Ajker Patrika

ত্রাণের জন্য হাহাকার

জগন্নাথপুর ও তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)
আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ১৫: ২১
ত্রাণের জন্য হাহাকার

সুনামগঞ্জে বানভাসি মানুষেরা বাঁচার জন্য লড়াই করছেন। এখনো সারা দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন এ জেলা। পানিবন্দী এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট। কেউ আধাপেট খেয়ে আছেন, কেউবা না খেয়ে। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। পাওয়া যাচ্ছে না মোবাইলের নেটওয়ার্ক। তবে এ জেলার বিভিন্ন উপজেলার সড়ক ও বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে থাকলেও শহর থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।

অনেকে আবার আশ্রয়কেন্দ্র গিয়েও ঠাঁই পাচ্ছেন না। প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণসামগ্রী অপ্রতুল। চলছে ত্রাণের জন্য আহাজারি। এদিকে স্থানীয়রা বলছেন দ্রুত খাদ্যসংকটের সমাধান করা না গেলে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

জগন্নাথপুর: বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চারদিকে শুধু অথই পানি। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের অভাব। বাসাবাড়িতে পানি ওঠায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গিয়েও মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলছে না। বিচ্ছিন্ন রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে জগন্নাথপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলে নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।

সিলেটের বিভাগীয় শহরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান সড়ক জগন্নাথপুর-সিলেট সড়ক, জেলার সঙ্গে জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ সড়কসহ জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াতের সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে জগন্নাথপুর পৌরশহরের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র, জগন্নাথপুর বাজার, উপজেলা পরিষদ, ভূমি অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবাকেন্দ্রগুলো। এ ছাড়া বন্যার পানিতে গ্রামীণ রাস্তাঘাট নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী রয়েছেন প্রায় ৪ লাখ মানুষ।

সরেজমিন কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে দেখা গেছে, কেন্দ্রগুলোতে পানিবন্দী মানুষের ঠাঁই মিলছে না। শিশু ও বৃদ্ধদের দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। রয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট। চলছে ত্রাণের জন্য আহাজারি।

আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া লোকজন জানান, প্রতিটি গ্রামের বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। অনেকের বাড়িঘরে গলা সমান পানি উঠেছে।

রানীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া ছেরাগ আলী বলেন, ‘শুক্রবার ভোর থেকে বসতঘরে পানি প্রবেশ করে। গলাসমান পানি ঘরে থাকায় পরিবারের লোকজন নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র এসেছি। গত দুই দিন এখানে কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি। ত্রাণের জন্য মানুষের মধ্যে আহাজারি চলছে।’

নলুয়া হাওরবেষ্টিত চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, গোটা ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। গোলার ধান, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাওরপারের মানুষজন।

জগন্নাথপুর উপজেলা আবাসিক (বিদ্যুৎ) প্রকৌশলী আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় বরইকান্দি বিদ্যুতের সাবস্টেশন পানিতে তলিয়ে রয়েছে। তাই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা হয়েছে। ওই সাবস্টেশন থেকে জগন্নাথপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বিদ্যুৎ সচল রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলাম বলেন, পানিবন্দী মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে আমরা তৎপর রয়েছি।

তাহিরপুর: সুরমা, জাদুকাটা, বৌলাই ও পাঠলাই নদ-নদীর পানি অনেকটা কমে গেছে। তবে পানি কমলেও জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। হাওর পাড়ের বেশির ভাগ বাড়ি থেকে এখনো নামেনি বানের পানি।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন ও উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু বাড়ি বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে। এখনো পানিতে বন্দী রয়েছে হাজার হাজার পরিবার। বন্যার পানি কালো রং ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া বন্যার পানিতে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ভেসে এসে ঘর ও আশপাশে জড়ো হয়েছে। জমে থাকা পানিতে জন্ম নিয়েছে মশাসহ নানা কীটপতঙ্গ।

টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের ছিলানি তাহিরপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত তিন দিন আমাদের গ্রামের মানুষ গৃহবন্দী হয়ে আছেন। অনেকেই না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারের নিকট ত্রাণসহায়তা দেওয়ার দাবি জানাই আমরা হাওরবাসী।’

তাহিরপুর সদর বাজারের ব্যবসায়ী লিটন রায় জানান, গত সপ্তাহ থেকে বাজারে পানি প্রবেশ করায় সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। অনেক ব্যবসায়ীর মালামাল পানিতে নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মির্জা রিয়াদ হাসান বলেন, ‘বন্যার কারণে পানিবাহিত রোগী বেড়েছে। এ পর্যন্ত শতাধিক লোক ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি কয়েকজন জন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের মেডিকেল টিম ইউনিয়ন পর্যায় থেকে বিভিন্ন গ্রামে কাজ করছে। যাতে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে না পড়ে। তবে বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।’

বালিজুরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন বলেন, ‘ব্যক্তি উদ্যোগে গত দুদিন এই ইউনিয়নের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার পৌঁছে দিচ্ছি।’

তাহিরপুরের ইউএনও মো. রায়হান কবির বলেন, ত্রাণসামগ্রী বন্যার্তদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজনের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শিগগিরই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে উপজেলাবাসী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত