হু-হু করে বাড়ছে বানের পানি

কুড়িগ্রাম ও চিলমারী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২২, ০৬: ৩৭
আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ১৫: ১৮

বৃষ্টি ও উজানি ঢল বাড়তে থাকায় কুড়িগ্রামে ধরলা নদী এবং ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে জেলার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বসতভিটায় পানি ঢোকায় নদ-নদীর অববাহিকার বাসিন্দারা নারী-শিশুসহ গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পাউবো জানায়, গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ঢলে দুধকুমার নদের পানি বেড়ে গতকাল সকাল ৯টায় সদরের পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বাড়ছে তিস্তার পানিও। আগামী ৪৮ ঘণ্টা এসব নদ-নদীর উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ায় সদর উপজেলা ও উলিপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপচরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ধরলার পানি বেড়ে নদী অববাহিকার কয়েক শ বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি বেড়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন ও উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬-৭ হাজার পরিবার। ঘরের ভেতর পানি ঢোকায় অনেকে নৌকা ও মাচানে আশ্রয় নিয়েছে। বাড়িঘর ছেড়ে অনেক পরিবার উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, তাঁর ওয়ার্ডের ব্রহ্মপুত্রের নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক বাড়িতে পানি ঢুকেছে। এসব গ্রামের হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার জানান, তাঁর ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড পানিতে প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতির প্রতিবেদন নিয়েছে।

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোন্নাফ আলী বলেন, ‘অবস্থা খুব খারাপ। হু হু কইরা পানি বাড়তাছে। আমার ওয়ার্ডের দুই শতাধিক বাড়িঘরে পানি ডুইকা পড়ছে। মানুষজন মাচান কইরা আশ্রয় নিতাছে।’

কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এতে আগামী কয়েক দিন জেলার নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘দুর্গতদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্পিডবোট, নৌকা এবং আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলাগুলোতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দসহ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২০ লাখ টাকা ও ৫৭০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।’

এদিকে জেলার চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির পাটসহ বিভিন্ন ফসল।

পানি বাড়ায় চিলমারীর অষ্টমীরচর ইউনিয়নে কয়েক দিনের নদীভাঙনে ১৫ থেকে ২০টি পরিবার নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে ৩০টি পরিবার।

পাউবোর গেজরিডার জোবায়ের হোসেন জনি জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে চিলমারী পয়েন্টে পানি ৫৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রণয় বিষাণ দাস জানান, উপজেলায় ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। ১০০ হেক্টর পাটখেত সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়াসহ কিছু জমিতে অল্প পানি উঠেছে।

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, হঠাৎ পানি বাড়ায় কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময় খোঁজ রাখা হচ্ছে। ত্রাণ চেয়ে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। পানিবন্দী পরিবারের তালিকা করার জন্য চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত