সাইফুল মাসুম হাতিয়া (নোয়াখালী) থেকে
‘টিকার শিশিতে মেয়াদোত্তীর্ণ লেখা রয়েছে। আবার কোন জটিলতা দেখা দেয়, এই আশঙ্কায় আমি টিকা নিইনি। আমার পরিচিত আরও ১৫ জন মানুষ টিকা নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। একটা চিঠির ওপর ভিত্তি করে আমি কীভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা নেব?’ এমন প্রশ্ন হাতিয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাজ্জাদ হোসেনের। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে কথা হয়। সাজ্জাদ হোসেন জানান, কোভিডের টিকার তৃতীয় ডোজ তিনি আগেই নিয়েছেন। চতুর্থ ডোজ নেওয়ার জন্য হাসপাতালে গেলে মেয়াদোত্তীর্ণ জানতে পেরে তিনি টিকা নেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন।
নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দেশে অন্যান্য টিকার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের তৈরি টিকাও দেওয়া হচ্ছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি, সম্মুখসারির কর্মীসহ বিশেষ জনগোষ্ঠীকে দেওয়া হচ্ছে টিকার চতুর্থ ডোজ। এর আগে ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক চিঠিতে বলেছে, ফাইজারের যে টিকার মেয়াদ ৩০-১১-২০২২ লেখা আছে, তা আরও তিন মাস অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। অধিদপ্তরের তখনকার পরিচালক ডা. শামসুল হকের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও উৎপাদনকারী সংস্থা ফাইজারের অনুমোদনক্রমে ফাইজার কোভিড-১৯ টিকার মেয়াদ ৩০-১১-২০২২ থেকে ২৮-০২-২০২৩ খ্রি. পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
এভাবে টিকার মেয়াদ বাড়ানোর ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। কোডিভ-১৯-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চিঠি দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ টিকার মেয়াদ বাড়ানোর নজির নেই। এমনটা হয়ে থাকলে এটা অগ্রহণযোগ্য। ফাইজারের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের টিকায় এমন হওয়ার কথা নয়। মেয়াদোত্তীর্ণ টিকায় যদি মানুষের কোনো অসুবিধা হয়, তাহলে কী হবে? মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা নিয়ে মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমনটা করা ঠিক হয়নি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্য বিদায়ী পরিচালক ডা. শামসুল হক বলেন, ‘উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। সব জেলা-উপজেলায় এটা পাঠানো হয়েছে। কী পরিমাণ টিকার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, এই মুহূর্তে আমি বলতে পারব না। কয়েক দিন হলো আমি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি।’
ইপিআইয়ের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এস এম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকার অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, সিনোফার্ম, সিনোভ্যাক, জনসন অ্যান্ড জনসন ও ফাইজারের টিকা ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে ফাইজারের কিছু টিকা ছাড়া সবগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই প্রয়োগ হয়েছে। ফাইজারের যেসব টিকার মেয়াদ ফুরিয়েছে, সেগুলোর মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।’
ওয়েবসাইটেও বর্ধিত মেয়াদ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠিতেও ডব্লিউএইচওর অনুমোদনের কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি একটি ওয়েবসাইট ঠিকানা দিয়ে বলা হয়েছে, তাতে ফাইজার টিকার ভায়াল বা শিশির গায়ে উল্লিখিত লট নম্বর ব্যবহার করে বর্ধিত মেয়াদের তারিখ জানা যাবে। উল্লিখিত ওয়েবসাইটটি ফাইজার-বায়োএনটেকের। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় সরবরাহ করা ফাইজারের একটি টিকার শিশির গায়ে মেয়াদ লেখা ১১/২০২২, যার লট নম্বর এফওয়াই ১৩২৩। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সাইটটিতে লট নম্বর দিলে বর্ধিত মেয়াদ দেখায় ৩১ আগস্ট ২০২৩।
ডব্লিউএইচওর এক সাবেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনো ভ্যাকসিনের মেয়াদ বাড়ানোর নজির নেই। করোনার মতো ভয়ংকর ভাইরাসের ক্ষেত্রে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সংস্থার তিনটি কমিটি থাকে, তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে, তারপর এটি কতটা গ্রহণযোগ্য, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগে। কিন্তু এত অল্প সময়ে কীভাবে অনুমোদন পেয়েছে, আমাদের জানা নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডব্লিউএইচওর সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মো. মুজাহেরুল হক বলেন, ‘সাধারণত মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া টিকার মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সংস্থা অনুমোদন দেয় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) যেসব টিকার মেয়াদ ফুরিয়েছে, তার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। এতে তারা দেখেছে, মেয়াদ শেষ হওয়ায় টিকাগুলো ৩ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে, তাতে কোনো ধরনের ক্ষতি হবে না। তবে শর্ত থাকে যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে সঠিক সময়ে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এসব ফল তারা নিজ দেশের সরকারের পাশাপাশি ডব্লিউএইচওর কাছেও দেয়। কিন্তু ডব্লিউএইচওর ওয়েবসাইট ঘেঁটে এমন কিছু আমি পাইনি।’
কারোরই গ্রহণ করা উচিত নয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টিকা বা ওষুধের যে মেয়াদ লিখে দিয়েছে, তা পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রয়োগ করা কোনোভাবেই উচিত নয়। মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা ব্যবহারের ফলে কী ধরনের ক্ষতি হবে, সেটা পূর্বানুমান করে বলা মুশকিল। এটা নিলে কেউ মরে যাবে বা এটা কাজে লাগবে, এমনটা বলা যাবে না। তবে এটা কারোরই গ্রহণ করা উচিত নয়।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘কোনো টিকা বা ওষুধের গায়ে মেয়াদ লেখা থাকে; কারণ, মেয়াদ শেষে এটা মানুষের শরীরে ব্যবহার উপযোগী না। যদি ব্যবহার করা যেত, তাহলে টিকার শিশিতে লেখা থাকত, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তিন মাস পরেও ব্যবহার করা যাবে। মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা কোনো যুক্তিতে, কারও আলোচনার মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী বলে মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো যাবে না। কারণ, ওই টিকা তৈরি করা হয়েছে মেয়াদ থাকাকালীন ব্যবহার করার জন্য। মেয়াদ শেষে এটা ব্যবহারের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা ব্যবহারে অবশ্যই আশঙ্কার জায়গা রয়েছে।’
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) অন্যতম পরামর্শক ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে কিছুদিন হাতে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচিত জনসাধারণের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট করা। গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সবাইকে জানানো।’
জনমনে ভয়
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গতকাল মেয়াদোত্তীর্ণ এই টিকা দিতে দেখা গেছে অনেককে। টিকার শিশিতে মেয়াদোত্তীর্ণ লেখা দেখার পর অনেকে এই টিকা নেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। আবার কেউ কেউ টিকা নেওয়ার পর জানতে পারেন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়। এতে তাঁদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। সম্প্রতি হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে টিকা নিয়েছেন হাতিয়া পৌরসভার শূন্যচর গ্রামের গৃহবধূ আমেনা আক্তার। আমেনার স্বামী সায়েদ আহমেদ বলেন, ‘টিকা নেওয়ার পর জানতে পারলাম, টিকার মেয়াদ নেই। এখন ভয় হচ্ছে শারীরিক কোনো অসুবিধা হয় কি না।’
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শেখ মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এই টিকায় ক্ষতি হবে কি না, জানি না; তবে সরকার যেভাবে দিতে বলছে সার্কুলারে, আমরা সেভাবে দিচ্ছি।’
টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে গিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ দেখেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের অর্জুনাহার গ্রামের হামিদুল ইসলাম। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি টিকার দ্বিতীয় ডোজ ফাইজার নেওয়ার জন্য যাই। যখন কার্টন থেকে টিকা বের করল, দেখলাম টিকার মেয়াদ নেই। তখন নার্সরা আমাকে বলে, টিকা নিলে নিজ দায়িত্বে নিতে হবে। আমি যদি মারা যাই, দায়িত্ব কে নেবে, প্রশ্ন করলে তারা বলে আপনার ইচ্ছা। পরে তারা আমাকে টিকা দিল।’
বীরগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর সুজালপুর ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারী লিপা রায় বলেন, ‘জনগণ ভ্যাকসিনের মেয়াদের ব্যাপারে জানতে চাইলে আমি হাসপাতালের স্টোরকিপার সাবুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি জানান, এগুলোতে কোনো সমস্যা নাই, দেওয়া যাবে। তখন আমরা ফাইজারের টিকাটি দিই।’
মেয়াদোত্তীর্ণ টিকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি
বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা ব্যবহারের ফলে বহু ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আমি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে জানি না যে আসলেই এ রকম কোনো চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না। কিন্তু যদি এ রকম চিঠি দেওয়া হয়ে থাকে, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন নিলে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। কোনো অথরিটিই (কর্তৃপক্ষ) এটা এক্সটেন্ড করতে পারে না।’
‘টিকার শিশিতে মেয়াদোত্তীর্ণ লেখা রয়েছে। আবার কোন জটিলতা দেখা দেয়, এই আশঙ্কায় আমি টিকা নিইনি। আমার পরিচিত আরও ১৫ জন মানুষ টিকা নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। একটা চিঠির ওপর ভিত্তি করে আমি কীভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা নেব?’ এমন প্রশ্ন হাতিয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাজ্জাদ হোসেনের। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে কথা হয়। সাজ্জাদ হোসেন জানান, কোভিডের টিকার তৃতীয় ডোজ তিনি আগেই নিয়েছেন। চতুর্থ ডোজ নেওয়ার জন্য হাসপাতালে গেলে মেয়াদোত্তীর্ণ জানতে পেরে তিনি টিকা নেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন।
নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দেশে অন্যান্য টিকার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের তৈরি টিকাও দেওয়া হচ্ছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি, সম্মুখসারির কর্মীসহ বিশেষ জনগোষ্ঠীকে দেওয়া হচ্ছে টিকার চতুর্থ ডোজ। এর আগে ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক চিঠিতে বলেছে, ফাইজারের যে টিকার মেয়াদ ৩০-১১-২০২২ লেখা আছে, তা আরও তিন মাস অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। অধিদপ্তরের তখনকার পরিচালক ডা. শামসুল হকের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও উৎপাদনকারী সংস্থা ফাইজারের অনুমোদনক্রমে ফাইজার কোভিড-১৯ টিকার মেয়াদ ৩০-১১-২০২২ থেকে ২৮-০২-২০২৩ খ্রি. পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
এভাবে টিকার মেয়াদ বাড়ানোর ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। কোডিভ-১৯-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চিঠি দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ টিকার মেয়াদ বাড়ানোর নজির নেই। এমনটা হয়ে থাকলে এটা অগ্রহণযোগ্য। ফাইজারের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের টিকায় এমন হওয়ার কথা নয়। মেয়াদোত্তীর্ণ টিকায় যদি মানুষের কোনো অসুবিধা হয়, তাহলে কী হবে? মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা নিয়ে মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমনটা করা ঠিক হয়নি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্য বিদায়ী পরিচালক ডা. শামসুল হক বলেন, ‘উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। সব জেলা-উপজেলায় এটা পাঠানো হয়েছে। কী পরিমাণ টিকার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, এই মুহূর্তে আমি বলতে পারব না। কয়েক দিন হলো আমি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি।’
ইপিআইয়ের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এস এম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকার অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, সিনোফার্ম, সিনোভ্যাক, জনসন অ্যান্ড জনসন ও ফাইজারের টিকা ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে ফাইজারের কিছু টিকা ছাড়া সবগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই প্রয়োগ হয়েছে। ফাইজারের যেসব টিকার মেয়াদ ফুরিয়েছে, সেগুলোর মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।’
ওয়েবসাইটেও বর্ধিত মেয়াদ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠিতেও ডব্লিউএইচওর অনুমোদনের কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি একটি ওয়েবসাইট ঠিকানা দিয়ে বলা হয়েছে, তাতে ফাইজার টিকার ভায়াল বা শিশির গায়ে উল্লিখিত লট নম্বর ব্যবহার করে বর্ধিত মেয়াদের তারিখ জানা যাবে। উল্লিখিত ওয়েবসাইটটি ফাইজার-বায়োএনটেকের। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় সরবরাহ করা ফাইজারের একটি টিকার শিশির গায়ে মেয়াদ লেখা ১১/২০২২, যার লট নম্বর এফওয়াই ১৩২৩। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সাইটটিতে লট নম্বর দিলে বর্ধিত মেয়াদ দেখায় ৩১ আগস্ট ২০২৩।
ডব্লিউএইচওর এক সাবেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনো ভ্যাকসিনের মেয়াদ বাড়ানোর নজির নেই। করোনার মতো ভয়ংকর ভাইরাসের ক্ষেত্রে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সংস্থার তিনটি কমিটি থাকে, তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে, তারপর এটি কতটা গ্রহণযোগ্য, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগে। কিন্তু এত অল্প সময়ে কীভাবে অনুমোদন পেয়েছে, আমাদের জানা নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডব্লিউএইচওর সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মো. মুজাহেরুল হক বলেন, ‘সাধারণত মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া টিকার মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সংস্থা অনুমোদন দেয় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) যেসব টিকার মেয়াদ ফুরিয়েছে, তার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। এতে তারা দেখেছে, মেয়াদ শেষ হওয়ায় টিকাগুলো ৩ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে, তাতে কোনো ধরনের ক্ষতি হবে না। তবে শর্ত থাকে যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে সঠিক সময়ে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এসব ফল তারা নিজ দেশের সরকারের পাশাপাশি ডব্লিউএইচওর কাছেও দেয়। কিন্তু ডব্লিউএইচওর ওয়েবসাইট ঘেঁটে এমন কিছু আমি পাইনি।’
কারোরই গ্রহণ করা উচিত নয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টিকা বা ওষুধের যে মেয়াদ লিখে দিয়েছে, তা পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রয়োগ করা কোনোভাবেই উচিত নয়। মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা ব্যবহারের ফলে কী ধরনের ক্ষতি হবে, সেটা পূর্বানুমান করে বলা মুশকিল। এটা নিলে কেউ মরে যাবে বা এটা কাজে লাগবে, এমনটা বলা যাবে না। তবে এটা কারোরই গ্রহণ করা উচিত নয়।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘কোনো টিকা বা ওষুধের গায়ে মেয়াদ লেখা থাকে; কারণ, মেয়াদ শেষে এটা মানুষের শরীরে ব্যবহার উপযোগী না। যদি ব্যবহার করা যেত, তাহলে টিকার শিশিতে লেখা থাকত, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তিন মাস পরেও ব্যবহার করা যাবে। মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা কোনো যুক্তিতে, কারও আলোচনার মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী বলে মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো যাবে না। কারণ, ওই টিকা তৈরি করা হয়েছে মেয়াদ থাকাকালীন ব্যবহার করার জন্য। মেয়াদ শেষে এটা ব্যবহারের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা ব্যবহারে অবশ্যই আশঙ্কার জায়গা রয়েছে।’
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) অন্যতম পরামর্শক ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে কিছুদিন হাতে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচিত জনসাধারণের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট করা। গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সবাইকে জানানো।’
জনমনে ভয়
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গতকাল মেয়াদোত্তীর্ণ এই টিকা দিতে দেখা গেছে অনেককে। টিকার শিশিতে মেয়াদোত্তীর্ণ লেখা দেখার পর অনেকে এই টিকা নেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। আবার কেউ কেউ টিকা নেওয়ার পর জানতে পারেন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়। এতে তাঁদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। সম্প্রতি হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে টিকা নিয়েছেন হাতিয়া পৌরসভার শূন্যচর গ্রামের গৃহবধূ আমেনা আক্তার। আমেনার স্বামী সায়েদ আহমেদ বলেন, ‘টিকা নেওয়ার পর জানতে পারলাম, টিকার মেয়াদ নেই। এখন ভয় হচ্ছে শারীরিক কোনো অসুবিধা হয় কি না।’
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শেখ মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এই টিকায় ক্ষতি হবে কি না, জানি না; তবে সরকার যেভাবে দিতে বলছে সার্কুলারে, আমরা সেভাবে দিচ্ছি।’
টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে গিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ দেখেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের অর্জুনাহার গ্রামের হামিদুল ইসলাম। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি টিকার দ্বিতীয় ডোজ ফাইজার নেওয়ার জন্য যাই। যখন কার্টন থেকে টিকা বের করল, দেখলাম টিকার মেয়াদ নেই। তখন নার্সরা আমাকে বলে, টিকা নিলে নিজ দায়িত্বে নিতে হবে। আমি যদি মারা যাই, দায়িত্ব কে নেবে, প্রশ্ন করলে তারা বলে আপনার ইচ্ছা। পরে তারা আমাকে টিকা দিল।’
বীরগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর সুজালপুর ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারী লিপা রায় বলেন, ‘জনগণ ভ্যাকসিনের মেয়াদের ব্যাপারে জানতে চাইলে আমি হাসপাতালের স্টোরকিপার সাবুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি জানান, এগুলোতে কোনো সমস্যা নাই, দেওয়া যাবে। তখন আমরা ফাইজারের টিকাটি দিই।’
মেয়াদোত্তীর্ণ টিকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি
বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা ব্যবহারের ফলে বহু ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আমি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে জানি না যে আসলেই এ রকম কোনো চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না। কিন্তু যদি এ রকম চিঠি দেওয়া হয়ে থাকে, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন নিলে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। কোনো অথরিটিই (কর্তৃপক্ষ) এটা এক্সটেন্ড করতে পারে না।’
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে