণের দিনকাল এখন আসলেই এক অচ্ছেদ্য অসহায়ত্বের চক্রে বন্দী। সেই দুর্ভোগ ও অসহায়ত্বের হাত থেকে কে তাদের উদ্ধার করবে—সেই প্রশ্নের জবাব পাওয়া সত্যি কঠিন হয়ে পড়েছে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ জনদুর্ভোগের বিষয়গুলো সম্পর্কে যে দেশের নীতিনির্ধারকেরা অবহিত নন, এমনটি বলা যাবে না। বিষয়গুলো তাঁরা অবহিত বলেই টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে পরিস্থিতি মোকাবিলার অতি দুর্বল কিছু চেষ্টা হয়তো চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারছেন না বা বুঝেও স্বার্থের টানাপোড়েনের কারণে ভুলে থাকার চেষ্টা করছেন যে শুধু টিসিবির মাধ্যমে সামান্য পরিমাণে পণ্য সরবরাহ বাড়িয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে আসল প্রয়োজন হচ্ছে রাষ্ট্রের নীতিকাঠামোকে যত দ্রুত সম্ভব সাধারণ জনগণের স্বার্থের অনুকূলে ঢেলে সাজানো। কিন্তু সেটি কি তাঁরা করবেন? বিত্তবান ব্যবসায়ী ও নানা পেশার সুবিধাভোগীরাই ক্ষমতার মূল পাহারাদার—এরূপ ভ্রান্ত ধারণা যত দিন টিকে থাকবে, তত দিন পর্যন্ত নীতিকাঠামোয় উল্লিখিত কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন কখনোই আসবে বলে মনে হয় না। নীতিনির্ধারকেরা কি তাঁদের ধারণা পাল্টাতে সম্মত হবেন? আশা করি হবেন এবং তা হবেন এ কারণে যে সেটি শুধু জনগণের স্বার্থে নয়, তাঁদের নিজেদের স্বার্থেও জরুরি। আর এটাও বোঝা প্রয়োজন যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার জন্য উচ্চতর প্রবৃদ্ধির প্রয়োজন আছে বটে; কিন্তু এ ক্ষেত্রে এর চেয়েও অধিক প্রয়োজনীয় হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ জনগণের স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবনযাপন। তো, সে জীবনই যদি না জোটে, তাহলে প্রবৃদ্ধির বড়াই করা অনেকের কাছেই হাস্যকর বলে মনে হবে।
আবু তাহের খান, সাবেক পরিচালক বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক), শিল্প মন্ত্রণালয়
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১৬ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে