ঘরই যাঁর নিজের জগৎ

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২২, ০৯: ৫৯

নাগিব মাহফুজের বাঁচার ধরনটা তিনি নিজেই তৈরি করেছিলেন। সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত অফিস করতেন। এরপর চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত লিখতেন। সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত পড়াশোনা করতেন। এই রুটিনের কোনো হেরফের হতো না। সপ্তাহে শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিনই এই ছিল তাঁর জীবনধারা।

বিয়ে করেছিলেন সাঁইত্রিশ বা আটত্রিশ বছর বয়সে। নিজের জীবনধারায় স্ত্রীর জায়গা কোথায়? সারা দিনই তো ব্যস্ততা! এর ওপর ভর করেছিল ভয়। বিয়ে হওয়া মানেই এমন এক সামাজিক জীবনযাপন করা, যা তাঁর পোষাবে কি না, তা নিয়ে ভাবতেন তিনি। নিজের ভাই-বোনদের দেখতেন, বিয়ের পর তাঁদের জীবনযাত্রা গেছে বদলে। সমাজ-সংসার নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তাঁরা। কেউ একজন পরিবারসমেত গেলেন দাওয়াত খেতে, কেউ অন্য কোনো পরিবারকে নিজের বাড়িতে দাওয়াত দিলেন। নাগিব মাহফুজ ভাবলেন, বিয়ে করলে তো তাঁর নিজের রুটিনটাই আর থাকবে না! সে জীবনে স্বাধীনতা কোথায়?

নৈশভোজ কিংবা কোনো বরণ উৎসব ইত্যাদি থেকে নিজেকে আগলে রেখেছেন সারা জীবন। চেষ্টা করেছেন রাতের কোনো আসরে না যেতে। এমনকি কোনো বন্ধুর বাড়িতেও বেড়াতে যেতেন না। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হতো কফি শপে।

তিনি কখনোই মনে করেননি নোবেল পুরস্কার পাবেন। পশ্চিমারা প্রাচ্যের একজন লেখককে এই পুরস্কার দেবে না বলেই ধারণা ছিল তাঁর। তবে সেবার দুই আরব লেখক ইউসুফ ইদ্রিস আর আদোনিসের নাম শোনা যাচ্ছিল মনোনীত হয়েছেন বলে। সেদিন সকালে ছিলেন আল আহরামে। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে দুপুরের খাবার খেয়েছেন। তখন আল আহরাম থেকে খবর এল। খবর পেলেন নাগিবের স্ত্রী। বাশার নামে একজন ফোনে নাগিবকে জানালেন নোবেল পাওয়ার কথা। বিশ্বাস করেননি নাগিব।

পায়জামা পরে বসে আছেন নাগিব। এ সময় বেজে উঠল দোরঘণ্টি। কোনো সাংবাদিক এসেছেন ভেবেছেন নাগিব। দরজা খুলে দেখা গেল সুইডেনের রাষ্ট্রদূতকে! নাগিব বললেন, ‘এক্সকিউজ মি, আমি কাপড় পরে আসি।’

সূত্র: মিজান মল্লিকের অনুবাদে ‘নন্দিত লেখক কবির সাক্ষাৎকার’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত