চিত্তরঞ্জন দাশ

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৭: ৫৭

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ছেলেবেলা থেকেই ভিন্ন গোত্রের মানুষ ছিলেন। নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়েই তা প্রমাণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন হিন্দু-
মুসলিম মিলনের নিবেদিতপ্রাণ নেতা।

এই ক্ষণজন্মা মানুষটি ১৮৭০ সালের ৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন কলকাতার পটলডাঙা স্ট্রিটের এক বাড়িতে। আদিবাড়ি বিক্রমপুরের তেলিরবাগ। সেই অর্থে নিজেকে ‘বিক্রমপুরবাসী’ বলেছেন আজীবন।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বাংলাকে অখণ্ড রেখে শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে হলে, হিন্দু-মুসলমানের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতার প্রয়োজন। আর এর জন্য প্রয়োজন একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের। তাই তিনি ১৯২৩ সালে তাঁর বিখ্যাত হিন্দু-মুসলিম চুক্তি ‘বেঙ্গল প্যাক্ট চুক্তি’ সম্পাদন করেন।

এই নেতা রাজনীতি করতে গিয়ে ব্রিটিশদের রোষানলে পড়ে বহুবার জেল খেটেছেন। ১৮৯৩ সালে ব্যারিস্টারি পড়া শেষ করে দেশে ফিরে আইন পেশায় যুক্ত হয়ে পড়েন। পাশাপাশি গোপনে বিপ্লবী রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ১৯০৩ সালে কলকাতায় প্রমথ মিত্র ও তিনি মিলে অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি এর সহসভাপতি ছিলেন। অরবিন্দ ঘোষের ‘বন্দে মাতরম’ পত্রিকার সঙ্গেও তাঁর যুক্ততা ছিল।

১৯০৬ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। একসময় কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে স্বরাজ্য দল প্রতিষ্ঠা করেন। এই স্বরাজ্য দলের প্রার্থী হয়েই ১৯২৪ সালে কলকাতা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন।

ওকালতি করে যে দেশপ্রেমের পরিচয় দেওয়া যায়, তা তিনি করেছেন। যেসব রাজনৈতিক বন্দীর বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ উঠত, তাঁদের তিনি মুক্ত করে আনতেন অসাধারণ মেধার গুণে। শুধু আইনের জগতে নয়, সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন।

৫৪ বছর বয়সে দেশবন্ধু মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর পৈতৃক বসতবাড়িটি জনসাধারণের জন্য দান করে যান। সেখানে চিত্তরঞ্জন সেবাসদন প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর মৃত্যুতে বরীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ/ মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান’। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর জীবনানন্দ দাশ তাঁর স্মরণে ‘দেশবন্ধুর প্রয়াণে’ নামে একটি কবিতা রচনা করেছিলেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত