সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
একজন হিটলার বিদায় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হিটলাররা ধ্বংস হয়নি; তারা আছে। হিটলার যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রতিনিধি ছিল ও রক্ষক সেজেছিল, সে ব্যবস্থাটা ভাঙতে না পারলে হিটলাররা বিদায় হবে না।
রাষ্ট্র ও সরকারের চরম নির্লিপ্ততায় এবং আশকারায় ধর্মীয় মৌলবাদীরা বাংলাদেশেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বর্তমান সরকার তাদের এত দিন নানাভাবে লাই দিয়ে এসেছে। এখন বুঝতে পারছে যে এরা একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং ভবিষ্যতে সেভাবেই তৎপরতা চালাবে। সরকারের দৃষ্টিতে বিএনপিই মনে হয় একমাত্র শত্রু।
আসলে কিন্তু বিএনপি হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী, শত্রু হচ্ছে ধর্মীয় মৌলবাদীরা। বিএনপি এখন বেশ অসুবিধায় আছে, পঙ্গুদশাতেই বলা চলে। সরকার মনে হয় তাদের আরও জব্দ করতে চায়; কিন্তু বিএনপি সরে গেলে তার শূন্যতাটা পূরণের জন্য যে হেফাজতের আসার সম্ভাবনা, সেটাকে সরকার মনে হয় বিবেচনায় নিচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গে তো ঠিক এ রকমটাই ঘটেছে। তৃণমূল এমনই ব্যবস্থা করেছে, যার দরুন শূন্যস্থানে কংগ্রেস বা সিপিএম—কেউই নেই, জায়গাটা বিজেপি দখল করে নিয়েছে কংগ্রেস ও বামপন্থীদের ধ্বংসাবশেষের ওপর দাঁড়িয়ে।
হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব হয়তো তেমন একটা সুবিধা করতে পারবেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে করা সাত বছরের পুরোনো মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে এবং তাঁদের আরও বড় দুর্বলতা নেতৃত্বের ভেতরেই রয়ে গেছে, সেটা হলো মুনাফালিপ্সা ও ভোগলালসা। কিন্তু হেফাজতের জন্য খুব বিস্তৃত একটা লালনভূমি তো সমাজে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে, যেখানে রয়েছে লাখ লাখ মাদ্রাসা-শিক্ষিত মানুষ, যাঁদের জন্য জীবিকার পথ উন্মুক্ত নয়, অনেকেই বেকার কিংবা অর্ধবেকার এবং স্বভাবতই বিক্ষুব্ধ; তাঁদের সঙ্গে জামায়াতের লোকেরা যদি যুক্ত হয়, তবে সেটা মোটেই শুভ ঘটনা হবে না।
আর যদি আইএস চলে আসে, তবে তো কথাই নেই। আইএসের বিক্ষিপ্ত তৎপরতা আমাদের দেশে যে দেখা দেয়নি, তা নয়। আইএস ইরাক থেকে বিতাড়িত হয়েছে, তবে এরা যে কতটা কট্টরপন্থী ও নৃশংস হতে পারে তার প্রমাণ সেখানে তারা বেশ ভালোভাবেই রেখে এসেছে। এখন তারা চেষ্টায় আছে যেখানে সুবিধা, সেখানেই ঢুকে পড়ার। আফগানিস্তানে তাদের তৎপরতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। কিছুদিন আগে কাবুলের কাছে মেয়েদের এক স্কুলের সামনে গাড়িবোমা ফাটানোর এক ঘটনায় ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের প্রায় সবাই স্কুলছাত্রী, আহত হয়েছে আরও বহুজন। তালেবান এ কাজ করেনি বলেছে। সেই অস্বীকৃতি অবিশ্বাসযোগ্য নয়। তাহলে কে করল? আইএস দায়িত্ব স্বীকার করেনি, কিন্তু এ নিয়ে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই যে এটা আইএসেরই কাজ নয়। এরা বাংলাদেশে ঢুকে পড়লে ভয়াবহ কাণ্ড যে ঘটাবে, সেটা নিশ্চিত।
ধর্মীয় মৌলবাদীদের লালনক্ষেত্রটি উর্বর থেকে উর্বরতর হচ্ছে। মাদ্রাসা-শিক্ষিত অসন্তুষ্ট মানুষেরা তো আছেই; সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা দিয়েছে হতাশা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব। এ দেশের মানুষ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়েছে, তারা বড় রাষ্ট্র ভেঙে ছোট করেছে, কিন্তু তাদের মুক্তি আসেনি। কর্তৃত্ববাদী শাসন ও জুলুমবাজি ব্যাপকভাবে তাদের কাঁধে চেপে বসেছে। ফলে এখন হতাশা দেখা দিয়েছে। মনোভাবটা হচ্ছে পরাজিতের। অন্যদিকে ব্যক্তি মানুষ দেখছে তার চারপাশে কেউ নেই—সমাজ নেই, রাষ্ট্র নেই, আপনজনেরাও নেই; নিজের ওপর তার আস্থা তাই কমে যাচ্ছে। সে ভাবছে ধর্ম ছাড়া তার জন্য অন্য কোনো আশ্রয় নেই, ভরসাও নেই। বাঁচান যদি, তবে আল্লাহই বাঁচাবেন। আত্মবিশ্বাসহীনতা যত বাড়বে, মৌলবাদের চর্চা ততই শক্তিশালী ও ব্যাপক হবে। দেশে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা ক্রমাগত কমছে; উল্টো দিকে ওয়াজ, মিলাদে বক্তৃতা, ফতোয়া—এসব বেড়েই চলেছে। আবার এটাও তো না মেনে উপায় নেই যে, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রকে যদি হিন্দুরাষ্ট্র করার চেষ্টা চলে, তবে তার প্রতিক্রিয়ায় ও অনুসরণে আমাদের রাষ্ট্রকে মুসলিম রাষ্ট্র করার প্রচেষ্টা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইবে। যদিও স্বৈরাচার এরশাদ কর্তৃক রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়েছে বর্তমান সরকার।
আসল সত্যটা কিন্তু এই, এই সবকিছু হচ্ছে মূল যে ব্যাধি, যার নাম পুঁজিবাদ, তারই নানা ধরনের উপসর্গ। যে ইহুদিরা একদিন হিটলারের গণহত্যার শিকার হয়েছিল, যার নিন্দা বিশ্বব্যাপী এখনো শোনা যায়, তাদের রাষ্ট্র ইসরায়েল কেন অরক্ষিত ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করছে এবং হত্যা করছে নির্মমভাবে? জবাবটা সোজা। সেটা হলো এই, একজন হিটলার বিদায় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হিটলাররা ধ্বংস হয়নি; তারা আছে। হিটলার যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রতিনিধি ছিল ও রক্ষক সেজেছিল, সে ব্যবস্থাটা ভাঙতে না পারলে হিটলাররা বিদায় হবে না।
ভরসা এই যে প্রতিবাদ হচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলে পড়ার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ উঠেছে। খোদ আমেরিকায় জো বাইডেনের নিজের পার্টির ভেতরই তাঁর ইসরায়েলঘেঁষা নীতির বিরুদ্ধে ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বার্নি স্যান্ডার্স ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নিজে ইহুদি বংশোদ্ভূত, কিন্তু ইসরায়েলের নীতির তিনি বিরোধী। ব্রিটেনে লেবার পার্টির জেরেমি করবিন প্রতিবাদ করেছেন এবং আগে যেটা কখনো শোনা যায়নি, সেটা এবার শোনা গেল। ইসরায়েলে যে আরবরা বসবাস করে তারা রাস্তায় বের হয়ে এসেছে। সংখ্যার হিসাবে এরা ওই রাষ্ট্রের নাগরিকদের শতকরা ২১ জন। কম নয়। কিন্তু নিষ্পেশন এমন প্রবল যে তারা নিজেদের অধিকারের কথা এতকাল জোর গলায় বলতে পারেনি। এবার বলছে।
একটা শক্তিশালী আন্তর্জাতিকতা তৈরি হচ্ছে। যে জন্য মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান ঘটলে বিশ্বে তার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং সেনা অভ্যুত্থানবিরোধীরা যখন রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়ে নতুন ঐক্য-সরকার গঠন করে, বিশ্বের গণতান্ত্রিক মহলে তাতেও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। আর এটাও তো তাৎপর্যহীন নয় ঢাকার একজন সাংবাদিক যখন লাঞ্ছিত হন, তখন বহির্বিশ্বের মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকেরা সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবাদ জানান; এমনকি জাতিসংঘও উদ্বেগ প্রকাশ না করে পারে না।
কিন্তু যা দরকার তা হলো, বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদবিরোধী সুসংগঠিত ও ধারাবাহিক আন্দোলন। নইলে বিপদ আছে। সংকটগুলো সেই সতর্কবাণীই উচ্চারণ করে চলেছে।
লড়াইটা কেবল উপসর্গকেন্দ্রিক হলে চলবে না, হতে হবে ব্যাধিকেন্দ্রিক। আর এই লড়াই কোনো একটি দেশের নয়, সারা বিশ্বের। মানুষের সভ্যতা এখন এক ক্রান্তিকালে এসে পৌঁছেছে; কোন দিকে সে মোড় নেবে, সেটা নির্ভর করছে মানুষের কর্তব্য পালনের ওপরই। কর্তব্যটা কেবল জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার নয়, ট্রাম্পকে হটিয়ে বাইডেনকে আনা নয়; পুঁজিবাদকে মোকাবিলা করারই। এই সত্যটাকে অস্পষ্ট করার চেষ্টায় কোনো কমতি নেই; কিন্তু সত্যটিকে আনা চাই সামনে। আলোর পরিস্ফুটন জোরদার হলে, তবেই কুয়াশা কাটবে। নইলে নয়।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
একজন হিটলার বিদায় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হিটলাররা ধ্বংস হয়নি; তারা আছে। হিটলার যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রতিনিধি ছিল ও রক্ষক সেজেছিল, সে ব্যবস্থাটা ভাঙতে না পারলে হিটলাররা বিদায় হবে না।
রাষ্ট্র ও সরকারের চরম নির্লিপ্ততায় এবং আশকারায় ধর্মীয় মৌলবাদীরা বাংলাদেশেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বর্তমান সরকার তাদের এত দিন নানাভাবে লাই দিয়ে এসেছে। এখন বুঝতে পারছে যে এরা একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং ভবিষ্যতে সেভাবেই তৎপরতা চালাবে। সরকারের দৃষ্টিতে বিএনপিই মনে হয় একমাত্র শত্রু।
আসলে কিন্তু বিএনপি হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী, শত্রু হচ্ছে ধর্মীয় মৌলবাদীরা। বিএনপি এখন বেশ অসুবিধায় আছে, পঙ্গুদশাতেই বলা চলে। সরকার মনে হয় তাদের আরও জব্দ করতে চায়; কিন্তু বিএনপি সরে গেলে তার শূন্যতাটা পূরণের জন্য যে হেফাজতের আসার সম্ভাবনা, সেটাকে সরকার মনে হয় বিবেচনায় নিচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গে তো ঠিক এ রকমটাই ঘটেছে। তৃণমূল এমনই ব্যবস্থা করেছে, যার দরুন শূন্যস্থানে কংগ্রেস বা সিপিএম—কেউই নেই, জায়গাটা বিজেপি দখল করে নিয়েছে কংগ্রেস ও বামপন্থীদের ধ্বংসাবশেষের ওপর দাঁড়িয়ে।
হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব হয়তো তেমন একটা সুবিধা করতে পারবেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে করা সাত বছরের পুরোনো মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে এবং তাঁদের আরও বড় দুর্বলতা নেতৃত্বের ভেতরেই রয়ে গেছে, সেটা হলো মুনাফালিপ্সা ও ভোগলালসা। কিন্তু হেফাজতের জন্য খুব বিস্তৃত একটা লালনভূমি তো সমাজে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে, যেখানে রয়েছে লাখ লাখ মাদ্রাসা-শিক্ষিত মানুষ, যাঁদের জন্য জীবিকার পথ উন্মুক্ত নয়, অনেকেই বেকার কিংবা অর্ধবেকার এবং স্বভাবতই বিক্ষুব্ধ; তাঁদের সঙ্গে জামায়াতের লোকেরা যদি যুক্ত হয়, তবে সেটা মোটেই শুভ ঘটনা হবে না।
আর যদি আইএস চলে আসে, তবে তো কথাই নেই। আইএসের বিক্ষিপ্ত তৎপরতা আমাদের দেশে যে দেখা দেয়নি, তা নয়। আইএস ইরাক থেকে বিতাড়িত হয়েছে, তবে এরা যে কতটা কট্টরপন্থী ও নৃশংস হতে পারে তার প্রমাণ সেখানে তারা বেশ ভালোভাবেই রেখে এসেছে। এখন তারা চেষ্টায় আছে যেখানে সুবিধা, সেখানেই ঢুকে পড়ার। আফগানিস্তানে তাদের তৎপরতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। কিছুদিন আগে কাবুলের কাছে মেয়েদের এক স্কুলের সামনে গাড়িবোমা ফাটানোর এক ঘটনায় ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের প্রায় সবাই স্কুলছাত্রী, আহত হয়েছে আরও বহুজন। তালেবান এ কাজ করেনি বলেছে। সেই অস্বীকৃতি অবিশ্বাসযোগ্য নয়। তাহলে কে করল? আইএস দায়িত্ব স্বীকার করেনি, কিন্তু এ নিয়ে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই যে এটা আইএসেরই কাজ নয়। এরা বাংলাদেশে ঢুকে পড়লে ভয়াবহ কাণ্ড যে ঘটাবে, সেটা নিশ্চিত।
ধর্মীয় মৌলবাদীদের লালনক্ষেত্রটি উর্বর থেকে উর্বরতর হচ্ছে। মাদ্রাসা-শিক্ষিত অসন্তুষ্ট মানুষেরা তো আছেই; সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা দিয়েছে হতাশা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব। এ দেশের মানুষ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়েছে, তারা বড় রাষ্ট্র ভেঙে ছোট করেছে, কিন্তু তাদের মুক্তি আসেনি। কর্তৃত্ববাদী শাসন ও জুলুমবাজি ব্যাপকভাবে তাদের কাঁধে চেপে বসেছে। ফলে এখন হতাশা দেখা দিয়েছে। মনোভাবটা হচ্ছে পরাজিতের। অন্যদিকে ব্যক্তি মানুষ দেখছে তার চারপাশে কেউ নেই—সমাজ নেই, রাষ্ট্র নেই, আপনজনেরাও নেই; নিজের ওপর তার আস্থা তাই কমে যাচ্ছে। সে ভাবছে ধর্ম ছাড়া তার জন্য অন্য কোনো আশ্রয় নেই, ভরসাও নেই। বাঁচান যদি, তবে আল্লাহই বাঁচাবেন। আত্মবিশ্বাসহীনতা যত বাড়বে, মৌলবাদের চর্চা ততই শক্তিশালী ও ব্যাপক হবে। দেশে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা ক্রমাগত কমছে; উল্টো দিকে ওয়াজ, মিলাদে বক্তৃতা, ফতোয়া—এসব বেড়েই চলেছে। আবার এটাও তো না মেনে উপায় নেই যে, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রকে যদি হিন্দুরাষ্ট্র করার চেষ্টা চলে, তবে তার প্রতিক্রিয়ায় ও অনুসরণে আমাদের রাষ্ট্রকে মুসলিম রাষ্ট্র করার প্রচেষ্টা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইবে। যদিও স্বৈরাচার এরশাদ কর্তৃক রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়েছে বর্তমান সরকার।
আসল সত্যটা কিন্তু এই, এই সবকিছু হচ্ছে মূল যে ব্যাধি, যার নাম পুঁজিবাদ, তারই নানা ধরনের উপসর্গ। যে ইহুদিরা একদিন হিটলারের গণহত্যার শিকার হয়েছিল, যার নিন্দা বিশ্বব্যাপী এখনো শোনা যায়, তাদের রাষ্ট্র ইসরায়েল কেন অরক্ষিত ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করছে এবং হত্যা করছে নির্মমভাবে? জবাবটা সোজা। সেটা হলো এই, একজন হিটলার বিদায় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হিটলাররা ধ্বংস হয়নি; তারা আছে। হিটলার যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রতিনিধি ছিল ও রক্ষক সেজেছিল, সে ব্যবস্থাটা ভাঙতে না পারলে হিটলাররা বিদায় হবে না।
ভরসা এই যে প্রতিবাদ হচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলে পড়ার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ উঠেছে। খোদ আমেরিকায় জো বাইডেনের নিজের পার্টির ভেতরই তাঁর ইসরায়েলঘেঁষা নীতির বিরুদ্ধে ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বার্নি স্যান্ডার্স ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নিজে ইহুদি বংশোদ্ভূত, কিন্তু ইসরায়েলের নীতির তিনি বিরোধী। ব্রিটেনে লেবার পার্টির জেরেমি করবিন প্রতিবাদ করেছেন এবং আগে যেটা কখনো শোনা যায়নি, সেটা এবার শোনা গেল। ইসরায়েলে যে আরবরা বসবাস করে তারা রাস্তায় বের হয়ে এসেছে। সংখ্যার হিসাবে এরা ওই রাষ্ট্রের নাগরিকদের শতকরা ২১ জন। কম নয়। কিন্তু নিষ্পেশন এমন প্রবল যে তারা নিজেদের অধিকারের কথা এতকাল জোর গলায় বলতে পারেনি। এবার বলছে।
একটা শক্তিশালী আন্তর্জাতিকতা তৈরি হচ্ছে। যে জন্য মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান ঘটলে বিশ্বে তার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং সেনা অভ্যুত্থানবিরোধীরা যখন রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়ে নতুন ঐক্য-সরকার গঠন করে, বিশ্বের গণতান্ত্রিক মহলে তাতেও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। আর এটাও তো তাৎপর্যহীন নয় ঢাকার একজন সাংবাদিক যখন লাঞ্ছিত হন, তখন বহির্বিশ্বের মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকেরা সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবাদ জানান; এমনকি জাতিসংঘও উদ্বেগ প্রকাশ না করে পারে না।
কিন্তু যা দরকার তা হলো, বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদবিরোধী সুসংগঠিত ও ধারাবাহিক আন্দোলন। নইলে বিপদ আছে। সংকটগুলো সেই সতর্কবাণীই উচ্চারণ করে চলেছে।
লড়াইটা কেবল উপসর্গকেন্দ্রিক হলে চলবে না, হতে হবে ব্যাধিকেন্দ্রিক। আর এই লড়াই কোনো একটি দেশের নয়, সারা বিশ্বের। মানুষের সভ্যতা এখন এক ক্রান্তিকালে এসে পৌঁছেছে; কোন দিকে সে মোড় নেবে, সেটা নির্ভর করছে মানুষের কর্তব্য পালনের ওপরই। কর্তব্যটা কেবল জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার নয়, ট্রাম্পকে হটিয়ে বাইডেনকে আনা নয়; পুঁজিবাদকে মোকাবিলা করারই। এই সত্যটাকে অস্পষ্ট করার চেষ্টায় কোনো কমতি নেই; কিন্তু সত্যটিকে আনা চাই সামনে। আলোর পরিস্ফুটন জোরদার হলে, তবেই কুয়াশা কাটবে। নইলে নয়।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে