স্বপ্না রেজা
মামুনুর রশীদ বাংলাদেশের একজন গুণী নাট্যকার, অভিনেতা ও সংগঠক। সুশীল সমাজের একজন নেতৃস্থানীয়ও তিনি। অনেকের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য হলো, তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন প্রায় সব সময়। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটও তাঁর ভালো জানা। কমবেশি সবাই তাঁকে একজন বিবেকবান, বিচক্ষণ সংস্কৃতিমনা হিসেবেই জানেন ও বোঝেন। এই জানা ও বোঝা তাঁর দীর্ঘদিনের সৃষ্টিকর্মে যেমন, তেমনি তাঁর ব্যক্তি-সামাজিক আচরণে। ফলে দেশীয় সংস্কৃতির একজন অন্যতম সংগঠক হিসেবে তাঁর মিলেছে যথেষ্ট সম্মান ও মর্যাদা। মামুনুর রশীদ নামটা শুনলেই একজন গুণী মানুষের চেহারা ভেসে ওঠে, যিনি বাংলা সংস্কৃতির অঙ্গনে একের ভেতর অনেক কিছু। তিনি একুশে পদকপ্রাপ্ত একজন গুণীজন।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা একটা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি। সেখান থেকে হিরো আলমের মতো একটা লোকের উত্থান হয়েছে। যে উত্থান কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির।’ এমন মন্তব্যের জন্য মামুনুর রশীদ কারও কারও কাছে বাহবা পেয়েছেন, কেউ কেউ আবার তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। যাঁরা বাহবা দিয়েছেন, তাঁরা অধিকাংশই নাট্যাঙ্গনের মানুষ, তাঁর কাছের স্বজন, প্রিয়জন। আর যাঁরা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন, তাঁদের মাঝে আছে বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষ এবং সংস্কৃতিজগতেরও কেউ কেউ। বর্তমান যুগে মানবাধিকারের বিষয়টি যাঁদের কাছে সর্বাধিক বিবেচ্য বিষয়, তাঁরাই তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। কেউ কেউ কৌতুক করে বলেছেন, আমাদের সমাজে মশা-মাছি মারা সহজ, হাতি নয়। সংস্কৃতির সুরক্ষা ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে একটা হাতি মারলে না বুঝতাম সে প্রকৃত অর্থেই একজন সাহসী মানুষ।
যাই হোক, প্রশ্ন—এমন মন্তব্যে হিরো আলমের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হয় কি না। আজ সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব। তার আগে বুঝতে হবে, একজন মামুনুর রশীদ ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ বলতে কী বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। যদিও তাঁর পক্ষেই সেটা বোঝানো সম্ভব।
হিরো আলমকে যেহেতু দৃষ্টান্ত হিসেবে মামুনুর রশীদ উল্লেখ করেছেন, সেহেতু ভেবে নেওয়া যেতে পারে, হিরো আলমের আচার-আচরণ, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, শিক্ষা, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদিকে রুচি পরিমাপের মানদণ্ড হিসেবে নেওয়া হয়েছে। যত দূর জানি, হিরো আলমের অর্থনৈতিক অবস্থা কখনোই ভালো ছিল না। একটা সময়ে গ্রামের মানুষের উঠোনে খেয়েও তাঁর দিন কেটেছে বলে জানা যায়। পড়ালেখা করেননি, সুযোগ ও সামর্থ্য ঘটেনি তাই। এ কথা তিনি অকপটে বলেছেন বহুবার। নিজের মনে যা আসে, তা-ই তিনি অন্যকে দেখান, শোনান এবং সেটা তাঁর নিজস্ব জ্ঞান ও মেধার মতো করে। যারা দেখে এবং উপভোগ করে, তাদের কাছে এসবে হিরো আলমের কতটুকু পারদর্শিতা আছে, সেটা মুখ্য হয়ে ওঠে না বরং তারা দেখে, আর এই দেখাটুকুই সত্য হয়ে থাকে। এতে কিছু সময়ের জন্য অনেকের হাসতে পারার খোরাক জোটে। কেউ কেউ বিনোদিতও হয়। বিনোদিত হওয়ার শ্রেণিটাও কিন্তু হিরো আলমের শ্রেণি। ইউটিউবকে তিনি বেছে নিয়েছেন নিজের প্রতিভা উপস্থাপনের মাধ্যম হিসেবে। তাঁর কোনো পৃষ্ঠপোষক নেই বলেই জানি। কোনো ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাঁর জন্য কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও শোনা যায়নি। তার পরেও এ দেশের একশ্রেণির মানুষ, বিশেষত যারা গ্রামাঞ্চলের, তারা তার পরিবেশনার অনুসারী হয়েছে। এককথায়, হিরো আলম নিজেই নিজের জনপ্রিয়তার মূল কারণ।
তবে হিরো আলমের নামডাক ছড়িয়ে দিতে দেশের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের কেউ কেউ ইতিপূর্বে কম ভূমিকা রাখেননি। কিছুদিন আগে তাঁকে সংগীত পরিবেশন না করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গিয়ে মুচলেকা দিয়ে আসতে হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি সঠিকভাবে নয়, তাঁর মতো করে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন। এটাই তাঁর অপরাধ। অথচ শুদ্ধভাবে সংগীত পরিবেশন করেন না, এমন স্বঘোষিত শিল্পীর সংখ্যা কম নয়। হিরো আলমের সঙ্গে তাঁদের পার্থক্য হলো, আর্থসামাজিকভাবে তাঁরা দুর্বল নন, হিরো আলম দুর্বল। আবার হিরো আলম দুর্নীতিবাজ নন, চোর নন, ধর্ষকও নন—সাধারণত যে ব্যক্তিক ত্রুটিগুলো সমাজকে ধ্বংস ও অস্থিতিশীল করে। জনমনে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল এমন ঘটনায়। গান না গাওয়ার জন্য মুচলেকার বিষয়টি কি শুধু তাঁর মানবাধিকার হরণ করেছে? সম্ভবত না। বরং হিরো আলমকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। কীভাবে? মানুষ মানবাধিকারের প্রশ্নে হিরো আলমের পক্ষে কথা বলেছে।
নিঃসন্দেহে বলতে পারি, আরও একবার হিরো আলমের নাম ছড়িয়েছেন মামুনুর রশীদ। অন্যভাবে বলি, হিরো আলমের জনপ্রিয়তাকে তিনি আরও একটু বাড়িয়ে দিয়েছেন। হিরো আলমের উত্থানের পেছনে রুচি দুর্ভিক্ষের কথা বলা হয়েছে। কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির কথা বলা হয়েছে। ভালো কথা। কিন্তু অপসংস্কৃতি বোঝার শিক্ষা বা বোধ কি হিরো আলমের আছে? আর কোনো বিষয়ে দুর্ভিক্ষ তো সমষ্টির অসততা, অস্বচ্ছতা, অনৈতিক ও অবৈধ কাজের এবং চর্চার এক ভয়ংকর খেসারত। এই চর্চা ও সমষ্টির মধ্যে কারা কারা পড়ছে, সেই অনুসন্ধান তো জরুরি। কখনো দেখার চেষ্টা করেছি? দুর্ভিক্ষ তো কোনো একক প্রক্রিয়া নয়। নাকি এক হিরো আলমই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রুচির দুর্ভিক্ষ নিয়ে এসেছেন? হিরো আলমের জীবনে শিক্ষা নেই সত্য। তিনি চেষ্টা করেননি অন্যদের মতো নিজেকে বানোয়াট ও ভণ্ডভাবে উপস্থাপন করতে। এখানেও তিনি তাঁর সাধ্যের মধ্যে থাকতে চেষ্টা করেছেন। আর কুরুচি ও অপসংস্কৃতির ক্ষেত্রে মামুনুর রশীদকে অনুরোধ করা যায় কুরুচি ও অপসংস্কৃতি বিষয়ে দৃষ্টান্তসহকারে বিশ্লেষণমূলক আলোচনা-পর্যালোচনা করার উদ্যোগ নিতে, যেন হিরো আলমরা প্রকৃত জ্ঞান নিয়ে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পান। মামুনুর রশীদেরও তো দায় রয়েছে সংস্কৃতির জন্য, তাই না?
কোনো মানুষকে ছোট করে দেখা, অশ্রদ্ধা করা খুব সহজ একটা কাজ। কারণ, এ দেশে দোষারোপের সংস্কৃতিটাই বেশি চলে। সেটা সামাজিক কি রাজনৈতিক—দুই অবস্থাতেই প্রযোজ্য। অথচ আমরা বুঝি কি না যে, এটা একধরনের সামাজিক অপরাধ। মানবাধিকার লঙ্ঘন তো বটেই। এ জন্য আইনে মানহানির মামলার সুযোগ রয়েছে। হিরো আলম নিজেই নিজেকে যতটা না প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তার অধিক নানান সমালোচনার মধ্য দিয়ে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এবং কাজটি করেছে সচেতন শিক্ষিত মানুষেরাই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সচেতন শিক্ষিত মানুষ নিয়েই যেন এখন সমাজে বেশি বিড়ম্বনা।
সম্প্রতি বগুড়ায় একটি স্কুলে তেমন একটি ঘটনা ঘটেছে। একজন অতিরিক্ত দায়রা জজের মেয়েকে নিয়ে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। স্কুলের নিয়ম থাকলেও একজন শিক্ষার্থী ক্লাসরুম ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে চায়নি, কারণ সে অতিরিক্ত দায়রা জজের মেয়ে। উপরন্তু অন্যান্য শিক্ষার্থী সম্পর্কে সে তার ফেসবুক পেজে অসম্মানজনক কথা বলে। এতে সব শিক্ষার্থী প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বলেছেন, অতিরিক্ত দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে সবার থেকে আলাদা। ঘটনার সূত্র ধরে একপর্যায়ে রুবাইয়া ইয়াসমিন তাঁর উন্নাসিকতার তোড়ে অন্য কজন অভিভাবককে বাধ্য করেন তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা দৃঢ়কণ্ঠে বুঝিয়ে দেয়, এই স্কুলের প্রতিটি শিক্ষার্থীর মা-ই হলেন অভিভাবক এবং এটাই তাদের মূল ও প্রধান পরিচয়। পরিণামে অতিরিক্ত দায়রা জজকে বদলি করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করার প্রজ্ঞাপন জারি হয়। একজন অতিরিক্ত দায়রা জজ তাঁর শিক্ষা ও সচেতনতার মর্যাদা, সম্মান রক্ষা করতে পারেননি স্রেফ তাঁর উন্নাসিক, অবিবেচক আচরণের জন্যই।
এই সমাজে অনেক কুরুচিপূর্ণ ঘটনা প্রায়ই ঘটে। আড়াই মাসের কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার, রাজনৈতিক কারণে গৃহবধূকে প্রকাশ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ, প্রভাবশালী বিত্তবান পুরুষ দ্বারা ধর্ষণ, অতঃপর হত্যা করা, অর্থ পাচার, দুর্নীতি ইত্যাদি তো নিত্যদিনের ঘটনা। আমরা কি এই কুরুচিপূর্ণ ঘটনার প্রতিবাদ করি, নাকি করার কথা ভাবি? সম্ভবত না।
শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের রয়েছে সম্মান পাওয়ার অধিকার, তারা যে অবস্থানেই থাকুক না কেন। আসুন না, সেই অধিকার সুরক্ষায় সচেষ্ট হই!
মামুনুর রশীদ বাংলাদেশের একজন গুণী নাট্যকার, অভিনেতা ও সংগঠক। সুশীল সমাজের একজন নেতৃস্থানীয়ও তিনি। অনেকের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য হলো, তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন প্রায় সব সময়। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটও তাঁর ভালো জানা। কমবেশি সবাই তাঁকে একজন বিবেকবান, বিচক্ষণ সংস্কৃতিমনা হিসেবেই জানেন ও বোঝেন। এই জানা ও বোঝা তাঁর দীর্ঘদিনের সৃষ্টিকর্মে যেমন, তেমনি তাঁর ব্যক্তি-সামাজিক আচরণে। ফলে দেশীয় সংস্কৃতির একজন অন্যতম সংগঠক হিসেবে তাঁর মিলেছে যথেষ্ট সম্মান ও মর্যাদা। মামুনুর রশীদ নামটা শুনলেই একজন গুণী মানুষের চেহারা ভেসে ওঠে, যিনি বাংলা সংস্কৃতির অঙ্গনে একের ভেতর অনেক কিছু। তিনি একুশে পদকপ্রাপ্ত একজন গুণীজন।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা একটা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি। সেখান থেকে হিরো আলমের মতো একটা লোকের উত্থান হয়েছে। যে উত্থান কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির।’ এমন মন্তব্যের জন্য মামুনুর রশীদ কারও কারও কাছে বাহবা পেয়েছেন, কেউ কেউ আবার তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। যাঁরা বাহবা দিয়েছেন, তাঁরা অধিকাংশই নাট্যাঙ্গনের মানুষ, তাঁর কাছের স্বজন, প্রিয়জন। আর যাঁরা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন, তাঁদের মাঝে আছে বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষ এবং সংস্কৃতিজগতেরও কেউ কেউ। বর্তমান যুগে মানবাধিকারের বিষয়টি যাঁদের কাছে সর্বাধিক বিবেচ্য বিষয়, তাঁরাই তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। কেউ কেউ কৌতুক করে বলেছেন, আমাদের সমাজে মশা-মাছি মারা সহজ, হাতি নয়। সংস্কৃতির সুরক্ষা ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে একটা হাতি মারলে না বুঝতাম সে প্রকৃত অর্থেই একজন সাহসী মানুষ।
যাই হোক, প্রশ্ন—এমন মন্তব্যে হিরো আলমের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হয় কি না। আজ সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব। তার আগে বুঝতে হবে, একজন মামুনুর রশীদ ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ বলতে কী বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। যদিও তাঁর পক্ষেই সেটা বোঝানো সম্ভব।
হিরো আলমকে যেহেতু দৃষ্টান্ত হিসেবে মামুনুর রশীদ উল্লেখ করেছেন, সেহেতু ভেবে নেওয়া যেতে পারে, হিরো আলমের আচার-আচরণ, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, শিক্ষা, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদিকে রুচি পরিমাপের মানদণ্ড হিসেবে নেওয়া হয়েছে। যত দূর জানি, হিরো আলমের অর্থনৈতিক অবস্থা কখনোই ভালো ছিল না। একটা সময়ে গ্রামের মানুষের উঠোনে খেয়েও তাঁর দিন কেটেছে বলে জানা যায়। পড়ালেখা করেননি, সুযোগ ও সামর্থ্য ঘটেনি তাই। এ কথা তিনি অকপটে বলেছেন বহুবার। নিজের মনে যা আসে, তা-ই তিনি অন্যকে দেখান, শোনান এবং সেটা তাঁর নিজস্ব জ্ঞান ও মেধার মতো করে। যারা দেখে এবং উপভোগ করে, তাদের কাছে এসবে হিরো আলমের কতটুকু পারদর্শিতা আছে, সেটা মুখ্য হয়ে ওঠে না বরং তারা দেখে, আর এই দেখাটুকুই সত্য হয়ে থাকে। এতে কিছু সময়ের জন্য অনেকের হাসতে পারার খোরাক জোটে। কেউ কেউ বিনোদিতও হয়। বিনোদিত হওয়ার শ্রেণিটাও কিন্তু হিরো আলমের শ্রেণি। ইউটিউবকে তিনি বেছে নিয়েছেন নিজের প্রতিভা উপস্থাপনের মাধ্যম হিসেবে। তাঁর কোনো পৃষ্ঠপোষক নেই বলেই জানি। কোনো ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাঁর জন্য কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও শোনা যায়নি। তার পরেও এ দেশের একশ্রেণির মানুষ, বিশেষত যারা গ্রামাঞ্চলের, তারা তার পরিবেশনার অনুসারী হয়েছে। এককথায়, হিরো আলম নিজেই নিজের জনপ্রিয়তার মূল কারণ।
তবে হিরো আলমের নামডাক ছড়িয়ে দিতে দেশের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের কেউ কেউ ইতিপূর্বে কম ভূমিকা রাখেননি। কিছুদিন আগে তাঁকে সংগীত পরিবেশন না করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গিয়ে মুচলেকা দিয়ে আসতে হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি সঠিকভাবে নয়, তাঁর মতো করে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন। এটাই তাঁর অপরাধ। অথচ শুদ্ধভাবে সংগীত পরিবেশন করেন না, এমন স্বঘোষিত শিল্পীর সংখ্যা কম নয়। হিরো আলমের সঙ্গে তাঁদের পার্থক্য হলো, আর্থসামাজিকভাবে তাঁরা দুর্বল নন, হিরো আলম দুর্বল। আবার হিরো আলম দুর্নীতিবাজ নন, চোর নন, ধর্ষকও নন—সাধারণত যে ব্যক্তিক ত্রুটিগুলো সমাজকে ধ্বংস ও অস্থিতিশীল করে। জনমনে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল এমন ঘটনায়। গান না গাওয়ার জন্য মুচলেকার বিষয়টি কি শুধু তাঁর মানবাধিকার হরণ করেছে? সম্ভবত না। বরং হিরো আলমকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। কীভাবে? মানুষ মানবাধিকারের প্রশ্নে হিরো আলমের পক্ষে কথা বলেছে।
নিঃসন্দেহে বলতে পারি, আরও একবার হিরো আলমের নাম ছড়িয়েছেন মামুনুর রশীদ। অন্যভাবে বলি, হিরো আলমের জনপ্রিয়তাকে তিনি আরও একটু বাড়িয়ে দিয়েছেন। হিরো আলমের উত্থানের পেছনে রুচি দুর্ভিক্ষের কথা বলা হয়েছে। কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির কথা বলা হয়েছে। ভালো কথা। কিন্তু অপসংস্কৃতি বোঝার শিক্ষা বা বোধ কি হিরো আলমের আছে? আর কোনো বিষয়ে দুর্ভিক্ষ তো সমষ্টির অসততা, অস্বচ্ছতা, অনৈতিক ও অবৈধ কাজের এবং চর্চার এক ভয়ংকর খেসারত। এই চর্চা ও সমষ্টির মধ্যে কারা কারা পড়ছে, সেই অনুসন্ধান তো জরুরি। কখনো দেখার চেষ্টা করেছি? দুর্ভিক্ষ তো কোনো একক প্রক্রিয়া নয়। নাকি এক হিরো আলমই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রুচির দুর্ভিক্ষ নিয়ে এসেছেন? হিরো আলমের জীবনে শিক্ষা নেই সত্য। তিনি চেষ্টা করেননি অন্যদের মতো নিজেকে বানোয়াট ও ভণ্ডভাবে উপস্থাপন করতে। এখানেও তিনি তাঁর সাধ্যের মধ্যে থাকতে চেষ্টা করেছেন। আর কুরুচি ও অপসংস্কৃতির ক্ষেত্রে মামুনুর রশীদকে অনুরোধ করা যায় কুরুচি ও অপসংস্কৃতি বিষয়ে দৃষ্টান্তসহকারে বিশ্লেষণমূলক আলোচনা-পর্যালোচনা করার উদ্যোগ নিতে, যেন হিরো আলমরা প্রকৃত জ্ঞান নিয়ে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পান। মামুনুর রশীদেরও তো দায় রয়েছে সংস্কৃতির জন্য, তাই না?
কোনো মানুষকে ছোট করে দেখা, অশ্রদ্ধা করা খুব সহজ একটা কাজ। কারণ, এ দেশে দোষারোপের সংস্কৃতিটাই বেশি চলে। সেটা সামাজিক কি রাজনৈতিক—দুই অবস্থাতেই প্রযোজ্য। অথচ আমরা বুঝি কি না যে, এটা একধরনের সামাজিক অপরাধ। মানবাধিকার লঙ্ঘন তো বটেই। এ জন্য আইনে মানহানির মামলার সুযোগ রয়েছে। হিরো আলম নিজেই নিজেকে যতটা না প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তার অধিক নানান সমালোচনার মধ্য দিয়ে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এবং কাজটি করেছে সচেতন শিক্ষিত মানুষেরাই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সচেতন শিক্ষিত মানুষ নিয়েই যেন এখন সমাজে বেশি বিড়ম্বনা।
সম্প্রতি বগুড়ায় একটি স্কুলে তেমন একটি ঘটনা ঘটেছে। একজন অতিরিক্ত দায়রা জজের মেয়েকে নিয়ে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। স্কুলের নিয়ম থাকলেও একজন শিক্ষার্থী ক্লাসরুম ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে চায়নি, কারণ সে অতিরিক্ত দায়রা জজের মেয়ে। উপরন্তু অন্যান্য শিক্ষার্থী সম্পর্কে সে তার ফেসবুক পেজে অসম্মানজনক কথা বলে। এতে সব শিক্ষার্থী প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বলেছেন, অতিরিক্ত দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে সবার থেকে আলাদা। ঘটনার সূত্র ধরে একপর্যায়ে রুবাইয়া ইয়াসমিন তাঁর উন্নাসিকতার তোড়ে অন্য কজন অভিভাবককে বাধ্য করেন তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা দৃঢ়কণ্ঠে বুঝিয়ে দেয়, এই স্কুলের প্রতিটি শিক্ষার্থীর মা-ই হলেন অভিভাবক এবং এটাই তাদের মূল ও প্রধান পরিচয়। পরিণামে অতিরিক্ত দায়রা জজকে বদলি করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করার প্রজ্ঞাপন জারি হয়। একজন অতিরিক্ত দায়রা জজ তাঁর শিক্ষা ও সচেতনতার মর্যাদা, সম্মান রক্ষা করতে পারেননি স্রেফ তাঁর উন্নাসিক, অবিবেচক আচরণের জন্যই।
এই সমাজে অনেক কুরুচিপূর্ণ ঘটনা প্রায়ই ঘটে। আড়াই মাসের কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার, রাজনৈতিক কারণে গৃহবধূকে প্রকাশ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ, প্রভাবশালী বিত্তবান পুরুষ দ্বারা ধর্ষণ, অতঃপর হত্যা করা, অর্থ পাচার, দুর্নীতি ইত্যাদি তো নিত্যদিনের ঘটনা। আমরা কি এই কুরুচিপূর্ণ ঘটনার প্রতিবাদ করি, নাকি করার কথা ভাবি? সম্ভবত না।
শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের রয়েছে সম্মান পাওয়ার অধিকার, তারা যে অবস্থানেই থাকুক না কেন। আসুন না, সেই অধিকার সুরক্ষায় সচেষ্ট হই!
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে