খতমের তালিকায় সুনীল

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০৯: ১০

নকশাল আন্দোলন যখন শুরু হয়েছে, তখন যদি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বয়স উনিশ-কুড়ি হতো, তাহলে তিনি অনায়াসে তাতে যোগ দিতেন। ছাত্র বয়সে বামপন্থীদের মিছিলে গেছেন। একসময় সেখান থেকে সরেও এসেছেন। একটা সর্বাত্মক বিপ্লব ছাড়া এই পচা-গলা শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে মানতেন। বিপ্লব শব্দটাও ছিল খুবই আকর্ষণীয়। ‘চে গুয়েভারার প্রতি’, ‘আমার স্বপ্ন’ কবিতাগুলোয় বিপ্লব নিয়ে তাঁর ভাবনার প্রকাশ দেখা যাবে।

নকশালেরা সুনীলকে পছন্দ করত না। এর কারণ হলো যে পত্রিকাটিকে নকশালেরা প্রতিক্রিয়াশীলতার দুর্গ বলে মনে করে, সেটাই ছিল সুনীলের কর্মস্থল।আমেরিকায় ঘুরে এসেছেন সুনীল, সেটাও তাঁর প্রতি নকশালদের বিদ্বেষের আরেকটি কারণ। কংগ্রেসের মুখপত্র জনসেবকেও কিছুদিন কাজ করেছেন, ফলে এ রকম পোক্ত শ্রেণিশত্রুকে তো চিহ্নিত করাই যায়।

নকশাল আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন পশ্চিম জার্মানির কনস্যুলেটের একটি পার্টিতে সমর সেনের সঙ্গে দেখা হলো সুনীলের। সে সময় সমর সেন কবিতা ছেড়ে পুরোদস্তুর সাংবাদিক। পুরোপুরি নকশাল বিপ্লবের সমর্থক। সুনীলের সঙ্গে মুখোমুখি পরিচয় ছিল না সমর সেনের। তবে কৃত্তিবাসে সমর সেনকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছিলেন তিনি। তাতে কেন তিনি কবিতা থেকে দূরে সরে গেলেন, তা নিয়ে আক্ষেপ ছিল। সেই কৃত্তিবাস সমর সেনকে দেওয়া হলে তিনি নাকি কবিতাটি পড়ে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন।

সমর সেনের সঙ্গে কেউ একজন সুনীলকে পরিচয় করিয়ে দিল। সমর সেন রামের গ্লাস হাতে নিয়ে বললেন, ‘সত্যজিৎ রায়ের দালালটা না?’

সত্যজিৎ সে সময় সুনীলের কাহিনি নিয়ে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবিটি করেছেন। এ জন্য কেন সুনীলকে দালাল আখ্যা দেওয়া হবে, তা তিনি বুঝতে পারেননি।

সুনীলকে তির্যক বিদ্রূপ করা শুরু করলে সুনীল জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি ক্যাপিটালিস্ট পশ্চিম জার্মানির এই বড়লোকদের পার্টিতে মদ খেতে এসেছেন কেন?’

ভীষণ খেপে গিয়ে সমর সেন বললেন, ‘এই ছেলেটার নাম খতমের তালিকায় আছে না? কত নম্বরে?’ 

সূত্র: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অর্ধেক জীবন, পৃষ্ঠা ৩০৪

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত