ফয়সাল শাহরিয়ার
১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর দুপুর ১২টা। বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জের তরুণ মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান কিছুটা চিন্তিতভাবে তাঁর প্যান্টের কোমরে হাত দিলেন। সেখানে অন্তত আরও একটি স্টেনগানের গুলিভর্তি ম্যাগাজিন থাকার কথা। কিন্তু পরমুহূর্তেই তাঁর চিন্তা উদ্বেগে পরিণত হলো। তাঁর কাছে স্টেনগানের আর কোনো ম্যাগাজিনই অবশিষ্ট নেই। সঙ্গে আছে দুটি মাত্র হ্যান্ড গ্রেনেড। প্রায় সূর্যোদয় থেকে তদানীন্তন মহকুমা শহর কিশোরগঞ্জ থেকে মাত্র তিন মাইল দূরে অবস্থিত প্যারাভাঙ্গা গ্রামে তিনি এবং তাঁর সহযোদ্ধারা অমিতবিক্রমে যুদ্ধ করে চলেছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আলবদরের এক বিশাল দলের বিরুদ্ধে। কয়েক ঘণ্টার ভয়ংকর যুদ্ধের মধ্যে তরুণ খায়রুল জাহান তাঁর স্টেনগানের গুলির হিসাব রাখার সুযোগ পাননি। অথচ তখন তাঁর স্টেনগান গুলিশূন্য। হঠাৎ মাত্র ৫০ গজ দূর থেকে অত্যন্ত পরিচিত কণ্ঠের হুংকার ভেসে এল, ‘...পোলা, জয় বাংলা কও? আইজকা তরে জয় বাংলা শিখাইবাম। তুই বাইর হইয়া আয়, কিশোরগঞ্জের মাটিতে তরে আইজকা গাইরা হালবাম।’
কণ্ঠটি খায়রুল জাহানের অতিপরিচিত। খায়রুল মাত্র ৫ গজ দূরে অবস্থানরত সহযোদ্ধা সেলিমকে কাছে ডাকলেন। ‘সেলিম, সবার গুলিই সম্ভবত প্রায় শেষ। আমরা সবাই একসঙ্গে এখান থেকে বের হতে পারব না। আমাদের দুজনকে কাভারিং ফায়ার দিতে হবে, যাতে অন্যরা বেরিয়ে যেতে পারে।’ সেলিম একমুহূর্তও দ্বিধা না করে তাঁর রিভলবারটি খায়রুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে নিজের স্টেনগানটি নিয়ে ১০ গজ দূরে অন্য এক অবস্থানে গিয়ে তাঁর স্টেনগান থেকে শত্রুর উদ্দেশ্যে গুলি শুরু করলেন। খায়রুল নিজের হাতের থার্টি টু ক্যালিবার রিভলবারটির দিকে তাকিয়ে শত্রুর উদ্দেশ্যে পুনরায় গুলি শুরু করলেন।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই খায়রুলের রিভলবারের গুলিও শেষ হয়ে গেল। পুনরায় ভেসে এল আলবদর কমান্ডারের কণ্ঠস্বর, ‘...পোলা, কই তুই? বাইর হইয়া আয়...।’ আত্মসমর্পণের পরিণতি প্রসঙ্গে তরুণ খায়রুল সম্যকরূপে সচেতন ছিলেন। ‘সেলিম, অন্যদের কী অবস্থা?’ খায়রুল চিৎকার করে জানতে চাইলেন। ‘বেশির ভাগ বেরিয়ে গেছে।’ প্রত্যুত্তরে জানালেন সহযোদ্ধা সেলিম। খায়রুল একটি হ্যান্ড গ্রেনেড হাতে নিয়ে স্থির দৃষ্টিতে সেটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। মাত্র তিন মাইল দূরে কিশোরগঞ্জ শহরের বাসায় অপেক্ষারত তাঁর মায়ের প্রিয় মুখ মনে পড়ে গেল। এপ্রিল মাসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার সময় মায়ের চোখের পানি বাধা হয়ে দাঁড়াবে, এই ভয়ে তিনি মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসতে পারেননি। পরমুহূর্তেই খায়রুল হ্যান্ড গ্রেনেডের পিন খুলে গ্রেনেডটি শক্ত করে চেপে ধরলেন।
শহীদ খায়রুল জাহান ছিলেন কিশোরগঞ্জ সদর থানার লতিফপুর গ্রামের আবদুল হাই তালুকদারের ছেলে। ১৯৭১ সালে ছয় ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় খায়রুল জাহানের জন্ম ১৯৪৯ সালে। নম্রভাষী খায়রুল ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে কিশোরগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ১৯৬৯ সালে স্থানীয় গুরুদয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি জেলা শহর ময়মনসিংহে অবস্থিত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।
বাংলাদেশ তখন স্বাধিকার আন্দোলনে উত্তাল। সবার প্রিয় মৃদুভাষী খায়রুলের ব্যক্তিত্বেও ক্রমেই এক দৃঢ়তার মাত্রা যুক্ত হয়। তিনি উপলব্ধি করেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে বাঙালিদের আর কোনো ভবিষ্যৎ অবশিষ্ট নেই।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে খায়রুল তাঁর নিজ শহর কিশোরগঞ্জে ফিরে আসেন। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তিনি পরিবারকে না জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ করেন। পরে তিনি প্রতিবেশী দেশে অবস্থিত মেলাঘর ক্যাম্পে তৎকালীন মেজর হায়দারের (পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল, বীর উত্তম) অধীনে বিশেষ গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
প্রশিক্ষণ শেষে খায়রুল জাহান প্লাটুন কমান্ডারের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং তাঁর অধীন প্লাটুনসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। পরবর্তী কয়েক মাসে খায়রুল জাহান ও তাঁর অধীন প্লাটুন ২ নম্বর সেক্টরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে খায়রুলের প্লাটুন কিশোরগঞ্জের নিকটবর্তী হোসেনপুর থানায় ঘাঁটি গড়ে তোলে। উল্লেখ্য, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি নাগাদ বাংলাদেশের এক বিরাট অংশ শত্রুমুক্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৯৩তম ব্রিগেডের আওতাধীন ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ‘আলফা’ কোম্পানি স্থায়ীভাবে কিশোরগঞ্জ শহরের ডাকবাংলোয় অবস্থান নিয়ে ওই অঞ্চলে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল। ‘আলফা’ কোম্পানির দায়িত্বে ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর ইফতেখার। তা সত্ত্বেও তরুণ মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান এবং তাঁর প্লাটুন কিশোরগঞ্জ শহর শত্রুমুক্ত করার বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন।
২৫ নভেম্বর রাতে খায়রুলের প্লাটুনের তিন মুক্তিযোদ্ধা নিকটবর্তী কাতিয়ারচর গ্রাম থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক দালালকে ধরে নিয়ে এসে প্যারাভাঙ্গা বাজারে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। পরের দিন ২৬ নভেম্বর এই সংবাদ পেয়ে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই নিকটবর্তী কিশোরগঞ্জ শহর থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে স্থানীয় আলবদর ও রাজাকার বাহিনীর একটি বিশাল দল প্যারাভাঙ্গা বাজারে খায়রুলদের অবস্থান তিন দিক থেকে ঘেরাও করে অবিরাম গুলিবর্ষণ শুরু করে। খায়রুলরাও পাল্টা জবাব দিতে থাকেন। এতে শত্রুপক্ষের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। দুপুর নাগাদ গুলি শেষ হয়ে এলে মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান সিদ্ধান্ত নেন তিনি এবং তাঁর সহযোদ্ধা সেলিম কাভারিং ফায়ার দেবেন, যাতে প্লাটুনের অবশিষ্ট যোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে পশ্চাদ্পসরণ করতে পারেন। পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল এবং সেলিম উভয়েই শাহাদাতবরণ করেন। সহযোদ্ধাদের প্রাণ রক্ষার্থে এভাবে স্থির সিদ্ধান্তে শাহাদাতবরণ করা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত।
মুক্তিযোদ্ধা খায়রুলের শাহাদাতবরণের পরে আলবদর বাহিনী এক নারকীয় ঘটনা শুরু করে। তারা প্রথমে শহীদ খায়রুলের মৃতদেহ বেয়নেটের আঘাতে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। পরে তারা খায়রুলের মৃতদেহ নিয়ে পৈশাচিক উল্লাসে কিশোরগঞ্জ শহর প্রদক্ষিণ করে। ইতিমধ্যে একদল আলবদর কিশোরগঞ্জ শহরে অবস্থিত খায়রুলদের বাড়ি ঘেরাও করে এবং তারা আস্ফালন করে খায়রুলের মাকে জানায়, তাদের শার্টে খায়রুলের রক্ত লেগে রয়েছে। শহীদ খায়রুল জাহানের মা স্বাভাবিকভাবেই তখন পুত্রশোকে বাকরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।
শহীদ খায়রুল জাহানের মরদেহের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিজয়-পরবর্তীকালে শহীদ খায়রুল জাহান বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীরত্ব সূচক ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। শহীদ খায়রুল জাহানের আত্মত্যাগ সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
লেখক: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক
১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর দুপুর ১২টা। বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জের তরুণ মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান কিছুটা চিন্তিতভাবে তাঁর প্যান্টের কোমরে হাত দিলেন। সেখানে অন্তত আরও একটি স্টেনগানের গুলিভর্তি ম্যাগাজিন থাকার কথা। কিন্তু পরমুহূর্তেই তাঁর চিন্তা উদ্বেগে পরিণত হলো। তাঁর কাছে স্টেনগানের আর কোনো ম্যাগাজিনই অবশিষ্ট নেই। সঙ্গে আছে দুটি মাত্র হ্যান্ড গ্রেনেড। প্রায় সূর্যোদয় থেকে তদানীন্তন মহকুমা শহর কিশোরগঞ্জ থেকে মাত্র তিন মাইল দূরে অবস্থিত প্যারাভাঙ্গা গ্রামে তিনি এবং তাঁর সহযোদ্ধারা অমিতবিক্রমে যুদ্ধ করে চলেছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আলবদরের এক বিশাল দলের বিরুদ্ধে। কয়েক ঘণ্টার ভয়ংকর যুদ্ধের মধ্যে তরুণ খায়রুল জাহান তাঁর স্টেনগানের গুলির হিসাব রাখার সুযোগ পাননি। অথচ তখন তাঁর স্টেনগান গুলিশূন্য। হঠাৎ মাত্র ৫০ গজ দূর থেকে অত্যন্ত পরিচিত কণ্ঠের হুংকার ভেসে এল, ‘...পোলা, জয় বাংলা কও? আইজকা তরে জয় বাংলা শিখাইবাম। তুই বাইর হইয়া আয়, কিশোরগঞ্জের মাটিতে তরে আইজকা গাইরা হালবাম।’
কণ্ঠটি খায়রুল জাহানের অতিপরিচিত। খায়রুল মাত্র ৫ গজ দূরে অবস্থানরত সহযোদ্ধা সেলিমকে কাছে ডাকলেন। ‘সেলিম, সবার গুলিই সম্ভবত প্রায় শেষ। আমরা সবাই একসঙ্গে এখান থেকে বের হতে পারব না। আমাদের দুজনকে কাভারিং ফায়ার দিতে হবে, যাতে অন্যরা বেরিয়ে যেতে পারে।’ সেলিম একমুহূর্তও দ্বিধা না করে তাঁর রিভলবারটি খায়রুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে নিজের স্টেনগানটি নিয়ে ১০ গজ দূরে অন্য এক অবস্থানে গিয়ে তাঁর স্টেনগান থেকে শত্রুর উদ্দেশ্যে গুলি শুরু করলেন। খায়রুল নিজের হাতের থার্টি টু ক্যালিবার রিভলবারটির দিকে তাকিয়ে শত্রুর উদ্দেশ্যে পুনরায় গুলি শুরু করলেন।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই খায়রুলের রিভলবারের গুলিও শেষ হয়ে গেল। পুনরায় ভেসে এল আলবদর কমান্ডারের কণ্ঠস্বর, ‘...পোলা, কই তুই? বাইর হইয়া আয়...।’ আত্মসমর্পণের পরিণতি প্রসঙ্গে তরুণ খায়রুল সম্যকরূপে সচেতন ছিলেন। ‘সেলিম, অন্যদের কী অবস্থা?’ খায়রুল চিৎকার করে জানতে চাইলেন। ‘বেশির ভাগ বেরিয়ে গেছে।’ প্রত্যুত্তরে জানালেন সহযোদ্ধা সেলিম। খায়রুল একটি হ্যান্ড গ্রেনেড হাতে নিয়ে স্থির দৃষ্টিতে সেটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। মাত্র তিন মাইল দূরে কিশোরগঞ্জ শহরের বাসায় অপেক্ষারত তাঁর মায়ের প্রিয় মুখ মনে পড়ে গেল। এপ্রিল মাসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার সময় মায়ের চোখের পানি বাধা হয়ে দাঁড়াবে, এই ভয়ে তিনি মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসতে পারেননি। পরমুহূর্তেই খায়রুল হ্যান্ড গ্রেনেডের পিন খুলে গ্রেনেডটি শক্ত করে চেপে ধরলেন।
শহীদ খায়রুল জাহান ছিলেন কিশোরগঞ্জ সদর থানার লতিফপুর গ্রামের আবদুল হাই তালুকদারের ছেলে। ১৯৭১ সালে ছয় ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় খায়রুল জাহানের জন্ম ১৯৪৯ সালে। নম্রভাষী খায়রুল ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে কিশোরগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ১৯৬৯ সালে স্থানীয় গুরুদয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি জেলা শহর ময়মনসিংহে অবস্থিত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।
বাংলাদেশ তখন স্বাধিকার আন্দোলনে উত্তাল। সবার প্রিয় মৃদুভাষী খায়রুলের ব্যক্তিত্বেও ক্রমেই এক দৃঢ়তার মাত্রা যুক্ত হয়। তিনি উপলব্ধি করেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে বাঙালিদের আর কোনো ভবিষ্যৎ অবশিষ্ট নেই।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে খায়রুল তাঁর নিজ শহর কিশোরগঞ্জে ফিরে আসেন। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তিনি পরিবারকে না জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ করেন। পরে তিনি প্রতিবেশী দেশে অবস্থিত মেলাঘর ক্যাম্পে তৎকালীন মেজর হায়দারের (পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল, বীর উত্তম) অধীনে বিশেষ গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
প্রশিক্ষণ শেষে খায়রুল জাহান প্লাটুন কমান্ডারের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং তাঁর অধীন প্লাটুনসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। পরবর্তী কয়েক মাসে খায়রুল জাহান ও তাঁর অধীন প্লাটুন ২ নম্বর সেক্টরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে খায়রুলের প্লাটুন কিশোরগঞ্জের নিকটবর্তী হোসেনপুর থানায় ঘাঁটি গড়ে তোলে। উল্লেখ্য, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি নাগাদ বাংলাদেশের এক বিরাট অংশ শত্রুমুক্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৯৩তম ব্রিগেডের আওতাধীন ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ‘আলফা’ কোম্পানি স্থায়ীভাবে কিশোরগঞ্জ শহরের ডাকবাংলোয় অবস্থান নিয়ে ওই অঞ্চলে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল। ‘আলফা’ কোম্পানির দায়িত্বে ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর ইফতেখার। তা সত্ত্বেও তরুণ মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান এবং তাঁর প্লাটুন কিশোরগঞ্জ শহর শত্রুমুক্ত করার বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন।
২৫ নভেম্বর রাতে খায়রুলের প্লাটুনের তিন মুক্তিযোদ্ধা নিকটবর্তী কাতিয়ারচর গ্রাম থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক দালালকে ধরে নিয়ে এসে প্যারাভাঙ্গা বাজারে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। পরের দিন ২৬ নভেম্বর এই সংবাদ পেয়ে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই নিকটবর্তী কিশোরগঞ্জ শহর থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে স্থানীয় আলবদর ও রাজাকার বাহিনীর একটি বিশাল দল প্যারাভাঙ্গা বাজারে খায়রুলদের অবস্থান তিন দিক থেকে ঘেরাও করে অবিরাম গুলিবর্ষণ শুরু করে। খায়রুলরাও পাল্টা জবাব দিতে থাকেন। এতে শত্রুপক্ষের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। দুপুর নাগাদ গুলি শেষ হয়ে এলে মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান সিদ্ধান্ত নেন তিনি এবং তাঁর সহযোদ্ধা সেলিম কাভারিং ফায়ার দেবেন, যাতে প্লাটুনের অবশিষ্ট যোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে পশ্চাদ্পসরণ করতে পারেন। পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল এবং সেলিম উভয়েই শাহাদাতবরণ করেন। সহযোদ্ধাদের প্রাণ রক্ষার্থে এভাবে স্থির সিদ্ধান্তে শাহাদাতবরণ করা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত।
মুক্তিযোদ্ধা খায়রুলের শাহাদাতবরণের পরে আলবদর বাহিনী এক নারকীয় ঘটনা শুরু করে। তারা প্রথমে শহীদ খায়রুলের মৃতদেহ বেয়নেটের আঘাতে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। পরে তারা খায়রুলের মৃতদেহ নিয়ে পৈশাচিক উল্লাসে কিশোরগঞ্জ শহর প্রদক্ষিণ করে। ইতিমধ্যে একদল আলবদর কিশোরগঞ্জ শহরে অবস্থিত খায়রুলদের বাড়ি ঘেরাও করে এবং তারা আস্ফালন করে খায়রুলের মাকে জানায়, তাদের শার্টে খায়রুলের রক্ত লেগে রয়েছে। শহীদ খায়রুল জাহানের মা স্বাভাবিকভাবেই তখন পুত্রশোকে বাকরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।
শহীদ খায়রুল জাহানের মরদেহের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিজয়-পরবর্তীকালে শহীদ খায়রুল জাহান বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীরত্ব সূচক ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। শহীদ খায়রুল জাহানের আত্মত্যাগ সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
লেখক: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে