Ajker Patrika

বিদ্যুৎ পরিস্থিতি: গ্রীষ্মের আগেই লোডশেডিং, রাজধানীর বাইরে তীব্র

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২: ১৭
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি: গ্রীষ্মের আগেই লোডশেডিং, রাজধানীর বাইরে তীব্র

গ্রীষ্ম না এলেও চৈত্রের শেষে বেড়েছে গরম। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র লোডশেডিং। রাজধানী ঢাকায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কম হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর পরিমাণ ব্যাপক। উপজেলা পর্যায়ে কোথাও কোথাও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। মধ্যরাতেও লোডশেডিং হচ্ছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, দেশে ও দেশের বাইরে দেড় শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। তবে সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকছে তিন-সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে লোডশেডিং করে ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে। সাগরে সামিট গ্রুপের ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল সংস্কার শেষ হলে সেখান থেকে শিগগির গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। ফলে দুই-তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

জানতে চাইলে গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সামিটের এলএনজি টার্মিনাল শিগগির আবার গ্যাস সরবরাহ শুরু করবে। এতে বিদ্যুতের ঘাটতি কমে যাবে। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বেশি সময় চালাতে চাই না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে। গ্রীষ্মের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। আশা করি, পরিস্থিতি ভালোই যাবে। সংকট হবে না।’ 
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় গত বুধবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ছয়বার লোডশেডিং হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপ সিলেট, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে। এসব বিভাগের উপজেলা পর্যায়ে গড়ে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। গ্রামে পরিস্থিতি আরও খারাপ।

ময়মনসিংহের নান্দাইল ও ফুলবাড়িয়া উপজেলায় দিন-রাত মিলিয়ে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

নান্দাইলের আচারগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা শেফালী আক্তার বলেন, ইফতারি ও সাহ্‌রির সময়ও বিদ্যুৎ থাকছে না। এর মধ্যে পড়েছে খুব গরম। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ খারাপ।

বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে নান্দাইলে সবজির জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বেকায়দায় আছেন মুরগির খামারিরা। 
রাজশাহী, রংপুর, টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, মৌলভীবাজার ও কমলগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, নড়াইল, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুড়িগ্রাম থেকে আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এসব জেলার উপজেলা পর্যায়ে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে।

যশোরের কেশবপুর উপজেলার মূলগ্রামের হাজি এরশাদ আলী বলেন, ‘বুধবার রাতে সাহ্‌রির সময়ও বিদ্যুৎ ছিল না। রমজান মাসে ইফতারি, তারাবি ও সাহ্‌রির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানাচ্ছি।’ মজিদপুর গ্রামের শিহাব উদ্দিন বলেন, বোরো মৌসুমে ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পাওয়ায় খেতে সেচ দিতে কৃষক সমস্যায় পড়ছেন।

মেহেরপুরের গাংনীর হাড়াভাঙ্গা গ্রামের মো. সুমন আলী বলেন, এমন দিনও আছে গ্রামে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। গরম পড়তেই এই সমস্যা শুরু হলো।

সরকার রাত ১২টার পর সেচপাম্পগুলো চালানোর কথা বলছে। কারণ, এ সময় সাধারণত নিরবচ্ছিন্ন ও লো-ভোল্টেজমুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। কিন্তু এখন গ্রামাঞ্চলে রাত ১২টার পরও বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন জেলা থেকে খবর পাওয়া গেছে। ফলে সেচপাম্প চালানো যাচ্ছে না। সেচ ব্যাহত হচ্ছে।

কবে নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি হবে, এ বিষয়ে জানতে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুই-এক দিনের মধ্যে সামিটের এলএনজি টার্মিনালের মেরামতকাজ শেষ হবে। এটি হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে। তখন পরিস্থিতির উন্নতি হবে। পিক আওয়ারে এখন দেড় হাজার মেগাওয়াটের মতো ঘাটতি আছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন আজকের পত্রিকার ঢাকার বাইরের নিজস্ব প্রতিবেদক, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত