সরকারকে ধান দিতে অনীহা

মীর মো. মহিব্বুল্লাহ, পটুয়াখালী
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৩০
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ৫০

উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে আমন ধানের আবাদ বেশি হয়। এবার ধানের ফলন ভালো হওয়ায় এবং মাঠপর্যায়ে দাম ভালো থাকায় বাড়িতে বসেই কৃষকেরা ধান বিক্রি করছেন। তবে সরকারিভাবে আমন ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চললেও কৃষক পর্যায়ে তেমন সাড়া নেই। ফলে এ বছর সরকারের আমন ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে ধানের মূল্যবৃদ্ধি এবং মোবাইল অ্যাপসের পরিবর্তে সরাসরি ধান ক্রয় করলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, সারা দেশে গত ৭ নভেম্বর থেকে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে খাদ্য অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় পটুয়াখালী জেলায় ৮ হাজার ৪৬১ মেট্রিক টন ধান এবং ৬ হাজার ৩০৭ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এ অভিযান শুরু হয়। এবার সরকার ২৭ টাকা কেজি দরে ধান এবং ৪০ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ করছে। তবে ধান সরবরাহের বিষয়ে কৃষকের তেমন আগ্রহ নেই। গোডাউনে ধান দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন কৃষকেরা। ফলে এ পর্যন্ত এক হাজার মেট্রিক টনেরও কম ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। আর এই সংগ্রহ অভিযান শেষ হচ্ছে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি।
পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি আমন ধান মণপ্রতি ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকা, তেইশ ধান ৯৮০ থেকে এক হাজার ও গুটি স্বর্ণা এক হাজার ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে কৃষকেরা বলছেন, বাজারের দাম ও সরকারের দাম কাছাকাছি। তার ওপর ধান ভালোভাবে শুকিয়ে, ধানের চিটা ও আগাছা পরিষ্কার করে গুদামে পৌঁছে দিতে হয়। যে কারণে অতিরিক্ত শ্রমের পাশাপাশি পরিবহন খরচও লাগে। সব মিলিয়ে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে হয়রানির শিকার হতে হয়।
সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের কৃষক আ. বারেক মৃধা বলেন, ‘সরকারি গোডাউনে ধান সরবরাহ করতে হলে ধানের আর্দ্রতা ১৪ শতাংশ এবং প্রতি কেজিতে চিটার পরিমাণ ১ শতাংশ থাকতে হয়। এ কারণে আমরা সরকারি গোডাউনে ধান সরবরাহ করছি না। এ ছাড়া মোবাইল ফোনে রেজিস্ট্রেশনসহ অন্যান্য জটিলতা রয়েছে।’

কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের কৃষক মজিবুর গাজী বলেন, ‘মোবাইলে অ্যাপস বুঝে উঠতে পারি না, অনেক ঝামেলা হয়। সব সময় সরাসরি ধান বিক্রি করি—এভাবেই আমাদের সুবিধা হয়, আর দামও ভালো পাওয়া যায়।’

গলাচিপার চিকনিকান্দি এলাকার কৃষক রফিক প্যাদা বলেন, ‘সরকার একেবারে ঝরঝরা ধান চায়। এ ছাড়া ধান গাড়ি দিয়ে গোদামে দিয়ে আসতে হয়। এতে গুড়ের লাভ পিঁপড়ায় খাইলায়। তাই এ বছর সরকারের কাছে ধান বিক্রি করছি না।’

পটুয়াখালী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. লিয়াকত আলী বলেন, ‘দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতেই সরকার মোবাইল অ্যাপস বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে মাঠ পর্যায়ে ধানের দাম ভালো থাকায় কৃষক সরকারি গোডাউনে ধান সরবরাহ করছেন না।’

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, পটুয়াখালী জেলায় এবার ১ লাখ ২২ হাজার ৪৮ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকার উচ্চফলনশীল জাতের হেক্টরপ্রতি পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টন এবং স্থানীয় জাতের ধান তিন থেকে সাড়ে তিন টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘অ্যাপসের মাধ্যমে শুধু বাউফল, গলাচিপা ও কলাপাড়াতে কৃষকদের কাছে থেকে ধান সংগ্রহ করা হয়। এবার সরকারিভাবে কৃষকদের কাছে থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ার কারণ হচ্ছে, বাজারে দাম ও সরকারি দাম কাছাকাছি হওয়ায় কৃষক সরকারি গোডাউনে ধান দিচ্ছেন না। এ ছাড়া গোডাউনে ধান দিতে কৃষককে হয়রানিরও শিকার হতে হয়। তবে গোডাউনে কৃষকদের ধান বিক্রিতে আগ্রহী করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত