মাওলানা স্যারের ঝিমুনি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২২, ১১: ১৫
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২২, ১১: ৩৫

একেবারে ছোটবেলা থেকেই কবিতা পড়তেন মুস্তাফা মনোয়ার। আবৃত্তি করতে পছন্দ করতেন। বাড়ি থেকেই শেখানো হতো। বাবা কবি গোলাম মোস্তফা চাইতেন, ছেলে সংস্কৃতিমান হোক। ক্লাস ফোরে যখন পড়েন, তখন ফরিদপুরেই নিজের একটা লাইব্রেরি তৈরি করে ফেলেছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার।

এরপর এলেন ঢাকায়। থাকলেন শান্তিনগরে। তখন শান্তিনগর একেবারেই খোলা জায়গা। গ্রামও নয়, শহরও নয়। কিছু প্রশান্তিময় দালানবাড়ি আর বেশ কয়েকটা বাগানবাড়ি ছিল সেখানে।

ঢাকায় এসে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন কলেজিয়েট স্কুলে। সেই স্কুলে গান হতো, সংস্কৃতি নিয়ে কাজ হতো। সেই সব কাজে যোগ দিয়েছেন তিনি। অল্প দিনের মধ্যেই স্কুলের এসব কাজে একেবারে পারদর্শী হয়ে উঠলেন। গান করলেন, নাটক করলেন, ছবি আঁকলেন। এই ছবি আঁকা নিয়েই গোল বাধল একদিন।

সেদিন ছিল পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হলো নির্ধারিত সময়ের বেশ আগে। বসেই আছেন। উসখুস করছেন। কিন্তু এখনই খাতা জমা দিয়ে উঠে যাওয়া যাবে না। কী করা যায়?

পরীক্ষার হল গার্ড দিতে আসা মাওলানা সাহেব তখন ঝিমুচ্ছেন। তা দেখে নিজের সৃজনশীল মনটার বিকাশ ঘটাতে চাইলেন মুস্তাফা মনোয়ার। পরীক্ষার খাতার পেছন দিকের খালি সাদা কাগজে শুরু করলেন শিল্পকর্ম। দারুণ এক নিদ্রামগ্ন মাওলানা সাহেব ফুটে উঠলেন পরীক্ষার খাতায়।

পরদিন দ্বিতীয় পরীক্ষা। মুস্তাফা মনোয়ার দেখলেন, লাঠি হাতে হাজির হয়েছেন হেডমাস্টার।

রেগে উঠে তিনি বললেন, ‘তুমি এটা কী করলে? খাতায় তুমি আঁকলে?’

মুস্তাফা মনোয়ার বললেন, ‘স্যার, খাতায় আমার তো উত্তর দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। আমি তো আর পারছিলাম না। তাই ভাবলাম, এতক্ষণ বসে থাকার চেয়ে আঁকা ভালো।’

কিন্তু রাগ যায় না হেড মাস্টারের। ভুল স্বীকার করতে হলো, কিন্তু মন খারাপ করে মুস্তাফা মনোয়ার ভাবলেন, ছবিটা তো সুন্দর হয়েছিল। একটু প্রশংসা তো প্রাপ্যই ছিল! এরপর এই স্কুলে আর থাকলেন না। চলে গেলেন নারায়ণগঞ্জে পড়াশোনা করতে।

সূত্র: মুস্তাফা মনোয়ার, স্মৃতির ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৪৪-২৪৫ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত