ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান
আজ ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। আমাদের প্রিয় সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল ও নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। আর একাদশ হিজরির ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স যখন ষোলো-সতেরো বছর, তখন তিনি সামাজিক অন্যায় প্রতিরোধে ‘হিলফুল ফুযুল’ নামক শান্তিসংঘ গঠন করেন। স্বহস্তে কাবাঘরে কালো পাথর পুনঃস্থাপনের মধ্য দিয়ে আরবের বিবদমান গোত্রগুলোর দ্বন্দ্ব নিরসন করেন। তিনি নবুওয়াতের আগেই সমাজ নিয়ে ভাবতেন এবং নবুওয়াত লাভের পর সমাজসংস্কারে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু প্রতিকূলতার কারণে তিনি মদিনায় হিজরত করেন এবং সেখানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র গঠন করে বিভিন্ন সংস্কার সাধন করেন। তাঁর সংস্কারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো।
মদিনায় হিজরতের পর মহানবী (সা.) একটি সনদ তৈরি করেন। বিশ্বের ইতিহাসে যা ‘মদিনা সনদ’ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে মদিনার মুসলিম, ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক, মূর্তিপূজক সব নাগরিককে একসূত্রে আবদ্ধ করেন। ইসলামের সুমধুর ব্যবহারে আকৃষ্ট হয়ে অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। মহানবী (সা.) পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোয় ইসলামের দাওয়াতপত্র প্রেরণ করেন এবং রাষ্ট্রপতিদের ইসলাম গ্রহণের জন্য আহ্বান করেন। এভাবে তিনি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করেন।
মহানবী (সা.) সামাজিক ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেন। মানবতার ভিত্তিতে তিনি সমাজ গঠন করেন। ছোট-বড়, ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, আমির-ফকির সবাইকে এক কাতারে শামিল করেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের প্রভু এক, তোমাদের পিতা এক। আরবের ওপরে অনারবের, অনারবের ওপরে আরবের, কালো বর্ণের ওপরে গৌরবর্ণের এবং গৌরবর্ণের ওপরে কালো বর্ণের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কেবল খোদাভীতি ছাড়া।’ (তিবরানি)
তৎকালে নারীকে ভোগ্য সামগ্রী মনে করা হতো। পশুপাখির মতো তাদের বিক্রি করা হতো। কন্যাসন্তান জন্মকে অত্যন্ত অপমানজনক মনে করা হতো। অপমান থেকে বাঁচার জন্য তারা কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দিত। কারও স্ত্রী কন্যাসন্তান প্রসব করলে, তার মুখ কালো হতো। সেই সমাজের চিত্র তুলে ধরে আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়; তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত।’ (১৬: ৫৮)
মহানবী (সা.) কন্যা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে, মা হিসেবে নারী অধিকার নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘নারীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় তোমরা তাদের আল্লাহর আমানতস্বরূপ গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থানকে তোমাদের জন্য হালাল করে নিয়েছ।’ (আবু দাউদ)
সে সময় মদ ও জুয়াকে নৈমিত্তিক বিষয় মনে করা হতো। মহানবী (সা.) অধঃপতিত সমাজকে নতুনভাবে ঢেলে সাজান এবং মদ-জুয়া চিরতরে নিষিদ্ধ করেন। এ ছাড়া মহানবী (সা.) তাদের দাসত্ব প্রথার মূলে কুঠারাঘাত করেন এবং তা চিরতরে নিষিদ্ধ করেন। ব্যভিচারের মূলোৎপাটন করার জন্য ব্যভিচারের শাস্তি নির্ধারণ করেন। এমনকি ব্যভিচার তো দূরের কথা, মানুষ যেন ব্যভিচারের নিকটবর্তী না হয়, সে ব্যাপারে জোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (১৭: ৩২)
সে সময় আরবে গোত্রীয় প্রথা বিলুপ্ত করে তাওহিদের ভিত্তিতে একটি আদর্শ কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। যার প্রশাসক ছিলেন স্বয়ং মহানবী (সা.)।
মহানবী (সা.) মসজিদভিত্তিক কেন্দ্রীয় প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তিনি সমস্যা সমাধানের জন্য সাহাবিদের সঙ্গেও পরামর্শ করতেন। তিনি রাষ্ট্রের সব দ্বন্দ্ব-কলহ অবসান করে সবার মাঝে ভ্রাতৃত্ব প্রতিস্থাপন করেন; বিশেষ করে আউস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যকার সব দ্বন্দ্ব নির্মূল করেন। তিনি ছিলেন সফল পররাষ্ট্রনীতি বিশারদ। কেননা, তিনি ষষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সন্ধি স্থাপনকালে মক্কার কাফিরদের সঙ্গে যে শ্রদ্ধাভাজন আচরণ প্রদর্শন করেছেন, তা ইসলামের ইতিহাসে বিরল এবং স্মরণীয়। যার ফলে মক্কা বিজয় সম্ভব হয়েছে।
তৎকালীন আরব সমাজে সুদব্যবস্থা চালু থাকায় একটি শ্রেণি সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যেত। আর এক শ্রেণি পাহাড় পরিমাণ সম্পদের মালিক হতো। মহানবী (সা.) সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থার মূলোৎপাটন করে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে কল্যাণধর্মী অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। সুদ ছাড়াও তিনি মুনাফাখোরী, মজুতদারি, অপব্যয়, কৃপণতা, প্রতারণা, ভেজাল ব্যবসা প্রভৃতি চিরতরে নিষিদ্ধ করেন। অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য মহানবী (সা.) পাঁচ প্রকার রাজস্ব প্রবর্তন করেন। সেগুলো হলো গনিমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, আল-ফাই বা যুদ্ধ ছাড়া অর্জিত সম্পদ, জাকাত, যা শতকরা আড়াই টাকা প্রদেয়, জিযইয়া বা অমুসলিমদের নিরাপত্তা কর, উশর বা এক-দশমাংশ। মুসলমানদের ভূমি থেকে বৃষ্টির পানি দ্বারা উৎপন্ন ফসলাদি ১০ মণে ১ মণ এবং সেচের মাধ্যমে হলে ২০ মণে ১ মণ নির্ধারিত খাতে প্রদেয়। মহানবী (সা.) অন্ধকার যুগের সব অনিয়ম দূর করে উত্তরাধিকার আইন প্রবর্তন করেন। যার মধ্য দিয়ে মৃতের ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, পিতা-মাতা প্রভৃতি ওয়ারিশেরা সম্পত্তিতে অংশীদার হন।
মহানবী (সা.) শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও সংস্কার সাধন করেন। তিনি প্রচলিত বহু ঈশ্বরবাদ শিক্ষাব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত করেন এবং সুস্থ ও স্বাভাবিক শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেন। আল্লাহ বলেন, ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহানবী (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপর জ্ঞানার্জন করা ফরজ।’ (ইবন মাজাহ)
মদিনায় হিজরতের পর মহানবী (সা.) মসজিদে নববিসহ অনেক মসজিদ নির্মাণ করেন। ধর্মীয় কার্যাদি সম্পন্ন ও মুসলিম উম্মাহকে সুসংগঠিত করাই ছিল মসজিদ নির্মাণের প্রধান লক্ষ্য। শুধু তা-ই নয়, মুসলমান কর্তৃক যখনই কোনো রাজ্য জয় হতো, তখন প্রথম সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হতো। এভাবেই মসজিদভিত্তিক ধর্মীয় কার্যাবলি সম্প্রসারিত হয়।
মহানবী (সা.) মানব ইতিহাসের একজন অনুকরণীয় সফল সংস্কারক। তিনি তাঁর অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে অন্ধকার যুগের গোমড়াহ মানুষগুলোকে যেভাবে পথনির্দেশ দিয়েছেন, ইতিহাসে তার দৃষ্টান্ত বিরল। তিনি একাধারে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে সংস্কার সাধন করেছেন, তা যুগ যুগ ধরে অমর হয়ে আছে। তাঁর সংস্কারগুলো প্রতিটি রাষ্ট্রনায়ক ও প্রশাসকের অনুকরণীয় আদর্শ।
ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আজ ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। আমাদের প্রিয় সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল ও নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। আর একাদশ হিজরির ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স যখন ষোলো-সতেরো বছর, তখন তিনি সামাজিক অন্যায় প্রতিরোধে ‘হিলফুল ফুযুল’ নামক শান্তিসংঘ গঠন করেন। স্বহস্তে কাবাঘরে কালো পাথর পুনঃস্থাপনের মধ্য দিয়ে আরবের বিবদমান গোত্রগুলোর দ্বন্দ্ব নিরসন করেন। তিনি নবুওয়াতের আগেই সমাজ নিয়ে ভাবতেন এবং নবুওয়াত লাভের পর সমাজসংস্কারে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু প্রতিকূলতার কারণে তিনি মদিনায় হিজরত করেন এবং সেখানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র গঠন করে বিভিন্ন সংস্কার সাধন করেন। তাঁর সংস্কারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো।
মদিনায় হিজরতের পর মহানবী (সা.) একটি সনদ তৈরি করেন। বিশ্বের ইতিহাসে যা ‘মদিনা সনদ’ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে মদিনার মুসলিম, ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক, মূর্তিপূজক সব নাগরিককে একসূত্রে আবদ্ধ করেন। ইসলামের সুমধুর ব্যবহারে আকৃষ্ট হয়ে অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। মহানবী (সা.) পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোয় ইসলামের দাওয়াতপত্র প্রেরণ করেন এবং রাষ্ট্রপতিদের ইসলাম গ্রহণের জন্য আহ্বান করেন। এভাবে তিনি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করেন।
মহানবী (সা.) সামাজিক ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেন। মানবতার ভিত্তিতে তিনি সমাজ গঠন করেন। ছোট-বড়, ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, আমির-ফকির সবাইকে এক কাতারে শামিল করেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের প্রভু এক, তোমাদের পিতা এক। আরবের ওপরে অনারবের, অনারবের ওপরে আরবের, কালো বর্ণের ওপরে গৌরবর্ণের এবং গৌরবর্ণের ওপরে কালো বর্ণের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কেবল খোদাভীতি ছাড়া।’ (তিবরানি)
তৎকালে নারীকে ভোগ্য সামগ্রী মনে করা হতো। পশুপাখির মতো তাদের বিক্রি করা হতো। কন্যাসন্তান জন্মকে অত্যন্ত অপমানজনক মনে করা হতো। অপমান থেকে বাঁচার জন্য তারা কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দিত। কারও স্ত্রী কন্যাসন্তান প্রসব করলে, তার মুখ কালো হতো। সেই সমাজের চিত্র তুলে ধরে আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়; তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত।’ (১৬: ৫৮)
মহানবী (সা.) কন্যা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে, মা হিসেবে নারী অধিকার নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘নারীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় তোমরা তাদের আল্লাহর আমানতস্বরূপ গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থানকে তোমাদের জন্য হালাল করে নিয়েছ।’ (আবু দাউদ)
সে সময় মদ ও জুয়াকে নৈমিত্তিক বিষয় মনে করা হতো। মহানবী (সা.) অধঃপতিত সমাজকে নতুনভাবে ঢেলে সাজান এবং মদ-জুয়া চিরতরে নিষিদ্ধ করেন। এ ছাড়া মহানবী (সা.) তাদের দাসত্ব প্রথার মূলে কুঠারাঘাত করেন এবং তা চিরতরে নিষিদ্ধ করেন। ব্যভিচারের মূলোৎপাটন করার জন্য ব্যভিচারের শাস্তি নির্ধারণ করেন। এমনকি ব্যভিচার তো দূরের কথা, মানুষ যেন ব্যভিচারের নিকটবর্তী না হয়, সে ব্যাপারে জোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (১৭: ৩২)
সে সময় আরবে গোত্রীয় প্রথা বিলুপ্ত করে তাওহিদের ভিত্তিতে একটি আদর্শ কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। যার প্রশাসক ছিলেন স্বয়ং মহানবী (সা.)।
মহানবী (সা.) মসজিদভিত্তিক কেন্দ্রীয় প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তিনি সমস্যা সমাধানের জন্য সাহাবিদের সঙ্গেও পরামর্শ করতেন। তিনি রাষ্ট্রের সব দ্বন্দ্ব-কলহ অবসান করে সবার মাঝে ভ্রাতৃত্ব প্রতিস্থাপন করেন; বিশেষ করে আউস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যকার সব দ্বন্দ্ব নির্মূল করেন। তিনি ছিলেন সফল পররাষ্ট্রনীতি বিশারদ। কেননা, তিনি ষষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সন্ধি স্থাপনকালে মক্কার কাফিরদের সঙ্গে যে শ্রদ্ধাভাজন আচরণ প্রদর্শন করেছেন, তা ইসলামের ইতিহাসে বিরল এবং স্মরণীয়। যার ফলে মক্কা বিজয় সম্ভব হয়েছে।
তৎকালীন আরব সমাজে সুদব্যবস্থা চালু থাকায় একটি শ্রেণি সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যেত। আর এক শ্রেণি পাহাড় পরিমাণ সম্পদের মালিক হতো। মহানবী (সা.) সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থার মূলোৎপাটন করে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে কল্যাণধর্মী অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। সুদ ছাড়াও তিনি মুনাফাখোরী, মজুতদারি, অপব্যয়, কৃপণতা, প্রতারণা, ভেজাল ব্যবসা প্রভৃতি চিরতরে নিষিদ্ধ করেন। অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য মহানবী (সা.) পাঁচ প্রকার রাজস্ব প্রবর্তন করেন। সেগুলো হলো গনিমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, আল-ফাই বা যুদ্ধ ছাড়া অর্জিত সম্পদ, জাকাত, যা শতকরা আড়াই টাকা প্রদেয়, জিযইয়া বা অমুসলিমদের নিরাপত্তা কর, উশর বা এক-দশমাংশ। মুসলমানদের ভূমি থেকে বৃষ্টির পানি দ্বারা উৎপন্ন ফসলাদি ১০ মণে ১ মণ এবং সেচের মাধ্যমে হলে ২০ মণে ১ মণ নির্ধারিত খাতে প্রদেয়। মহানবী (সা.) অন্ধকার যুগের সব অনিয়ম দূর করে উত্তরাধিকার আইন প্রবর্তন করেন। যার মধ্য দিয়ে মৃতের ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, পিতা-মাতা প্রভৃতি ওয়ারিশেরা সম্পত্তিতে অংশীদার হন।
মহানবী (সা.) শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও সংস্কার সাধন করেন। তিনি প্রচলিত বহু ঈশ্বরবাদ শিক্ষাব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত করেন এবং সুস্থ ও স্বাভাবিক শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেন। আল্লাহ বলেন, ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহানবী (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপর জ্ঞানার্জন করা ফরজ।’ (ইবন মাজাহ)
মদিনায় হিজরতের পর মহানবী (সা.) মসজিদে নববিসহ অনেক মসজিদ নির্মাণ করেন। ধর্মীয় কার্যাদি সম্পন্ন ও মুসলিম উম্মাহকে সুসংগঠিত করাই ছিল মসজিদ নির্মাণের প্রধান লক্ষ্য। শুধু তা-ই নয়, মুসলমান কর্তৃক যখনই কোনো রাজ্য জয় হতো, তখন প্রথম সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হতো। এভাবেই মসজিদভিত্তিক ধর্মীয় কার্যাবলি সম্প্রসারিত হয়।
মহানবী (সা.) মানব ইতিহাসের একজন অনুকরণীয় সফল সংস্কারক। তিনি তাঁর অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে অন্ধকার যুগের গোমড়াহ মানুষগুলোকে যেভাবে পথনির্দেশ দিয়েছেন, ইতিহাসে তার দৃষ্টান্ত বিরল। তিনি একাধারে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে সংস্কার সাধন করেছেন, তা যুগ যুগ ধরে অমর হয়ে আছে। তাঁর সংস্কারগুলো প্রতিটি রাষ্ট্রনায়ক ও প্রশাসকের অনুকরণীয় আদর্শ।
ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে