অরুণ কর্মকার
এবারের জাতীয় বাজেটের শিরোনামে কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ শব্দবন্ধ যুক্ত করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যাভিমুখী স্মার্ট বাংলাদেশ। যদিও এই শব্দবন্ধগুলো আমাদের দেশের রাজনীতি ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুচর্চিত। তা সত্ত্বেও জাতীয় বাজেটের শিরোনামে এগুলো যুক্ত করার আলাদা তাৎপর্য রয়েছে।
আমরা জানি যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজি) জাতিসংঘের একটি কর্মসূচি। এর মূল স্তম্ভ চারটি—সমাজ, পরিবেশ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি। এই কর্মসূচির মূল কথা হলো, এ চারটি ক্ষেত্রে (প্রকৃতপক্ষে সব ক্ষেত্রে) উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করা। কিন্তু সেই কর্মকাণ্ড যেন কোনোভাবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে; অর্থাৎ একই সঙ্গে বর্তমানকে এগিয়ে নেওয়া এবং ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করা। এ চারটি স্তম্ভ প্রতিষ্ঠার জন্য ১৭টি লক্ষ্য অর্জন স্থির করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে।
বাংলাদেশ এ-সংক্রান্ত জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারী। সেই হিসেবে সব উন্নয়ন পরিকল্পনায় এই কর্মসূচি অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা আমাদের রয়েছে। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, আমরা তা অনুসরণ করেও আসছি। তাহলে এবার জাতীয় বাজেটের শিরোনামে এই শব্দবন্ধ যুক্ত করার প্রয়োজন হলো কেন? তাহলে কি বিষয়টি এ রকম যে, উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আমরা টেকসই উন্নয়নের কথা যতই বলি না কেন, প্রকৃতপক্ষে আমাদের উন্নয়ন সেই লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগোতে পারছে না? বরং সেই উন্নয়নের প্রকৃতি অত্যন্ত ভঙ্গুর এবং তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তো সুরক্ষা দেবেই না, এমনকি বর্তমান প্রজন্মের জীবনমান উন্নয়নেও ব্যর্থ? এ বিষয়টি যথেষ্ট আলোচনা-পর্যালোচনার দাবি রাখে।
গত দেড় দশকে বাংলাদেশ যে সামগ্রিকভাবে এগিয়েছে, উন্নতি করেছে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তবে সেই স্বীকৃতির মধ্যেও কোনো সমালোচনা যে নেই তেমন নয়। আর সেই সমালোচনা অযৌক্তিকও নয়। যেমন এসডিজিতে যে ১৭টি লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছে, তার একটি হলো স্বাস্থ্য। সব বয়সী প্রত্যেক মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করা (এসডিজি নম্বর-৩)।
কিন্তু বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে ওঠার পর গত দেড় দশকে আমাদের দেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থার কী উন্নতি আমরা দেখতে পাই? স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত অবকাঠামো বেশ কিছুই তৈরি হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা, চিকিৎসা, ওষুধের মান ও দাম প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমরা কি একটু অগ্রসর হতে পেরেছি? একটু ভালো চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবার জন্য দেশের লাখ লাখ সাধারণ মানুষের ভিন দেশে যাওয়া কি একটুও আমরা কমাতে পেরেছি? দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর কোনো মানুষের আস্থা ও নির্ভরতা তৈরি হয়েছে? এসব প্রশ্নের জবাব সবারই জানা।
এসডিজি-৪ হলো শিক্ষা-সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা। সেখানে বলা হয়েছে, সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং জীবনভর শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি করা। কিন্তু আমরা জানি, গত দেড়-দুই দশকে সবচেয়ে বেশি বেহাল অবস্থা হয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার। এটা সমতাভিত্তিকও নয়, মানসম্পন্নও নয়; বরং শিক্ষার মান ক্রমাগতভাবে অবনমিত হয়েছে।
ফলে মেধাবী এবং সচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা ও হার বাড়ছে। পাশাপাশি এসব শিক্ষার্থী যে শিক্ষা শেষে দেশে ফিরছেন, তা মোটেই নয়; বরং বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যই হয়ে উঠেছে দেশত্যাগ। তাঁদের মধ্যে আমরা এমন বিশ্বাস সৃষ্টি করতে পারছি না, যাতে শিক্ষা শেষে তাঁরা দেশে ফিরতে পারেন।
সবার জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি সহজলভ্য করার কথা বলা হয়েছে এসডিজি-৭-এ। অথচ আমরা দেখতে পাই গত দেড় দশকে জ্বালানির ঘাটতি বাড়তে বাড়তে এখন তা সংকটে পরিণত হয়েছে। দেশের শিল্প, বাণিজ্য, আবাসিক সব শ্রেণির গ্রাহক জ্বালানি-সংকটে ভুগছে। দেশের নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ আহরণে সরকারের অনীহা এই সংকট সৃষ্টি করেছে, যা একটি দীর্ঘমেয়াদি সংকটে রূপ নিতে যাচ্ছে। সরকার একদিকে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহে ব্যর্থ হচ্ছে, অন্যদিকে জ্বালানির দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমাগতভাবে। ফলে সব শ্রেণির গ্রাহকের কাছে জ্বালানি আর সাশ্রয়ী থাকছে না, সাশ্রয়ী নেই। জ্বালানির সরবরাহও নির্ভরযোগ্য নয়। নিরবচ্ছিন্নও নয়।
এসডিজি-৮-এ বলা হয়েছে সবার জন্য পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং শোভন কর্মসুযোগ সৃষ্টি এবং স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা। কিন্তু আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা কী? প্রতিবছর আমাদের শ্রমবাজারে আসা জনশক্তির একটি বড় অংশ পূর্ণ ও অর্ধ বেকার থাকছে। যথেষ্টসংখ্যক নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। দেশে কাজের অভাব থাকায় যাঁরা কাজের জন্য বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁদের একটা বড় অংশ প্রতারিত হচ্ছেন।
সবার জন্য পানি ও পয়োনিষ্কাশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে এসডিজি-৬-এ। আমাদের মহানগরগুলোতেও পয়োনিষ্কাশনের যথেষ্ট ব্যবস্থা কিংবা ব্যবস্থাপনা নেই। সুপেয় পানির অভাব সর্বত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসডিজি-১১তে বলা হয়েছে, অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাত সহনশীল ও টেকসই নগর এবং জনবসতি গড়ে তোলার কথা। কিন্তু আমাদের নগর-মহানগরগুলোর কী অবস্থা আমরা দেখি? নাগরিক সুবিধাহীন, অনিরাপদ ও পদে পদে বিপদসংকুল এসব নগর-মহানগর কীভাবে এসডিজির লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হতে পারে?
এসডিজির একটি প্রধান লক্ষ্য মানব উন্নয়ন। মানব উন্নয়নের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অতিপ্রয়োজনীয় বিষয়। এ দুটিতেই আমরা পিছিয়ে পড়ছি। এসডিজিতে আরও অনেক বিষয় সন্নিবেশিত আছে। তার কোনোটিতেই যে আমাদের কোনো অর্জন নেই, তা-ও নয়। কিন্তু পর্যালোচনা করে দেখলে সব ক্ষেত্রেই ধনাত্মক প্রবণতার তুলনায় ঋণাত্মক প্রবণতা অনেক বেশি।
এবার আসা যাক স্মার্ট বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। অনেকের ধারণা, স্মার্টনেসের বিষয়টি শুধু তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। আসলে তা নয়। স্মার্টনেস হলো একটি সামগ্রিক কার্যসম্পাদনের (টোটাল পারফরম্যান্স) বিষয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি অফিসে মানুষ সেবা নিতে গিয়ে যে হয়রানির শিকার হয়, এটা স্মার্ট বাংলাদেশ ধারণার বিপরীত। দেশের কতশত মানুষ যে প্রতারণা-দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যায়, এটা স্মার্ট বাংলাদেশ ধারণার উল্টো। কোনো একটি স্মার্ট দেশে কোনো ধরনের দুর্নীতি-প্রতারণা সুযোগ পাওয়াই খুব কঠিন। করার পরে পার পেয়ে যাওয়া তো দূরের কথা।
এত দিন আমরা উন্নতি করেছি। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অর্জন আছে। হয়তো তার অনেক কিছুই টেকসই উন্নয়নের পর্যায়ে পড়ে না। এখন আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে উন্নয়নকে টেকসই করার। আর স্মার্ট বাংলাদেশ তো গড়ার পথে আমাদের কেবল যাত্রা শুরু হয়েছে। এবার বাজেটের শিরোনামে টেকসই উন্নয়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশ শব্দবন্ধগুলো যুক্ত করে সরকার হয়তো সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
এবারের জাতীয় বাজেটের শিরোনামে কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ শব্দবন্ধ যুক্ত করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যাভিমুখী স্মার্ট বাংলাদেশ। যদিও এই শব্দবন্ধগুলো আমাদের দেশের রাজনীতি ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুচর্চিত। তা সত্ত্বেও জাতীয় বাজেটের শিরোনামে এগুলো যুক্ত করার আলাদা তাৎপর্য রয়েছে।
আমরা জানি যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজি) জাতিসংঘের একটি কর্মসূচি। এর মূল স্তম্ভ চারটি—সমাজ, পরিবেশ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি। এই কর্মসূচির মূল কথা হলো, এ চারটি ক্ষেত্রে (প্রকৃতপক্ষে সব ক্ষেত্রে) উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করা। কিন্তু সেই কর্মকাণ্ড যেন কোনোভাবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে; অর্থাৎ একই সঙ্গে বর্তমানকে এগিয়ে নেওয়া এবং ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করা। এ চারটি স্তম্ভ প্রতিষ্ঠার জন্য ১৭টি লক্ষ্য অর্জন স্থির করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে।
বাংলাদেশ এ-সংক্রান্ত জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারী। সেই হিসেবে সব উন্নয়ন পরিকল্পনায় এই কর্মসূচি অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা আমাদের রয়েছে। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, আমরা তা অনুসরণ করেও আসছি। তাহলে এবার জাতীয় বাজেটের শিরোনামে এই শব্দবন্ধ যুক্ত করার প্রয়োজন হলো কেন? তাহলে কি বিষয়টি এ রকম যে, উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আমরা টেকসই উন্নয়নের কথা যতই বলি না কেন, প্রকৃতপক্ষে আমাদের উন্নয়ন সেই লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগোতে পারছে না? বরং সেই উন্নয়নের প্রকৃতি অত্যন্ত ভঙ্গুর এবং তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তো সুরক্ষা দেবেই না, এমনকি বর্তমান প্রজন্মের জীবনমান উন্নয়নেও ব্যর্থ? এ বিষয়টি যথেষ্ট আলোচনা-পর্যালোচনার দাবি রাখে।
গত দেড় দশকে বাংলাদেশ যে সামগ্রিকভাবে এগিয়েছে, উন্নতি করেছে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তবে সেই স্বীকৃতির মধ্যেও কোনো সমালোচনা যে নেই তেমন নয়। আর সেই সমালোচনা অযৌক্তিকও নয়। যেমন এসডিজিতে যে ১৭টি লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছে, তার একটি হলো স্বাস্থ্য। সব বয়সী প্রত্যেক মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করা (এসডিজি নম্বর-৩)।
কিন্তু বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে ওঠার পর গত দেড় দশকে আমাদের দেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থার কী উন্নতি আমরা দেখতে পাই? স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত অবকাঠামো বেশ কিছুই তৈরি হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা, চিকিৎসা, ওষুধের মান ও দাম প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমরা কি একটু অগ্রসর হতে পেরেছি? একটু ভালো চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবার জন্য দেশের লাখ লাখ সাধারণ মানুষের ভিন দেশে যাওয়া কি একটুও আমরা কমাতে পেরেছি? দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর কোনো মানুষের আস্থা ও নির্ভরতা তৈরি হয়েছে? এসব প্রশ্নের জবাব সবারই জানা।
এসডিজি-৪ হলো শিক্ষা-সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা। সেখানে বলা হয়েছে, সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং জীবনভর শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি করা। কিন্তু আমরা জানি, গত দেড়-দুই দশকে সবচেয়ে বেশি বেহাল অবস্থা হয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার। এটা সমতাভিত্তিকও নয়, মানসম্পন্নও নয়; বরং শিক্ষার মান ক্রমাগতভাবে অবনমিত হয়েছে।
ফলে মেধাবী এবং সচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা ও হার বাড়ছে। পাশাপাশি এসব শিক্ষার্থী যে শিক্ষা শেষে দেশে ফিরছেন, তা মোটেই নয়; বরং বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যই হয়ে উঠেছে দেশত্যাগ। তাঁদের মধ্যে আমরা এমন বিশ্বাস সৃষ্টি করতে পারছি না, যাতে শিক্ষা শেষে তাঁরা দেশে ফিরতে পারেন।
সবার জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি সহজলভ্য করার কথা বলা হয়েছে এসডিজি-৭-এ। অথচ আমরা দেখতে পাই গত দেড় দশকে জ্বালানির ঘাটতি বাড়তে বাড়তে এখন তা সংকটে পরিণত হয়েছে। দেশের শিল্প, বাণিজ্য, আবাসিক সব শ্রেণির গ্রাহক জ্বালানি-সংকটে ভুগছে। দেশের নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ আহরণে সরকারের অনীহা এই সংকট সৃষ্টি করেছে, যা একটি দীর্ঘমেয়াদি সংকটে রূপ নিতে যাচ্ছে। সরকার একদিকে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহে ব্যর্থ হচ্ছে, অন্যদিকে জ্বালানির দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমাগতভাবে। ফলে সব শ্রেণির গ্রাহকের কাছে জ্বালানি আর সাশ্রয়ী থাকছে না, সাশ্রয়ী নেই। জ্বালানির সরবরাহও নির্ভরযোগ্য নয়। নিরবচ্ছিন্নও নয়।
এসডিজি-৮-এ বলা হয়েছে সবার জন্য পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং শোভন কর্মসুযোগ সৃষ্টি এবং স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা। কিন্তু আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা কী? প্রতিবছর আমাদের শ্রমবাজারে আসা জনশক্তির একটি বড় অংশ পূর্ণ ও অর্ধ বেকার থাকছে। যথেষ্টসংখ্যক নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। দেশে কাজের অভাব থাকায় যাঁরা কাজের জন্য বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁদের একটা বড় অংশ প্রতারিত হচ্ছেন।
সবার জন্য পানি ও পয়োনিষ্কাশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে এসডিজি-৬-এ। আমাদের মহানগরগুলোতেও পয়োনিষ্কাশনের যথেষ্ট ব্যবস্থা কিংবা ব্যবস্থাপনা নেই। সুপেয় পানির অভাব সর্বত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসডিজি-১১তে বলা হয়েছে, অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাত সহনশীল ও টেকসই নগর এবং জনবসতি গড়ে তোলার কথা। কিন্তু আমাদের নগর-মহানগরগুলোর কী অবস্থা আমরা দেখি? নাগরিক সুবিধাহীন, অনিরাপদ ও পদে পদে বিপদসংকুল এসব নগর-মহানগর কীভাবে এসডিজির লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হতে পারে?
এসডিজির একটি প্রধান লক্ষ্য মানব উন্নয়ন। মানব উন্নয়নের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অতিপ্রয়োজনীয় বিষয়। এ দুটিতেই আমরা পিছিয়ে পড়ছি। এসডিজিতে আরও অনেক বিষয় সন্নিবেশিত আছে। তার কোনোটিতেই যে আমাদের কোনো অর্জন নেই, তা-ও নয়। কিন্তু পর্যালোচনা করে দেখলে সব ক্ষেত্রেই ধনাত্মক প্রবণতার তুলনায় ঋণাত্মক প্রবণতা অনেক বেশি।
এবার আসা যাক স্মার্ট বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। অনেকের ধারণা, স্মার্টনেসের বিষয়টি শুধু তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। আসলে তা নয়। স্মার্টনেস হলো একটি সামগ্রিক কার্যসম্পাদনের (টোটাল পারফরম্যান্স) বিষয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি অফিসে মানুষ সেবা নিতে গিয়ে যে হয়রানির শিকার হয়, এটা স্মার্ট বাংলাদেশ ধারণার বিপরীত। দেশের কতশত মানুষ যে প্রতারণা-দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যায়, এটা স্মার্ট বাংলাদেশ ধারণার উল্টো। কোনো একটি স্মার্ট দেশে কোনো ধরনের দুর্নীতি-প্রতারণা সুযোগ পাওয়াই খুব কঠিন। করার পরে পার পেয়ে যাওয়া তো দূরের কথা।
এত দিন আমরা উন্নতি করেছি। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অর্জন আছে। হয়তো তার অনেক কিছুই টেকসই উন্নয়নের পর্যায়ে পড়ে না। এখন আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে উন্নয়নকে টেকসই করার। আর স্মার্ট বাংলাদেশ তো গড়ার পথে আমাদের কেবল যাত্রা শুরু হয়েছে। এবার বাজেটের শিরোনামে টেকসই উন্নয়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশ শব্দবন্ধগুলো যুক্ত করে সরকার হয়তো সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে