ইসরায়েলের চলমান নির্বিচার বোমাবর্ষণ, স্থল অভিযান ও অবরোধের কারণে মাত্র তিন মাসের মধ্যে গাজায় ২১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আরও বহু মানুষ রোগব্যাধিতে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের আক্রমণ এবং ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে হত্যার সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর, বিশেষ করে পশ্চিমা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে মূলত ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের ওপর ইসরায়েলের হামলার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। যেমন প্রায়ই বলা হয়, ইসরায়েলি হামলায় আট হাজারের বেশি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে এবং অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই অনেক শিশুর অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে।
ইসরায়েলের সহযোগী দেশগুলোর সরকারও নিহত ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ‘এই শিশুরা, এই নারীরা, এই বৃদ্ধরা বোমা হামলায় মারা গেছেন। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের কোনো বৈধতা নেই।’ এসব বিবৃতিতে ফিলিস্তিনে নারী ও শিশুদের হত্যার নিন্দা করা হলেও পুরুষদের হত্যার বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি পুরুষদের সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে গণনা না করার মধ্য দিয়ে মানবতা মুছে ফেলা হচ্ছে এবং তাদের সম্মিলিতভাবে ‘ভয়ংকর বাদামি মানুষ’ এবং ‘সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। আদতে এতে করে ফিলিস্তিনি পুরুষদের হত্যার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
তাদের হত্যার অনুমতি দেওয়ার সহজবোধ্য কারণ তারা ফিলিস্তিনি পুরুষ। তাদের লিঙ্গ ও জাতিগত অবস্থান, বিশেষভাবে ‘হামাস সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে তাদের গায়ে লেগে থাকা সর্বজনীন পদবি, তাদের বেসামরিক মর্যাদাকে ঢেকে রাখে। তাদের মৃত্যুকে শোকযোগ্য মনে করা হয় না। ‘সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ’-এর প্রেক্ষাপটে তাদের হত্যা করাকে যুক্তিসংগত বলে মনে করা হয়।
উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, যুক্তরাজ্যে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত টিজিপি হোটোভেলি গত নভেম্বর মাসে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, গাজায় সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের প্রায় অর্ধেক ‘সন্ত্রাসী’। এই সংখ্যার সত্যতা নিশ্চিত করতে গেলে গাজায় নিহত সব পুরুষকে (এমনকি বয়োজ্যেষ্ঠ ছেলেদেরও) ‘সন্ত্রাসী’ অথবা কমপক্ষে ‘সম্ভাব্য সন্ত্রাসী’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
নির্বিচারে পুরুষদের ভয়ংকর রূপে চিত্রিত করা, বিশেষ করে বাদামি রঙের আরব পুরুষদের স্বভাবগতভাবে অবিশ্বাসযোগ্য, বিপজ্জনক ও উগ্রপন্থী বলে দাবি করা—এটা নতুন কিছু নয়। এ ধরনের বর্ণনা বর্তমানে ইসরায়েল এবং এর সহযোগীরা ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে, বছরের পর বছর বাদামি রঙের পুরুষ ও ছেলেদের ব্যাপক হত্যার কারণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে কথিত বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এবং ইরাক ও আফগানিস্তানে অবৈধ হামলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। উপনিবেশবাদ ও গণহত্যার জন্য মানুষের মানবতা ও ইতিহাসকে মুছে ফেলা অপরিহার্য। ইসরায়েলের উপনিবেশবাদী বসতি স্থাপনকারীরা সহিংসতার মাধ্যমে প্রভাবশালী অবস্থান বজায় রাখে এবং ফিলিস্তিনি জাতির অস্তিত্ব অস্বীকার করে। আর ফিলিস্তিনিদের মনুষ্যতর জীব হিসেবে আখ্যায়িত করে এই সহিংসতাকে বৈধতা দেয়।
গত তিন মাসে ইসরায়েল হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, তাদের পঙ্গু করেছে এবং অনাহারে রেখেছে। গাজায় ফিলিস্তিনি পুরুষ ও নারীরা বোমায় বিধ্বস্ত ভবনের নিচ থেকে তাদের প্রিয়জনদের তুলে আনছে এবং খালি হাতে তাদের সন্তানদের কবর দিচ্ছে।
এখনো এর কোনোটিই এই বলে স্বীকৃত হয়নি যে এটি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ। আর এতে ফিলিস্তিনি পুরুষদের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হচ্ছে। তারা যেকোনো জটিলতা থেকে ছিটকে গেছে, যা তাদের মানবতাকে আরও হেয় করছে। ফিলিস্তিনি পুরুষদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাদের সহিংস হত্যাকাণ্ডকে ‘সন্ত্রাসবাদের’ বিরুদ্ধে জয় হিসেবে উদ্যাপন করা হয়।
অবশ্যই, আর সব মানুষের মতো ফিলিস্তিনি পুরুষদেরও অনুভূতি আছে। কিন্তু তাদের ভয়, উদ্বেগ, হতাশা বা লজ্জার বিষয়টি যেকোনো বর্ণনা থেকে ধারাবাহিকভাবে মুছে ফেলা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি পুরুষদের মধ্যে স্বীকৃত একমাত্র আবেগ হলো রাগ বা ক্ষোভ। তবুও এই ক্ষোভকে ঔপনিবেশিক সহিংসতা ও নিপীড়নের সঠিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে স্বীকার করা হয় না; বরং এটিকে একটি ক্রোধ হিসেবে দেখা হয়, যা বর্বর, অযৌক্তিক ও বিপজ্জনক। এই রাগ এমন যা নিয়ন্ত্রণের জন্য চরম পদক্ষেপের প্রয়োজন, যেমন সম্পূর্ণ অবরোধ বা কার্পেট বোমাবর্ষণ।
ফিলিস্তিনি পুরুষদের সম্পর্কে বলা হয়, তাদের সহজাত সহিংসতা ও ভয়ংকর ক্রোধের দুটি প্রধান পরিণতি রয়েছে। প্রথমত, তারা অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে এবং এর বাইরে ফিলিস্তিনি পুরুষ ও ছেলেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। কারণ তারা তাদের পঙ্গুত্ব ও হত্যার অনুমতি দেয়। দ্বিতীয়ত, যেহেতু তারা ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার অর্ধেককে বিপজ্জনক ও অবিশ্বস্ত হিসেবে মনোনীত করতে সহায়তা করে, তারা সহিংসতার অবসানকে অসম্ভব করে তোলে।
ভবিষ্যতে এসব বিষয় সংশোধন করার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা প্রয়োজন: কট্টরবাদকে অছিলা করে ইসরায়েল ও তার মিত্রদের সমষ্টিগত শাস্তির মতো সহিংসতাকে ন্যায্যতা দেওয়ার পন্থাকে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ করতে হবে। এই বদ্ধাবস্থা থেকে মুক্তির জন্য যেকোনো চুক্তিতে অবশ্যই ফিলিস্তিনি পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যখন আরও একটি ‘মানবিক বিরতি’ হবে বা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হবে, তখন বাকি জনসংখ্যার পাশাপাশি বালক ও পুরুষদের চাহিদা মেটাতে সহায়তা দিতে হবে। বেআইনি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর যে সহিংসতা চালিয়েছে তার জন্য তাদের দায়বদ্ধ করা উচিত, যার কারণে ফিলিস্তিনি পুরুষ ও বালকেরা অপ্রত্যাশিতভাবে নিহত হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে, ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, ইসরায়েলি সমাজে সামরিকীকরণের প্রভাব এবং ফিলিস্তিনি সমাজে বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার রূপান্তরজনিত প্রভাবগুলোকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
আজ গাজা ও বাকি দখল করা অঞ্চলের ফিলিস্তিনিরা অগ্রহণযোগ্য ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে বসবাস করছে। গাজায় ইসরায়েলের বর্তমান হামলার পাশাপাশি ফিলিস্তিনে তার কয়েক দশক ধরে চলা দখলদারি এবং বর্ণবাদী শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। ফিলিস্তিনিদের, পুরুষ, নারী ও শিশুকে অবশ্যই তারা যা হারিয়েছে তা নিয়ে শোক করার, তাদের ক্ষত নিরাময় করার এবং নিজেদের জন্য একটি ভবিষ্যৎ গড়ার জায়গা দিতে হবে। এটি সম্ভব করার জন্য, প্রথমে সব ফিলিস্তিনির মানবাধিকারকে মেনে নিতে হবে। ফিলিস্তিনি পুরুষ ও বালকদের জীবন ও মৃত্যুকে প্রকৃত অর্থে স্বীকৃতি দিতে হবে।
ইউসেফ আল হেলু, ব্রিটিশ ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পিএইচডি গবেষক
মিনা মাসুদ, গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন
লিয়াহ ডি হান, গবেষক, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকা কর্মসূচি, ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডাম
(আল-জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত এবং ঈষৎ সংক্ষেপিত)
ইসরায়েলের চলমান নির্বিচার বোমাবর্ষণ, স্থল অভিযান ও অবরোধের কারণে মাত্র তিন মাসের মধ্যে গাজায় ২১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আরও বহু মানুষ রোগব্যাধিতে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের আক্রমণ এবং ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে হত্যার সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর, বিশেষ করে পশ্চিমা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে মূলত ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের ওপর ইসরায়েলের হামলার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। যেমন প্রায়ই বলা হয়, ইসরায়েলি হামলায় আট হাজারের বেশি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে এবং অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই অনেক শিশুর অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে।
ইসরায়েলের সহযোগী দেশগুলোর সরকারও নিহত ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ‘এই শিশুরা, এই নারীরা, এই বৃদ্ধরা বোমা হামলায় মারা গেছেন। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের কোনো বৈধতা নেই।’ এসব বিবৃতিতে ফিলিস্তিনে নারী ও শিশুদের হত্যার নিন্দা করা হলেও পুরুষদের হত্যার বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি পুরুষদের সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে গণনা না করার মধ্য দিয়ে মানবতা মুছে ফেলা হচ্ছে এবং তাদের সম্মিলিতভাবে ‘ভয়ংকর বাদামি মানুষ’ এবং ‘সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। আদতে এতে করে ফিলিস্তিনি পুরুষদের হত্যার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
তাদের হত্যার অনুমতি দেওয়ার সহজবোধ্য কারণ তারা ফিলিস্তিনি পুরুষ। তাদের লিঙ্গ ও জাতিগত অবস্থান, বিশেষভাবে ‘হামাস সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে তাদের গায়ে লেগে থাকা সর্বজনীন পদবি, তাদের বেসামরিক মর্যাদাকে ঢেকে রাখে। তাদের মৃত্যুকে শোকযোগ্য মনে করা হয় না। ‘সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ’-এর প্রেক্ষাপটে তাদের হত্যা করাকে যুক্তিসংগত বলে মনে করা হয়।
উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, যুক্তরাজ্যে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত টিজিপি হোটোভেলি গত নভেম্বর মাসে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, গাজায় সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের প্রায় অর্ধেক ‘সন্ত্রাসী’। এই সংখ্যার সত্যতা নিশ্চিত করতে গেলে গাজায় নিহত সব পুরুষকে (এমনকি বয়োজ্যেষ্ঠ ছেলেদেরও) ‘সন্ত্রাসী’ অথবা কমপক্ষে ‘সম্ভাব্য সন্ত্রাসী’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
নির্বিচারে পুরুষদের ভয়ংকর রূপে চিত্রিত করা, বিশেষ করে বাদামি রঙের আরব পুরুষদের স্বভাবগতভাবে অবিশ্বাসযোগ্য, বিপজ্জনক ও উগ্রপন্থী বলে দাবি করা—এটা নতুন কিছু নয়। এ ধরনের বর্ণনা বর্তমানে ইসরায়েল এবং এর সহযোগীরা ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে, বছরের পর বছর বাদামি রঙের পুরুষ ও ছেলেদের ব্যাপক হত্যার কারণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে কথিত বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এবং ইরাক ও আফগানিস্তানে অবৈধ হামলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। উপনিবেশবাদ ও গণহত্যার জন্য মানুষের মানবতা ও ইতিহাসকে মুছে ফেলা অপরিহার্য। ইসরায়েলের উপনিবেশবাদী বসতি স্থাপনকারীরা সহিংসতার মাধ্যমে প্রভাবশালী অবস্থান বজায় রাখে এবং ফিলিস্তিনি জাতির অস্তিত্ব অস্বীকার করে। আর ফিলিস্তিনিদের মনুষ্যতর জীব হিসেবে আখ্যায়িত করে এই সহিংসতাকে বৈধতা দেয়।
গত তিন মাসে ইসরায়েল হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, তাদের পঙ্গু করেছে এবং অনাহারে রেখেছে। গাজায় ফিলিস্তিনি পুরুষ ও নারীরা বোমায় বিধ্বস্ত ভবনের নিচ থেকে তাদের প্রিয়জনদের তুলে আনছে এবং খালি হাতে তাদের সন্তানদের কবর দিচ্ছে।
এখনো এর কোনোটিই এই বলে স্বীকৃত হয়নি যে এটি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ। আর এতে ফিলিস্তিনি পুরুষদের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হচ্ছে। তারা যেকোনো জটিলতা থেকে ছিটকে গেছে, যা তাদের মানবতাকে আরও হেয় করছে। ফিলিস্তিনি পুরুষদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাদের সহিংস হত্যাকাণ্ডকে ‘সন্ত্রাসবাদের’ বিরুদ্ধে জয় হিসেবে উদ্যাপন করা হয়।
অবশ্যই, আর সব মানুষের মতো ফিলিস্তিনি পুরুষদেরও অনুভূতি আছে। কিন্তু তাদের ভয়, উদ্বেগ, হতাশা বা লজ্জার বিষয়টি যেকোনো বর্ণনা থেকে ধারাবাহিকভাবে মুছে ফেলা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি পুরুষদের মধ্যে স্বীকৃত একমাত্র আবেগ হলো রাগ বা ক্ষোভ। তবুও এই ক্ষোভকে ঔপনিবেশিক সহিংসতা ও নিপীড়নের সঠিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে স্বীকার করা হয় না; বরং এটিকে একটি ক্রোধ হিসেবে দেখা হয়, যা বর্বর, অযৌক্তিক ও বিপজ্জনক। এই রাগ এমন যা নিয়ন্ত্রণের জন্য চরম পদক্ষেপের প্রয়োজন, যেমন সম্পূর্ণ অবরোধ বা কার্পেট বোমাবর্ষণ।
ফিলিস্তিনি পুরুষদের সম্পর্কে বলা হয়, তাদের সহজাত সহিংসতা ও ভয়ংকর ক্রোধের দুটি প্রধান পরিণতি রয়েছে। প্রথমত, তারা অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে এবং এর বাইরে ফিলিস্তিনি পুরুষ ও ছেলেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। কারণ তারা তাদের পঙ্গুত্ব ও হত্যার অনুমতি দেয়। দ্বিতীয়ত, যেহেতু তারা ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার অর্ধেককে বিপজ্জনক ও অবিশ্বস্ত হিসেবে মনোনীত করতে সহায়তা করে, তারা সহিংসতার অবসানকে অসম্ভব করে তোলে।
ভবিষ্যতে এসব বিষয় সংশোধন করার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা প্রয়োজন: কট্টরবাদকে অছিলা করে ইসরায়েল ও তার মিত্রদের সমষ্টিগত শাস্তির মতো সহিংসতাকে ন্যায্যতা দেওয়ার পন্থাকে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ করতে হবে। এই বদ্ধাবস্থা থেকে মুক্তির জন্য যেকোনো চুক্তিতে অবশ্যই ফিলিস্তিনি পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যখন আরও একটি ‘মানবিক বিরতি’ হবে বা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হবে, তখন বাকি জনসংখ্যার পাশাপাশি বালক ও পুরুষদের চাহিদা মেটাতে সহায়তা দিতে হবে। বেআইনি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর যে সহিংসতা চালিয়েছে তার জন্য তাদের দায়বদ্ধ করা উচিত, যার কারণে ফিলিস্তিনি পুরুষ ও বালকেরা অপ্রত্যাশিতভাবে নিহত হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে, ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, ইসরায়েলি সমাজে সামরিকীকরণের প্রভাব এবং ফিলিস্তিনি সমাজে বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার রূপান্তরজনিত প্রভাবগুলোকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
আজ গাজা ও বাকি দখল করা অঞ্চলের ফিলিস্তিনিরা অগ্রহণযোগ্য ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে বসবাস করছে। গাজায় ইসরায়েলের বর্তমান হামলার পাশাপাশি ফিলিস্তিনে তার কয়েক দশক ধরে চলা দখলদারি এবং বর্ণবাদী শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। ফিলিস্তিনিদের, পুরুষ, নারী ও শিশুকে অবশ্যই তারা যা হারিয়েছে তা নিয়ে শোক করার, তাদের ক্ষত নিরাময় করার এবং নিজেদের জন্য একটি ভবিষ্যৎ গড়ার জায়গা দিতে হবে। এটি সম্ভব করার জন্য, প্রথমে সব ফিলিস্তিনির মানবাধিকারকে মেনে নিতে হবে। ফিলিস্তিনি পুরুষ ও বালকদের জীবন ও মৃত্যুকে প্রকৃত অর্থে স্বীকৃতি দিতে হবে।
ইউসেফ আল হেলু, ব্রিটিশ ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পিএইচডি গবেষক
মিনা মাসুদ, গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন
লিয়াহ ডি হান, গবেষক, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকা কর্মসূচি, ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডাম
(আল-জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত এবং ঈষৎ সংক্ষেপিত)
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে