‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি কুলীন’

ড. আশরাফ সিদ্দিকী
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১০: ০৯
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১০: ১৯

মোহাম্মদ আবদুল মজিদের খুব ইচ্ছে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ করবেন। হ্যাঁ, আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদের কথাই বলছি। অনার্স করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএল কলেজ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে গিয়ে এমএ ক্লাসে ভর্তি হওয়ার ফরম চাইলে কর্তাব্যক্তিটি বললেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএতে মাইগ্রেশন করানোর কোনো নিয়ম নেই।’ আবদুল মজিদ ভাবলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে কি তাহলে মফস্বলের বিশ্ববিদ্যালয় ভাবা হচ্ছে, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুলীন?

বুঝিয়ে দিলেন কর্তাব্যক্তিটি, ‘এটা আশরাফ-আতরাফের ব্যাপার নয়। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স আর এমএ সিলেবাসে কিছু পার্থক্য আছে, তাই এই নিয়ম।’

বিভাগীয় চেয়ারম্যান যদি রাজি থাকেন, তাহলেই কেবল ভর্তি হওয়া সম্ভব। ১৯৭৪ সালে ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। কিন্তু তাঁর কাছে পৌঁছানো যায় কী করে?

মনে পড়ল, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. আশরাফ সিদ্দিকীর সঙ্গে তো খুব জানাশোনা আছে। খুলনা বইমেলা আর সাহিত্য সম্মেলনগুলোয় হয়েছিল ঘনিষ্ঠতা। আশরাফ সিদ্দিকীকে গিয়ে সমস্যার কথা বললেন মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তিনি বললেন, ‘কাল বাংলা একাডেমিতে এসো।’

পরদিন বাংলা একাডেমিতে গিয়ে দেখলেন কবীর চৌধুরী চা খাচ্ছেন আশরাফ সিদ্দিকীর সঙ্গে। তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল সাহিত্যকর্মী বলে আবদুল মজিদকে কবির চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর বাংলা একাডেমির সদস্য হওয়ার একটা ফরম পূরণ করতে বললেন। তাতে প্রস্তাবকের ঘরে সই করলেন আশরাফ সিদ্দিকী, সমর্থকের ঘরে কবীর চৌধুরী।

এবার কবীর চৌধুরীকে আশরাফ সিদ্দিকী বললেন, ‘বাংলা একাডেমির একজন সদস্য যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না পারে, তাহলে আর কে পড়বে বলুন?’ এরপর কবীর চৌধুরীকে সমস্যাটা বুঝিয়ে বললেন। একগাল হেসে কবীর চৌধুরী বললেন, ‘আগামীকাল একটা আবেদনপত্র নিয়ে আমার কাছে এসো।’ আশরাফ সিদ্দিকীর বুদ্ধিমত্তার কারণে বিশেষ বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেন আবদুল মজিদ।

সূত্র: মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, সৌরভে গৌরবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পৃষ্ঠা ৩২৮-৩২৯

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত