মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ‘অগণতান্ত্রিক’, ‘ফ্যাসিস্ট’ ও ‘দানব’ সরকার হিসেবে সব সময় আখ্যায়িত করে আসছে। সম্প্রতি এসব দল ঈদের পর সরকারকে পদচ্যুত করার লক্ষ্যে আন্দোলন সংগঠিত করার বিভিন্ন ছক কষছে বলে তাদের নেতাদের বক্তৃতা ও সাক্ষাৎকার থেকে জানা যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপি এবং অন্যান্য দলকে কীভাবে সংগঠিত করতে হবে, আন্দোলন-সংগ্রাম, নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের ধারণাও দিয়েছেন বলে নেতাদের বক্তব্য থেকে জানা যাচ্ছে। তারেক রহমান আন্দোলনরত দলগুলোকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠনেরও পরিকল্পনা করছেন বলে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে বিএনপি তৃণমূল থেকে দলকে সংগঠিত করতে দলের সম্মেলন, নতুন নেতৃত্ব গঠনের দিকে মনোনিবেশ করেছে। আগামী জুনের মধ্যে সম্মেলন শেষে শক্তিশালী ‘বৃহত্তর দল’ গঠিত হবে বলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি পত্রিকাকে জানিয়েছেন। বিএনপি এখন সংগঠন গোছাতে ব্যস্ত। তাদের দৌড়ঝাঁপ এবং ব্যস্ততা দেখে এটি বোঝা যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন বিএনপি অনেকটা ঝিমিয়ে চলছিল। ২০০৭ সালের বিএনপি-জামায়াত জোটের পরিকল্পিত নির্বাচন ব্যর্থ হওয়ার পর এক-এগারোর সরকারের সময় থেকে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য এবং দ্বিধাদ্বন্দ্ব ক্রিয়াশীল ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলটির শোচনীয় পরাজয়ে সর্বস্তরে হতাশার সৃষ্টি হয়। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে নানা ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল বিএনপি। ২০০৯-১৩ সাল পর্যন্ত ‘আরব বসন্তের’ প্রভাবে কয়েকবার শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তারা কয়েকটি ‘অভ্যুত্থানের’ গোপন পরিকল্পনা নিয়েছিল। সবচেয়ে বড় পরিকল্পনাটি ছিল হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করে ২০১৩ সালের ৫ মে রাতে সরকার উৎখাতের নীলনকশা বাস্তবায়ন করা। কিন্তু সরকার সেটি ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়।
তারপর বিএনপির নেতা-কর্মীদের নতুন করে ভরসা দিয়ে ‘আশান্বিত’ করে তুলেছিল জামায়াত। সে কারণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি দেশে ২০১৩ সালের শেষে ভয়ানক এক অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, নির্বাচন প্রতিরোধ ইত্যাদিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। জামায়াত-বিএনপির ধারণা ছিল, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ব্যর্থ করে দেওয়া গেলে ৬ তারিখ থেকে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। ক্ষমতার পালাবদল ঘটবে, দেশে বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পনা মোতাবেক সরকার গঠিত হবে। সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে যান। কিন্তু ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে জামায়াত-বিএনপি আবার সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা নিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য হরতালের কর্মসূচি দিয়ে বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ, থানা-পুলিশ আক্রমণসহ বিভিন্ন নাশকতা চালাতে থাকে। একই সঙ্গে গোপন স্থান থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সরকার উৎখাতের নানা ঘোষণাও চালায় তারা। সরকার কঠোরভাবে বিএনপি-জামায়াতের দু-দুইবারের আন্দোলন দমন করার পর তাদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। এমনকি জামায়াতও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে না পেরে অনেকটাই আড়ালে চলে যায়। জামায়াতের ভরসা ছিল ছাত্রশিবিরের ক্যাডার বাহিনী। সেটি ছাত্রশিবিরের নেতাদের বক্তৃতা এবং ঝটিকা মিছিলের স্লোগান থেকে প্রায়ই উচ্চারিত হতো। বিএনপি এই শক্তির ওপর আস্থা রেখেছিল। কিন্তু সরকার উৎখাতের সব মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর ছাত্রশিবিরও পর্দার আড়ালে চলে যায়। রাজনীতিতে জামায়াত-বিএনপির এই সংকট বাহ্যিকভাবে এখনো কাটেনি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সামনে রেখে নির্বাচনে বাজিমাত করতে চেয়েছিল বিএনপি-জামায়াত। কিন্তু সেটিও বুমেরাং হওয়ায় কিছুটা বিরতি দিয়ে বা ‘দম’ নিয়ে বিএনপি এখন নতুন কৌশলে এগোতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে। দুটি কারণে দৃশ্যত জামায়াতের সঙ্গে তারা কোনো সম্পর্ক দেখাচ্ছে না। একটি গণতান্ত্রিক ও বাম সংগঠনগুলোর কাছে বিএনপি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দল বলে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরতে চায়। অন্যটি জামায়াত থেকে বিএনপি দূরে আছে, এমন ধারণা দিয়ে বিদেশিদের সমর্থন আদায় করা। রাজনৈতিক দর্শনগত কারণেই সম্ভবত জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার নয়। বিএনপি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের কথা বললেও এসবের কোনোটিই তাদের হাতে নিরাপদ নয়, তা দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রমাণ করে আসছে। বিএনপি একটি ডানপন্থী দল। আর জামায়াত চরম ডানপন্থী দল। তবে জামায়াত অর্থবিত্ত, ক্যাডার, দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং রাজনৈতিক কঠোর শৃঙ্খলায় গোপনীয়তা বজায় রেখে চলায় অভ্যস্ত। বিএনপি আদর্শগতভাবেই এই সংগঠনের কাছাকাছি অবস্থান করছে। সুতরাং, ঈদের পর যে ‘ছক’ কষেই বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করতে চাক না কেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের ‘মৈত্রী বন্ধন’ অটুট থাকবে, সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি যে ‘বৃহত্তর’ রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার পরিকল্পনা করছে, তাতে সংখ্যার বিবেচনায় যত দল শরিক হোক না কেন, শক্তির বিবেচনায় তাতে মৌলিক কোনো হেরফের ঘটবে বলে মনে হয় না। কারণ, যারা বিএনপির সঙ্গে সখ্য গড়বে, তাদের জনভিত্তি নেই বললেই চলে। সেগুলো বেশির ভাগই নেতাসর্বস্ব দল। এদের বেশির ভাগই অতীতে হয় জাসদ, নতুবা বাসদ অথবা আওয়ামী লীগ, বিএনপি করে এখন নতুন চাদর গায়ে জড়িয়েছে।
সিপিবি-বাসদের মতো বাম ঘরানার দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য গড়তে চাইছে বিএনপি। ঐক্য না হলেও অন্তত ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনে তাদের সম্পৃক্ত করতে তৎপরতা চালানোর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যুগপৎ আন্দোলন কিছুটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। সেই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, সিপিবি এবং বামপন্থীদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। জামায়াত-বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিলেও তাদের শক্তি এবং অবস্থান ছিল অনেক দূরে। আওয়ামী লীগ ও বামপন্থীদের ধারণা ছিল, এরশাদ হটাও আন্দোলন সফল হলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র স্থায়ী হয়ে যাবে, সেই স্থায়িত্বের দায়িত্ব তাদের কাঁধেই ন্যস্ত হবে। কিন্তু এসব আশাবাদ এবং ধারণার পেছনে তাদের কোনো সমাজ ও রাজনৈতিক গবেষণা ছিল না। পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক সরকার, তাদের গঠিত রাজনৈতিক দল, মিত্রদল ও গোষ্ঠীগুলো যখন সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, জনমানস এবং তরুণদের একটি অংশকে আওয়ামী-বাম-ভারত-সমাজতন্ত্র-অসাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ধারায় যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল, তখন তাদের নিয়ে একই চরিত্রের দ্বিতীয় সামরিক সরকারকে হটাও আন্দোলন শেষ বিচারে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তিকে কতটা নিরাশ এবং রাজনৈতিক সংকটে ফেলতে পারে, তা নব্বই-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে ঘটে গেছে। সূক্ষ্ম এই সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রবণতাকে ধরতে ও বুঝতে না পারার খেসারত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী শক্তিগুলোকে এখনো দিতে হচ্ছে। বাম রাজনৈতিক দলগুলো হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে অতি বামে চলে গেছে। তাদেরও অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্তির পথে। আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদিকে ধারণ করলেও অনেক ক্ষেত্রে মধ্য ডানের অপশক্তিকে পেটে পুরে নিয়েছে। এটি একটি বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা।
সুতরাং, কাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে কারা শরিক হচ্ছে, কী উদ্দেশ্যে শরিক হচ্ছে, এটি নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে গবেষণা না করে যদি কোনো বামধারার রাজনৈতিক দল মঞ্চ তৈরি করে, তাহলে সেই মঞ্চের পরিণতি কী হবে, তা-ও ভেবে দেখতে হবে। মাহমুদুর রহমান মান্না জাসদ, বাসদ, আওয়ামী লীগ হয়ে এখন নাগরিকবিহীন নাগরিক ঐক্য নামে একটি দল গঠন করে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গেই আছেন এবং আমাদের গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন! জোনায়েদ সাকিসহ আরও কিছু তরুণ বিপ্লবী এ রকম মঞ্চ তৈরিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ৫০-৬০ বছরে বাংলাদেশ কম বিপ্লবী দেখেনি। অভিজ্ঞতা বলছে, ‘বিপ্লবীরা’ যখন পথ হারায় তখন তাদের ঠিকানা অতিবিপ্লবী থেকে অতি ডান শক্তির কাছেই সমর্পিত হয়। কিন্তু তারা যে ক্ষতিটা রাজনীতি ও দেশে করে, তা আর কোনো দিন মেরামত করা যায় না। মির্জা ফখরুল এখন যেসব কথা বলছেন, তা বিপ্লবীদের মুখেরই ভাষা। কিন্তু তিনি যে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সে দলটির আদর্শ, শ্রেণিচরিত্র এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য মোটেও কল্পকাহিনি রচনা করে বলার নয়। অন্তত ২০০১-০৬ এবং ২০১১-১৫ সালের অভিজ্ঞতার কথা মানুষের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। যে ছকেই আন্দোলন হোক, সরকার পতন হোক কিংবা জাতীয় সরকার হোক, সেটি বাংলাদেশকে কোনোভাবেই গণতন্ত্র তো দেবেই না, বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকার ও সংস্থান জনগণকে দিতে পারবে না। উগ্র ডানপন্থার হাতে গণতন্ত্র, জনগণ, স্বাধীনতা কোনো দেশেই নিরাপদ হয়নি, হবেও না।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ‘অগণতান্ত্রিক’, ‘ফ্যাসিস্ট’ ও ‘দানব’ সরকার হিসেবে সব সময় আখ্যায়িত করে আসছে। সম্প্রতি এসব দল ঈদের পর সরকারকে পদচ্যুত করার লক্ষ্যে আন্দোলন সংগঠিত করার বিভিন্ন ছক কষছে বলে তাদের নেতাদের বক্তৃতা ও সাক্ষাৎকার থেকে জানা যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপি এবং অন্যান্য দলকে কীভাবে সংগঠিত করতে হবে, আন্দোলন-সংগ্রাম, নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের ধারণাও দিয়েছেন বলে নেতাদের বক্তব্য থেকে জানা যাচ্ছে। তারেক রহমান আন্দোলনরত দলগুলোকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠনেরও পরিকল্পনা করছেন বলে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে বিএনপি তৃণমূল থেকে দলকে সংগঠিত করতে দলের সম্মেলন, নতুন নেতৃত্ব গঠনের দিকে মনোনিবেশ করেছে। আগামী জুনের মধ্যে সম্মেলন শেষে শক্তিশালী ‘বৃহত্তর দল’ গঠিত হবে বলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি পত্রিকাকে জানিয়েছেন। বিএনপি এখন সংগঠন গোছাতে ব্যস্ত। তাদের দৌড়ঝাঁপ এবং ব্যস্ততা দেখে এটি বোঝা যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন বিএনপি অনেকটা ঝিমিয়ে চলছিল। ২০০৭ সালের বিএনপি-জামায়াত জোটের পরিকল্পিত নির্বাচন ব্যর্থ হওয়ার পর এক-এগারোর সরকারের সময় থেকে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য এবং দ্বিধাদ্বন্দ্ব ক্রিয়াশীল ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলটির শোচনীয় পরাজয়ে সর্বস্তরে হতাশার সৃষ্টি হয়। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে নানা ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল বিএনপি। ২০০৯-১৩ সাল পর্যন্ত ‘আরব বসন্তের’ প্রভাবে কয়েকবার শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তারা কয়েকটি ‘অভ্যুত্থানের’ গোপন পরিকল্পনা নিয়েছিল। সবচেয়ে বড় পরিকল্পনাটি ছিল হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করে ২০১৩ সালের ৫ মে রাতে সরকার উৎখাতের নীলনকশা বাস্তবায়ন করা। কিন্তু সরকার সেটি ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়।
তারপর বিএনপির নেতা-কর্মীদের নতুন করে ভরসা দিয়ে ‘আশান্বিত’ করে তুলেছিল জামায়াত। সে কারণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি দেশে ২০১৩ সালের শেষে ভয়ানক এক অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, নির্বাচন প্রতিরোধ ইত্যাদিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। জামায়াত-বিএনপির ধারণা ছিল, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ব্যর্থ করে দেওয়া গেলে ৬ তারিখ থেকে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। ক্ষমতার পালাবদল ঘটবে, দেশে বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পনা মোতাবেক সরকার গঠিত হবে। সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে যান। কিন্তু ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে জামায়াত-বিএনপি আবার সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা নিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য হরতালের কর্মসূচি দিয়ে বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ, থানা-পুলিশ আক্রমণসহ বিভিন্ন নাশকতা চালাতে থাকে। একই সঙ্গে গোপন স্থান থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সরকার উৎখাতের নানা ঘোষণাও চালায় তারা। সরকার কঠোরভাবে বিএনপি-জামায়াতের দু-দুইবারের আন্দোলন দমন করার পর তাদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। এমনকি জামায়াতও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে না পেরে অনেকটাই আড়ালে চলে যায়। জামায়াতের ভরসা ছিল ছাত্রশিবিরের ক্যাডার বাহিনী। সেটি ছাত্রশিবিরের নেতাদের বক্তৃতা এবং ঝটিকা মিছিলের স্লোগান থেকে প্রায়ই উচ্চারিত হতো। বিএনপি এই শক্তির ওপর আস্থা রেখেছিল। কিন্তু সরকার উৎখাতের সব মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর ছাত্রশিবিরও পর্দার আড়ালে চলে যায়। রাজনীতিতে জামায়াত-বিএনপির এই সংকট বাহ্যিকভাবে এখনো কাটেনি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সামনে রেখে নির্বাচনে বাজিমাত করতে চেয়েছিল বিএনপি-জামায়াত। কিন্তু সেটিও বুমেরাং হওয়ায় কিছুটা বিরতি দিয়ে বা ‘দম’ নিয়ে বিএনপি এখন নতুন কৌশলে এগোতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে। দুটি কারণে দৃশ্যত জামায়াতের সঙ্গে তারা কোনো সম্পর্ক দেখাচ্ছে না। একটি গণতান্ত্রিক ও বাম সংগঠনগুলোর কাছে বিএনপি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দল বলে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরতে চায়। অন্যটি জামায়াত থেকে বিএনপি দূরে আছে, এমন ধারণা দিয়ে বিদেশিদের সমর্থন আদায় করা। রাজনৈতিক দর্শনগত কারণেই সম্ভবত জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার নয়। বিএনপি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের কথা বললেও এসবের কোনোটিই তাদের হাতে নিরাপদ নয়, তা দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রমাণ করে আসছে। বিএনপি একটি ডানপন্থী দল। আর জামায়াত চরম ডানপন্থী দল। তবে জামায়াত অর্থবিত্ত, ক্যাডার, দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং রাজনৈতিক কঠোর শৃঙ্খলায় গোপনীয়তা বজায় রেখে চলায় অভ্যস্ত। বিএনপি আদর্শগতভাবেই এই সংগঠনের কাছাকাছি অবস্থান করছে। সুতরাং, ঈদের পর যে ‘ছক’ কষেই বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করতে চাক না কেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের ‘মৈত্রী বন্ধন’ অটুট থাকবে, সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি যে ‘বৃহত্তর’ রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার পরিকল্পনা করছে, তাতে সংখ্যার বিবেচনায় যত দল শরিক হোক না কেন, শক্তির বিবেচনায় তাতে মৌলিক কোনো হেরফের ঘটবে বলে মনে হয় না। কারণ, যারা বিএনপির সঙ্গে সখ্য গড়বে, তাদের জনভিত্তি নেই বললেই চলে। সেগুলো বেশির ভাগই নেতাসর্বস্ব দল। এদের বেশির ভাগই অতীতে হয় জাসদ, নতুবা বাসদ অথবা আওয়ামী লীগ, বিএনপি করে এখন নতুন চাদর গায়ে জড়িয়েছে।
সিপিবি-বাসদের মতো বাম ঘরানার দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য গড়তে চাইছে বিএনপি। ঐক্য না হলেও অন্তত ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনে তাদের সম্পৃক্ত করতে তৎপরতা চালানোর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যুগপৎ আন্দোলন কিছুটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। সেই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, সিপিবি এবং বামপন্থীদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। জামায়াত-বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিলেও তাদের শক্তি এবং অবস্থান ছিল অনেক দূরে। আওয়ামী লীগ ও বামপন্থীদের ধারণা ছিল, এরশাদ হটাও আন্দোলন সফল হলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র স্থায়ী হয়ে যাবে, সেই স্থায়িত্বের দায়িত্ব তাদের কাঁধেই ন্যস্ত হবে। কিন্তু এসব আশাবাদ এবং ধারণার পেছনে তাদের কোনো সমাজ ও রাজনৈতিক গবেষণা ছিল না। পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক সরকার, তাদের গঠিত রাজনৈতিক দল, মিত্রদল ও গোষ্ঠীগুলো যখন সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, জনমানস এবং তরুণদের একটি অংশকে আওয়ামী-বাম-ভারত-সমাজতন্ত্র-অসাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ধারায় যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল, তখন তাদের নিয়ে একই চরিত্রের দ্বিতীয় সামরিক সরকারকে হটাও আন্দোলন শেষ বিচারে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তিকে কতটা নিরাশ এবং রাজনৈতিক সংকটে ফেলতে পারে, তা নব্বই-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে ঘটে গেছে। সূক্ষ্ম এই সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রবণতাকে ধরতে ও বুঝতে না পারার খেসারত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী শক্তিগুলোকে এখনো দিতে হচ্ছে। বাম রাজনৈতিক দলগুলো হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে অতি বামে চলে গেছে। তাদেরও অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্তির পথে। আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদিকে ধারণ করলেও অনেক ক্ষেত্রে মধ্য ডানের অপশক্তিকে পেটে পুরে নিয়েছে। এটি একটি বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা।
সুতরাং, কাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে কারা শরিক হচ্ছে, কী উদ্দেশ্যে শরিক হচ্ছে, এটি নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে গবেষণা না করে যদি কোনো বামধারার রাজনৈতিক দল মঞ্চ তৈরি করে, তাহলে সেই মঞ্চের পরিণতি কী হবে, তা-ও ভেবে দেখতে হবে। মাহমুদুর রহমান মান্না জাসদ, বাসদ, আওয়ামী লীগ হয়ে এখন নাগরিকবিহীন নাগরিক ঐক্য নামে একটি দল গঠন করে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গেই আছেন এবং আমাদের গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন! জোনায়েদ সাকিসহ আরও কিছু তরুণ বিপ্লবী এ রকম মঞ্চ তৈরিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ৫০-৬০ বছরে বাংলাদেশ কম বিপ্লবী দেখেনি। অভিজ্ঞতা বলছে, ‘বিপ্লবীরা’ যখন পথ হারায় তখন তাদের ঠিকানা অতিবিপ্লবী থেকে অতি ডান শক্তির কাছেই সমর্পিত হয়। কিন্তু তারা যে ক্ষতিটা রাজনীতি ও দেশে করে, তা আর কোনো দিন মেরামত করা যায় না। মির্জা ফখরুল এখন যেসব কথা বলছেন, তা বিপ্লবীদের মুখেরই ভাষা। কিন্তু তিনি যে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সে দলটির আদর্শ, শ্রেণিচরিত্র এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য মোটেও কল্পকাহিনি রচনা করে বলার নয়। অন্তত ২০০১-০৬ এবং ২০১১-১৫ সালের অভিজ্ঞতার কথা মানুষের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। যে ছকেই আন্দোলন হোক, সরকার পতন হোক কিংবা জাতীয় সরকার হোক, সেটি বাংলাদেশকে কোনোভাবেই গণতন্ত্র তো দেবেই না, বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকার ও সংস্থান জনগণকে দিতে পারবে না। উগ্র ডানপন্থার হাতে গণতন্ত্র, জনগণ, স্বাধীনতা কোনো দেশেই নিরাপদ হয়নি, হবেও না।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৩ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৭ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৭ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৭ দিন আগে