কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ার অভিযোগ

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০৩
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২২, ১২: ২১

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। জটিল কোনো রোগের চিকিৎসা সেখানে দেওয়া হয় না। আবার ভর্তি রোগীদের চিকিৎসকের দেখা পাওয়াও কঠিন। এ জন্য লোকবল ও সরঞ্জামের অভাবের কথা বলছে কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামের একজন পুলিশ সদস্য গতকাল শনিবার জানান, গত মাসের মাঝামাঝিতে শরীরে জ্বর নিয়ে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ভর্তি হন তিনি। সেখানে তাঁকে কয়েকটা প্যারাসিটামল ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দেওয়া হয়। তা খেয়ে তিনি একটি বিছানায় পড়ে থাকেন। ওই সময় তাঁকে দেখার মতো কোনো নার্স কিংবা চিকিৎসক আসেননি বলে অভিযোগ তাঁর। পরে স্ত্রীকে ফোনে হাসপাতালে ডেকে এনে সেখানে এক রাত কাটিয়ে রিলিজ নিয়ে চলে যান একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষা করে তাঁর টাইফয়েড ধরা পড়ে। কয়েক দিন চিকিৎসা শেষে তিনি এখন সুস্থ।

ওই পুলিশ সদস্য বলেন, পুলিশ হাসপাতালে এই-সেই টেস্টের জন্য তখন ৩ হাজার ৪০০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু ওই রিপোর্টে কী ছিল, তা জানা যায়নি। তাঁকে কিছু বলাও হয়নি। চিকিৎসক থাকেন এক বিল্ডিংয়ে, নার্স থাকেন আরেক জায়গায়। ভর্তি হওয়ার পর থেকে চিকিৎসকের চেহারা পর্যন্ত তিনি দেখেননি।

চট্টগ্রামে ১০০ শয্যার বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে পুলিশের ১২টি ইউনিটের হাজারো সদস্য তাঁদের কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। হাসপাতালের তথ্যে, এখানে মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ২৫ টি। সম্প্রতি আরও দুজন নার্স হাসপাতালে নিয়োগ পেয়েছেন। এই জনবল পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রামে দামপাড়া পুলিশ লাইনসের ভেতর বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা বর্তমানে পৃথক দুটি ভবনে চলছে। এর মধ্যে শতবর্ষী দোতলা একটি পুরোনো ভবনে অসুস্থ পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালে দোতলায় একটি কক্ষের ভেতর তখন বেশ কয়েকজন রোগী ভর্তি ছিলেন। নিচতলায় একজন নার্স নিজ কক্ষের আসনে বসে ছিলেন। ভবনটি আগে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হতো। পাশেই নতুন একটি ভবনে কিছু নির্মাণকাজ চলছে। ভবনটির নিচতলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে ডেস্কে কর্তব্যরত অবস্থায় দেখা যায়। তাঁরাই নার্সের দায়িত্ব পালন করছেন। তার পাশেই রাখা একটি শয্যায় পুলিশের একজন নারী সদস্য অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলেন। দোতলায় হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্টসহ চিকিৎসকদের চেম্বার। এর মধ্যে একটি প্যাথলজি বিভাগ। সেখানে অলস সময় পার করছেন দায়িত্বরত টেকনিশিয়ান। পাশে নিজের কক্ষে সময় কাটাচ্ছেন নাজিম উদ্দিন নামের একজন চিকিৎসক। পাশেই হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট কার্যালয়ে বসে ছিলেন ডা. আহমেদ রাসুল। কথা বলতে চাইলে তাঁরা এ ব্যাপারে দাপ্তরিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (সদর) আমির জাফর বলেন, ‘লোকবল ও সরঞ্জামের কিছু সমস্যা অনেক দিন ধরেই ছিল। বর্তমানে এসব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। পুলিশ কমিশনার এ ব্যাপারে আন্তরিক। হাসপাতালের নতুন ভবনটি সম্প্রসারণের পাশাপাশি অবকাঠামোগত বেশ কিছু উন্নয়নকাজ চলছে। এসব কাজ করতে গিয়ে হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম পরিচালনায় সাময়িক কিছু সমস্যা হচ্ছে। আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে কাজ শেষে হাসপাতালটি নতুনরূপে দেখতে পাবেন। আশা করছি, তখন এখানে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবেন রোগীরা।’

হাসপাতালটির উন্নয়ন বিষয়ে তদারককারী নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (ওয়েলফেয়ার) মল্লিক আহসান উল্লাহ সামি বলেন, ‘নতুন করে অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রে মেশিন, প্যাথলজি বিভাগ, প্রসূতি বিভাগসহ আরও বিভাগ সংযোজন করা হচ্ছে। কেবিন, বুথ ও ডিসপেনসারি আধুনিক করা হচ্ছে। আরও বেশ কিছু কাজ এখন চলমান।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত