বিশেষ প্রতিনিধি, নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি
কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন রূপ নিল। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার বিশাল সমাবেশ থেকে গতকাল শনিবার সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ দাবিতে আজ রোববার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গতকাল বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ, কুতুবখালী, রামপুরা-বাড্ডা সড়ক, বনশ্রীতে রামপুরা-স্টাফ কোয়ার্টার সড়ক, সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় দুপুরের আগে সড়কে নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। সড়কে আঁকা হয় নানা চিত্র। অনেক স্থানে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবকেরা। চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায়ও বড় সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। আরও কয়েকটি জেলায় সমাবেশ-মিছিল হয়েছে। গতকালও বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গাজীপুরে একজন নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রাম নগরে শিক্ষামন্ত্রী ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের বাসভবনে হামলা-ভাঙচুর এবং সরকারদলীয় এক সংসদ সদস্যের কার্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। হামলা-ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপির চার নেতার বাসায়।
গতকাল বিক্ষোভ মিছিলের আগে ঘোষিত কর্মসূচি থাকলেও রাত ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই সমাবেশে যোগ দিতে দুপুরের পর রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা আসেন শহীদ মিনারে। পাশাপাশি এই সমাবেশে যোগ দেন অভিভাবক, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মী, চাকরিজীবী, শ্রমিক, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ। একপর্যায়ে শহীদ মিনার এলাকা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এই সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৯ দফা থেকে ১ দফা দাবি জানায়। এই দাবি হলো সরকারের পদত্যাগ। এই দাবিতে স্লোগানও দেওয়া হয়।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুম ও আবু বাকের মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর মন্ত্রিসভার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি আজ রোববার থেকে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এর আগে তাঁরা সরকারের কাছে ৯ দফা দাবি জানিয়েছিলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কোটা সংস্কার ও মেধাভিত্তিক সমাজ গঠনের দাবিতে আমরা ছাত্র-তরুণেরা সারা দেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছিলাম। ন্যায্য ও যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের হায়েনারা আমাদের বোনদের নির্মমভাবে পিটিয়েছে। গত ১৯ জুলাই আমাদের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। আমাদের জবরদস্তি করে আন্দোলন প্রত্যাহার ও সরকারের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দেয়। আমাদের হাসপাতালে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সেটিও না পেরে ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে জোর করে আমাদের থেকে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু শেখ হাসিনা নন, পুরো মন্ত্রিপরিষদকে পদত্যাগ করতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, যেখানে কখনোই কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসবে না।’
সরকারের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তাঁরা সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করার ঘোষণা দেন।
সমাবেশে অসহযোগ আন্দোলনের জরুরি নির্দেশনা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। শহীদ মিনার এলাকা ছাড়িয়ে চানখাঁরপুল মোড়, দোয়েল চত্বর, জগন্নাথ হল মোড় হয়ে পলাশী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল টাওয়ার পর্যন্ত মানুষের উপস্থিতি ছিল। সমাবেশে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে,’ ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস,’ ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত,’ ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’—এসব স্লোগান দেন।
আন্দোলনকারীরা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ত্যাগ করে শাহবাগে গিয়ে অবস্থান নেন। কিছু অংশ মিছিল নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় চলে যায়। তবে এই সমাবেশ ও মিছিল চলাকালে পুলিশ কোনো বাধা দেয়নি। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-অবরোধ: গতকালের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এতে মিরপুর রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে চলে যান।
মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে বেলা ১টার পর সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এ সময় পুলিশের অবস্থান ছিল মিরপুর-২-এর দিকে। বেলা সোয়া ১টার দিকে পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের ডেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের কোনো ক্ষতি না করে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে বলেন। বহিরাগত কেউ এসে যেন কোনো সহিংসতা করতে না পারে, সে ব্যাপারে তাঁদের সতর্ক থাকতে বলেন।
মিরপুর-১০-এর আশপাশে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। দুই পক্ষের মধ্যে যেন কোনো সংঘাত না হয়, সে জন্য পুলিশ সতর্ক ছিল। দুই প্লাটুন বিজিবিও সেখানে যায়।
মিরপুর-১২ ডিওএইচএসের ১ নম্বর গেটে একদল অভিভাবক ও শিক্ষার্থী ব্যানার নিয়ে অবস্থান করেন।
দুপুরের দিকে উত্তরা-১১ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ার, ৯ নম্বর সেক্টরের উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ, উত্তরা হাইস্কুলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের সাঙ্গার মোড়ে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে তাঁরা চলে যান।
উত্তরার আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাবিব হাসানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও জড়ো হোন।
ডিএমপির উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মির্জা সালাহউদ্দিন বলেন, উত্তরার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বনশ্রীতে রামপুরা-স্টাফ কোয়ার্টার সড়ক বন্ধ করে দুপুর ১২টা থেকে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বনশ্রী এ-ব্লক থেকে সি-ব্লক পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে গ্রাফিতি আঁকেন তাঁরা। সড়কে লেখা হয়েছে, ‘ঘর ছাড়ুন, রাস্তায় নামুন’, ‘গণহত্যার বিচার চাই’। অনেক গাড়িতেও ‘এক দফা’ লেখা হয়।
দুপুর ১২টার দিকে বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুলসংলগ্ন প্রধান সড়কে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। ওই মিছিলের একটি অংশ যোগ দেয় বাড্ডা-রামপুরা সড়কে ইস্ট ওয়েস্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। সেখানে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হন আশপাশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এ সময় বনশ্রী থেকে রামপুরা ইউলুপ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর সেখানে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ: কয়েক দিন পর গতকাল আবার যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলা হয়, দুপুর ১২টার পর কয়েক শ আন্দোলনকারী রায়েরবাগে অবস্থান নিয়ে শনির আখড়া হয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কুতুবখালীতে মহাসড়ক অবরোধ করেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। পুলিশ, সেনাসদস্যরা অবস্থান নিলেও কোনো সংঘর্ষ হয়নি।
তবে যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। মোড়ের বিভিন্ন পাশে অবস্থান নেন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
কনসার্টের বদলে বিক্ষোভ সমাবেশ: বৃষ্টি উপেক্ষা করে ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে হাজির হন সংগীতশিল্পীরা। আগের ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শিল্পীদের সেখানে কনসার্ট করার কথা ছিল। তবে কনসার্টের বদলে শিল্পীরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে স্লোগান দেন। তাঁরা ফেস্টুন হাতে দাঁড়াতেই শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষও অংশ নেন। এ সময় শিল্পীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। পরে শিল্পীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শহীদ মিনারের উদ্দেশে মিছিল নিয়ে যান।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানায় আর্টসেল, সোলস, দলছুট, শূন্য, মাইলস, মাকসুদ ও ঢাকা, শিরোনামহীন। উপস্থিত ছিলেন শিল্পী পার্থ বড়ুয়া, এলিটা, গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী, শিল্পী আসিফ আকবর, আরমিন মুসা, মিফতাহ জামান, সুজিত মোস্তফা, নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনসহ অনেক সংগীতশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী-নির্মাতা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন রূপ নিল। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার বিশাল সমাবেশ থেকে গতকাল শনিবার সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ দাবিতে আজ রোববার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গতকাল বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ, কুতুবখালী, রামপুরা-বাড্ডা সড়ক, বনশ্রীতে রামপুরা-স্টাফ কোয়ার্টার সড়ক, সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় দুপুরের আগে সড়কে নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। সড়কে আঁকা হয় নানা চিত্র। অনেক স্থানে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবকেরা। চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায়ও বড় সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। আরও কয়েকটি জেলায় সমাবেশ-মিছিল হয়েছে। গতকালও বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গাজীপুরে একজন নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রাম নগরে শিক্ষামন্ত্রী ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের বাসভবনে হামলা-ভাঙচুর এবং সরকারদলীয় এক সংসদ সদস্যের কার্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। হামলা-ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপির চার নেতার বাসায়।
গতকাল বিক্ষোভ মিছিলের আগে ঘোষিত কর্মসূচি থাকলেও রাত ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই সমাবেশে যোগ দিতে দুপুরের পর রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা আসেন শহীদ মিনারে। পাশাপাশি এই সমাবেশে যোগ দেন অভিভাবক, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মী, চাকরিজীবী, শ্রমিক, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ। একপর্যায়ে শহীদ মিনার এলাকা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এই সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৯ দফা থেকে ১ দফা দাবি জানায়। এই দাবি হলো সরকারের পদত্যাগ। এই দাবিতে স্লোগানও দেওয়া হয়।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুম ও আবু বাকের মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর মন্ত্রিসভার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি আজ রোববার থেকে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এর আগে তাঁরা সরকারের কাছে ৯ দফা দাবি জানিয়েছিলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কোটা সংস্কার ও মেধাভিত্তিক সমাজ গঠনের দাবিতে আমরা ছাত্র-তরুণেরা সারা দেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছিলাম। ন্যায্য ও যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের হায়েনারা আমাদের বোনদের নির্মমভাবে পিটিয়েছে। গত ১৯ জুলাই আমাদের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। আমাদের জবরদস্তি করে আন্দোলন প্রত্যাহার ও সরকারের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দেয়। আমাদের হাসপাতালে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সেটিও না পেরে ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে জোর করে আমাদের থেকে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু শেখ হাসিনা নন, পুরো মন্ত্রিপরিষদকে পদত্যাগ করতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, যেখানে কখনোই কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসবে না।’
সরকারের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তাঁরা সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করার ঘোষণা দেন।
সমাবেশে অসহযোগ আন্দোলনের জরুরি নির্দেশনা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। শহীদ মিনার এলাকা ছাড়িয়ে চানখাঁরপুল মোড়, দোয়েল চত্বর, জগন্নাথ হল মোড় হয়ে পলাশী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল টাওয়ার পর্যন্ত মানুষের উপস্থিতি ছিল। সমাবেশে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে,’ ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস,’ ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত,’ ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’—এসব স্লোগান দেন।
আন্দোলনকারীরা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ত্যাগ করে শাহবাগে গিয়ে অবস্থান নেন। কিছু অংশ মিছিল নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় চলে যায়। তবে এই সমাবেশ ও মিছিল চলাকালে পুলিশ কোনো বাধা দেয়নি। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-অবরোধ: গতকালের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এতে মিরপুর রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে চলে যান।
মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে বেলা ১টার পর সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এ সময় পুলিশের অবস্থান ছিল মিরপুর-২-এর দিকে। বেলা সোয়া ১টার দিকে পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের ডেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের কোনো ক্ষতি না করে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে বলেন। বহিরাগত কেউ এসে যেন কোনো সহিংসতা করতে না পারে, সে ব্যাপারে তাঁদের সতর্ক থাকতে বলেন।
মিরপুর-১০-এর আশপাশে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। দুই পক্ষের মধ্যে যেন কোনো সংঘাত না হয়, সে জন্য পুলিশ সতর্ক ছিল। দুই প্লাটুন বিজিবিও সেখানে যায়।
মিরপুর-১২ ডিওএইচএসের ১ নম্বর গেটে একদল অভিভাবক ও শিক্ষার্থী ব্যানার নিয়ে অবস্থান করেন।
দুপুরের দিকে উত্তরা-১১ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ার, ৯ নম্বর সেক্টরের উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ, উত্তরা হাইস্কুলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের সাঙ্গার মোড়ে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে তাঁরা চলে যান।
উত্তরার আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাবিব হাসানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও জড়ো হোন।
ডিএমপির উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মির্জা সালাহউদ্দিন বলেন, উত্তরার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বনশ্রীতে রামপুরা-স্টাফ কোয়ার্টার সড়ক বন্ধ করে দুপুর ১২টা থেকে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বনশ্রী এ-ব্লক থেকে সি-ব্লক পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে গ্রাফিতি আঁকেন তাঁরা। সড়কে লেখা হয়েছে, ‘ঘর ছাড়ুন, রাস্তায় নামুন’, ‘গণহত্যার বিচার চাই’। অনেক গাড়িতেও ‘এক দফা’ লেখা হয়।
দুপুর ১২টার দিকে বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুলসংলগ্ন প্রধান সড়কে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। ওই মিছিলের একটি অংশ যোগ দেয় বাড্ডা-রামপুরা সড়কে ইস্ট ওয়েস্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। সেখানে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হন আশপাশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এ সময় বনশ্রী থেকে রামপুরা ইউলুপ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর সেখানে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ: কয়েক দিন পর গতকাল আবার যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলা হয়, দুপুর ১২টার পর কয়েক শ আন্দোলনকারী রায়েরবাগে অবস্থান নিয়ে শনির আখড়া হয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কুতুবখালীতে মহাসড়ক অবরোধ করেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। পুলিশ, সেনাসদস্যরা অবস্থান নিলেও কোনো সংঘর্ষ হয়নি।
তবে যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। মোড়ের বিভিন্ন পাশে অবস্থান নেন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
কনসার্টের বদলে বিক্ষোভ সমাবেশ: বৃষ্টি উপেক্ষা করে ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে হাজির হন সংগীতশিল্পীরা। আগের ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শিল্পীদের সেখানে কনসার্ট করার কথা ছিল। তবে কনসার্টের বদলে শিল্পীরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে স্লোগান দেন। তাঁরা ফেস্টুন হাতে দাঁড়াতেই শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষও অংশ নেন। এ সময় শিল্পীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। পরে শিল্পীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শহীদ মিনারের উদ্দেশে মিছিল নিয়ে যান।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানায় আর্টসেল, সোলস, দলছুট, শূন্য, মাইলস, মাকসুদ ও ঢাকা, শিরোনামহীন। উপস্থিত ছিলেন শিল্পী পার্থ বড়ুয়া, এলিটা, গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী, শিল্পী আসিফ আকবর, আরমিন মুসা, মিফতাহ জামান, সুজিত মোস্তফা, নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনসহ অনেক সংগীতশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী-নির্মাতা।
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে