ফজলুল কবির
ভূরাজনীতি নিয়ে কথা উঠলে এখনো মানুষের মাথায় যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বৈরথের কথা মাথায় আসে। যদিও এই দ্বৈরথের সমাপ্তি হয়েছিল ঘোষণা দিয়েই অনেকটা। এরপর যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া দ্বৈরথ চলেছে ও চলছে এখনো। কিন্তু তা আর পরাশক্তির লড়াইয়ের একক মর্যাদা পায়নি, যেমনটা পেয়েছিল গত শতকের নব্বইয়ের দশকের আগে। এখন তো এই মঞ্চে চীনের প্রবেশ বাকি সবকিছুকে ম্লান করে দিয়েছে। মঞ্চের অন্য পক্ষটি চেনা—যুক্তরাষ্ট্র।
সেই পুরোনো পরাশক্তিগুলো নামে এখনো আছে, তবে ধারে তেমনটা নেই। যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক দশকে একাই রাজত্ব করেছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে উদ্ধারকর্তা, ত্রাণকর্তা হিসেবে নিজের লম্বা নাকটি তারা গলিয়েছে। এ জন্য তারা আলোচিত হয়েছে, সমালোচিত হয়েছে। কিন্তু পিছু হটেনি। নানা দেশের নানা ঘটনায় নানাভাবে তারা নিজেদের যুক্ত করেছে এবং এখনো করছে। সর্বশেষ এই যে গণতন্ত্র সম্মেলনের প্রসঙ্গ এল, সেখানেও দেশটির পক্ষ থেকে এমন এমন অঞ্চলকে আহ্বান জানানো হলো, যাদের নিয়ে নানা পক্ষের আপত্তি রয়েছে। এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন হালে ক্ষয়িষ্ণু ‘গণতন্ত্র’ প্রসঙ্গটিকে বহুপক্ষীয় আলোচনার অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে আবারও নবায়নের চেষ্টা করছে। এবং এই সম্মেলনে রাশিয়া, চীনের মতো দেশকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, এও আরেক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লড়াই। স্নায়ুযুদ্ধের কালে এমন লড়াইয়ের ছক কষা হয়েছিল জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম), বিশ্বব্যাংককে জাগিয়ে তোলা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠাসহ নানা মুখোশের আড়ালে। এবারও তেমনটা হচ্ছে। তবে মুখোশটা আগের চেয়ে ঢের পাতলা। বাইরে থেকে সহজেই এখন মূল চেহারাটা দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্র নতুন এই পরিস্থিতিতে তার কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য মাঝারি শক্তিগুলোকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। কথা হলো তার প্রতিপক্ষ চীন কি তবে বসে আছে? না। চীনও ঠিক একই কাজ করছে; বরং যুক্তরাষ্ট্রের বেশ আগে থেকেই এ কাজ চীন শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে চীনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার অর্থনীতি এবং এ-সম্পর্কিত তার নানা প্রকল্প। এর মধ্যে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) কথা উল্লেখযোগ্য। নব্বই-পূর্ব স্নায়ুযুদ্ধ জমানার মতো করে চীনও এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ঋণ-রাজনীতিতে মনোযোগ দিয়েছে।
বিশ্বমঞ্চের জন্য নতুন এই পরিস্থিতি কিন্তু একেবারেই নতুন নয়। ২০১৪ সালে প্রকাশিত পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও গ্রিফিথ বিজনেস স্কুলের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ও’নিলের ‘মাঝারি শক্তি ও চীনের উত্থান’ বইয়ে চীনের এই সামনে এগিয়ে আসার বেশ কিছু দিক তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরিভাবে যেটি সামনে এসেছে, তা হলো, চীন গোটা বিশ্বে একযোগে ছড়ি ঘোরানোর ইচ্ছা নিয়ে এগোয়নি। সে এগিয়েছে প্রথমে নিজ অঞ্চলের কর্তৃত্ব নেওয়ার প্রয়াসে। তারা ব্যবসায়িক সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে মিত্রদেশগুলোকে ‘নীতিপ্রণেতা’ থেকে ‘নীতিগ্রহীতাতে’ পরিণত করেছে। আর এর মাধ্যমেই তারা তাদের প্রভাববলয়কে বাড়িয়েছে ক্রমাগত। অন্য কোনো দেশের ক্ষমতায় নিজেদের লোক বসানোর চেয়ে তারা বেশি গুরুত্ব দিয়েছে ক্ষমতাসীননির্বিশেষে নীতিটাই বদলে দিতে। এতে ক্ষমতায় যে-ই আসুক, চীনের প্রভাব অক্ষুণ্ন থাকছে।
একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে বিষয়টি। ২০১২ সালে মিসরে ক্ষমতায় আসে মুসলিম ব্রাদারহুড। দলটির নেতা মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম সফর করেন চীনে, যেখানে মিসরের সেনাবাহিনীতে রয়েছে ওয়াশিংটনের বিপুল বিনিয়োগ। এ ছাড়া এককেন্দ্রিক কাঠামোয় দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম সফর করাই দস্তুর ছিল। কিন্তু এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে সে সময় দেখিয়ে দিয়েছিল, চীন কতটা ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছে। চীনের গ্লোবাল টাইমস সে সময় মুরসির এই সফরকে ‘মিসরের অভিমুখ পরিবর্তন বলে’ উল্লেখ করেছিল।
মিসরের সেই ঘটনা ছিল প্রকাশ মাত্র। তার বহু আগে থেকেই চীন এ পথে হেঁটেছে। তারা এই মধ্যম শক্তি ধারণা নিয়ে এগিয়েছে এবং এর মাধ্যমেই বৃহত্তর পরিসরে কৌশলগত পরিবর্তনকে চালিত করতে চেয়েছে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র সে সময় এই মধ্যম শক্তি নিয়ে একেবারে নীরব ছিল বললে ভুল হবে না। তবে এখন তারা বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে এবং এ কারণেই গণতন্ত্র সম্মেলনসহ নানা নামে বিশ্বমঞ্চে হাজির হচ্ছে। এবারের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র যতটা ইতিবাচক ভূমিকা নিল, তা কিন্তু শুধু পরিবেশবাদীদের চাপে বা ডেমোক্র্যাটদের উদারতা—তেমনটি ভাবলে ভুল হবে। এই অবস্থানের পেছনেও রয়েছে ছড়ি ঘোরানোর ইচ্ছা এবং তা থেকে প্রসূত রাজনীতি। সারা বিশ্বের অনুন্নত, উন্নয়নশীলসহ নানা আর্থিক সক্ষমতা ও শক্তির রাষ্ট্রগুলোর একটা বড় অংশ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার। এর মধ্যে বাংলাদেশের মতো বহু দেশ আছে, যেগুলো ভূরাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
আগে এই দুর্বল ও মধ্যম শক্তির দেশগুলো বিনা দ্বিধায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব মেনে নিলেও এখন অর্থনীতি ও বাণিজ্য উভয় বিবেচনাতেই তারা চীনের দিকে মুখ করে থাকতেই বেশি পছন্দ করছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ছাড় না দিয়ে কোনো উপায় নেই। এ ছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় মিত্রদের অনেকেই দূরত্ব বাড়িয়েছে ওয়াশিংটনের সঙ্গে। এই দূরত্ব ঘোচানোর জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের অবস্থান এবং অতি অবশ্যই গণতন্ত্রের ফেরি আবার শুরু করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
একই সঙ্গে আগের স্নায়ুযুদ্ধের মতো করে না হলেও যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অস্ত্রের বদলে তারা অনেক বেশি বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করতে চায়। তাই বলে যুদ্ধের তাসটিও তারা ছেড়ে দিতে রাজি নয়। বিভিন্ন অঞ্চলে তারা ছদ্ম-যুদ্ধ এখনো চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে এই মধ্যম শক্তিগুলোকেই কাজে লাগানো হচ্ছে। পরিসর বিবেচনায় তা আগের চেয়ে ক্ষুদ্র হলেও গুরুত্বে সুদূরপ্রসারী। উদাহরণ হিসেবে তুরস্কের কথা বলা যায়, যারা সিরিয়ার কিছু অংশ দখলে রেখেছে, লিবিয়ায় সেনা পাঠিয়েছে; সিরিয়ায় আবার মিলিশিয়াদের সহায়তা করেছে ইরান, হালে যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করল, সেখানে তালেবানের সঙ্গে হৃদ্য দেখা যাচ্ছে পাকিস্তান, ইরানসহ যুক্তরাষ্ট্রের চেনা প্রতিপক্ষের। মঞ্চে সরাসরি চীনের উপস্থিতি না থাকলেও এর পেছনে চীনের শক্তিটিই যে কাজ করছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এভাবে বহু দেশের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু তাতে তালিকাটি দীর্ঘই হবে শুধু। কিন্তু এই দেশগুলো স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ভাবলে ভুল হবে। ছোট বা বড় পারস্পরিক যেকোনো আন্তরাষ্ট্রীয় বা আঞ্চলিক দ্বৈরথের পেছনে হয় যুক্তরাষ্ট্র, নয়তো চীনের মতো শক্তিগুলো রয়েছে। এই দুই পক্ষই নিজেদের অভীষ্ট অর্জনে মধ্যম শক্তির দেশগুলোকে কাজে লাগাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান মধ্যম শক্তিকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি এই কাতারে নতুন নাম যুক্ত করারও চেষ্টা করছে তারা। এ ক্ষেত্রে চীন এগিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়িক নানা কৌশলের মাধ্যমে। আর যুক্তরাষ্ট্র এখনো রাজনৈতিক হাতিয়ারটিকেই বেশি ব্যবহার করছে। বাণিজ্যিক শক্তি তারা ব্যবহার করছে ভেবেচিন্তে। উভয় পক্ষই এখন দেশগুলোকে ‘নীতিপ্রণেতার’ কাতার থেকে ‘নীতিগ্রহীতার’ কাতারে নামিয়ে আনতে চাইছে। যদিও তারা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ক্ষমতাসীন সরকারকে ঠিকই ‘নীতিপ্রণেতার’ কাতারে উন্নীত হতে পারার আত্মতুষ্টিতে ভোগার ছদ্ম-সুখে মেতে থাকতে দিচ্ছে। এটাই সেই আলোর ফাঁদ, যা ক্ষমতায়নের আকাঙ্ক্ষায় ছুটে চলা দেশগুলোর সরকারকে যথাযথভাবে নতি স্বীকারে বাধ্য করছে।
ফজলুল কবির। সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ভূরাজনীতি নিয়ে কথা উঠলে এখনো মানুষের মাথায় যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বৈরথের কথা মাথায় আসে। যদিও এই দ্বৈরথের সমাপ্তি হয়েছিল ঘোষণা দিয়েই অনেকটা। এরপর যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া দ্বৈরথ চলেছে ও চলছে এখনো। কিন্তু তা আর পরাশক্তির লড়াইয়ের একক মর্যাদা পায়নি, যেমনটা পেয়েছিল গত শতকের নব্বইয়ের দশকের আগে। এখন তো এই মঞ্চে চীনের প্রবেশ বাকি সবকিছুকে ম্লান করে দিয়েছে। মঞ্চের অন্য পক্ষটি চেনা—যুক্তরাষ্ট্র।
সেই পুরোনো পরাশক্তিগুলো নামে এখনো আছে, তবে ধারে তেমনটা নেই। যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক দশকে একাই রাজত্ব করেছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে উদ্ধারকর্তা, ত্রাণকর্তা হিসেবে নিজের লম্বা নাকটি তারা গলিয়েছে। এ জন্য তারা আলোচিত হয়েছে, সমালোচিত হয়েছে। কিন্তু পিছু হটেনি। নানা দেশের নানা ঘটনায় নানাভাবে তারা নিজেদের যুক্ত করেছে এবং এখনো করছে। সর্বশেষ এই যে গণতন্ত্র সম্মেলনের প্রসঙ্গ এল, সেখানেও দেশটির পক্ষ থেকে এমন এমন অঞ্চলকে আহ্বান জানানো হলো, যাদের নিয়ে নানা পক্ষের আপত্তি রয়েছে। এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন হালে ক্ষয়িষ্ণু ‘গণতন্ত্র’ প্রসঙ্গটিকে বহুপক্ষীয় আলোচনার অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে আবারও নবায়নের চেষ্টা করছে। এবং এই সম্মেলনে রাশিয়া, চীনের মতো দেশকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, এও আরেক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লড়াই। স্নায়ুযুদ্ধের কালে এমন লড়াইয়ের ছক কষা হয়েছিল জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম), বিশ্বব্যাংককে জাগিয়ে তোলা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠাসহ নানা মুখোশের আড়ালে। এবারও তেমনটা হচ্ছে। তবে মুখোশটা আগের চেয়ে ঢের পাতলা। বাইরে থেকে সহজেই এখন মূল চেহারাটা দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্র নতুন এই পরিস্থিতিতে তার কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য মাঝারি শক্তিগুলোকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। কথা হলো তার প্রতিপক্ষ চীন কি তবে বসে আছে? না। চীনও ঠিক একই কাজ করছে; বরং যুক্তরাষ্ট্রের বেশ আগে থেকেই এ কাজ চীন শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে চীনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার অর্থনীতি এবং এ-সম্পর্কিত তার নানা প্রকল্প। এর মধ্যে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) কথা উল্লেখযোগ্য। নব্বই-পূর্ব স্নায়ুযুদ্ধ জমানার মতো করে চীনও এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ঋণ-রাজনীতিতে মনোযোগ দিয়েছে।
বিশ্বমঞ্চের জন্য নতুন এই পরিস্থিতি কিন্তু একেবারেই নতুন নয়। ২০১৪ সালে প্রকাশিত পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও গ্রিফিথ বিজনেস স্কুলের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ও’নিলের ‘মাঝারি শক্তি ও চীনের উত্থান’ বইয়ে চীনের এই সামনে এগিয়ে আসার বেশ কিছু দিক তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরিভাবে যেটি সামনে এসেছে, তা হলো, চীন গোটা বিশ্বে একযোগে ছড়ি ঘোরানোর ইচ্ছা নিয়ে এগোয়নি। সে এগিয়েছে প্রথমে নিজ অঞ্চলের কর্তৃত্ব নেওয়ার প্রয়াসে। তারা ব্যবসায়িক সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে মিত্রদেশগুলোকে ‘নীতিপ্রণেতা’ থেকে ‘নীতিগ্রহীতাতে’ পরিণত করেছে। আর এর মাধ্যমেই তারা তাদের প্রভাববলয়কে বাড়িয়েছে ক্রমাগত। অন্য কোনো দেশের ক্ষমতায় নিজেদের লোক বসানোর চেয়ে তারা বেশি গুরুত্ব দিয়েছে ক্ষমতাসীননির্বিশেষে নীতিটাই বদলে দিতে। এতে ক্ষমতায় যে-ই আসুক, চীনের প্রভাব অক্ষুণ্ন থাকছে।
একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে বিষয়টি। ২০১২ সালে মিসরে ক্ষমতায় আসে মুসলিম ব্রাদারহুড। দলটির নেতা মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম সফর করেন চীনে, যেখানে মিসরের সেনাবাহিনীতে রয়েছে ওয়াশিংটনের বিপুল বিনিয়োগ। এ ছাড়া এককেন্দ্রিক কাঠামোয় দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম সফর করাই দস্তুর ছিল। কিন্তু এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে সে সময় দেখিয়ে দিয়েছিল, চীন কতটা ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছে। চীনের গ্লোবাল টাইমস সে সময় মুরসির এই সফরকে ‘মিসরের অভিমুখ পরিবর্তন বলে’ উল্লেখ করেছিল।
মিসরের সেই ঘটনা ছিল প্রকাশ মাত্র। তার বহু আগে থেকেই চীন এ পথে হেঁটেছে। তারা এই মধ্যম শক্তি ধারণা নিয়ে এগিয়েছে এবং এর মাধ্যমেই বৃহত্তর পরিসরে কৌশলগত পরিবর্তনকে চালিত করতে চেয়েছে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র সে সময় এই মধ্যম শক্তি নিয়ে একেবারে নীরব ছিল বললে ভুল হবে না। তবে এখন তারা বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে এবং এ কারণেই গণতন্ত্র সম্মেলনসহ নানা নামে বিশ্বমঞ্চে হাজির হচ্ছে। এবারের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র যতটা ইতিবাচক ভূমিকা নিল, তা কিন্তু শুধু পরিবেশবাদীদের চাপে বা ডেমোক্র্যাটদের উদারতা—তেমনটি ভাবলে ভুল হবে। এই অবস্থানের পেছনেও রয়েছে ছড়ি ঘোরানোর ইচ্ছা এবং তা থেকে প্রসূত রাজনীতি। সারা বিশ্বের অনুন্নত, উন্নয়নশীলসহ নানা আর্থিক সক্ষমতা ও শক্তির রাষ্ট্রগুলোর একটা বড় অংশ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার। এর মধ্যে বাংলাদেশের মতো বহু দেশ আছে, যেগুলো ভূরাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
আগে এই দুর্বল ও মধ্যম শক্তির দেশগুলো বিনা দ্বিধায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব মেনে নিলেও এখন অর্থনীতি ও বাণিজ্য উভয় বিবেচনাতেই তারা চীনের দিকে মুখ করে থাকতেই বেশি পছন্দ করছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ছাড় না দিয়ে কোনো উপায় নেই। এ ছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় মিত্রদের অনেকেই দূরত্ব বাড়িয়েছে ওয়াশিংটনের সঙ্গে। এই দূরত্ব ঘোচানোর জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের অবস্থান এবং অতি অবশ্যই গণতন্ত্রের ফেরি আবার শুরু করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
একই সঙ্গে আগের স্নায়ুযুদ্ধের মতো করে না হলেও যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অস্ত্রের বদলে তারা অনেক বেশি বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করতে চায়। তাই বলে যুদ্ধের তাসটিও তারা ছেড়ে দিতে রাজি নয়। বিভিন্ন অঞ্চলে তারা ছদ্ম-যুদ্ধ এখনো চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে এই মধ্যম শক্তিগুলোকেই কাজে লাগানো হচ্ছে। পরিসর বিবেচনায় তা আগের চেয়ে ক্ষুদ্র হলেও গুরুত্বে সুদূরপ্রসারী। উদাহরণ হিসেবে তুরস্কের কথা বলা যায়, যারা সিরিয়ার কিছু অংশ দখলে রেখেছে, লিবিয়ায় সেনা পাঠিয়েছে; সিরিয়ায় আবার মিলিশিয়াদের সহায়তা করেছে ইরান, হালে যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করল, সেখানে তালেবানের সঙ্গে হৃদ্য দেখা যাচ্ছে পাকিস্তান, ইরানসহ যুক্তরাষ্ট্রের চেনা প্রতিপক্ষের। মঞ্চে সরাসরি চীনের উপস্থিতি না থাকলেও এর পেছনে চীনের শক্তিটিই যে কাজ করছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এভাবে বহু দেশের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু তাতে তালিকাটি দীর্ঘই হবে শুধু। কিন্তু এই দেশগুলো স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ভাবলে ভুল হবে। ছোট বা বড় পারস্পরিক যেকোনো আন্তরাষ্ট্রীয় বা আঞ্চলিক দ্বৈরথের পেছনে হয় যুক্তরাষ্ট্র, নয়তো চীনের মতো শক্তিগুলো রয়েছে। এই দুই পক্ষই নিজেদের অভীষ্ট অর্জনে মধ্যম শক্তির দেশগুলোকে কাজে লাগাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান মধ্যম শক্তিকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি এই কাতারে নতুন নাম যুক্ত করারও চেষ্টা করছে তারা। এ ক্ষেত্রে চীন এগিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়িক নানা কৌশলের মাধ্যমে। আর যুক্তরাষ্ট্র এখনো রাজনৈতিক হাতিয়ারটিকেই বেশি ব্যবহার করছে। বাণিজ্যিক শক্তি তারা ব্যবহার করছে ভেবেচিন্তে। উভয় পক্ষই এখন দেশগুলোকে ‘নীতিপ্রণেতার’ কাতার থেকে ‘নীতিগ্রহীতার’ কাতারে নামিয়ে আনতে চাইছে। যদিও তারা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ক্ষমতাসীন সরকারকে ঠিকই ‘নীতিপ্রণেতার’ কাতারে উন্নীত হতে পারার আত্মতুষ্টিতে ভোগার ছদ্ম-সুখে মেতে থাকতে দিচ্ছে। এটাই সেই আলোর ফাঁদ, যা ক্ষমতায়নের আকাঙ্ক্ষায় ছুটে চলা দেশগুলোর সরকারকে যথাযথভাবে নতি স্বীকারে বাধ্য করছে।
ফজলুল কবির। সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে