আবু তাহের খান
সংবাদপত্র-সম্পাদকদের সঙ্গে গত ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁর সরকারের কোনো ভুলত্রুটি চোখে পড়লে তা ধরিয়ে দিতে গণমাধ্যমকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তাঁর এ আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের বিগত দুই মাসের কর্মকাণ্ডের কিছু কিছু দিক নিয়ে আশা-নিরাশা মেশানো কিছু পর্যবেক্ষণ ও প্রতিক্রিয়া এখানে তুলে ধরা হলো। উপস্থাপিত বক্তব্যকে সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করলে সেটি জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাদের কর্মকাণ্ডের দূরত্ব কমিয়ে আনতে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের এ পর্যন্ত সময়ের কর্মকাণ্ডের মধ্যকার একটি বড় সাফল্য এই যে বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বস্তুত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি, সুখ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। আর এ ধরনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হওয়ার ফলে বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেই যে শুধু বাড়তি সুবিধা পাবে তাই নয়, একই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, বৈদেশিক সহায়তালাভ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধাভোগের সুযোগ পাবে বলে আশা করা যায়।
কিন্তু কথা হচ্ছে, এসব সুবিধাকে কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা কি উপযুক্ত দক্ষতা ও পদ্ধতিগত সাবলীলতা নিয়ে প্রস্তুত আছে? মোটেও না। ফলে আন্তর্জাতিক পরিসরে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাপারে যত ইতিবাচক ধারণাই তৈরি হোক না কেন, সে ধারণার সুফল আমলাতন্ত্রনির্ভর বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জনে কতটুকু কাজে লাগানো যাবে, সে আশঙ্কা থেকেই যায়।
অবশ্য এরপরও সুনির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়া কিছু বিষয়ের কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে বিক্ষোভের দায়ে অভিযুক্ত ৫৭ বাংলাদেশি কর্মীকে মুক্ত করে ইউএই থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ কর্তৃক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার, মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে ১৮ হাজার শ্রমিক নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি।
তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্যে সুস্পষ্ট স্ববিরোধিতা লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রোহিঙ্গারা আসতে চাইলে আমরা তাদের গ্রহণ করব। অন্যদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই বলে আসছেন যে আর কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়, যা এ দেশের সাধারণ মানুষেরও অভিব্যক্তি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অর্জিত উপরিউক্ত অগ্রগতি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। কিন্তু এর বিপরীতে আশাভঙ্গের যেসব কারণ ঘটছে, সেগুলোর ব্যাপ্তি ও গভীরতা বিবেচনায় নিলে চলমান পরিস্থিতিকে কিছুটা হলেও হতাশাব্যঞ্জক বলতে হবে বৈকি! মানুষ আশা করেছিল, নতুন সরকারের আমলে সাধারণের দৈনন্দিন ব্যবহার্য ভোগ্যপণ্যের দাম কমে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। কারণ, বিগত সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা কায়েমি স্বার্থবাদী সিন্ডিকেটের হাতেই ছিল পুরো বাজারব্যবস্থা, যা বর্তমান সরকারের আমলে আর থাকার কোনো কারণ নেই।
কিন্তু চরম হতাশার সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে এ সরকারের আমলেও নিত্যপণ্যের মূল্য একরত্তি পরিমাণও হ্রাস পায়নি, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আরও বেড়ে গেছে। দাম কমানোর লক্ষ্যে সরকার আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক হ্রাস করার পরও তা না কমায় ধারণা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার ক্ষেত্রে সরকার বিন্দুমাত্র সফল হতে পারেনি। আর নিত্যপণ্যের পরিবহনব্যবস্থায় সরকার সমর্থক টাউট-মাস্তান ও পুলিশের যে চাঁদাবাজি, সেটিও বন্ধ হয়নি—তা বদল হয়েছে মাত্র। এমনকি কোথাও কোথাও রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন করে ব্যক্তির পরিচয় অপরিবর্তিতই থেকে গেছে।
কোনোই সন্দেহ নেই যে ৫ আগষ্টের পর থেকে ভারত সরকার ও ভারতীয় গণমাধ্যম কর্তৃক বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হয়েছে, যা কমবেশি এখনো অব্যাহত আছে। কিন্তু অতি ছোট্ট ঘটনাকে উপলক্ষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ওপর যেভাবে আক্রমণ চালানো হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর এসবেরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট রাজধানীতে অহিংস সমাবেশ করে যখন অভিযোগ করে যে ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠী নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে’, তখন মানতেই হবে যে সমস্যা কিছু পরিসরে হলেও নতুন করে তৈরি হয়েছে বৈকি! একই সমাবেশ থেকে এটাও বলা হয়েছে যে দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা রক্ষায় মাদ্রাসাছাত্রদের নামিয়ে দেওয়া থেকে প্রতীয়মান হয় যে সংখ্যালঘুরা অনিরাপদ।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তারা বলেছে, ‘পৃথিবীতে আপনি শান্তির বার্তা দিয়েছেন, শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা যদি নিরাপদ না থাকে, এ শান্তি স্থায়ীভাবে বিপন্ন হবে। এই দেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘু জোটের এসব বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে দ্রুত এগিয়ে আসবে বলে আশা রাখি।
উল্লিখিত ধরনের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব লক্ষ করা গেছে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের বিষয়েও। অভ্যুত্থান-উত্তর পরিবর্তিত পরিস্থিতির দাবি মেটাতে গিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যমান পাঠ্যক্রম সংশোধনের লক্ষ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু কমিটির দুজন খ্যাতিমান সদস্যের ব্যাপারে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দলগুলোর পক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপন করায় পরে ওই কমিটি বাতিল করা হয়। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর দাবির মুখে ওই কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্তকে দেশের সাধারণ মানুষ সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে সরকারের নতজানু ও আপসকামী মনোভাব হিসেবেই দেখছে। বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের পক্ষ থেকে দেশের নানা স্থানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, ১২২ বিশিষ্ট নাগরিক এক বিবৃতিতে এর তীব্র নিন্দা জানান এবং সচেতন মহলে এ নিয়ে এখনো ক্ষোভ ও প্রতিবাদ অব্যাহত আছে।
অন্য আরও কিছু কিছু বিষয়েও সরকারের আচরণ ও কর্মকাণ্ড ক্রমেই নানা বিতর্ক তৈরি করছে, যেসব কর্মকাণ্ডের সবই হয়তো সরকারের ইচ্ছাকৃত নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও এসবের নীতিগত দায় খুব স্বাভাবিকভাবেই সরকারের ওপর গিয়ে বর্তাচ্ছে। একাধিক রদবদল ঘটিয়ে জনপ্রশাসনসচিব পদে যাঁকে বসানো হলো, পদে বসতে না বসতেই তাঁর বিরুদ্ধে বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল।
বিষয়টি তদন্তের জন্য ইতিমধ্যে তিন উপদেষ্টার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হলেও এরই মধ্যে উল্লিখিত দুর্নীতি থেকে জনপ্রশাসনসচিবকে রক্ষার উদ্দেশ্যে তাঁর পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, যে ধরনের বিবৃতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের পক্ষে দিয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
এখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, অন্তর্বর্তী সরকার কি দুর্নীতিবাজকে রক্ষার এসব কায়েমি আয়োজন-ব্যবস্থাকে প্রশ্রয় দেবে, নাকি তাঁর বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে? অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের ভয় হয়, শেষ পর্যন্ত জনপ্রশাসনসচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ সহসাই না শূন্যে মিলিয়ে যায়!
মোটকথা, যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছিল, তা এখন কিছুটা হলেও ম্লান হতে বসেছে। কিন্তু এ সরকারকে মনে রাখতে হবে যে তাদের পক্ষে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের ব্যর্থ হওয়া মানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সমুদয় আকাঙ্ক্ষাই ব্যর্থ হয়ে যাওয়া।
এমতাবস্থায় ব্যর্থতার ঝুঁকি মোকাবিলা করে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সফল হতে হলে তাদেরকে অবশ্যই আপসকামিতার পথ পরিহার করে সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে চারপাশ ঘিরে থাকাদের কথা শুনলেই শুধু হবে না, প্রান্তিক যে মানুষেরা, তাদের বক্তব্য কখনো ক্ষমতার কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না, তাদের নীরব কান্নাগুলোও শুনতে হবে।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক
সংবাদপত্র-সম্পাদকদের সঙ্গে গত ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁর সরকারের কোনো ভুলত্রুটি চোখে পড়লে তা ধরিয়ে দিতে গণমাধ্যমকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তাঁর এ আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের বিগত দুই মাসের কর্মকাণ্ডের কিছু কিছু দিক নিয়ে আশা-নিরাশা মেশানো কিছু পর্যবেক্ষণ ও প্রতিক্রিয়া এখানে তুলে ধরা হলো। উপস্থাপিত বক্তব্যকে সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করলে সেটি জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাদের কর্মকাণ্ডের দূরত্ব কমিয়ে আনতে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের এ পর্যন্ত সময়ের কর্মকাণ্ডের মধ্যকার একটি বড় সাফল্য এই যে বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বস্তুত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি, সুখ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। আর এ ধরনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হওয়ার ফলে বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেই যে শুধু বাড়তি সুবিধা পাবে তাই নয়, একই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, বৈদেশিক সহায়তালাভ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধাভোগের সুযোগ পাবে বলে আশা করা যায়।
কিন্তু কথা হচ্ছে, এসব সুবিধাকে কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা কি উপযুক্ত দক্ষতা ও পদ্ধতিগত সাবলীলতা নিয়ে প্রস্তুত আছে? মোটেও না। ফলে আন্তর্জাতিক পরিসরে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাপারে যত ইতিবাচক ধারণাই তৈরি হোক না কেন, সে ধারণার সুফল আমলাতন্ত্রনির্ভর বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জনে কতটুকু কাজে লাগানো যাবে, সে আশঙ্কা থেকেই যায়।
অবশ্য এরপরও সুনির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়া কিছু বিষয়ের কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে বিক্ষোভের দায়ে অভিযুক্ত ৫৭ বাংলাদেশি কর্মীকে মুক্ত করে ইউএই থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ কর্তৃক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার, মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে ১৮ হাজার শ্রমিক নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি।
তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্যে সুস্পষ্ট স্ববিরোধিতা লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রোহিঙ্গারা আসতে চাইলে আমরা তাদের গ্রহণ করব। অন্যদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই বলে আসছেন যে আর কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়, যা এ দেশের সাধারণ মানুষেরও অভিব্যক্তি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অর্জিত উপরিউক্ত অগ্রগতি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। কিন্তু এর বিপরীতে আশাভঙ্গের যেসব কারণ ঘটছে, সেগুলোর ব্যাপ্তি ও গভীরতা বিবেচনায় নিলে চলমান পরিস্থিতিকে কিছুটা হলেও হতাশাব্যঞ্জক বলতে হবে বৈকি! মানুষ আশা করেছিল, নতুন সরকারের আমলে সাধারণের দৈনন্দিন ব্যবহার্য ভোগ্যপণ্যের দাম কমে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। কারণ, বিগত সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা কায়েমি স্বার্থবাদী সিন্ডিকেটের হাতেই ছিল পুরো বাজারব্যবস্থা, যা বর্তমান সরকারের আমলে আর থাকার কোনো কারণ নেই।
কিন্তু চরম হতাশার সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে এ সরকারের আমলেও নিত্যপণ্যের মূল্য একরত্তি পরিমাণও হ্রাস পায়নি, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আরও বেড়ে গেছে। দাম কমানোর লক্ষ্যে সরকার আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক হ্রাস করার পরও তা না কমায় ধারণা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার ক্ষেত্রে সরকার বিন্দুমাত্র সফল হতে পারেনি। আর নিত্যপণ্যের পরিবহনব্যবস্থায় সরকার সমর্থক টাউট-মাস্তান ও পুলিশের যে চাঁদাবাজি, সেটিও বন্ধ হয়নি—তা বদল হয়েছে মাত্র। এমনকি কোথাও কোথাও রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন করে ব্যক্তির পরিচয় অপরিবর্তিতই থেকে গেছে।
কোনোই সন্দেহ নেই যে ৫ আগষ্টের পর থেকে ভারত সরকার ও ভারতীয় গণমাধ্যম কর্তৃক বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হয়েছে, যা কমবেশি এখনো অব্যাহত আছে। কিন্তু অতি ছোট্ট ঘটনাকে উপলক্ষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ওপর যেভাবে আক্রমণ চালানো হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর এসবেরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট রাজধানীতে অহিংস সমাবেশ করে যখন অভিযোগ করে যে ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠী নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে’, তখন মানতেই হবে যে সমস্যা কিছু পরিসরে হলেও নতুন করে তৈরি হয়েছে বৈকি! একই সমাবেশ থেকে এটাও বলা হয়েছে যে দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা রক্ষায় মাদ্রাসাছাত্রদের নামিয়ে দেওয়া থেকে প্রতীয়মান হয় যে সংখ্যালঘুরা অনিরাপদ।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তারা বলেছে, ‘পৃথিবীতে আপনি শান্তির বার্তা দিয়েছেন, শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা যদি নিরাপদ না থাকে, এ শান্তি স্থায়ীভাবে বিপন্ন হবে। এই দেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘু জোটের এসব বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে দ্রুত এগিয়ে আসবে বলে আশা রাখি।
উল্লিখিত ধরনের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব লক্ষ করা গেছে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের বিষয়েও। অভ্যুত্থান-উত্তর পরিবর্তিত পরিস্থিতির দাবি মেটাতে গিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যমান পাঠ্যক্রম সংশোধনের লক্ষ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু কমিটির দুজন খ্যাতিমান সদস্যের ব্যাপারে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দলগুলোর পক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপন করায় পরে ওই কমিটি বাতিল করা হয়। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর দাবির মুখে ওই কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্তকে দেশের সাধারণ মানুষ সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে সরকারের নতজানু ও আপসকামী মনোভাব হিসেবেই দেখছে। বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের পক্ষ থেকে দেশের নানা স্থানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, ১২২ বিশিষ্ট নাগরিক এক বিবৃতিতে এর তীব্র নিন্দা জানান এবং সচেতন মহলে এ নিয়ে এখনো ক্ষোভ ও প্রতিবাদ অব্যাহত আছে।
অন্য আরও কিছু কিছু বিষয়েও সরকারের আচরণ ও কর্মকাণ্ড ক্রমেই নানা বিতর্ক তৈরি করছে, যেসব কর্মকাণ্ডের সবই হয়তো সরকারের ইচ্ছাকৃত নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও এসবের নীতিগত দায় খুব স্বাভাবিকভাবেই সরকারের ওপর গিয়ে বর্তাচ্ছে। একাধিক রদবদল ঘটিয়ে জনপ্রশাসনসচিব পদে যাঁকে বসানো হলো, পদে বসতে না বসতেই তাঁর বিরুদ্ধে বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল।
বিষয়টি তদন্তের জন্য ইতিমধ্যে তিন উপদেষ্টার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হলেও এরই মধ্যে উল্লিখিত দুর্নীতি থেকে জনপ্রশাসনসচিবকে রক্ষার উদ্দেশ্যে তাঁর পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, যে ধরনের বিবৃতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের পক্ষে দিয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
এখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, অন্তর্বর্তী সরকার কি দুর্নীতিবাজকে রক্ষার এসব কায়েমি আয়োজন-ব্যবস্থাকে প্রশ্রয় দেবে, নাকি তাঁর বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে? অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের ভয় হয়, শেষ পর্যন্ত জনপ্রশাসনসচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ সহসাই না শূন্যে মিলিয়ে যায়!
মোটকথা, যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছিল, তা এখন কিছুটা হলেও ম্লান হতে বসেছে। কিন্তু এ সরকারকে মনে রাখতে হবে যে তাদের পক্ষে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের ব্যর্থ হওয়া মানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সমুদয় আকাঙ্ক্ষাই ব্যর্থ হয়ে যাওয়া।
এমতাবস্থায় ব্যর্থতার ঝুঁকি মোকাবিলা করে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সফল হতে হলে তাদেরকে অবশ্যই আপসকামিতার পথ পরিহার করে সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে চারপাশ ঘিরে থাকাদের কথা শুনলেই শুধু হবে না, প্রান্তিক যে মানুষেরা, তাদের বক্তব্য কখনো ক্ষমতার কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না, তাদের নীরব কান্নাগুলোও শুনতে হবে।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে