ছবি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২২, ১০: ৩২
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২২, ২১: ৫৪

ক্যানসার, অপারেশন, নানা ধরনের চিকিৎসার কারণে চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেছে জাহানারা ইমামের। ঢাকায় ফিরেছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। খাওয়া-দাওয়ার স্বাধীনতা কমেছে।

জিহ্বা খানিকটা বেরিয়ে থাকে মুখের বাইরে এসে। চুল হয়ে গেছে খাটো। তিনি এখন নিজের চেহারা নিয়ে লজ্জা পাচ্ছেন।

সে সময় ‘একাত্তরের দিনগুলি’ নিয়ে মানুষের খুব আগ্রহ। অনেক পাঠকই বইটা পড়ার পর তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে খুঁজে গেছেন। একনজর দেখতে চান জাহানারা ইমামকে। তিনি দেশে ফেরার পর অনেকেই দেখা করতে এলেন। প্রথমে যখন দেখা হয়, তাঁরা জাহানারা ইমামকে চিনে নিতে পারেন না। পরিচয় করিয়ে দিলে তাঁরা একটু ধাক্কা খান। এই মুখের সঙ্গে আগের মুখের কোনো মিল নেই। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সামলে নেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরাই বেশি আসেন। কেউ কেউ বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে আসেন। কিন্তু ওই যে প্রথম দেখাতেই চমকে ওঠেন—সেটাই পীড়া দেয় জাহানারা ইমামকে। নিজেকে কুৎসিত ভাবতে ভালো লাগে না।

জাহানারা ইমামের এই কষ্ট দেখে একবার খেপে ওঠেন শামীম আজাদ। বলেন, ‘জানেন, জন্মের পর কত মেয়ে কুৎসিত চেহারা নিয়ে বেঁচে আছে? আপনি তো এতকাল সুন্দরীই ছিলেন, এখনো এত কাটাছেঁড়ার পর যেটুকু আপনার আছে, অনেক কুৎসিত মেয়ের তা-ও নেই।’ তাতে কিছুটা সান্ত্বনা আসে।

ডিসেম্বর মাসে সাংবাদিকদের আনাগোনা শুরু হয়। তাঁরা সাক্ষাৎকার নেবেন। সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তাঁরা ছবিও তুলতে চান। তাতে আঁতকে ওঠেন জাহানারা ইমাম। এই চেহারার ছবি তুলবেন কী করে? ছবি ছাড়া সাক্ষাৎকার ছাপতে বলেন। তাঁরা রাজি হন না। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, আগে তোলা কাছাকাছি সময়ের কোনো ছবি থাকলে সেটা দেওয়া যেতে পারে। আমেরিকায় যাওয়ার আগে সচিত্র সন্ধানীর জন্য নাসির আলী মামুন তুলেছিলেন একটি ছবি। সেটাই দেওয়া হলো। সেটা ছিল প্রথম অপারেশনের পরের ছবি। চুলগুলো তখনো অক্ষত ছিল। সেটা নিয়েই খুশি হলো সাংবাদিকের দল।

সূত্র: জাহানারা ইমাম, ক্যানসারের সঙ্গে বসবাস, পৃষ্ঠা ৭৩-৭৫

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত