রাহমানের ছবি আঁকা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৩, ১০: ২৪
আপডেট : ০৯ জুন ২০২৩, ১২: ১১

বাবুর বাজারে একটা দোকানে কাচ আর কাচ। সেই কাচে নানা ধরনের ছবি আঁকা। নানা কথা লেখা। সেই ছবি আর লেখা দেখতে থাকেন বালক শামসুর রাহমান। আহা! যিনি আঁকেন আর লেখেন, তাঁর হাতের কাজ কত সুন্দর!

এই যখন ভাবছেন, তখন একটা গাঢ় স্বর শুনতে পেলেন তিনি। দোকানের ভেতরে ডাকছেন তিনি। ভয় পেলেন শামসুর রাহমান। বকবেন না তো! কিন্তু বকাবকি করলেন না তিনি। বললেন, ‘তোমার নাম কী খোকা?’ এরপর রঙে তুলি ডোবালেন।

‘কোথায় থাকো?’

‘মাহুতটুলীতে।’

‘ইশকুলে পড়ো?’

এরপর কথা এগোতে থাকে।

শামসুর রাহমান তখন ক্লাস সেভেনের ছাত্র। লোকটাকে ভালো লেগে যায় শামসুর রাহমানের। কাচের ওপর ছবি আঁকতে আঁকতে তিনি কথা বলে চলেছিলেন। একটা নৌকা, ফুটকির মতো পাড়াগাঁ, তামার পয়সার মতো সূর্য, আরও কত কী!

এসব দেখতে দেখতে তন্ময় হয়ে যান শামসুর রাহমান। হঠাৎ শোনেন লোকটি বলছেন, ‘কী ভাবছ?’

ততক্ষণে লোকটার নাম জানা হয়ে গেছে। ‘নঈম মিয়া। শামসুর রাহমান বললেন, ‘আপনার আঁকা ছবি দেখছি। খুব ভালো লাগছে আমার। আপনি আমাকে ছবি আঁকা শেখাবেন?’

 ‘ছবি এঁকে কী করবে?’ ‘আপনার মতো ছবি আঁকব দোকানে বসে বসে। আমি এই কাচের ওপর একটা নৌকা বানাব?’

অনুমতি পেয়ে একটা নৌকা আঁকলেন শামসুর রাহমান। নঈম মিয়ার চেহারা একটু গম্ভীর মনে হলো।

পরদিন স্কুলে না গিয়ে নঈম মিয়ার দোকানেই চলে এলেন শামসুর। নঈম মিয়া জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইশকুল নেই তোমার?’ 
‘আজ ইশকুলে যাব না।’

নঈম মিয়া বললেন, ‘কাল থেকে এসো না এখানে। তোমাকে লেখাপড়া শিখতে হবে। বাজে দোকানে বসে কাচের ওপর ছবি আঁকা তোমার কাজ নয়।’ 
কথাটা যে গভীর বেদনা থেকে বলেছেন, সেটা শামসুর রাহমান বুঝেছিলেন। এর পর থেকে আর ওখানে যাননি। 

সূত্র: শামসুর রাহমান, স্মৃতির শহর, পৃষ্ঠা ৪৮–৫২

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত